বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৯

সাধারণ সম্পাদক পদ টানটান

Home Page » আজকের সকল পত্রিকা » সাধারণ সম্পাদক পদ টানটান
বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৯



আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন,

বঙ্গ-নিউজঃ   আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন আগামীকাল শুক্রবার শুরু হচ্ছে। এ উপলক্ষে সম্মেলনস্থল রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে একধরনের টানাপোড়েন শুরু হয়েছে। এ পদে সম্ভাব্য দু-একজন প্রার্থীকে নিয়ে নানা সমালোচনাও চলছে। আবার কয়েকজন সম্ভাব্য প্রার্থীর ছবি দিয়ে পোস্টার ছাপানোয় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়েছে। এ অবস্থায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া অন্য কারও ছবি দিয়ে সম্মেলনকেন্দ্রিক পোস্টার-ফেস্টুন সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আগামীকাল শুক্রবার ও পরশু শনিবার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠেয় আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন ঘিরে প্রধান আলোচনার বিষয়- কে হচ্ছেন পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক। বর্তমান সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের স্বপদে থাকছেন নাকি নতুন মুখ আসছেন। এ অবস্থায় ওবায়দুল কাদেরের সম্ভাবনা নিয়ে গুঞ্জন থাকলেও এই পদে কমপক্ষে ১২ জন কেন্দ্রীয় নেতার নাম শোনা যাচ্ছে। তারা হচ্ছেন- দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল-আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, আইন সম্পাদক অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম, দপ্তর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ ও কার্যনির্বাহী সদস্য অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খান।

আলোচিত এই নেতাদের মধ্যে দু’জনের ছবি দিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে পোস্টার ও ফেস্টুন ঝোলানো হয়েছে। এ নিয়ে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়াও দেখা দিয়েছে। গতকাল বুধবার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক যৌথ সভায় তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটে। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহাম্মদ মন্নাফি ও সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবিরের কাছে কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা জানতে চান- তাদের নামে কীভাবে একজন নেতার ছবি দিয়ে পোস্টার ছাপানো হলো?

এ সময় দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, কোনো নেতার ছবির সঙ্গে অন্যের ছবি দিয়ে পোস্টার টাঙানো যাবে না। আজকের (বুধবার) মধ্যেই ওই সব ছবি সরিয়ে ফেলতে হবে। তিনি আরও বলেন, সবাই বড় হতে চান। আর এটাই স্বাভাবিক। নেতা হওয়ার প্রতিযোগিতা অবশ্যই থাকবে। তবে নেতা হওয়ার জন্য একজন আরেকজনের সমালোচনা করাটা নোংরামি। ওবায়দুল কাদের এ ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িতদের চিহ্নিত করা হবে বলেও জানান।

ছবিসহ পোস্টার ছাপানো প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির সমকালকে জানান, অতি উৎসাহ দেখিয়ে একজন নেতার ছবি দিয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের ব্যানারে পোস্টার ছাপানো হয়েছে। কিন্তু কে কিংবা কারা এমন পোস্টার ছাপিয়েছে, তা জানা নেই। ঠিক একই ভাবে শাহবাগ এলাকায় আরেকজন নেতার ছবি দিয়ে পোস্টার টাঙানো হয়েছে। সেই ছবিও কে ছাপিয়েছে, তাও বলা যাচ্ছে না।

এদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে গত কয়েক দিন ধরে সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে একধরনের টানাপোড়েন দেখা যাচ্ছে। তারা প্রায় প্রতিদিনই প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে জাতীয় সম্মেলনের সার্বিক কার্যক্রম দেখভাল করছেন। একই সঙ্গে কেউ কেউ পারস্পরিক সমালোচনায় জড়িয়ে যাচ্ছেন। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সম্মেলন কার্যক্রম চলাকালেও এমন চিত্র দেখা গেছে। এ বিষয়গুলো প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিতেও আনা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের কয়েকজন নীতিনির্ধারক নেতা বলেছেন, সাধারণত জাতীয় সম্মেলনের তিন-চার দিন আগে থেকেই দলের সাধারণ সম্পাদক পদে কে আসছেন তা জানা যেত। কিন্তু এবারের চিত্র একেবারেই ভিন্ন। নানা আলোচনায় সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সম্ভাবনার কথা বলা হলেও কেউই তা নিশ্চিত করতে পারছেন না। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠজনরাও এবার চুপচাপ আছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত মঙ্গলবার তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীনের মৃত্যুর খবর শোনার পর থেকে মর্মাহত হয়ে আছেন। মূলত এ কারণেই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে কে আসছেন, তার কোনো আভাস পাওয়া যাচ্ছে না।

