সোমবার, ১১ মে ২০২০
সরবরাহকৃত মাস্কের মান নিয়ে প্রশ্ন, প্রতিবেদন দেখা হয়নি মন্ত্রীর
Home Page » জাতীয় » সরবরাহকৃত মাস্কের মান নিয়ে প্রশ্ন, প্রতিবেদন দেখা হয়নি মন্ত্রীরস্বপন চক্রবর্তী.বঙ্গ-নিউজ: করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের কারনে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দ্রুতই বেড়ে চলেছে। আক্রান্ত হচ্ছেন ডাক্তার.নার্স. পুলিশ. ও ব্যাংকার। সেবামূলক কর্মীগণ চরম ঝুঁকির মধ্যে। তাদেরকে সুরক্ষা দেবার অন্যতম একটি হলো মাস্ক। সেই মাস্কই সরবরাহ করা হলো মানহীন। করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসাকর্মীদের জন্য এন-৯৫ মাস্কের মোড়কে সাধারণ মাস্ক সরবরাহের ঘটনা তদন্ত করে কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে ১২ দিন আগে। তবে তা এখনও ‘দেখেননি’ স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
মাস্ক কাণ্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে- জানতে চাইলে রোববার তিনি বলেন, রিপোর্ট দেখে পরবর্তী ব্যবস্থা নেবেন।
গঠিত তদন্ত কমিটি গত ২৮ এপ্রিল স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবের কাছে প্রতিবেদন দেওয়ার কথা ইতোমধ্যে জানিয়েছে।
প্রতিবেদনটি মন্ত্রণালয়ে জমা পড়ার বিষয়টি জানানো হলে জাহিদ মালেক বলেন, করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে অফিসে ‘কম যাচ্ছেন’ তিনি। সে কারণে এখনও প্রতিবেদনটি তার ‘দেখা হয়নি’।
তবে তিনি বলেন, “কেউ যদি ভুল করে থাকে, তাকে ভুলের জন্য যা যা ব্যবস্থা নেওয়া দরকার, সেটা অবশ্যই দেখা হবে। অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে অবরুদ্ধ অবস্থার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে থেকেই সামলাচ্ছেন দাপ্তরিক কাজ। ঘরে বসেই তিনি সভা করছেন, ভিডিও কনফারেন্সে নিচ্ছেন মাঠ পর্যায়ের খোঁজ, দিচ্ছেন নানা নির্দেশনাও।
মাস্কে অসঙ্গতি পাওয়ার বিষয়টি শুনে এমন এক ভিডিও কনফারেন্সেই প্রধানমন্ত্রী তা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নীতিমালা অনুযায়ী, রোগীর নমুনা পরীক্ষা ও চিকিৎসার জন্য সংক্রমণ এড়াতে চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের এন-৯৫ মাস্ক পরা জরুরি।
তবে মার্চের শেষ ভাগে কেন্দ্রীয় ঔষধাগার থেকে বিভিন্ন হাসপাতালে যেসব মাস্ক পাঠানো হয়, তার প্যাকেটে ‘এন-৯৫’ লেখা থাকলেও ভেতরে ছিল সাধারণ সার্জিক্যাল মাস্ক।
ফলে সেগুলো আসল মাস্ক কি না তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন চিকিৎসকরা। চিকিৎসকদের ব্যাপক হারে করোনাভাইরাস সংক্রমণের পেছনে কারণ হিসেবে এই মাস্কের প্রসঙ্গও তুলছেন অনেকে।
রাজধানীর মুগদা জেনারেল হাসপাতাল এবং মহানগর জেনারেল হাসপাতালে কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের দেওয়া মাস্কের মোড়কে লেখা ছিল এন-৯৫ মাস্ক। তবে সেগুলোর ভেতরে সাধারণ সার্জিক্যাল মাস্ক পাওয়া যায়।
কেন্দ্রীয় ঔষধাগারকে এসব মাস্ক সরবরাহ করেছিল জেএমআই হসপিটাল রিকুইজিট ম্যানুফ্যাকচারিং লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর ঘটনা তদন্তে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন অনুবিভাগ) মো. সাইদুর রহমানকে প্রধান করে কমিটি গঠন করা হয়। ২০ এপ্রিল গঠিত এ কমিটিকে ২৪ এপ্রিলের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হলেও পরে আরও পাঁচ দিন সময় বাড়ানো হয়।
২৯ এপ্রিল প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা থাকলেও এর একদিন আগে ২৮ এপ্রিল স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন দেয় কমিটি।
স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মিডিয়া সেলের প্রধান হাবিবুর রহমান খানের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “তদন্ত প্রতিবেদনের ব্যাপারে খুবই গোপনীয়তা বজায় রাখা হয়। এ কারণে আমাকে এ বিষয়ে জানানো হয়নি। আমি যতদূর জেনেছি প্রতিবেদনটি জমা দিয়েছে। তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে। এখনও সিদ্ধান্তে পৌঁছেনি।
“সিদ্ধান্তে পৌঁছালে হয়ত আমি জানতে পারব। আর সিদ্ধান্ত হলে অবশ্যই সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হোক, অভিযুক্ত হলে তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যাবে। আর এটা যেহেতু একটা স্পর্শকাতর ইস্যু। এটার সিদ্ধান্ত হয়ত মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়ই নেবেন।”
করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সামনের কাতারে থেকে যে স্বাস্থ্যকর্মীরা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তাদের সুরক্ষা উপকরণ নিয়ে এই ধরনের গাফিলতির বিষয়টি সামনে আসে মুগদা জেনারেল হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী ওই মাস্কের মান সম্পর্কে জানতে চেয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের পরিচালককে চিঠি দেওয়ার পরে।
বিষয়টি খতিয়ে দেখার পর কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শহিদ উল্লাহ ২ এপ্রিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ব্রিফিংয়ে স্বীকার করেন, ওই মাস্ক সাধারণ সার্জিক্যাল মাস্ক ছিল। প্যাকেটের গায়ে জন্য এন-৯৫ লেখা হয়েছিল ‘ভুল করে’।
বাংলাদেশ সময়: ৯:৩১:১৫ ৪৮৩ বার পঠিত # #করোনা ভাইরাস #মহামারি আকারে করোনা ভাইরাস #সারা বিশ্বে করোনা