সোমবার, ২৩ মার্চ ২০২০

প্রসঙ্গ দ্রব্যমূল্য উর্দ্ধগতিঃ “একটু ধৈর্য”

Home Page » প্রথমপাতা » প্রসঙ্গ দ্রব্যমূল্য উর্দ্ধগতিঃ “একটু ধৈর্য”
সোমবার, ২৩ মার্চ ২০২০



---

আমরা বাঙালিরা সবকিছুতেই একটু ধৈর্য হারিয়ে ফেলি।সেটা আমি সহ।তবু আত্মসমালোচনা করেই বলছি।যেমন -


ঘটনা- ১ঃ

গত তিনদিন পূর্বে আমি মাস্ক খোঁজতে বেরিয়েছি।এমনিতে আমার পরিবারের সকলের মাস্ক আছে তবে একটা করে। ভাবলাম এখন যেহেতু বেশি ব্যবহার হবে তাই জনে দুটো করে হলে সুবিধে হবে।কিন্তু সারা শহর ঘুরেও কোন মাস্ক পেলাম না।শেষে এক মাস্ক পরিহিত ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করলাম আপনি কোথা থেকে মাস্ক কিনেছেন, তিনি উত্তর দিলেন আমি মাস্ক ব্যবসায়ী,আমার দোকান আছে আপনি কি কিনবেন? কতগুলো লাগবে? আমি বল্লাম না ৩-৪ টা লাগবে।উত্তরে জানালেন কিনতে পারবেন তবে ১২০ টাকা করে লাগবে।আমি বল্লাম কেন? জানালেন কেন বলে লাভ নেই,শহরে মাস্ক নেই।আমি বল্লাম না ভাই তাহলে আমারো মাস্কের দরকার নেই।দেখুন এখানেই আমাদের ধৈর্যের একটু পরীক্ষা দিতে হবে।শুনে খুশি হবেন আমি গতকাল করিমউল্লাহ মার্কেটের সামনে থেকে ৩০ টাকা পিস হিসেবে মাস্ক নিয়ে এসেছি অথচ এভেইলেভল,মাস্ক।


ঘটনা-২

হ্যান্ড স্যানিটাইজার খোঁজ নিলাম গত ৪ দিন পূর্বে।সারা শহর ঘুরো স্যানিটাইজার পেলামনা। একটা দোকানে পাওয়া গেল হেক্সাসল(স্যানিটাইজারের অনুরুপ)।দাম জিজ্ঞেস করতেই বললেন ১০০ টাকা লাগবে অথচ এটার মূল্য ৩০ টাকা।ভাবলাম হ্যান্ড ওয়াশ করে চলবো কটা দিন সতর্ক হয়ে।তারপর বাজারে স্যানিটাইজার চলে আসলে কিনে ফেলবো।বিশ্বাস করুন সেই স্যানিটাইজার গতকাল ন্যায্য মূল্যেই কিনে এনেছি।এটাই হচ্ছে ধৈর্য।


ঘটনা ৩ঃ

গত ৩ দিন আগে কালীঘাট পেঁয়াজ কিনতে চাইলাম দেখলাম ৭০ টাকা কেজি অথচ একদিন পূর্বেও ছিল ৪০ টাকা।বাসায় ফোন দিয়ে জানলাম পেঁয়াজে এক সপ্তাহ চলবে তবে সুনামগঞ্জে আত্মীয়ের কাছে শুনেছে পেঁয়াজ শেষ হয়ে যাচ্ছে তাই দু এক কেজি কিনে ফেলতে হবে।আমি ভাবলাম এক সপ্তাহ যেহেতু চলতে পারবো তাহলে আজ আর কিনবোনা।আশা করি দু এক দিনে সরকার বাজার নিয়ন্ত্রন করে ফেলতে পারবে।তাছাড়া পেঁয়াজ যদি শেষ হয়েই যায় তাহলে ২ কেজি কিনেই কি লাভ হবে পরে তো আবার পেঁয়াজ ছাড়াই খেতে হবে তবে কেন এতো বেশি দামে কিনবো? কিনলামনা পেঁয়াজ।বিশ্বাস করুন আমি গতকাল পেঁয়াজ কিনলাম সেই কালীঘাট থেকে ৪৫ টাকা কেজি। তাও একবার বলেছিলাম সরকার তো বলছে ৪০ টাকা শুনে আমার হাতে ধরে অনুরোধ করে বললো দাদা আমাদের একটু খরচ পড়ে গেছে বেশি।যাক মেনে নিলাম।এটাই হলো ধৈর্য।


