সোমবার, ১৪ অক্টোবর ২০১৯

ঢাকায় কাভার্ড ভ্যানের ধাক্কায় মায়ের মৃত্যু, ছেলে আহত

Home Page » প্রথমপাতা » ঢাকায় কাভার্ড ভ্যানের ধাক্কায় মায়ের মৃত্যু, ছেলে আহত
সোমবার, ১৪ অক্টোবর ২০১৯



ফাইল ছবি

বঙ্গ-নিউজঃ মাসুদা বেগম। ১০ বছর বয়সী সন্তান মাহিনকে নিয়ে পারিবারিক কাজে গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলেন। কাজ সেরে ফিরছিলেন রাজধানীর নিজ বাসায়। কিন্তু বাসায় যাওয়া হচ্ছে না তার, আবার ফিরে যেতে হচ্ছে গ্রামেই। তবে এবার আর কাজের জন্য নয়, বরং পৃথিবী সব কাজ থেকে চিরতরে বিদায় নিয়ে।
গ্রামের বাড়ি বরিশালের মুলাদি থেকে গতকাল রবিবার ভোরে ছেলে মাহিনকে নিয়ে লঞ্চযোগে সদরঘাট আসেন মাসুদা। এর পর মোটরচালিত রিকশাযোগে যাচ্ছিলেন মগবাজার মধুবাগের বাসায়। পথিমধ্যে কাকরাইল রাজমনি সিনেমা হল মোড়ে একটি কাভার্ড ভ্যান সজোরে ধাক্কা দেয় তাদের বহনকারী রিকশাকে। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান মাসুদা বেগম (৩৫)। আর হাত-পা ভেঙে জাতীয় অর্থোপেডিকস ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) এখন চিকিৎসাধীন মাহিন।
রমনা থানার এসআই হাবিবুর রহমান জানান, ঘটনার পর ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। কাভার্ড ভ্যানটি পালিয়ে গেছে। তবে আশপাশের ভবনে থাকা ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার (সিসিটিভি) ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। আশা করছি দুর্ঘটনার জন্য দায়ী কাভার্ড ভ্যানের চালককে দ্রুতই আটক করা সম্ভব হবে।
মাসুদার চাচা শাহজাহান হাওলাদার জানান, মৎস্য ভবন মোড় থেকে আসা বেপরোয়া একটি কাভার্ড ভ্যান মাসুদাদের রিকশাটিকে মুখোমুখি সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে মা-ছেলে নিচে পড়ে যায়। পরে তাদের ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা মাসুদাকে মৃত ঘোষণা করেন। তাকে গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হবে বলে জানান তিনি।
মাসুদার খালাতো ভাই ইমরান হোসেন মৃধা বলেন, পুলিশের সংগ্রহ করা সিসিটিভির ফুটেজে দেখা গেছে ঘাতক কাভার্ড ভ্যানটি এসএ পরিবহনের।
মাসুদার স্বামী মোফাজ্জল হোসেন পেশায় প্রাইভেট কারচালক। তাদের দুই ছেলে মগবাজারের শেরেবাংলা স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্র। বড় ছেলে মাসুম অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী, ছোট ছেলে মাহিন পঞ্চম শ্রেণিতে।
ঢাকা মেডিক্যালের মর্গে গতকাল সদ্য স্ত্রীহারা মোফাজ্জল হোসেন বলেন, আমার টাকা পয়সা-সম্পদ কিছুই নাই। শুধু দুটি রতœ ছিল। স্বপ্ন ছিল ওদের (দুই ছেলে) একদিন সত্যিকারের রতœ বানাব। কিন্তু দুই রতœকে যে আগলে রাখত, সে-ই নেই। তিনি বলেন, এটি একটি হত্যাকা-। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে এর বিচার চাই।
একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, দুর্ঘটনার সময় কাকরাইল রাজমনি সিনেমা হল মোড়ের সামনে ট্রাফিক পুলিশ ছিল না। এ কারণে কাভার্ড ভ্যানটি বেপরোয়া চলছিল। অভিযোগ রয়েছে, শুধু কাকরাইল নয়, ভোরে রাজধানীর অধিকাংশ পয়েন্টে ট্রাফিক পুলিশ থাকে না। এ ছাড়া সিগন্যাল বাতিগুলোও হয় বিকল, নয়তো এগুলোর নির্দেশনা মানা হয় না। এ কারণে ভোরের ঢাকায় গাড়ির যাচ্ছেতাই চলাচলে মাসুদা বেগমের মতো অনেক প্রাণই ঝরে যাচ্ছে, ঝরে যাচ্ছে এসব প্রাণকে ঘিরে বেড়ে ওঠা কত কত স্বপ্ন।
এ বিষয়ে ট্রাফিক পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মো. মফিজ উদ্দিন আহমেদ আমাদের সময়কে বলেন, সকাল সাড়ে ৬টা থেকে ৭টা পর্যন্ত রাতের শিফটের ট্রাফিক পুলিশ থাকার কথা। বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।

বাংলাদেশ সময়: ১:৩১:৪৪   ৫৬৮ বার পঠিত