রবিবার, ৫ জুলাই ২০২০

বাঙ্গালী সভ্যতার মূল্যায়ন

Home Page » ফিচার » বাঙ্গালী সভ্যতার মূল্যায়ন
রবিবার, ৫ জুলাই ২০২০



ফাইল ছবি
বাঙ্গালী জীবনযাত্রার শুরু হয়েছিল মানুষের আবির্ভাবের দিন থেকে। ভূ-তাত্ত্বিক আলোড়ন ও চঞ্চলতার ফলে বাঙলা গঠিত হয়েছিল প্লাসিন যুগে। ভূ-তত্ত্ব বিদগণের হিসাব অনুযায়ী সেটা ঘটেছিল প্রায় দশ থেকে পঁচিশ লক্ষ বছর পূর্বে। মানুষের আবির্ভাব ঘটেছিল আরও পরে, আজ থেকে পাঁচ লক্ষ বছর পূর্বে। এর আগেই ঘটেছিল জীবজগতে ক্রমবিকাশের এক কর্মকান্ড। বানর জাতীয় জীবগণ বিবর্তনের মাধ্যমে বিভিন্ন শাখা-প্রশাখায় বিভক্ত হওয়ার মাধ্যমে উদ্ভব হয়েছিল নরাকার জীবসমূহ। এই নরাকার জীবসমূহের কঙ্কালাস্থি ভারতের উত্তর পশ্চিমে শেলমালা ও তৎসংলগ্ন অধতলে পাওয়া যায়। বিবর্তনের ছকে তাদের নাম দেয়া হয় শিবপিথেকাস, নামপিথেকাস, সুগ্রীবপিথেকাস ইত্যাদি। আরও উন্নত ধরনের নরাকার জীবের কঙ্কালাস্থি পাওয়া গেছে ভারতের দক্ষিণ পূর্ব জাভা দ্বীপে ও চীন দেশের চুংকিং এ। এখন যদি এ তিনটি জায়গায় তিনটি বিন্দু বসিয়ে সরলরেখা দ্বারা সংযুক্ত করা হয় তাহলে যে ত্রিভূজ সৃষ্ট হবে,তারই মধ্যস্থলে পড়বে বাংলাদেশ। সুতরাং এরূপ নরাকার জীবসমূহ যে বাঙলা দেশের ওপর দিয়ে যাতায়াত করত সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই।অতএব,বলা যায় এসব নরাকার জীব থেকে মানুষের উদ্ভব ঘটেছিল। মানুষের প্রথম সমস্যা ছিল আত্মরক্ষা ও খাদ্য আহরণ। এই সমস্যা সমাধানের জন্য, মানুষ তৈরী
করেছিল আয়ুধ(উপকরণ)। আয়ুধের মধ্যে অন্যতম ছিল পাথর। পরে পাথরের সাহায্যে মানুষ চাকলা তুলে হাতকুঠার তৈরী করে। ভারতীয় প্রত্নতত্ত্ববিদগণ অনুসন্ধান ও অনুশীলনের জন্য প্রত্নোপলীয় যুগকে ৩ ভাগে ভাগ করেন। যথা- আদি, মধ্য ও অন্তিম।কিন্তু খুব প্রাচীনকালে মানুষের কঙ্কালাস্থি তেমন ভারতে পাওয়া যায়নি।
বিখ্যাত প্রত্নতত্ত্ববিদ আর্থার কীথ ১৯১৮ সালে তার রচিত ‘অ্যানটিকুইটি অভ ম্যান’ নামক গ্রন্থে বলেন-প্রাচীন মানুষের সম্বন্ধে যারা অনুসন্ধান করেন, তারা ভারতের দিকে আশার দৃষ্টিতে চেয়ে থাকেন, কিন্তু এ পর্যন্ত তাদের নিরাশ হতে হয়েছে। অনুসন্ধানের উদ্যোগের অভাবই এর একমাত্র কারণ। সম্প্রতি (১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দে) মেদিনীপুর জেলায় রায়গড়ে অদূরে সিজুয়ায় পাওয়া গেছে এক জীবাশ্মীভূত ভগ্ন মানব চোয়াল। রেডিয়ো কার্বন-১৪ পরীক্ষায় নির্ণীয় হয়েছে এর সময় ১০,৫০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ। তার মানে প্রত্নোপলীয় যুগের একেবারে অন্তিম পর্বে, কেননা নবোপলীয় যুগ শুরু হয়েছিল ৮,০০০ খ্রিস্ট্রপূর্বাব্দে বা তার কিছু পূর্বে। তবে প্রত্নোপলীয় যুগের প্রথম দিকের মানুষের কঙ্কালাস্থি পাওয়া না গেলেও,মানুষ যে সেই প্রাচীন যুগ থেকেই বাঙলা দেশের নানা স্থানে পাওয়া তার প্রমাণ পাওয়া যায় বাঙলা দেশের নানা স্থানে পাওয়া ব্যবহৃত আয়ধসমূহ থেকে। যা ছিল সবই পশ্চিম ইউরোপের প্রাপ্ত প্রত্মোপলীয় যুগের হাত কুঠারের অনুরূপ। প্রত্মোপলীয় যুগের কৃষ্টির নিদর্শন দার্লিজিং থেকে মেদিনীপুর পর্যন্ত নানা স্থানে পাওয়া যায়। জীবনচর্যাকে সুখময় করার জন্য মানুষের জয়যাত্রা নবোপলীয় যুগে গ্রামীণ সভ্যতা তাম্রশ্মযুগের নগর সভ্যতার বিকশিত হয়। তাম্রশ্মযুগের নগর সভ্যতার নিদর্শন পাওয়া যায় বর্ধমান জেলার পান্ডুরাজার ডিবি ও সন্নিহিত অঞ্চলে। অতুল সুর তার গৌড়চন্দ্রিকা’ গ্রন্থে বলেন তাম্রশ্মযুগের সভ্যতার অভ্যুদয়ে তামাই মূখ্য। মিশরীয় সভ্যতা, সুমেরীয় সভ্যতা, সিন্ধু সভ্যতা প্রভৃতিতে তামার প্রাধান্য দেখা যায়। তাম্রশ্মযুগের বাঙলাই ছিল তামার প্রধান আড়ত। তামার বৃহত্তম খনি ছিল বাঙলা। বাঙলার ‘সাত সমুদয় তের নদী’ পার হয়ে তামা নিয়ে যেত সভ্যতার বিভিন্ন কেন্দ্রসমূহে বিপনের জন্য। এজন্যই বাঙলার বড় বন্দরের নাম ছিল তাম্রলিপ্তি। অতুল সুর আরও বলেন বাঙালীরা তামার সাথে অন্যত্র নিয়ে যেত শিব ও শক্তি পূজার ধাজ, যা বাঙলার নিজস্ব ধর্ম। বস্তুত বাঙলায় যত শিবমন্দির দেখা যায়, তা আর কোথাও দেখা
যায় না। বাঙালীকে মিশ্র জাতি বলা হয়। আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের আদিম অধিবাসীগণ ব্যতীত জগতে সব জাতি
মিশ্র, বাঙালাও তাই। বাঙালীর মধ্যে আবয়য়িক নৃতাত্ত্বিক অস্টিক ভাষা-ভাষী এবং বাঙলার আদিম অধিবাসী ও আলপীয় জাতিসমূহের রক্তই প্রধান। বাঙালীর জীবনচর্চায় অস্টিক প্রভাব খুব বেশী এবং বাঙালীর ভাষা ও সাংস্কৃতিক জীবন এর বহু নিদর্শন বহন করে। বিখ্যাত নৃতত্ত্ববিদ এ.সি. হ্যাডন তাঁর ‘রেসেস অভ ম্যান’ বইয়ে বলেন অস্টিক ভাষাভাষীরা এক সময় পাঞ্জাব থেকে প্রশান্ত মহাসাগরের সুদূরে অবস্থিত ইস্টার দ্বীপ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। অস্টিক জীবনচর্যার ওপরই গঠিত হয়েছে বাঙালীর জীবনচর্যার বুনিয়াদ। সেই বুনিয়াদের ওপরই স্থরীভূত হয়েছে দ্রাবিড় ও আলপীয় উপাদান। এসবের মহাসম্মিলনে গড়ে উঠেছিল ‘অসুর’ পরে তাদের জীবনচর্যা অসুর জাতির জীবনচর্যা নামে পরিচিত হয়। মহাভারতের আদিপর্ব অনুযায়ী অসুর
