শনিবার, ৪ জানুয়ারী ২০২০
হাওরকবি’র ৩৩তম জন্মদিনে বঙ্গনিউজের শুভেচ্ছা
Home Page » Wishing » হাওরকবি’র ৩৩তম জন্মদিনে বঙ্গনিউজের শুভেচ্ছাসুনামগঞ্জের হাওরপারের কৃতি সন্তান, কেন্দ্রীয় হাওর সাহিত্য গণপাঠাগার, বংশীকুন্ডা’র প্রতিষ্ঠাতা,হাওর ভিত্তিক দেশের প্রথম স্বেচ্ছা সেবী সাহিত্য সংগঠন হাওর সাহিত্য উন্নয়ন সংস্থা (হাসুস) বাংলাদেশ’র প্রতিষ্ঠাতা প্রধান, সময়ের অন্যতম লেখক হাওর কবি জীবন কৃষ্ণ সরকার’র ৩৩ তম জন্ম দিন আজ ৪ জানুয়ারী,শনিবার।গত ১৯৮৭ সালের এই দিনে সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার বংশীকুন্ডা ইউনিয়নের বাট্টা গ্রামে এক সাধারণ পরিবারে তাঁর জন্ম।সাধারণ পরিবারে জন্ম হলেও ছোট বেলা হতে কবি ছিলেন অদম্য মেধাবী।জীবনের কোন কিছুকেই বাঁধা মনে করেনি তিনি।তাই তো একাধারে তিনি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হতে গণিত বিষয়ে অনার্স,মাস্টার্স সম্পন্ন করে শিক্ষকতা পেশায় কর্মরত আছেন।শিক্ষকতার পাশাপাশি নিজ জন্মভূমে গড়ে তুলেন গণপাঠাগার,হাওরের জনপ্রিয় স্বেচ্ছাসেবী সাহিত্য সংগঠন হাসুস বাংলাদেশ তাঁর নিজের হাতেরই গড়া।লিখেছেন মাটির পুতুল,হাওরবিলাপ ও হাওর মোদের জীবন মরণের হাওর বিষয়ক কালজয়ী কবিতার বই।পেয়েছেন বিভিন্ন লেখক সম্মাননা।তাঁর সাথে কথা বলে জানা যায় “জীবনে পাওয়ার চাইতে দেওয়াকেই তিনি বেশি পছন্দ করেন)। ইতোমধ্যেই তিনি দেশে ও বিদেশে লেখক সম্মাননায় ভুষিত হয়েছে।আজকের এই দিনে বিশেষ গুণী লেখকের জন্মদিনে বঙ্গনিউজ পরিবারের পক্ষ থেকে অনাবিল শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন! তাঁর সুস্বাস্থ্য ও দির্ঘায়ু কামনা করছি।
তাঁর সম্পর্কে পাঠকদের অবগতির জন্য তরুণ কবি জেনারুল ইসলামের লেখাটি অনুলিপি হিসেবে তুলে ধরা হলো-
একজন পলান সরকারকে সবাই চিনি। বইয়ের ফেরিওয়ালা হিসেবে সবার কাছেই সুপরিচিত। বইয়ের আলো সবার কাছে ছড়িয়ে দিতে ছুটেছেন গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে। পৃথিবী বইয়ের হোক এ লক্ষ্যই ছিল মহান এ ব্যক্তির।
আমরা জানি আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যারের কথা। আলোকিত মানুষ গড়ার লক্ষ্যে গড়ে তুলেছেন বইয়ের সাম্রাজ্য।দেখিয়েছেন আলোর পথ।বইকে ছড়িয়ে দিয়েছেন সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। পড়িলে বই আলোকিত হই, না পড়িলে বই অন্ধকারে রই। সেই ঘোর অন্ধকার থেকে জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করে মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছেন আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার। বই আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কতো প্রয়োজনীয় তা বুঝাতে লিও টলস্টয় বলেছিলেন,”তিনটি জিনিস অতি প্রয়োজনীয় তা হলো বই, বই, এবং বই “।
সত্যিই তাই! বই আমাদের খুব প্রয়োজনীয় জিনিসের একটি। বইয়ের চাহিদা কখনো শেষ হবার নয়। বই অনন্ত যৌবনা
