রবিবার, ১২ এপ্রিল ২০২০
“রঙে ভরা আমার ব্যাংকিং জীবন “-জালাল উদ্দীন মাহমুদ
Home Page » বিনোদন » “রঙে ভরা আমার ব্যাংকিং জীবন “-জালাল উদ্দীন মাহমুদ৯৫তম পর্ব– (৩য় খন্ড)
সপ্দপদী মার্কেট শাখা ,বগুড়া —
- চরিত্রের অপবাদ-৩
-কার আবার? তোমাদের প্রাণের দোস্ত মিন্নাত আলী । ও নীনাকে নাকি কু প্রস্তাব দেয়।
- মিন্নাত ? আমি যেন আকাশ থেকে মাটিতে পড়ে গেলাম। না,না,না-এটা হতেই পারে না, আপা অন্য কেউ হলে না হয় বিশ্বাস করতাম। মিন্নাতের মতো ভদ্র চরিত্রবান অফিসার এই শাখায় আর দ্বিতীয়টি নাই। দেখেন কোথাও ভুল হচ্ছে।
-সেজন্যেই তো তোমাকে ডাকা। তুমি মিন্নাতের চরিত্র সম্পর্কে একটু ভালো করে খোঁজ-খবর নিয়ে আমাকে জানাবে। খবরদার এ কথা মিন্নাত , রফিক ,নীনা বা অফিসের অন্য কেউ যেন বুঝতে বা জানতে না পারে। তোমার মজিবর নানাও না। তোমার নানাও কিন্তু লোক সুবিধার না।
-ঠিক আছে, অফিসের কাউকে আমি এ কথা বলব না। তবে আমাকে একটু সময় দেন। আমি ভাল করে খোঁজ-খবর নিয়ে অবশ্যই জানাব। এখন উঠি। আপা বললেন –আর একটু বসো। এসব কথা শুনে আমার আর বসার প্রবৃত্তি হচ্ছিল না। কিন্তু আপার দিকে তাকিয়ে দেখলাম তিনি এখন দিব্যি খোশমেজাজে আছেন। টেবিলে আঙুল ও তালু দিয়ে কি যেন একটা গানের সুর তোলার চেস্টা করছেন। হঠাৎ আমাকে প্রশ্ন করলেন-কী কুপ্রস্তাব দিছে তা শুনবে না ?
- না না শোনার দরকার নাই , আমি বুঝতে পেরেছি।
-আচ্ছা , তুমি তো আবার কাউকে এ রকম কোনও প্রস্তাব-ট্রস্তাব দাওনি তো ? আপার মুখে কপট হাসি।
- আরে না , আপা কী যে বলেন !
তাড়াতাড়ি বিদায় নেবার জন্য আমি ঝটপট উত্তর দিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে বের হয়ে পড়লাম।
মিন্নাত সম্পর্কে আমি অত্যন্ত উচুঁ ধারনা পোষণ করতাম। তার চরিত্র নিয়ে আপা প্রশ্ন তোলায় আমি গোলক ধাঁধায় পড়ে গেলাম। কথাটি শেয়ার করতে আপা নিষেধ করেছিলেন। আমিও কারো সাথে শেয়ার করতে চাচ্ছিলাম না। বিশেষকরে রফিক সাহেব বা স্বয়ং মিন্নাতের সাথে, নীনার সাথে তো নয়ই। এরুপ পরিস্থিতিতে কখনো পড়ি নাই। কারো মহিলা সংক্রান্ত বিষয়ে চরিত্র ভালো না মন্দ তা বোঝার কায়দা-কানুনও জানা ছিল না। কে যেন বলেছিলো যে, পরীক্ষায় যে নিজে নকল করেনি সে শিক্ষক হলেও অন্যের নকল ধরতে পারবে না। কিন্তু নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা না থাকলেও অনেক অবিবাহিত মহিলা ডাক্তার দিব্যি গাইনি চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন। দেশের নামকরা গাইনি চিকিৎসকের সবাই মহিলা নয় , পুরুষও আছেন , যাদের পেটে বাচ্চা ধারণ করার কোন অভিজ্ঞতা থাকার কথা নয়। দেখি কী করা যায়। বাসায় আমাকে চিন্তিত দেখে তার কারন জানার জন্য আমার স্ত্রী এবং উপস্থিত তার ছোট বোন পীড়াপীড়ি শুরু করলো। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েই ছিলাম – এ কথা আমি কাউকে বলব না। কিন্তু অবিরাম চাপাচাপিতে বাধ্য হয়ে আমি কারনটি তাদের খুলে বললাম। ঐ হাসির সম্পর্কের ছোট বোনটি তীব্রভাবে হাসতে হাসতে বলল- আগে আপনি নিজের চরিত্র খারাপ করেন- তারপর না অন্যকে ধরতে পারবেন। আমার স্ত্রী তার এ জবাব বোধহয় হজম করতে পারল না, দিল ভীষণ এক ধমক। ধমক খেয়ে সে চুপ করে গেল।
