সোমবার, ২৭ এপ্রিল ২০২০
গণস্বাস্থ্যের কিট অনুমোদন নিয়ে চলছে গড়িমসি- ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী
Home Page » জাতীয় » গণস্বাস্থ্যের কিট অনুমোদন নিয়ে চলছে গড়িমসি- ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরীস্বপন চক্রবর্তী, বঙ্গ-নিউজ: গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র উদ্ভাবিত করোনা ভাইরাস শনাক্তকরণ টেষ্ট কিট নিয়ে গাফিলতির জন্য স্বাস্থ্য বিভাগকে দায়ি করেছেন প্রতষ্ঠানটির ট্রাষ্টি ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী। নিজেদের উদ্ভাবিত কিট ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে দিতে গিয়েও ব্যর্থ হয়েছেন জানিয়ে রোববার ঢাকার ধানমণ্ডিতে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন তিনি। উল্লেখ্য যে তার পূর্বেও তাকে অনুমতির পাওয়ার জন্য বহুবার উদাসীনতার মুখোমুখি হতে বলে জানিয়ে ছিলেন। অবশেষে মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর হস্তক্ষেপে সেইবার অনুমতি পেয়েছিলেন। সেইজ্য তাঁকে তিনি ধন্যবাদও জানিয়েছিলেন। দেশবাসীও গভীরভাবে আশ আর স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু বারবার কি তাকে স্বয়ং প্রধান মন্ত্রীর দ্বারস্ত হতে হবে ?
এ বিষয়ে জণগণের আশাহত হবার আভাস সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের দিকে তাকালে স্পষ্ট ভাবে বুঝা যায়। আবার অনেকে মোবাইল ফোনেও প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন।
জাফরুল্লাহ চৌধুরী ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, “দুর্ভাগ্য হল, এই ঔষধ প্রশাসন এমন লোকের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে, যারা না ফার্মাসিস্ট, না ফার্মাকোলজিস্ট, না ফিজিশিয়ান।
“যার ফলে এই উদ্ভাবিত কিটের গুরুত্বটা উনারা উপলব্ধি করতে সক্ষম হচ্ছেন না। উনারা সম্পূর্ণ ব্যবসায়িক স্বার্থ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছেন। তারা পাবলিক স্বার্থের চেয়ে প্রাইভেট ইন্টারেস্ট বেশি করে দেখছে।”
বাংলাদেশে নতুন করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর শনাক্তকরণ কিট সঙ্কটের বিষয়টি প্রকাশ পাওয়ার পর দেশীয় প্রতিষ্ঠান গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র তা তৈরিতে হাত দেয়, এর নেতৃত্ব দেন গণস্বাস্থ্য ফার্মাসিটিক্যালসের প্রধান বিজ্ঞানী বিজন কুমার শীল।
শনিবার তারা তাদের উদ্ভাবিত কিট তৈরির পর তার নমুনা আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করতে চাইলেও সরকারের কোনো প্রতিষ্ঠান তাতে সাড়া দেয়নি। শুধু যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি প্রতিষ্ঠান সিডিসি তা গ্রহণ করে।
এরপর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে অননুমোদিত কোনো কিট না ব্যবহারের নির্দেশনা দেওয়া হয়।
জাফরুল্লাহ জানান, ড. বিজন কুমারের নেতৃত্বে রোববার গণস্বাস্থ্যের একটি প্রতিনিধি দল ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে তাদের কিটের নমুনা জমা দিতে গিয়েছিল, কিন্তু তা জমা নেওয়া হয়নি।
স্বীকৃতি প্রতিষ্ঠান দিয়ে নিরীক্ষা করিয়ে আনার কথা বলে ঔষধ অধিদপ্তর তা নেয়নি বলে জানান তিনি।
“তারা বললেন যে, এটা (কিট) আপনারা ভেরিফিকেশন করে আসেন সিআরও (কনট্রাক্ট রিসার্চ অর্গানাইজেশন) থেকে। আমরা বললাম, সিআরওর তালিকা দেন। তারা বললেন, আইসিডিডিআর,বি থেকে করাইয়া আনেন। আমরা বললাম, আইসিডিডিআর,বি তো লকডাউন। আর উনাদের তো পয়সা দিতে হবে।
“আমরা বললাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়কে দিয়ে দেন অথবা আর্মি প্যাথলজি ল্যাবরেটরিকে দেন, যারা ফাংশনাল আছে। তাদেরকে একটা চিঠি লেখে দেন, যারা জনস্বার্থে কাজ করে, পয়সা লাগবে না। তা তারা চিঠি লিখতে পারবেন না।”
