শনিবার, ৪ এপ্রিল ২০২০
করোনা ও জলবায়ু মিথষ্ক্রিয়া-মোঃ রফিকুল ইসলাম
Home Page » ফিচার » করোনা ও জলবায়ু মিথষ্ক্রিয়া-মোঃ রফিকুল ইসলাম২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসের আক্রমনের ফলে বিশ্ব অসহায় ভাবে মৃত্যুর মিছিল দেখছে। আমরা ম্যালথাসের জনসংখ্যা তত্ত্বের কথা জানি। ম্যালথাস জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধে দুটি উপায়ের কথা বলেছেন, একটি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা এবং অপরটি প্রাকৃতিক নিরোধ। মানুষ যদি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহন না করে, তবে প্রকৃতি মহামারি, দুর্ভিক্ষ, খাদ্যাভাব, অপুষ্টি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ইত্যাদির মাধ্যমে অতিরিক্ত জনসংখ্যা কমিয়ে দেবে। ১৮০০ সালে পৃথিবীর জনসংখ্যা ছিল ১০০ কোটিরও কম। ১৯০০ সালে তা বেড়ে দাড়ায় ১৬৫কোটি এবং ২০২০ সালে এসে বিশ্ব জনসংখ্যা জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের তথ্যমতে ৭৭১.৫ কোটি। অথাৎ এই ১২০ বছরে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৬০০ কোটি। পৃথিবী কি এই অতিরিক্ত জনসংখ্যার ভার বহন করতে পারছে? এই অতিরিক্ত জনসংখ্যার চাহিদা মেটাতে আমরা পরিবেশকে দূষিত করছি বিভিন্ন উপায়ে। ক্রমবধর্মান অর্থনীতি, নগরায়ণ ও জনসংখ্যা বৃদ্ধিসহ নানাবিধ কারণে পরিবেশের বিভিন্ন উপাদান সমূহের অবক্ষয় হচ্ছে। বায়ুমন্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমান বৃদ্ধি পাচ্ছে। বায়ুমন্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমান বৃদ্ধির ফলে বাড়ছে বৈশ্বিক উষ্ণতা। গলতে শুরু করেছে উত্তর ও দক্ষিণ মেরু অঞ্চলের বরফ। সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে চলেছে বৈশ্বিকি উষ্ণতার সাথে পাল্লা দিয়ে। গত ১০০ বছরে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়েছে ২৫ সেন্টমিটার। জাতিসংঘের আন্তঃসরকার জলবায়ু পরিবর্তন প্যানেল (IPCC) এর মতে, এভাবে মেরু অঞ্চলের বরফ গলতে থাকলে ২০৫০ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা 1 মিটার বাড়তে পারে। এতে বাংলাদেশের অন্তত ১৭ শতাংশ ভূমি তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর এর ফলে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশের প্রায় ৩.৫ কোটি মানুষ।
বিশ্ব জলবায়ুর যখন এই পরিস্থিতি, তখন জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন ফ্রেমওর্য়াক কনভেনশন (UNFCCC) এর আওতায় ২০১৫ সালের ৩০ নভেম্বর হতে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত ফ্রন্সের রাজধানী প্যারিসে ২১ তম জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন (কোপ-২১) অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনে কনভেনশনের সকল সদস্য দেশের (১৯৫ টি দেশ) ঐকমত্যের ভিত্তিতে জলাবয়ু পরিবর্তনের ঐতিহাসিক প্যারিস চুক্তি গৃহীত হয়। এই চুক্তি অনুযায়ী বিশ্বের র্শীষ কার্বন নিঃসরণকারী দেশ সমূহ তাদের কার্বন নিঃসরণের মাত্রা যৌক্তিক পর্যায়ে কমিয়ে ফেলবে। কিন্তু ১ জুন ২০১৭ সালে বিশ্বের ২য় কার্বন নিঃসরণকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্র প্যারিস চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেয়।
যুক্তরাষ্ট্রের প্যারিস চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণায় চুক্তিটি বাস্তবায়ন নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়। কিন্তু ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে কোভিড-১৯ এর আক্রমনে প্রাকৃতিক পরিবেশে লক্ষ্য করা যাচ্ছে ইতিবাচক পর্রিবতন। কোভিড-১৯ এর ফলে দেশে দেশে শুরু হচ্ছে লকডাউন। শিল্প কারখানা, যানবাহন, পাওয়ার প্লান্ট সহ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে প্রায় সকল প্রকার অর্থনৈতিক কর্মকান্ড। এর ফলে পরিবেশ দূষণ কমছে। গ্রিন হাউজ গ্যাস সমূহ, যেমন কার্বন ডাই অক্সাইড, মিথেন, সিএফসি, নাইট্রাস অক্সাইড, ওজোন, জলীয় বাষ্প ইত্যাদি বায়ুমন্ডলের উপাদান সমূহের মাত্রা কমতে শুরু করেছে। বায়ুর গুণগত মান নির্ধারণকারী সুইজারল্যান্ড ভিত্তিক সংস্থা IQAir এর সাম্প্রতিক তথ্যমতে চীন, ইউরোপ, আমেরিকা, পাকিস্তান, ভারত, জাপান ও বাংলাদেশর সহ বিশ্বের বায়ু দূষণকারী প্রধান প্রধান শহর সমূহের বায়ুর গুণগত মান ভাল হতে শুরু করেছে। পানি দূষণের মাত্রা কমে যাচ্ছে।নানান দেশের সমুদ্রের মহীসোপানের কাছে চলে অসছে সামুদ্রিক প্রাণী। বাংলাদেশের কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে দেখা মিলছে ডলফিনের। বিভিন্ন দেশের মানব বসতিতে দেখা মিলছে বন্য প্রাণীর। কিন্তু প্রকৃতির এই সৌন্দর্য কতদিন স্থায়ী হবে?
করোনা প্রার্দুভাব শেষ হলে কী অপেক্ষা করছে আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশের জন্য? বর্তমান অর্থনৈতিক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে নিশ্চই অতীতের থেকেও বেশি পরিমাণে পরিবেশ দূষণের প্রতিযোগিতায় ঝাপিয়ে পড়বো আমরা! তাহলে ভবিষ্যতে বিশ্ব জলবায়ুর নেতিবাচক প্রভাব আগের চেয়েও বেশি লক্ষ্য করা যেতে পারে।
ভবিষ্যৎ জলবায়ু পর্রিবতনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলায় প্যারিস জলবায়ু চুক্তির কোন বিকল্প নেই। প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে ২১০০ সাল অবধি বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয় এবং ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার চেষ্টা করার কথা বলা হয়। প্যারিস চুক্তিতে পূণরায় যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে আনার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে। এ বিষয়ে নভেম্বর ২০২০ সালে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া কোপ-২৬ সম্মেলনে আলোচনা হতে পারে।
সম্প্রতি সুইডিশ জলবায়ু কর্মী গ্রেটা থুনবার্গ তার টুইটারে করোনা ভাইরাস প্রার্দুভাবের কারণে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক আন্দোলন অনলাইনের মাধ্যমে চালিয়ে যাওয়ার আহবান জানিয়েছেন।
মোঃ রফিকুল ইসলাম
সহকারী শিক্ষক (ভূগোল)
খিলগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, ঢাকা।
বাংলাদেশ সময়: ১৯:১১:১৬ ১২৪০ বার পঠিত