রাতে আমার স্ত্রী বললেন জানই তো রতনে রতন চেনে,শুয়োরে চেনে কচু । তুমি বিষয়টি উদঘাটন করতে পারবে না । তোমার অপারগতার বিষয়টি আপাকে জানিয়ে দাও। তাহলেই ল্যাঠা চুকে যায়।
আমি পড়ে গেলাম এক মহা ফাঁপরে। আমি তো তদন্ত করতে রাজি হয়েছি এখন হঠাৎ করে না করলে তো আর হবে না। তাছাড়া না করলে আপা হয়তো বিষয়টি সত্য বলেই ধরে নিবেন। সেক্ষেত্রে মিন্নাত ঝামেলায় পড়তে পারে। অন্যদিকে আবার আপা শর্ত দিয়েছেন মিন্নাত, নীনা , রফিক বা অন্য কাউকে আমি এ কথা বলতে পারব না। তাহলে আমি তদন্ত করব কেমনে ? আগামীকাল আপা যদি জিজ্ঞাসা করে তবে কি জবাব দিব।
ভেবে ভেবে কোনও কূলা-কিনারা না পেয়ে সিদ্ধান্ত নিলাম , আমি আপার কাছ থেকে যতদুর পারি দূরে দূরে থাকব। তা হলে হয়তো আপা আন্তে আস্তে বিষয়টি ভুলে গেলেও যেতে পারেন। এর পর থেকে আমি অফিস ছুটির মিনিট পাঁচেক আগেই অফিস থেকে সটকে পড়া শুরু করলাম। রফিক সাহেব ও মিন্নাত এতে অবাক হয়ে গেল । ভাবল আমি বোধ হয় তাদের সঙ্গ ত্যাগ করেছি।
আসলে আমার আর কিছু করার ছিল না। জানতাম আপা জিজ্ঞাসা করলে প্রথমে আমাকে অফিস শেষে থাকতে বলবে তারপর সবাই চলে গেলে জিজ্ঞাসা করবে। কারণ তার সামনে প্রায় সময়ই কোনও না কোনও কাস্টমার থাকে। তাছাড়া কারো অসুখ-বিসুখ বা সিরিয়াস কিছু বিষয় না হলে কাজ-পাগল আপা সাধারণত অফিস টাইমে ব্যাগ্তিগত কথা বলতেন না।
আর মিন্নাত নিয়ে আমি কী তদন্ত করব, আমি তো তার সম্পর্কে সব জানিই। তবে নীনা সম্পর্কে একটু খোঁজ-খবর নিলাম। কেউ কেউ বলল – সে সন্দেহ প্রবণ আবার কেউ কেউ বলল সে পুরুষ-বিদ্বেষি , তাই এখনও বিয়ে করেনি।
এ দিকে ৮/১০ দিন কেটে গেল। আপা এ ব্যাপারে আর কোন টু’শব্দটিও করলো না। বুঝলাম উনি বিষয়টি ভুলে গেছেন। সেদিন হয়তো টাটকা কমপ্লেইনের প্রেক্ষিতে বলেছিলেন। এখন ভুলে গেছেন। যাক বাঁচা গেল। আমিও এক সময় এ তদন্ত করার বিষয়টি মাথা থেকে মুছে ফেললাম।
বোধহয় মাসখানেক গত হয়ে থাকবে । সে সময় আমার লেজার ব্যালেন্সিং মিলছিল না। আগে আগে অফিস থেকে যাবার কারনে এ কাজে এক্সট্রা সময়ও দিতে পারিনি। সাধারণত এ রকম হলে রফিক বা মিন্নাত আমাকে হেল্প করতো। কিন্তু সেদিন কি যেন কাজে রফিক মিন্নাতকে সাথে নিয়ে অফিস শেষে বের হয়ে গেছেন আর আমি ব্যালান্সিং করছি। ব্যালান্স মেলানোর আজকেই শেষ তারিখ। এক সময় আমার লেজার ব্যালান্স মিলে গেল। ততক্ষণে অফিসের প্রায় সবাই বের হয়ে গেছেন। আপাকে সালাম দিয়ে বের হয়ে যেতে উদ্যত হলাম। কিন্তু বাধা প্রাপ্ত হলাম। আপা বললেন-
-জালাল একটু বসো। (ক্রমশঃ)
+******************************
ডিসক্লেইমারঃ-রঙে ভরা আমার ব্যাংকিং জীবন অনেক পুরানো স্মৃতি নির্ভর আত্মজিবনীমূলক লেখা। স্মৃতি-বিভ্রাট তো ঘটতেই পারে , তাছাড়া মূল ঘটনা বর্ণনা করতে কাল্পনিক সংলাপ বা ঘটনা ,ইত্যাদি সন্নিবেশিত হয়ে থাকতে পারে। তাই বইটির প্রকাশিত এবং প্রকাশতব্য খন্ড /পর্ব সমূহ কে উপন্যাসধর্মী আত্মজীবনী হিসেবে গণ্য করতে হবে।কোনো কোনো ক্ষেত্রে ছগ্দ নামও ব্যবহার করেছি। এ সব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কারো কোন আপত্তি থাকলে আমাকে জানালে তা সংশোধন করে নিব।
/&&&&&&&&&&&&
বাংলাদেশ সময়: ১১:২৭:২৪ ৬৮৬ বার পঠিত #রঙ্গে ভরা ব্যাংকিং.স্মৃতিচারণ মূলক #সাহিত্য. জালাল উদ্দীন মাহমুদের লেখা