রাজা বালির পাঁচটি পুত্রের নাম থেকে অঙ্গ,বঙ্গ,পুন্ড্র,কলিঙ্গ ও সুহ্ম রাজ্যের নামকরণ হয়েছে। “আর্যমন্জুশ্রীমূলক” নামক বৌদ্ধগ্রন্থেও বাঙালা দেশের ভাষাকে ‘অসুর’ জাতির ভাষা বলা হয়েছে। এক সময় অসুর ও আর্যদের মধ্যে যুদ্ধ হয়েছিল,কিন্তু যুদ্ধে অসুরদের নেতা থাকার কারণে জয়ী হয়েছিল। ড. অতুল -অসুরদের সম্পর্কে বলেন, ‘বয়াংসি’ অর্থাৎ পক্ষী এদের টোটেম ছিল। খ্রিস্টপূর্ব সপ্তম শতকে আর্যদের পর বাঙলা ও বিহার অঞ্চর জুড়ে মগধ রাজ্য সংগঠিত হয়। বুদ্ধের সময় মগধ ছিল ভারত উপমহাদেশের চারটি মহাশক্তিশালী রাজ্যের অন্যতম ও ষোড়শ মহাজনপদের একটি। মৌর্য শাসক চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের সময় মগধ বিস্তৃত হতে থাকে,পরিণত হয় দক্ষিণ এশিয়ার এক বিশাল অঞ্চলে। খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকে সম্রাট অশোকের সময় আফগানিস্তান ও পারস্যের কিছু অংশও মগধের অধিকারে ছিল। গ্রিকরা ১০০ খ্রিস্টাপূর্বাব্দে কাছাকাছি সময়ে গাঙ্গেয় সমতল ভূমিতে বসবাসকারী ‘গঙ্গাঋদ্ধি’ নামে জাতির শৌযবীর্যের কথা বলেন। যেখানে মহাবীর আলেকজান্ডার তার বিশ্ব বিজয় অসম্পূর্ণ রেখে বিপাশা নদীর পশ্চিম তীর থেকে প্রত্যাবর্তন করেছিলেন। ‘গঙ্গারিড়ি’ শব্দটি গ্রিক Gangahrd (গঙ্গাহৃত)থেকে এসেছে অর্থাৎ গঙ্গা হৃদয়ে যে ভূমি। গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতনের পর শশাঙ্ক বাংলার রাজা হন। তিনি বাংলার প্রথম স্বাধীন নৃপতি যিনি দ্বিগিজয়ে বেরিয়ে কান্যকুব্জ থেকে গন্জাম পর্যন্ত জয় করেছিলেন। তাছাড়া তিনি শিব উপাসক
ছিলেন। তিনি বাংলার প্রথম রূপরেখা দিয়েছিলেন। শশাঙ্কের মৃত্যুর পর বাংলায় একঘোরতর নৈরাজ্যের সৃষ্টি হয়, যা প্রায় দেড়শো বছর স্থায়ী হয় ইতিহাসে তাকে মাৎসান্যায় বলা হয়। এই অবস্থা থেকে পাল বংশের প্রতিষ্ঠাতা গোপাল মানুষকে উদ্ধার করেন এবং তিনি পাল শাসনাবস্থা প্রবর্তন করেন। তাঁর উত্তরসূরীরা প্রায় ৪০০ বছর বাংলা শাসন করেন। তাঁদের সময়ে বাঙালা গান্ধার থেকে সমুদ্র ভূখন্ড পর্যন্ত জয় হয়েছিল। তাঁদের আমলেই বজ্রযান বৌদ্ধধর্মের বিশেষ প্রসার লাভ করে। শিক্ষা,সংস্কৃতি,সাহিত্য ও ভাস্কর্য্য তাদের আমলে বিশেষ উৎকর্ষতা লাভ করে। বাঙালরি প্রতিভা বিকাশের এটাই ছিল এক বিস্ময়কর স্বর্ণযুগ। পালদের পর সেনরা ক্ষমতা গ্রহণ করার মধ্য দিয়ে আবারও ব্রাহ্মাণ্যধর্ম পূণঃপ্রতিষ্ঠা হয়। বর্তমানে প্রচলিত জাতিভেদ প্রথা সেন যুগে প্রচলিত। এই যুগেও স্থাপত্য ও ভাস্কর্যের বিশেষ উন্নতি ঘটে। তাঁদের সময়ে বিষ্ণুমূর্তি অন্যতম সৌন্দর্য্যের দাবিদার লক্ষণসেনের সময়ে বাংলায় মুসলিমরা দখল করে নেয়। ফলে সৃষ্টি হয় বাঙালার বিপর্যয়ের যুগ। মূর্তি ও মঠ,মন্দির ভাঙ্গা হয়। হিন্দুদের ব্যাপকভাবে ধর্মান্তরিত