একজন পুলিন সরকার, একজন আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ প্রতিদিন প্রতিক্ষণে জন্মায় না। তবু অব্যাহত থাকে না বইয়ের প্রতি মানুষের ভালোবাসা। তাদের আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে জন্ম নেয় আরো কিছু বইয়ের ফেরিওয়ালা, জ্ঞানের ফেরিওয়ালা। তেমনি একজন আমাদের হাওরপাড়ের মানুষ কবি জীবন কৃষ্ণ সরকার বস্তা কাঁধে নিয়ে ছুটেছেন বইয়ের সন্ধানে এ বাড়ি থেকে ও বাড়ি। কখনো ছাত্রছাত্রীর বাসায়, কখনো বা বিত্তবানদের দোরগোড়ায়, উদ্দেশ্য বই সংগ্রহ করা, গড়ে তোলা পাঠাগার। প্রমথ চৌধুরীর মতো বলতেন “দেহের সুস্থতার জন্য যদি হাসপাতাল চাই তবে মনের সুস্থতার জন্য পাঠাগার কেন নয়।” একটি পাঠাগার গড়ার স্বপ্ন নিয়ে ছুটেছেন বইয়ের খোঁজে।ভেবেছেন হাওরপাড়ের তৃণমূলের মানুষগুলো নিয়ে। তৃণমূলের মানুষজনের মধ্যে সাহিত্য ভাবনা জাগিয়ে তুলতে ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত করেন হাওরসাহিত্য নির্ভর দেশের প্রথম ও একমাত্র সাহিত্য পাঠাগার “কেন্দ্রীয় হাওরসাহিত্য গণপাঠাগার,বংশীকুন্ডা”। হাওরপাড়ের মানুষজনকে বইয়ের আলোয় আলোকিত করতে ২০১৮ সালে গড়ে তোলেন “হাওর সাহিত্য উন্নয়ন সংস্থা (হাসুস) বাংলাদেশ “। হাওরপাড়ের সাহিত্যকে দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিতে পরিচালনা করে আসছেন “স্বপ্নীল হাওর” নামক ইউটিউব চ্যানেল। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলছেন হাওরপাড়ের সাহিত্য নিয়ে। কবি জীবন কৃষ্ণ সরকারের ভাষায় “দিবানিশি আমার একটাই ভাবনা হাওর পাড়ের মানুষজনকে বইয়ের আলোয় আলোকিত করা, শিক্ষার আলো সর্বক্ষেত্রে ছড়িয়ে দেয়া।” পাঠাগার নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেই দিলেন “হাওরসাহিত্য গণপাঠাগারটি আমার আরেকটি সন্তান । সন্তানের মতোই এটিকে আমি ভালোবাসি।”
হাওরপাড়ের মানুষজনের প্রতি দরদমাখা ভালোবাসা থাকলেই কেউ একজন এভাবে বলতে পারেন।
কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক শাহেদ আলী তাঁর জিব্রাইলের ডানা গ্রন্থে আমাদের উল্লেখ করেন এভাবে “খদার অন্দেখায় আমাদের বাস”। হাওরপাড়ে জন্মগ্রহণ করার ফলেই জীবনের এই চরম বাস্তবতাটি উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। অনুধাবন করতে পেরেছিলেন হাওরপাড়ের মানুষের জীবন পরিক্রমা। দেশের সবচেয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চল আমাদের হাওরপাড়ের মানুষ কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক শাহেদ আলীর যোগ্য উত্তরসূরী আমাদের হাওরপারের কবি জীবন কৃষ্ণ সরকার।তিনি লিখে যাচ্ছেন হাওরপাড়ের মানুষদেরকে নিয়ে।অধ্যাপক শাহেদ আলীর পথ ধরেই হাওরবিলাপ কাব্যগ্রন্থে “হাওরের কান্না” কবিতায় কবি জীবন কৃষ্ণ সরকার লিখেছেন-
” হাওরের কান্না হাওরেই শেষ হয়ে যায় দিদিবোন,
সেই কান্না শহুরের অট্টালিকা পর্যন্ত পৌঁছায়না,
পৌঁছুলে কি আর তারা চুপ করে বসে থাকতো?”
চিন্তা করোনা দিদিবোন
পরম করুনাময় তো আছেন
আমরা তার করুনাতেই বাঁচবো।”
শরীর শিহরণকারী এই উক্তিটিতেই বুঝা যায় হাওরের প্রতি অবহেলার দরুণ কতটুকু কষ্ট,বেদনা,ক্ষোভ জমে আছে কবির অন্তকুঠরে।
দুই.
বংশীকুন্ডায় জন্ম নেয়া এই কবি মূলত হাওর কেন্দ্রীক লেখালেখি করেন। দৈনিক স্থানীয় ও জাতীয় বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লিখে যাচ্ছেন নিয়মিত। দৈনিক শিক্ষাবার্তা, বঙ্গনিউজ ডটকম, আমাদের সুনামগঞ্জ,হাওরকন্ঠ, সুনামগঞ্জ মিরর,আলোকিত সুনামগঞ্জ, দৈনিক সবুজ সিলেট, হিজল করচ, সুনামগঞ্জের ডাক সহ বেশ কয়েকটি পত্রিকায় কবির লেখা প্রকাশিত হয়েছে। লিখে যাচ্ছেন কিছু জনপ্রিয় ম্যাগাজিন যেমন তরঙ্গ, মধ্যমণি, জাগরণ, শৈল দিঘী, মনাই নদীর তীরে ইত্যাদি।