ঠিক একই ঘটনা ঘটেছে চাল,ডাল, তেলের ক্ষেত্রেও।

আর এটা হওয়ার প্রধান কারণটা একবারে জলের মতো পরিস্কার।ধরুণ আমি গত ১০ বছরেও খোঁজিনি স্যানিটাইজার।সাধারণ সাবান দিয়ে হাত মুখ ধৌত করে চলেছি,সমস্যাও হয়নি, আমার মতো হাজার, লক্ষের ও একই অবস্থা।অপ্রিয় হলেও সত্য অনেকে স্যানিটাইজার নামটাও শুনেনি আগে কখনো আবার কেউ কেউ শুনলেও মনে করেছে এটা সম্তবত ডাক্তারদের ব্যবহার্য জিনিস।পাবলিকলি ব্যবহার করতে পারবে সেটা ভাবেনি কখনো।  কিন্তু এখন হঠাৎ করে স্যানিটাইজার চাচ্ছি সবাই।তাহলে একটা কোম্পানী যেমন ভাবতে পারেনি দেশে “করোনা ভাইরাস” আসবে বা দুর্যোগ আসবে যেকারনে তারা সীমিত প্রোডাক্ট তৈরী করেছে,ঠিক তেমনি দোকানদার বা বিক্রেতারাও কিন্তু ভাবেনি যে উক্ত প্রোডাক্টির চাহিদা এভাবে আকাশ-পাতাল ব্যবধানে বেড়ে যাবে।ফলে তারা অযথা এই প্রোডাক্টটিতে আর্থিক বিনিয়োগ তেমন করেনি।এটা তাদের নির্বোদ্ধিতাও নয় কিন্তু। আর হঠাৎ করে যখন প্রোডাক্টির অকল্পনীয় চাহিদা বেড়েছে তাই একটু ক্রাইসিস তো হবেই এতে সরকারের তেমন কি করার থাকে বলেন?আর মনে রাখবেন এই ধরনের সমস্যা বেশি সময় থাকেনা, থাকবেও না। তাই এই পরিস্থিতিতে হুমড়ি খেয়ে না পরে বা কাইকে দোষারোপ গালাগালি না করে জাস্ট একটু ধৈর্য ধরলেই  আশা সমস্যা থেকে উত্তরণ পাওয়া যাবে শতভাগ।

তাই আমার ম্যসেজটা হলো এই দুর্যোগ মুহুর্তে আমাদের একটু ধৈর্য ধরতে হবে।একবার চিন্তা করে দেখুন আমরা নিজের ঘরটা চালাতে পারছিনা প্রধানমন্ত্রী সারা দেশটা চালাচ্ছেন।স্বভাবিক ভাবেই কিছুটা এদিক সেদিক হতেই পারে।সেক্ষেত্রে নিজেদেরো কিছুটা বুদ্ধি খাটাতে হবে।শুধু শুধু সরকারকে কথায় কথায় গালি দেয়া ঠিক হবেনা।সরকার আপনার সহযোগী প্রতিযোগী নয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীতো বলেছেন পর্যাপ্ত খাদ্য  মজুদ রয়েছে। তাই অযথা এত দ্রুত হতাশ হবেননা।একটা বৈঠকে ২০০  জন মানুষ খেতে বসলে খাদ্য থাকার পরও কেবল পরিচালনার দক্ষতার   অভাবে এক সারি খাবার পায় অন্য সারি একটু দেরিতে খাবার পায় । এটা হতেই পারে।কিন্তু খাবার ঠিকি পায়।তাই অল্পতেই হতাশ হবেননা।তাই  আসুন সরকারকে সহযোগিতা করি,নিজেরা সচেতন হই এবং করোনাকে মোকাবিলা করি,আগামীর পথ সুন্দর মসৃণ করে গড়ে তুলি।সকলের সুস্থতা কামনা করি।

লেখকঃ

জীবন কৃষ্ণ সরকার

সভাপতি,হাওর সাহিত্য উন্নয়ন সংস্থা (হাসুস) বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ সময়: ১১:১১:২৮   ৬৪৫ বার পঠিত