বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২০
প্যানেল নিয়োগঃ অযৌক্তিক দাবি’র একটি
Home Page » আজকের সকল পত্রিকা » প্যানেল নিয়োগঃ অযৌক্তিক দাবি’র একটি
সম্প্রতি প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে রিটকারি একটা পক্ষ অতি উৎসাহে রিট করে যাচ্ছেন প্যানেল নিয়োগের আশায়।দিন দুয়েক আগে তারা ঢাকায় একটি মানববন্ধন ও করেছে।অবাক করার মত বিষয় কিছু অসাধু মিডিয়া এবং উকিল সম্প্রদায় কোমলমতি চাকরিপ্রার্থীদের অনেকটা ফুসলিয়ে রিটগুলো করাচ্ছেন।অনেক উকিলকে রিটে অংশগ্রহণ করতে আহ্বানও করতেও দেখা যায় নিজেদের ঝুলনা পূরনের আশায়।।হ্যা এটা এদেশেই সম্ভব।কারন আমরা জাতি হিসেবে বোনাস পেতে খুব ভালোবাসি।নিজ কর্মের চেয়ে বেশি পাওয়াকে আমরা সৌভাগ্য মনে করি।
আজব ব্যাপার হচ্ছে রিটকারি পক্ষটি এখন পুরো ৩৭০০ হাজারকে এক কাতারে আনতে “প্যানেল নিয়োগ” নামে একটি সুসংবদ্ধ শব্দ এনেছে।তারা উদাহরণও দিচ্ছে প্রাথমিকে প্যানেল নিয়োগের নজির রয়েছে।আরে ভাই আগের পরিস্থিতি আর এখন পরিস্থিতি তো এক নয়।আগে যেটা হয়েছে অপেক্ষমান তালিকা থেকে নিয়োগ দেবার বিধান ছিল তখন অনেকে যারা নিয়োগে ডাক পাননি তারা যৌক্তিকভাবে তাদের অবস্থান ব্যখ্যা করে প্যানেল নিয়োগ চেয়েছে।ফলে সফল ও হয়েছে।কিন্তু এবারের প্রেক্ষাপট কিন্তু ভিন্ন।এবার কিন্তু এটা অপেক্ষমান তালিকা নয়।তাছাড়া রিটকারিরা কিন্তু ভাইবা উত্তীর্ণ ও নয়।তাই কোন যুক্তিতে তারা প্যানেল চান তা বোধগম্য নয়।অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে অনেকটা আবেগ তাড়িত হয়ে প্যানেলের থিউরিটা প্রসব করেছেন।একটা কথা বলে রাখি, রিটকারিরা সবাই নিয়োগ পেলেও আমার ব্যক্তিগত কোন ক্ষতি নেই।কিন্তু সমাজে যখন অসংগতি দেখা দেয় তখন একজন ক্ষুদ্র লেখক হিসেবে দুটি কথা না লিখে পারা যায় না।যেমন আজ বাদে ৪ দিন পর অধিদপ্তর সবাইকে নিয়োগ দেবেই।এর চূড়ান্ত প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন।তাহলে এই যে একের পর এক রিটগুলো হচ্ছে এতে মধ্যস্বত্বভোগিদের কি ফায়দা হচ্ছেনা? এতে কি রিটকারিদের সময় এবং অর্থের অপচয় হচ্ছেনা? যে দেশে ধর্ষকের পক্ষে,মাদক সম্রাটের পক্ষে, প্রকাশ্য দুর্নীতিবাজের পক্ষে আইনজীবি পাওয়া যায় সেখানে রিটকারিরা আইনজীবিদের উৎসাহ পাবেনাতো কি পাবে? আর এই ফাঁদে পা দিচ্ছেন শত সহস্র সহজ সরল প্রাণ।
এবার আসি প্যানেল নিয়োগে সমাজের কি কি অসংগতি দেখা দেবে…
১।প্যানেল নিয়োগ দিতে গেলে সেটা হবে অনেকটা সময় সাপেক্ষ।দু চার বছর লেগে যেতে পারে।কারন ৩৭০০০ শূন্যপদ নিঃসন্দেহে এখন সংরক্ষনে নেই।
২।নিয়োগের দীর্ঘ সুত্রিতার কারনে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া হয়ে যাবে স্থিমিত।ফলে অধিদপ্তরের বছর বছর নিয়োগ দেয়ার বিধান হবে অবহেলিত।যা নানা অসংগতির সৃষ্ট হবে।
৩। যে যাই বলুক ৩৭০০০ প্রার্থী কোন ক্রমেই সমান ক্রমের মেধাবী নয় ফলে নতুন পাশ করা মেধাবীরা হবে বঞ্চিত।যা রিটকারিদের সুবিধা হলেও দেশের জন্য হবে এটা আত্মঘাতি।
৪।একদিকে যেমন নতুন তীব্র মেধাবীরা হবে দিশে হারা অপর দিকে ৩৭০০০ থেকে যারা অযোগ্য অতচ নিয়োগ নেবে তারা কিন্তু সারা জনম একটা মেধাহীন জাতি গঠনে ভূমিকা রাখবে যা এক সময় ভয়ংকর ক্ষতিতে রুপ নেবে।
অতএব কোন ক্রমেই প্যানেল করে নিয়োগ দেবার যৌক্তিকতা দেখা যাচ্ছেনা।যেটা হতে পারে অধিদপ্তর চাইলে ৩৭০০০ এর ভেতর যাদের বয়স একবারে শেষ পর্যায়ে এবং নম্বর ও ভালো রয়েছে তাদেরকে আরেকটা লিস্ট করে কিছু সংখ্যক নিয়োগ দিকে পারে এতে মেধাবীদেরই জয়জয়কার হবে।কোন ক্রমেই গণহারে নিয়োগ দেয়া ঠিক হবে কিনা সেটা অধিদপ্তর ভেবে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
সর্বোপরি নবাগত সকল প্রাথমিক শিক্ষকের প্রতি রইলো অফুরান ভালোবাসা।
জাতি গঠনে আপনাদের অগ্রগণ্য ভূমিকা আশা করছি।
লেখক
জীবন কৃষ্ণ সরকার
সভাপতি হাওর সাহিত্য উন্নয় সংস্থা (হাসুস) বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ সময়: ৯:১৯:৩৯ ১৬০৯ বার পঠিত