কবি জীবন কৃষ্ণ সরকারের প্রথম লেখা “সাবাস বাঙ্গালী” প্রকাশিত হয় ২০০৯ সালে “মধ্যনগর স্টুডেন্ট এসোসিয়েশন সাস্ট ” কর্তৃক প্রকাশিত ‘মধ্যমণি’ ম্যাগাজিনে।
তাঁর প্রথম প্রকাশিত কাব্য “মাটির পুতুল” যা প্রকাশিত হয় ২০১৬ সালে। উল্লেখ্য “মাটির পুতুল” কাব্যটি বংশীকুণ্ডা ইউনিয়নের (বংশীকুণ্ডা উত্তর,বংশীকুণ্ডা দক্ষিণ ) প্রথম প্রকাশিত একক কাব্য।
মাটির পুতুল (২০১৬), হাওর বিলাপ (২০১৭),হাওর মোদের জীবন মরণ (২০১৮), তিনটি সফল কাব্যের জনক হয়েছেন কবি জীবন কৃষ্ণ সরকার। লিখেছেন “স্মৃতির অবয়ব (২০১৬) “ নামের যৌথকাব্যে। যা দুই বাংলার ১৪ জন স্বনামধন্য কবিদের লেখা স্থান পেয়েছে। বাংলা একাডেমির বর্তমান পরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী’র ও কবিতা রয়েছে এটিতে।
কবি জীবন কৃষ্ণ সরকারের কাব্য বা কবিতার শিরোনামে চোখ বুলােই বোঝা যায় যে তিনি কোন ধরনের লেখালেখি করেন। কাব্যের নাম যদি হয় “হাওর মোদের জীবন মরণ” কিংবা “হাওর বিলাপ” তাহলে কবি জীবন কৃষ্ণ সরকারকে তো হাওরকবি বলাই যায়। যেখানে কবি নিজেই হাওরকে জীবনে মরণে মেনে নিয়েছেন
স্মৃতি কখনো হাসায় কখনো বা কাঁদায়। কখনও মধুর নয়তো বেদনাবিধুর। তবু সবাই স্মৃতিকে আগলে ধরে বেঁচে থাকতে চায়।চলুন দেখে নেয়া যাক কবির কাব্য স্মৃতিতে কি উঠে আসে।
“পল্লী মায়ের বুকে” কবিতায় কবি তাঁর শৈশব স্মৃতি তুলে ধরেছেন । অকপটে স্বীকার করেছেন ছেলেবেলার কথা-
“বিকাল বেলায় পল্লী মাঠে
চড়াই আমি গরু
খোশ মেজাজে সবাই মিলে
খেলা করি শুরু”
(কাব্যঃ হাওর মোদের জীবন মরণ, পৃষ্ঠা-১১)
হাওরকবি বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছে দিতে চান হাওরবাসীর বুকফাটা আর্তনাদের কথা।হাওরবাসীর দাবী ও অধিকারের কথা।
“হাওর থেকে বলছি” কবিতায়-
হে তাবৎ বিশ্ববাসী!
তোমরা কি শুনেছো নিরীহ হাওরবাসীর বুকফাটা আর্তনাদ?
তোমরা কি কভু দেখেছো কৃষাণ-কৃষাণীর ক্রন্দন?”
একই কবিতার শেষ ছত্রে লিখেছেন-
“আমি হাওর থেকে বলছি
হাওরের অন্ত-গহ্বর থেকে বলছি
দেখে যাও দেখে যাও
হে তাবৎবিশ্ববাসী “
(কাব্যঃ হাওর মোদের জীবন মরণ,পৃষ্ঠা-১৩)
“একদিকে বাঁধ ভাঙ্গার পানি অন্যদিকে
তুমুল বৃষ্টি, আর কি রক্ষিতে পারে নিজেকে?
একের পর এক তলিয়ে গেলো সোনার ফসলখানী।
কৃষকের ক্রন্দন পারেনি গলাতে বিধাতার মন
এভাবে চলছে হাজার বছর ধরে হাওর পাড়ের
নেহায়েত কৃষকের জীবন।”
(কাব্যঃ হাওর বিলাপ)
কবি নিজেকে হাওরপাড়ের ছেলে হিসেবে গর্বভরে পরিচয় দিয়েছেন পল্লীমায়ের বুকে,অজো পাড়ার কবি, নিঝুম রাত, মনাই পাড়ের ছেলে, হাওর পাড়ের মানুষ,রাখাল বালক, হাওরপাড়ে জন্ম আমার, হাওর মোদের জীবন মরণ শিরোনামের কবিতাগুলোয়। নিজেকে হাওরের সাথে নাড়ীর বন্ধনের ছান্দসিক সুবিশাল বর্ণনা দিয়েছেন।
হাওর জলে তৃষ্ণা মেটানোর কথাও ভুলেননি কবি। ছেলেবেলার দুষ্টুমির কথাও তুলে ধরেছেন তাঁর কবিতায়….
“বর্ষাকালে ঢেউয়ের তালে
নানুর বাড়ি যাওয়ার চলে
একা কিংবা সদলবলে
কলার ভেলায় চড়ি!