এই পরিস্থিতিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে জাফরুল্লাহ বলেন, “আমাদের একটাই আবেদন, সরকার অনুগ্রহ করে বিএসএমএমইউকে একটা চিঠি দেবেন। আমাদের এটা (কিট) পরীক্ষা করে দ্রুত যেন তারা একটা উত্তর দেন। যাতে সরকার এটার চূড়ান্ত অনুমোদন দেন। আমরা দয়া-দাক্ষিণ্য চাচ্ছি না। আমরা নিশ্চিত, আমরা এই কিটের নমুনা পরীক্ষায় সফল হব।”
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে এজন্য ফি দিতে হলে তাতে রাজি গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র, কিন্তু কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে তারা ফি দিতে রাজি নয়।
“সরকারি তহবিলে টাকা দেব, কিন্তু কোনো ব্যবসায়ীকে টাকা দিতে আমরা রাজি নই। এই প্রোডাক্ট বাজারে আসুক, না আসুক, আমরা কখনও ঘুষ দিইনি, ঘুষ দেবও না,” বলেন জাফরুল্লাহ।
ঔষধ প্রশাসন কোনো ঘুষ চেয়েছে কি না- প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “না, তারা কোনো ঘুষ চায়নি।”
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের বিরুদ্ধে নানা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ রক্ষার অভিযোগ করেন তিনি। এতে সরকারের ক্ষতি হচ্ছে বলেও সতর্ক করেন তিনি।
“আমার ধারণা, একটা শ্রেণি সরকারের বিরুদ্ধে কাজ করছে। আমাদের বিজ্ঞানীরা এই কিট উদ্ভাবন করেছেন জনস্বার্থে। এই কিটের সরকারি অনুমোদন একটি দিন বিলম্বের অর্থ হল প্রতিদিন কয়েক হাজার লোক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।”
গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে মুক্তিযোদ্ধা মেজর এ টি এম হায়দার বীরোত্তম মিলনায়তনে এই সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিযোদ্ধা জাফরুল্লাহর সঙ্গে ছিলেন গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুজীব বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. বিজন কুমার শীল, গবেষণা দলের সমন্বয়কারী ড. মুহিব উল্লাহ খোন্দকার, অধ্যাপক ফিরোজ আহমেদ।
জাফরুল্লাহ অভিযোগের বিষয়ে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কোনো প্রতিক্রিয়া তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি।
তবে র্যাপিড টেস্টে করোনাভাইরাস শনাক্ত প্রশ্নবিদ্ধ থেকে যায় বলে তা বিভিন্ন দেশ বাদ দিয়েছে।
বৈশ্বিক মহামারীতে রূপ নেওয়া নতুন করোনাভাইরাস শনাক্তকরণে বাংলাদেশ এখন আমদানি করা কিটের উপর নির্ভর করছে। তার মজুদ এখনও যথেষ্ট রয়েছে বলে জানিয়ে আসছে সরকার।
সরকারি প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআর আরটি-পিসিআর বা রিভার্স ট্রান্সক্রিপটেজ পলিমেরেজ চেইন রিঅ্যাকশন পদ্ধতিতে করোনাভাইরাস শনাক্ত করে, যা নির্ভুল ফলাফল দেয় বলে স্বীকৃত।
এতে নমুনা হিসেবে রোগীর লালা কিংবা শ্লেষ্মা পরীক্ষা করা হয়। নমুনায় করোনাভাইরাস আছে কি না তা বুঝতে ব্যবহার করতে হয় বিশেষ রি-এজেন্ট।
এই পদ্ধতিতে রোগীর নমুনায় করোনাভাইরাসের জিনোম বৈশিষ্ট্যের কোনো জেনেটিক বিন্যাস পাওয়া যায় কি না, তা পরীক্ষা করা হয়।
অন্যদিকে করোনাভাইরাস শনাক্তের অন্য পদ্ধতি র্যাপিড টেস্টে রক্তের নমুনায় অ্যান্টিবডির উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়।
কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে তার রক্তে অ্যান্টিবডি তৈরি হতে পাঁচ থেকে ১০ দিন সময় লাগতে পারে। ফলে, অ্যান্টিবডি তৈরি হওয়ার আগে র্যাপিড কিটে নমুনা পরীক্ষা করা হলে ফলাফল নেগেটিভ হবে। অর্থাৎ, শরীরে ভাইরাস থাকলেও এই পরীক্ষায় তা ধরা পড়বে না।
আবার কেউ আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হয়ে উঠলেও তার রক্তে অ্যান্টিবডি থেকে যাবে। ফলে তার শরীরে ভাইরাস না থাকলেও র্যাপিড কিটের টেস্ট ফলাফল পজিটিভ আসবে।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র র্যাপিড টেস্টের কিট তৈরি করেছে, যার নাম দিয়েছে ‘র্যাপিড ডট ব্লট’। তারা বলছে, এই পদ্ধতিতে করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য খরচ হবে তিনশ থেকে সাড়ে তিনশ টাকা।
বাংলাদেশ সময়: ৯:৫৭:৪৮ ৯৭৯ বার পঠিত # #করোনা ভাইরাস #মহামারি আকারে করোনা ভাইরাস #সারা বিশ্বে করোনা