রাজসিক প্রস্তুতি :আওয়ামী লীগের এবারের সম্মেলনের স্লোগান- ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে/বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণে গড়তে সোনার দেশ/এগিয়ে চলেছি দুর্বার, আমরাই তো বাংলাদেশ।’ ইতোমধ্যে সম্মেলন ঘিরে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা শুরু হয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতারা ধানমন্ডির কার্যালয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। ১১টি উপ-কমিটির নেতারা সম্মেলনের কার্যক্রম প্রায় গুছিয়ে এনেছেন।

পদ্মা সেতুর আদলে সম্মেলন মঞ্চ নির্মাণের কাজও প্রায় শেষের দিকে। পদ্মা সেতুর নিচে থাকবে প্রাকৃতিক দৃশ্য। নদীতে থাকবে অসংখ্য ছোট নৌকা। এর মধ্যে একটি বড় আকৃতির নৌকায় সম্মেলন মঞ্চটি দেখানো হবে। মঞ্চটি হবে ডিজিটাল। এর উচ্চতা ২৮ ফুট। দৈর্ঘ্য দেড়শ’ ফুট। প্রস্থ ১৪০ ফুট। ২৮টি এলইডি পর্দায় সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান তুলে ধরা হবে।

জাতীয় পতাকা ও জাতীয় স্মৃতিসৌধ শোভিত সম্মেলন মঞ্চে থাকবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিকৃতি। মঞ্চের বাম দিকে পর্যায়ক্রমে থাকবে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক শামসুল হকসহ হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও মাওলানা আবদুর রশিদ তর্কবাগীশের প্রতিকৃতি। ডান দিকে পর্যায়ক্রমে থাকবে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং এএইচএম কামারুজ্জামানের প্রতিকৃতি।

‘স্বর্ণোজ্জ্বল অতীত/অদম্য উন্নয়নের বর্তমান/বিশ্ব জয়ের লক্ষ্যে আগামী’ স্লোগান লেখা সম্মেলন মঞ্চে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের ছবিও শোভা পাবে। আওয়ামী লীগের পতাকাও থাকবে মঞ্চের ডিজিটাল ব্যানারে। সম্মেলন অঙ্গনেও থাকবে আওয়ামী লীগের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের স্মারক। সচিত্র বিবরণের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হবে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড। স্বৈরাচার সরকারবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ছবিও থাকবে।

বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি ছাড়াও সেখানে থাকবে বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর ছোট কন্যা শেখ রেহানা, বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয়, সায়মা হোসেন পুতুল ও রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববির ছবি। আওয়ামী লীগের সাবেক চার সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান, আবদুর রাজ্জাক, আবদুল জলিল ও সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে দলীয় সভাপতির সাংগঠনিক কার্যক্রমের চিত্রও তুলে ধরা হবে। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাসহ বিভিন্ন দেশের প্রধান ও বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর ছবিও থাকবে।

৩২টি জেলার সম্মেলন হয়েছে :আওয়ামী লীগের বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটির মেয়াদকালে ৮০টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ৩২টি জেলায় সম্মেলন হয়েছে। এ জেলাগুলো হচ্ছে- ঢাকা দক্ষিণ, ঢাকা উত্তর, সুনামগঞ্জ, সিলেট, সিলেট মহানগর, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, কুমিল্লা, মহানগর কুমিল্লা, উত্তর কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম উত্তর, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, লালমনিরহাট, রংপুর, রংপুর মহানগর, কুড়িগ্রাম, বগুড়া, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, যশোর, নড়াইল, বাগেরহাট, খুলনা, খুলনা মহানগর, সাতক্ষীরা, পটুয়াখালী ও বরিশাল মহানগর। আরও কয়েকটি জেলার সম্মেলনের দিনক্ষণ ঘোষণার পরও স্থগিত করা হয়েছে।

৪৮টি সাংগঠনিক জেলায় সম্মেলন হয়নি। জেলাগুলো হচ্ছে- টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, ঢাকা, ঢাকা দক্ষিণ, গাজীপুর, গাজীপুর মহানগর, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ মহানগর, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, জামালপুর, শেরপুর, ময়মনসিংহ মহানগর, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা দক্ষিণ, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, চট্টগ্রাম মহানগর, চট্টগ্রাম দক্ষিণ, কক্সবাজার, রাঙামাটি, পঞ্চগড়, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, জয়পুরহাট, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী মহানগর, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, মাগুরা, বরগুনা, ভোলা, বরিশাল, ঝালকাঠি ও পিরোজপুর।

আজ থেকে কাউন্সিলর কার্ড বিতরণ :সাড়ে সাত হাজার কাউন্সিলর দলের জাতীয় সম্মেলনে অংশ নেবেন। সাড়ে সাত হাজার ডেলিগেট সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে উপস্থিত থাকবেন। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি এবং মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম ক্রিক  জানিয়েছেন, আজ বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে কাউন্সিলর ও ডেলিগেটদের কার্ড বিতরণ করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২:৩২:৪২   ৪৫৯ বার পঠিত   #  #