মনাই পাড়ের ছেলে আমি
মনাই পাড়ে বাড়ি।”
(কাব্যঃ হাওর মোদের জীবন মরণ, পৃষ্ঠা-২০)
কবি হাওর পাড়ের মানুষ। নিজেকে আবিষ্কার করেন জলে,স্থলে,কাদায়। গড়াগড়ি করেন কাদা-জলে। হাওর জলের পান্ডুলিপিতে লিখেন মনের গহীনের না বলা কথা। কখনো কবির ভাষায় কখনো বা এলোমেলো অগুছালো মনের ভাষায়। তাই তো কবি বলেন-
“ছন্দ ছাড়াই অন্ধ মায়ায়
লিখতে কিছু বসি
শুধু জানি জন্ম থেকেই
হাওর ভালোবাসি”
(কাব্যঃ হাওর মোদের জীবন মরণ, পৃষ্ঠা -২৩)
প্রিয় দেশ যখন অরাজকতায় ছেঁয়ে যায়,চারদিকে খুন,ধর্ষণ, রাহাজানি কবি’র কলমও সেদিন থেমে থাকে না। অন্যায়,অত্যাচার,অবিচারের বিরুদ্ধে সদা সোচ্চার জাগ্রত কলম সৈনিক।
ভালোবাসি এ দেশটাকে কবিতায়-
“যখন শুনি দুর্নীতিবাজ
গড়ছে টাকার পাহা
মনের দুখে সেদিন আমি
বর্জন করি আহার”
(কাব্যঃ হাওর মোদের জীবন মরণ,পৃষ্ঠা-২৬)
কবি বাস্তব জীবনে অনুভব করেছেন সমাজের অবিচার, স্বীকার হয়েছেন বৈষম্যের। তাই লিখতে পেরেছেন চরম বাস্তবতা
“ছোট্ট হতে কোনো ক্লাসে
ফেল করি নি কভু
ভাইভা বোর্ডে প্রশ্ন বাণে
ছাড় দিলো না তবু,
জিজ্ঞাসিল আমেরিকার
পিয়ন সংখ্যা কতো
কত জন লোক এমএসসি পাশ
আছে তোমার মতো?
(কাব্যঃ মাটির পুতুল, পৃষ্ঠা -১১)
এখানে কবি চলমান চাকরির ভাইভাতে কিভাবে চাকরি প্রার্থীদের আজগুবি প্রশ্নের মাধ্যমে হতাশ করা হয় এবং দুর্নীতির নীল নকশা বাস্তবায়ন করা হয় তার কিছুটা ইঙ্গিত প্রদান করেছেন যদিও সাম্প্রতিক কালে এব্যাপারে দেশের অবস্থা কিছুটা উন্নতির দিকে রয়েছে।
স্বাধীনতার মানে কি? গুম,খুন,হত্যা,রাহাজানি নাকি নিরাপত্তাহীনতা।
কবি বুঝিয়েছেন প্রকৃত স্বাধীনতা।
স্বাধীনতার মানে কবিতায়-
“অন্যের ক্ষতি ব্যতিত যতুটুকু চাওয়া কিংবা পাওয়ার অধিকার
সেটাই হচ্ছে তোমার জন্য প্রকৃত স্বাধীনতা “
(কাব্যঃ হাওর মোদের জীবন মরণ,পৃষ্ঠা-৪৩)
কবি দেশকে ভীষণ ভালোবাসেন,দেশকে নিয়ে গর্ববোধ করেন তাইতো তিনি লিখে যান-
বুক ফুলিয়ে গর্ব করি জন্মেছি এই দেশে
সারা জনম থাকবো মোরা দেশকে ভালোবেসে।
জন্ম ভূমির এদেশটি ভাই সবার চেয়ে সেরা
সুজলা,সুফলা,শস্য,শ্যামলা ফুলে ফুলে এদেশ ভরা।
(জন্মভূমির মাটি,হাওরবিলাপ কাব্যগ্রন্থ)
কবি হাওরকে জীবনে,মরণে,শয়নে,স্বপনে মেনে নিয়েছেন। তাইতো সন্তানতুল্য কাব্যের নাম দেন ” হাওর মোদের জীবন মরণ”। কাব্যের নামের শিরোনাম কবিতায়-
“হাওর বাঁচলে আমরা বাঁচি
বাস্তবতা তাই
হাওরই মোদের জীবন-মরণ
আবার বলে যাই”।
তিন.
কবি হাওরের সুখ দুঃখের পাশাপাশি হাওরের রূপ বৈচিত্র্য সৌন্দর্যময় দিকগুলো ফুটিয়ে তুলেছেন তার কাব্যের পরতে পরতে। আহ্বান করেছেন হাওরপাড় ঘুরে ঘুরে সৌন্দর্য্য উপভোগ করার জন্য।
রক্তরাঙা শিমুলিয়া কবিতায়-
“শান্তি যদি নেমে থাকে এ ধরায়
ওরে তোরা দেখবে কে কে আয়,
দেখে যা এক পলক,
শিমুলের রঙিন আভার ঝলক”
(কাব্যঃ হাওর মোদের জীবন মরন,পৃষ্টা-৩৪)
কবি তার লেখাতে বাস্তবিকতার বিষয়গুলোকে খুব চমৎকার ভাবে রূপ দিয়েছেন। যার প্রমাণ বিদায় শিরোনামে কবিতা
“বিদায় কথাটি হৃদয়বিদারক বটে,
কে রয়েছে চিরস্থায়ী জীবন নদের তটে?
