রবিবার, ২৮ জুন ২০২০

এবার ইলিশের প্রকৃত স্বাদ পাবেন রসনাবিলাসী বাঙালি

Home Page » জাতীয় » এবার ইলিশের প্রকৃত স্বাদ পাবেন রসনাবিলাসী বাঙালি
রবিবার, ২৮ জুন ২০২০



প্রতীকি ছবি   স্বপন চক্রবর্তী,বঙ্গ-নিউজ: ৩০ জুন জাটকা ইলিশ ধরা নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা শেষ হবে। পহেলা জুলাই থেকে শুরু হবে ইলিশের ভরা মৌসুম। চকচকে রুপোলি ইলিশের প্রকৃত স্বাদ পাবেন রসনাবিলাসী বাঙালি। কারণ, পরিবেশ-পরিস্থিতি ও আবহাওয়া সবই ইলিশের অনুকূলে। ইতিমধ্যে বড়ো ইলিশ আসতে শুরু করেছে বাজারে। মত্স্য অধিদপ্তরের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন মাস থাকবে ইলিশের মৌসুম। বছরে মোট আহরণের দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি ইলিশ ধরা পড়বে এ সময়ে।

উপকূলের জেলেপাড়া ও মোকামগুলোও ইলিশের প্রাচুর্যে হয়ে উঠবে জমজমাট। লকডাউনে দূষণমুক্ত নদনদী, টইটম্বুর পানিতে অবাধ সাঁতারের সুযোগ আর জাটকা ধরায় বিধিনিষেধের কারণে স্বাদে-গন্ধে, গুণে-মানে সেরা ইলিশ আসবে এবার।

ইলিশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মার্চের শেষভাগ থেকে করোনা ভাইরাসে লকডাউনে আপাত দূষণমুক্ত নদনদীর পানি। আবার ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাবে নদীগুলো থেকেছে কানায় কানায় পূর্ণ। প্রতিকূল অবস্থায় বরাবরের মতো নদীতে অনবরত জেলের জালও পড়েনি। বন্ধ হয়ে যায় বহু কলকারখানা। নদী ও সমুদ্রে ধীবরদের বল্গাহীন নৌকা-ট্রলার চলাচলও অনেকটা কমে যায় লকডাউন এবং করোনা-আতঙ্কে। পদ্মা-মেঘনা-যমুনাসহ বড়ো বড়ো নদীতে লঞ্চ-ইস্টিমার-ট্রলারের চলাচল ও দূষণ বন্ধ ছিল। সব মিলিয়ে এবার ইলিশের ফলন হবে বাম্পার।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এবার অনন্য স্বাদের প্রচুর ইলিশ ধরা পড়বে। এই ইলিশ শুধু শুধু স্বাদে-গন্ধে নয়, আকারেও থাকবে বড়ো। কারণ, বৃষ্টি আর পুবালি বাতাসের যুগলবন্দিতে সাধারণত ইলিশ মেলে। মৌসুমি বায়ু সময়মতো সক্রিয় হওয়ায় এবার সার্বিক আবহাওয়া ইলিশের অনুকূলে। ইলিশের দল সমুদ্র থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে নদীর মিষ্টি পানিতে ডিম পাড়তে আসে, সেই সময় সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে দেদার চোরাশিকার হয়।

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ, অ্যাকোয়াকালচার অ্যান্ড মেরিন সায়েন্স অনুষদের প্রভাষক মীর মোহাম্মদ আলী বলেন, লকডাউনে মানুষ ঘরবন্দি ও জলযান এবং শিল্প-কলকারখানা বন্ধ থাকায় প্রকৃতি ছুটি পেয়েছে, তাই এবার ইলিশ প্রাপ্তির সম্ভাবনা বেশি তৈরি হয়েছে। ইলিশের স্বাদ মূলত দুটো বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। মাছের খাবার আর পানির গুণগত মান। এ বছর দুটোই ইলিশের জন্য অনুকূল। কাজেই এবার কিন্তু ইলিশের স্বাস্থ্য ও স্বাদ ভালো হবে, সেটাই স্বাভাবিক। আর দীর্ঘ সময় মা-ইলিশ ও জাটকা ধরা নিষিদ্ধ থাকায় ধরা পড়বে বেশি।

ইলিশ গবেষকরা বলছেন, ইলিশ গভীর সমুদ্র থেকে নদীতে ঢুকতে শুরু করেছে এখন। প্রায় ৫০০ কিলোমিটার পথ ভ্রমণ করে ইলিশের ঝাঁক। শেষের দিকে এসে তারা পোনা ছাড়ে। এই যাত্রাকে পরিযান বলে। ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ এক প্রান্ত থেকে দৌঁড়ে বেড়ায় অন্য প্রান্তে। বছরভর ভালোই বৃষ্টি হয়েছে এবার। নদীতে পানির পরিমাণও কখনো কমে যায়নি। আম্ফানের প্রভাবে ডুবোচরের বাধা কেটে গেছে। সে সুবাদে ইলিশ নদীবক্ষ ধরে অনেকটা দৌঁড়াবে।

আর এই প্রায় দূষণহীন, পরিষ্কার পানির কারণেই ইলিশের পরিযানের পথ অত্যন্ত সুখকর হয়ে উঠবে এ বছর। শুধু পরিযানের পথ নয়, পরিষ্কার পানির কারণে মাছের খাবারের পরিমাণও বেড়েছে অনেক গুন। সমুদ্রের নোনাপানি থেকে ইলিশ যত নদীর উজানে যেতে থাকে, ততই তার শরীর থেকে ঝরতে থাকে আয়োডিন, লবণের মতো খনিজ পদার্থ।

পরিযানের সময়ে ইলিশ কিছু খায়ও না। তাই ইলিশ যত বেশি মিষ্টি পানিতে দৌড়াবে, তত তার দেহ থেকে কমবে লবণসহ বিভিন্ন খনিজ। একই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ে তার স্বাদ ও গন্ধ। তেলের কারণেই স্বাদ খুলে যাবে ইলিশের।

বাংলাদেশ সময়: ১০:২৪:০৭   ৮২২ বার পঠিত   #  #  #  #  #