করা হয়। হিন্দু সমাজ এ সময় অবলুপ্তির পথেই চলেছিল। এই অবলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করেন রঘুনন্দন ও শ্রীচেতন্য। বাংলায় ইসলামী শাসন শুরু হয়েছিল মুহাম্মদ ঘুরীর সময় ইখতিয়ার উদ্দিন বিন মুহাম্মদ বখতিয়ার খলজী প্রতিষ্ঠা করেন(১২০৪)। এসময় মরক্কোর বিখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতা বাংলায় ভ্রমণ করেন।এছাড়াও তখন কয়েকজন উল্লেখযোগ্য সুলতান সিকান্দার শাহ বিন ইলিয়াছ,নাসির আল দিন মাহমুদ,হুসেন শাহ প্রভুতি। এই সময়ে একমাত্র একজন হিন্দু নৃপতি ছিলেন দুনুজমদ্দম দেব(১৩০৮-১৩৪০ শকাব্দ,রাজা গণেশ) এই যুগের সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য
ব্যক্তি চৈতন্য দেব। তিনি হুসেন শাহের সমসাময়িক তাছাড়া এই সময়ে শিল্প সাহিত্যে অন্ধকার নেমে আসে। ১৫৭৫ সালে মোগলরা বাংলা দখল করলে সুলতানি সমাপ্তি হয় ঐতিহাসিকদের বর্ণনা থেকে পাওয়া যায় সুলতান ইলিয়াছ শাহ বাংলার সিংহাসনে বসেই,লাখনৌতি ও বঙ্গদেশকে একত্রিত করে নাম দেন বাঙালি। আর নিজে শাহ ই বাঙালাহ উপাধি ধারণ করেন এবং স্বাধীন ভাবে বাঙ্গালীদের জাতীয় শাসক হিসেবে শাসন কার্য পরিচালনা করেন। এভাবে বঙ্গ বা বাঙালা নামটির এককভাবে আত্মপ্রকাশ করে। বাংলার এই স্বাধীনতা ২০০ বছর চলেছিল। অতএব দেখা যায়,মুসলিম শাসনামলে বাঙ্গালা এবং বাঙ্গালীর সুনির্দিষ্ট অস্তিত্ব আত্মপ্রকাশ করে। ফলে শতকের পর শতক ব্যাপী বিকশিত হয় তা। সরকারি পর্যায়ে বাংলা ভাষার পাশাপাশি প্রবর্তিত হয় ফার্সি ভাষা। এ
উপাদান আরো সমৃদ্ধি লাভ করে মোগল আমলে(১৫৭৫-১৭১৭)। মোগলদের সময়ে বাংলা সুবা থাকলেও সবদিক থেকে সুবাদাররা যত্নবান ছিল। এসময় প্রচলিত হয় বাঙালীর উৎসবাদি। বাংলা সাল,নানা খাদ্য,বেশভূষা,পহেলা বৈশাখ ও নবর্বষ উৎসবই মোগলদের অবদান। এসবের প্রভাব পড়ে বাংলা সাহিত্যে। সুফিবাদ ও বৈষ্ণববাদ এবং এসব সাহিত্য ও লোকাচার বাঙালি মননকে করে তোলে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ, যা সাম্প্রদায়িক সহনশীলতা ও সহযোগীতাকে শক্তিশালী করে। বিগত কয়েক শত বছর ধরে অনেকটা অজ্ঞাতসারেই যে বাঙালী জাতি নির্মিত হচ্ছিল তাতে ধর্মীয় বিবেচনা কখনো আসেনি। এমনকি বিট্রিশ আমলের শেষ দশক পর্যন্ত জাতি নিমার্ণে ধর্ম দেখা যায় না বলে দাবি করেন ড. সিরাজুল ইসলাম স্যার। ধর্মকে ব্যবহার করা হয়েছে বঙ্গবিভাগ পরিকল্পনায় ও বাস্তবায়নে। পূর্ববঙ্গের মুসলমানদের সমর্থন আদায়ের জন্য তাদের এ মর্মে জাগ্রহ হচ্ছিল যে,বাংলা ভাগ হলে পূর্ববঙ্গের অপেক্ষাকৃত অনুন্নত মুসলমান সম্প্রদায় অভূতপূর্ব সুযোগ-সুবিধা লাভ করবে। সরকারের প্ররোচনায় ঢাকায় সম্প্রাদায়িক ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হলো সর্বভারতীয় মুসলিম লীগ। এরই প্রতিক্রিয়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে সাম্প্রদায়িক মনোভাব জেগে ওঠে। পরে আন্দোলনের চাপে সরকারকে বঙ্গভঙ্গ রদ করতে হয় বিট্রিশপূর্ব যুগে সরকার কখনো জনগণকে ধর্মীয়ভাবে বিভক্ত করে শাসন করার প্রয়াস পায়নি। এ কৌশল বিট্রিশ উপনিবেশিক যুগে এসে ভাগ কর শাসন কর নীতিতে পরিণত হয়। ১৯০৯,১৯১৯ ও ১৯৩৫ সালের অ্যাক্টগুলি সম্প্রদায় ভিক্তিক নির্বাচনের ব্যবস্থা করে। ১৯৩৭ সালের
নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় সাম্প্রদায়িক ভিত্তিতে এবং এরই ভিত্তিতে গঠিত হয় সময়ের সরকারগুলি। ফলে দেশে রাজনৈতিক সম্পর্কে সাম্প্রদায়িক স্বার্থ প্রাধান্য পায়। যার সূত ধরে ১৯৪০ সালে ভারতে মুসলমান অধ্যুাষিত এলাকা নিয়ে পাকিস্তান রাষ্ট প্রতিষ্ঠার দাবি উঠে এবং ঐ দাবির ভিত্তিতেই ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট প্রতিষ্ঠা হয়। কিন্তু মুসলিম জাতীয়তাবাদতত্ত্ব টেকসই প্রমাণিত হয়নি। উর্দু এবং বাংলা উভয় ভাষাই সুলতানি ও মোগল শাসনামলে বিকশিত হয়। উর্দু উত্তর ভারতে এবং বাংলা বঙ্গদেশে। কিন্তু বাংলাকে পাকিস্তান কেন্দ্রীয় শাসকশ্রেণী হিন্দু ভাষা হিসেবে ঘোষণা করে। বাংলা ভাষী পূর্ব পাকিস্তাীনরা এর প্রতিবাদ জানায় এবং বাংলাকে সমমর্যাদার দেবার জন্য আন্দোলন হয়। এ আন্দোলনে পাকিস্তানিদের নিকট স্পষ্ট করা হয় যে, পূর্ব পাকিস্তানীরা জাতি হিসেবে বাঙালী এবং বাংলা তাদের মাতৃভাষা। এখান থেকে বাঙালী জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সূত্রপাত। এরই চূড়ান্ত ফল বাঙালী জাতি ১৯৭১ সালে স্বশস্ত বিপ্লবের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করে এক ধর্মনিরপেক্ষ স্বাধীন বাংলাদেশ। ১৯৭১ সালের বিজয় বাঙ্গালীকে দিয়েছে সার্বভৌম এক ভূখন্ড ও বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাড়াবার ৫৬ হাজার বর্গমাইলের এক মানচিত্র। এই বাংলা হাজার বছরের ইতিহাস বিশ্বের বুকে ছড়িয়ে দিয়ে তার অতীতের ধারাবাহিকতা বহমান রেখে ছুটে চলছে এক নতুনত্বের সন্ধানে। অতএব বলা যায়, ১৯৪৭ সালে বাঙালি বিভক্ত হয়েছে ঠিক কিন্তু বাঙালি জাতির ইতিহাস দ্বিখন্ডিত হবার নয়। বাঙালি জাতি যেমন সমৃদ্ধ এক জাতি,তেমনি ইতিহাস সমৃদ্ধ বিশ্বের এক শ্রেষ্ঠ জাতি।
লুৎফুর কাবীর রানা
শিক্ষার্থী, ইতিহাস বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

বাংলাদেশ সময়: ২০:৫২:৫৯   ১৪৮৯ বার পঠিত   #