কেহ আগে কেহ পরে,এইতো ভবের খেলা
কেহ অঙ্কুরে,কেহ ভঙ্কুরে,সবি যে তাহারি লীলা “
(কাব্যঃ হাওর মোদের জীবন মরণ,পৃষ্ঠা-৩৯)
কবিতায় প্রেম,ভালেবাসা,মানবিকতা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কবির ব্যক্তির জীবন তথা কবিতায়ও তার নিবিড় প্রতিফলন ঘটেছে।ভালোবাসা মানে নোংড়ামী নয়, কবির ভালোবাসা পূত পবিত্র।
“ভালোবাসা ছাড়া যেমন মানুষ অন্ধ
তেমনি ভালোবাসা অন্ধ মানবিকতা ছাড়া/
হৃদয় অন্তঃপুরে মানুষের প্রতি হৃদ্যতা
অন্তরঙ্গতা সৃষ্টির নামই কারোপ্রতি তোমার প্রকৃত ভালোবাসা”
কবিতাঃ ভালোবাসা ও মানবিকতা
(কাব্যঃ হাওর মোদের জীবন মরণ)
কবি জীবন কৃষ্ণ সরকার কাছ থেকে হৃদয় দিয়ে অনুভব করেছেন হাওরের দুঃখ, হাওরপাড়ের মানুষের বুকফাটা আর্তনাদ। সরেজমিনে প্রত্যক্ষ করেছেন কৃষক, শ্রমিক, জেলেদের হাহাকার,স্বপ্নভঙ্গের ইতিহাস। তা-ই তো কবির কবিতায় ফুঁটে ওঠেছে “হাওর বিলাপ”। যিনি হাওরের কথা বুঝেন । কান পেতে শুনেন হাওরের আর্তনাদ।
রঙিন ঝিলমিল আলোয় প্রেয়সীর মাংস্তুপের বর্ণনা কিংবা একগুচ্ছ নোংরামীর শব্দযোগে প্রেমপদ্য অনেকেই লিখতে পারে কিন্তু ক’জনই বা পারেন মানুষের দুঃখ, দুর্দশা, হাহাকার, আর্তনাদের কথা কলমের খোঁচায় ফুঁটিয়ে তোলতে। হাওরকবি জীবন কৃষ্ণ সরকার তা পেরেছেন। যার কবিতায় ভেসে উঠে অবহেলিত, লাঞ্চিত, বঞ্চিত, হাওরপাড়ের মানুষের কথা। যার কবিতার থিম হয় অকাল বন্যার সর্বনাশী গ্রাস, বাঁধ(জাঙ্গাল)ভাঙ্গার আর্তনাদ, জেলেদের অধিকার, কৃষকের ধানের নায্যামূল্য কিংবা হাওরপাড়ের বরাদ্দ নিয়ে।
তিনি হাওর জলে প্রেয়সীর ভেজা অর্ধনগ্ন ছবির প্রতিচ্ছবি খোঁজেন না, খোঁজেন না ঢেউয়ের তালে তালে যৌবনের উচ্ছ্বাস। তিনি ঢেউয়ের তালে শুনতে পান কৃষকের স্বপ্ন ভাঙ্গার গান, ক-তো স্বপ্নের সলিল সমাধি, ক-তো অপ্রাপ্তির কাব্য উপন্যাস,ক-তো বিরহ জ্বালা, হৃদয় ভাঙ্গার কবিতা ।
তিনি সরেজমিনে ঘুরে ঘুরে দেখেন একদল যুবকের জাঙ্গাল (বাঁধ) রক্ষার ব্যর্থ প্রয়াস। যুদ্ধের ময়দানে কখনো বা নেমে পড়েন সেনাপতির দায়িত্ব নিয়ে।যুদ্ধ করেন জীবন সংগ্রামে। জন্ম থেকে জ্বলে আসা হাওরপাড়ের মানুষের দুঃখে ব্যতিত হন হাওরকবি জীবন কৃষ্ণ সরকার।
চার.
হাওরকবি জীবন কৃষ্ণ সরকারের জীবনে রয়েছে কিছু বেদনাবিদুর স্মৃতি।কবির বড় দুই ভাই জন্মের পর পরই মারা যায় অজানা কারনে।মা বাবার তৃতীয় সন্তান হিসেবে তাঁর জন্ম।তাঁর মা-বাবার মুখ থেকে জানা যায় জন্মের পর পরই কবির ও একই অবস্থা।গ্রামের ভাষায় যা “ভূতের আশ্রয়” বলে জানা যায়।মা বাবা কান্নাকাটি করে বিদায় দেবার পালায় উপনীত হন তাঁরা।বিদায়ের পূর্বে কবির কপালে সুঁচ পুড়ে দাগ দেয়া হয় গ্রাম্য বিশ্বাস মতে যাতে মৃত্যুর পর পূনর্জন্ম হলে তাঁর কপালে দাগটুকু থাকে এবং আগুনের স্ফুলিঙ্গের উপর ধরে রাখা হয় কবিরাজি চিকিৎসা মতে। সেই দাগ টুকু আজো কপালে বহন করে চলেছেন তিনি। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বিধাতা সেদিন বাঁচিয়ে দিয়েছিলেন আজকের তৃণমূল হাওরসাহিত্য আন্দোলনের প্রবক্তা তথা হাওরভিত্তিক সাহিত্য ধারার জনক আজকের জীবন কৃষ্ণ সরকারকে। সেজন্য যখনই এই কথাগুলো মনে করেন তখনই স্রষ্টার কাছে কেঁদে কেঁদে হাজারো কৃতজ্ঞতা জানান কবির বাবা বাউল সুধীর রঞ্জন সরকার।কবির মুখ থেকে জানা যায়,পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পড়া লেখার করার পর পারিবারিক অনটনের মাঝে তাঁর পড়ালেখা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়,রাখালের বেশে দিন কাটাতে থাকেন কবি জীবন কৃষ্ণ।প্রায় তিন বছর পর কবির একদিন চেতনা জাগ্রত হয় তাঁকে পড়ালেখা করতে হবে, অনেক বড়োহতে হবে,সমাজের জন্য,মানুষের জন্য একটা কিছু করে যেতে হবে।সেদিন সন্ধ্যায়ই মা-বাবার সাথে এবিষয়ে কথা বলেন কবি। আর্থিক দন্যতার দরুণ প্রথমে রাজি না হলেও এক পর্যায়ে রাজি হন কবির বাবা মা।শুরু হলো কবির নতুন জীবন।তিন বছর পর পড়ালেখা শুরু করেও কোন প্রকার প্রাইভেট না পড়েই সহপাঠীদের মাঝে প্রথম স্থান লাভ করেন তিনি।কলেজে ভর্তি হওয়ার স্মৃতিচারন করতে গিয়ে তিনি বলেন- অনেক আশা নিয়ে গ্রাম থেকে বাবার সাথে সিলেট রওয়ানা দেই এমসি কলেজে ভর্তি হবার জন্য।কিন্তু বিধি বাম! যার সাথে যোগাযোগ করে সিলেট আসি শেষতক তিনি একরাত্রিও আশ্রয় দিতে পারেননি।সারা রাত চোখের পানি ফেলে বাবা - ছেলে হোটেলে রাত্রিযাপন করে পরের দিন চলে যাই সুনামগঞ্জে এক আত্মীয়ের বাসাতে।যোগ্যতা থাকা সত্যেও সেদিনের এমসি কলেজে ভর্তি হতে না পারাটা আমার জীবনে ছিল চরম হতাশার দিন।তবু পেঁছপা হইনি।সুনামগঞ্জ লজিং থেকেই শুরু করি দুর্দম সাহসে কলেজ জীবনের পড়া লেখা”।
“বিধির এই দুনিয়ায় কপালে কি আছে কিছুই না বুঝা যায়,
আজ আছি যেমন,কাল থাকবো কেমন কেবল স্রষ্টাই জানতে পায়”।
হে ঠিক তাই।প্রিয় পাঠক, কে জানতো সেদিন এক রাত্রির জায়গা নেই ছেলেটি আজ দেশ সেরা শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিত বিষয়ে অনার্স, মাস্টার্স করে সিলেটেই স্থায়ী চাকরি করবে,স্ত্রী-পুত্র নিয়ে সেই সিলেটে বসবাস করবে?
সিলেটে যে একবার এসেছে সিটি সেন্টার শপিংমলটি দেখেননি এমন কেউ নেই বললেই চলে।এই শপিংমলটি তখন(২০০৫) নির্মানাধীন।সেখানে রাজমিস্ত্রীর সাথে কেটেছে কবি’র প্রায় দুই মাস।তাদের সাথেই খেয়েছেন,থেকেছেন।পড়ার কোন ব্যবস্থা না থাকায় একজন রাজকর্মীর নামাজ পড়ার ব্র্যাঞ্চে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার বইগুলো পড়তেন।তাঁর পড়া দেখে সেই ব্যক্তিটি একদিন তাঁকে ব্রাঞ্চটি পড়ার জন্য দিয়ে দেন।জীবনের অনেক স্মৃতি ভুলে গেলেও এই স্মৃতিটি তিনি বলে বেড়ান বছরের পর বছর।সেদিন থেকেই তিনি আদর্শ হিসেবে মানবতা,মানবসেবাটাকেই বেঁচে নেন।যখনই এই স্মৃতিটুকু মনে করেন তখনই তিনি ঐ পরোপকারি ব্যাক্তিটির জন্য পরম স্রষ্টার কাছে প্রাণ ভরে দোয়া করেন।সেই সাথে জিন্দাবাজার যেতে শপিংমল সিটি সেন্টারটি যখনই কবির সামনে পড়ে তখনই কবি একপলক থমকে দাঁড়ান।এমন শতো শতো বেদনাবিদূর স্মৃতি কবির জীবনে রয়েছে যা একটি কলামে তুলে ধরা কখনোই সম্ভব নয়।আরো একবার সময় হলে আপনাদের কাছে হাওরকবির আরো অজানা অধ্যায় জানাতে পারবো বলে বিশ্বাস করি।
এতো হতাশা দুঃখের মাঝেও হাওরকবি জীবন কৃষ্ণ সরকারের জীবনে রয়েছে বর্ণাঢ্য রঙিন কিছু দিন। একদিকে তিনি দেশের প্রথম ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) থেকে গণিতে এমএসসি সম্পূর্ণ করেন।সেটা যেমন তার পরম পাওয়া অপরদিকে অত্যাধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েও নাড়ীর টানে, প্রাণের টানে,হাওর পাড়ের মানুষের ভালোবাসার টানে, বঞ্চিত মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে হাওরপাড়ের মানুষজনকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করতে প্রত্যন্ত অঞ্চল নিজ এলাকায় শিক্ষকতায় যোগদান করেন এটাও ছিলো তাঁর জীবনের আনন্দেরই একটা অংশ।তিনি পারতেন রঙিন শহরে রঙিন বর্ণাঢ্য জীবন যাপন করতে। কিন্তু বিদ্যা অর্জন করে অর্জিত সেই বিদ্যাকে নিজ এলাকার অন্ধকার মানুষজনের মধ্যে বিসর্জন দিতে ছুটে গিয়েছিলেন হৃদয়ের টানে। অবশ্য যে আশা প্রত্যাশা নিয়ে জন্মস্থানে শুরু করেছিলেন সংগ্রামী জীবন তা পুরো সফল হতে না পারলেও ব্যর্থ হন নি। তাঁর দেখানো পথ ধরে সেই পথে হাঁটছে হাওরের অনেক উদ্যোমী মানুষ।তাঁর রঙ্গিন দিনগুলোর মাঝে অন্যতম আরেকটি দিন একুশে বইমেলা -২০১৮ তে বঙ্গনিউজ লাইভ মঞ্চে তাঁর রচিত “হাওরবিলাপ” কাব্যগ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করতে পেরেছেন হাওর ভিত্তিক কোন বইয়ের লেখক হিসেবে।হাওরের মানুষের কথা বলতে পেরেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক,জনপ্রিয় পত্রিকা বঙ্গনিউজ সম্পাদক ড. লুৎফুর রহমান জয়,জাতীয় কবি পরিষদের সভাপতি টিপু রহমান, প্রিয়জন কাব্য পরিষদের কবি জহিরুল বিদ্যুৎ,কবি ইভা আলমাস সহ দেশ সেরা গুণীজনদের সামনে। এটা কবির জীবনে অনন্য একটি দিন।তাছাড়া অবহেলিত হাওরবুক বংশীকুন্ডায় হাওরের বিভিন্ন জেলা থেকে কবি সাহিত্যিক উপস্থিত করে দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো তাঁর প্রতিষ্ঠিত হাওর সাহিত্য উন্নয়ন সংস্থা (হাসুস)র মাধ্যমে ১ম হাওর সাহিত্য উৎসব সফল ভাবে সমাপ্ত করেন যা হাওরের ইতিহাসে বিরল।হাওরবাসীর মুখে হাওরসাহিত্য উৎসব শব্দটি যেনো সদ্য জন্ম নেয়া কোন শিশুর ব্যতিক্রমী নাম।সেই দিনটির কথা হাওরবাসীও ভুলেননি,হাওরকবি ও ভুলেনি কোন মুহর্তের জন্যও।কোন কিছুর আশায় গুণীজনেরা কাজ না করলেও কাজের মূল্যায়ন হিসেবে কেউ কোনকিছু পেলে স্বাভাবিক ভাবেই সে আনন্দিত হন।হাওরকবিও তার ব্যতিক্রম নয়।তাঁর লেখা -লেখির স্বীকৃতি স্বরুপ তিনি তরুণ লেখক পদক ২০১৬ ( জালালাবাদ কবি ফোরাম কর্তৃক) প্রতিদিনের সেরা কবি পদক-২০১৯ ( প্রিয়জন কাব্য পরিষদ (প্রিসাপ) কর্তৃক, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্য সংগঠন অমরত্ব সাহিত্য পরিষদ কর্তৃক “সাপ্তাহিত অমরত্ব সম্মাননা - ২০১৯
অর্জন করেছেন যা কবির জীবনে অনুপ্রেরনা হিসেবে কাজ করবে বলে আশা করি।
পাঁচ.
হাওরকবি জীবন কৃষ্ণ সরকারের সাহিত্য জীবন শুরু ছাত্রাবস্থায় থেকেই। বলতে গেলে পৈতৃকসূত্রে, কেননা কবি’র বাবা সুধীর রঞ্জন সরকার একজন বাউল শিল্পী। বিভিন্ন মঞ্চে বাউল গান করে বহু সুনাম কুড়িয়েছেন এই গুণী শিল্পী,পেয়েছেন অনেক সম্মাননা পুরষ্কারও। বাবার কাছ থেকেই দেশপ্রেম, সাহিত্যপ্রীতি, হাওরপ্রীতির,অসাম্প্রদায়িকতার শিক্ষা পান। বাবা যখন বাউল শিল্পী, আধ্যাত্মিক জগতের বাসিন্দা পুত্র তো তখন কবি-ই হবেন।
পারিবারিক আর্থিক দৈন্যতার মাঝেও হাওরকবি জীবন কৃষ্ণ সরকারের শিক্ষা জীবন অত্যন্ত উজ্জ্বল ছিলো ।ছোটোবেলা থেকেই মেধাবী ছাত্র হিসেবে বেশ পরিচিত। ২০০৩ সালে এসএসসি পরীক্ষায় কেন্দ্রের সর্বোচ্চ ফলাফল করে কৃতিত্বের সাথে উর্ত্তীণ হয়ে ভর্তি হন ঐতিহ্যবাহী সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজে।২০০৫ সালে সফলভাবে এইচ এসসি সম্পন্ন করে ১মবার ভর্তি পরীক্ষাতেই দেশ সেরা শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিদ্যালয়ের ১ম মেধা তালিকায় জায়গা করে নেন সময়ের অন্যতম মেধাবী এই বীর।হে তিনিই যিনি জীবনে কখনো কোন স্যারের কাছে প্রাইভেটতো পড়েনই নি বরং ছাত্রবস্থা থেকেই বিভিন্ন শিক্ষার্থীেদর সহযোগিতা করে চলেছেন বিনামূল্যে।শিক্ষকতা পেশার মধ্যেও পাওয়া যায় তাঁর মেধার স্বাক্ষর।এলাকার নব প্রতিষ্ঠিত লায়েছ ভূঁইয়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে গণিতের শিক্ষক হিসেবে যোগদানের পর ১ম বছরেই অষ্টম শ্রেণীর বোর্ড পরীক্ষায় গণিতে ৭ টি এ+, ২৪টি এ গ্রেড,১ম বছর এস এসসিতে গণিতে ৭টি এ+ (তিনজন জিপিএ ফাইভ), দ্বিতীয় বছরেও দুইজন জিপিএ ফাইভ ফলাফল প্রত্যন্ত হাওর অঞ্চলের জনমানুষকে নতুনভাবে ভাবতে শেখায়।ভাবনার কারিগর আর কেউ নয় আমাদের আজকের হাওরকবিই হাওরবাসীর উচ্চ স্বপ্ন,উচ্চ আকাঙ্খা তথা ভাবনার অন্যতম কারিগর।
সাহিত্যের সাথে যে পেশাগুলো নিবিড়ভাবে জড়িত তা হলো শিক্ষকতা বা সাংবাদিকতা। কবি জীবন কৃষ্ণ সরকার শিক্ষকতার সাথে নিজেকে জড়িত করেন ২০১০ সালে অনার্সে তৃতীয় বর্ষে পড়ার সময়ে হযরত শাহজালাল (রঃ) উচ্চ বিদ্যালয়, জালালপুর, সিলেটে এ খন্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে। তারপর সিলেট সিটি স্কুল এন্ড কলেজ,সিলেট এবং লায়েছ ভুঁইয়া স্কুল ও কলেজে চার বছর শিক্ষকতা করেন।
বর্তমানে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার প্রগতি উচ্চ বিদ্যালয়ে গণিতের শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন।
আমি মনে করি একজন সাহিত্যিক মানেই একজন সংগঠক। কবি জীবন কৃষ্ণ সরকারও তার ব্যতিক্রম নন। ছাত্রাবস্থা থেকেই সম্পৃক্ত বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাথে বংশীকুণ্ডা ছাত্রকল্যাণ পরিষদ,সিলেট; মধ্যনগর স্টুডেন্ট এসোসিয়েশন (সাস্ট); হাওরপাড়ের ধামাইল বাংলাদেশ, বাংলাদেশ কবি সভা, জালালাবাদ কবি ফোরাম, বিশ্বকবি লেখক ফোরাম,গাঙচিল সাহিত্য সাংস্কৃতিক পরিষদ, নিজ প্রতিষ্ঠিত কেন্দ্রীয় হাওরসাহিত্য গণপাঠাগার, হাওর সাহিত্য উন্নয়ন সংস্থা ও হাসুস রক্তদান ইউনিটের মতো সামাজিক ও সাহিত্য সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করছেন।
বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হাওরপাড়ের মানুষের কবি আজকের হাওরকবি জীবন কৃষ্ণ সরকার জন্মগ্রহণ করেছেন ভাটির রাজধানী, আধ্যাত্মিক নগরী, গানের শহর, বাউলের শহর,জল-জোছনার শহর সুনামগঞ্জ জেলার ধরমপাশা উপজেলাধীন বংশীকুণ্ডার বাট্টা গ্রামে ১৯৮৭ সালের ০৪ ই জানুয়ারি।
পিতা সুধীর রঞ্জন সরকার ও মাতা মিলন রাণী সরকারের তিন ছেলে দুই মেয়ের মধ্যে কবি প্রথম।সংসার জীবনে কবি খুব সুখী। সহধর্মিণী বিনতা কৃষ্ণ সরকার একজন শিক্ষানুরাগী ও সাহিত্যমনা মানুষ। সাহিত্য সাধনার নিত্যসঙ্গী কবি’র সহধর্মিণী বিনতা কৃষ্ণ সরকার। একমাত্র পুত্র বিজয় কৃষ্ণ সরকারকে নিয়ে সুন্দর সুখের সংসার জীবন অতিবাহিত করছেন কবি জীবন কৃষ্ণ সরকার।
হাওরকবি জীবন কৃষ্ণ সরকারের সাহিত্য জীবন হোক অনিন্দ্য সুন্দর। কলমের খোঁচায় ফোটুক হাওর পাড়ের মানুষের চিত্রপট। সাহিত্য পথচলা হোক মসৃণ ও সুন্দরের জন্য সুন্দর। এমনটাই প্রত্যাশা হাওরপাড়ের মানুষের।
হাওরপাড়ের মানুষকে আলোকিত করতে হাওর সাহিত্য উন্নয়ন সংস্থা (হাসুস) গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করবে বলে আমাদের বিশ্বাস। হাসুসের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি ও হাওরকবি’র দীর্ঘায়ু কামনা করি।
বাংলাদেশ সময়: ১৬:৪৭:৪৪ ১১২৩ বার পঠিত