শুক্রবার, ৪ অক্টোবর ২০১৯

বিশ্ব শিক্ষক দিবসঃ শিক্ষা, শিক্ষাঙ্গন ও শিক্ষকতা- ড. মোহাম্মদ আলমগীর কবীর

Home Page » প্রথমপাতা » বিশ্ব শিক্ষক দিবসঃ শিক্ষা, শিক্ষাঙ্গন ও শিক্ষকতা- ড. মোহাম্মদ আলমগীর কবীর
শুক্রবার, ৪ অক্টোবর ২০১৯



ড. মোহাম্মদ আলমগীর কবীর

বঙ্গ-নিউজঃ ১৯৯৫ সাল থেকে প্রতি বছর ৫ অক্টোবর বিশ্বব্যাপী পালিত হয় বিশ্ব শিক্ষক দিবস। বিশ্ব শিক্ষক দিবস ও উন্নয়নরে ক্ষেত্রে শিখকদের অসামান্য অবদানরে স্বীকৃতি স্বরূপ পালন করা হয়। বিশ্বের ১০০টি দেশে ৪০১ টি শিক্ষক সংগঠন দিবসটি উদ্‌যাপন করা হয়ে থাকে। ইউনসেকোর মতে বশ্বিে র্বতমানে ২৬ কোটি ৪০ লাখ শশিু বিদ্যালয়ের শিক্ষা থেকে বঞ্চতি। ২০৩০ সালরে মধ্যে র্সবজনীন প্রাথমকি ও মাধ্যমকি শিক্ষার প্রায় সাত কোটি নতুন শিক্ষক নিয়োগের প্রয়োজন। প্রতবিন্ধী, শরর্ণাথী ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে এই শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের ব্যবধান অনকে বেশি। এই ব্যবধান দূর করতে সবাইকে এগয়িে আসতে হবে, এমনটাই মনে করে ইউনসেকো।

মানুষ সৃষ্টির পর থেকেই তার শিক্ষা জীবনের শুরু। মা-বাবা, ভাইবোন বা পরিবার থেকেই তার প্রাথমিক শিক্ষা-দীক্ষা। পরিবারের গন্ডি পেরিয়ে ধাপে ধাপে সমাজ তার শিক্ষার একটি মাধ্যম। প্রতিটি ধর্মেই শিক্ষা সম্পর্কে ব্যাপক তাগিদ রয়েছে এবং বলা হয়েছে তোমাদের সন্তানদের সুশিক্ষিত করো। পৃথিবীর বিখ্যাত কতকগুলো উদ্বৃতি থেকে তার সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়, যেমন, বিদ্যা শিক্ষার জন্য প্রয়োজনে তোমরা চীন দেশে যাও-হযরত মু.(সা.)। নেপোলিয়ান বলেছিলেন ‘ আমাকে একটি শিক্ষিত মা দাও আমি একটি শিক্ষিত জাতি দেব’। প্রাতিষ্ঠানিক ও অ-প্রাাতিষ্ঠানিক এই দুই ভাগে শিক্ষাকে ভাগ করা যায়। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াই পৃথিবীতে অনেক মানুষ পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্র অত্যন্ত দক্ষতার সাথে পরিচালনা করেছেন। আবার প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে উচ্চ শিক্ষিত হয়েও অনেক ব্যর্থতার নজির আছে। তাই শিক্ষা, প্রাতিষ্ঠানিক অথবা অ-প্রাতিষ্ঠানিক যাই হোক না কেন এর সাথে সু-শিক্ষার বিষয়টি অতীব প্রয়োজন। সুশিক্ষাই কেবলমাত্র পরিবার, সমাজ তথা একটি জাতিগোষ্ঠিকে তার অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে। একটি সুশিক্ষিত জাতি গঠনে শিক্ষা উপকরণ, শিক্ষা-পদ্ধতি, শিক্ষাঙ্গন ও নিবেদিত প্রাণ প্রশিক্ষিত শিক্ষক/শিক্ষিকা অত্যন্ত জরুরি। এই শিক্ষা সংশ্লিষ্ট উপাদান গুলো আবার পরিবার, সমাজ তথা রাষ্ট্রের অবকাঠামো ও আর্থসামাজিক অবস্থার উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল।

শিক্ষাঙ্গন একটি প্রাতিষ্ঠানিক রুপ অর্থ্যাৎ যে অঙ্গনে শিক্ষা বিষয়ক আলোচনা, পাঠদান, শিক্ষক-শিক্ষার্থী একটি নির্দিষ্ট সময়সূচি ও পাঠ্যসূচি নিয়ে মিলন ঘটে তাকে বুঝায়। এই শিক্ষাঙ্গন রাষ্ট্রের ও সমাজের আর্থিক অবস্থার উপর বিশেষভাবে নির্ভরশীল। যেমন অনেক ধনী রাষ্ট্রে সুন্দর চেয়ার টেবিল সজ্জিত শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালিত হয়। শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য আরামদায়ক বাহনের ব্যবস্থা করা হয়। উন্নত বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা উপকরণ ও পাঠদান পদ্ধতি যেমন অডি-ভিডিও ও অত্যাধুনিক যন্ত্রাংশের ব্যবহার করা হয়। শিক্ষার্থীদের নিয়মিত শিক্ষা সফর, মান সম্মত খাদ্যাবাস ও সুচিকিৎসা সহ আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধার নিশ্চিত করা হয়। অন্যদিকে গরীব তথা অনুন্নত দেশে আধুনিক সুযোগ সুবিধা বঞ্চিত, ক্ষেত্র বিশেষে খোলা আকাশের নীচে মাটিতে বসে, অনাহারে অর্ধাহরে, চার-পাঁচ মাইল পায়ে হেটে অথবা বর্ষায় পানি সাঁতরিয়ে ক্লান্ত শরীরে শির্ক্ষাথীরা তাদের শিক্ষা জীবন শুরু করে। এই বৈষম্য গরীব-ধনী রাষ্ট্রে যেমন বিদ্যমান তেমনি একই রাষ্ট্রিয় ব্যবস্থায় গ্রামীণ ও শহুরে শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যেও পরিলক্ষিত হয়। এই ব্যবধান যত বেশি কমানো যাবে সমাজে মানুষে মানুষে বিভেদ ও বৈষম্য ততই কমতে থাকবে।
শিক্ষাঙ্গন একটি পবিত্র স্থান। ধর্ম, বর্ণ, -গোত্র, সাদা-কালো, ধনী, গরিব, সকলের জন্য এই পবিত্র স্থানটি উন্মুক্ত থাকা উচিত। এই পবিত্র স্থানটি যেন রাজনৈতিক, পেশিশক্তি ও লুলেরা মুক্ত হয়। শিক্ষাঙ্গনে গঠনমূলক আলোচনা থাকবে, সমালোচনা থাকবে, পরমত সহিষ্ণু অবস্থান থাকবে, সমাজের সকলের অংশগ্রহণ সুনিশ্চিত থাকবে এমন কামনা সকলের। দলীয় দৃষ্টি ভঙ্গির বাহিরে এসে শিক্ষাঙ্গন পরিচালনা করতে হবে। যা কিছু কল্যাণ, সমাজের ও প্রতিষ্ঠানের জন্য মঙ্গল সে রকম কর্মপদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে। প্রতিষ্ঠানের নির্বাহীকে দক্ষতা, নিরপেক্ষতা, দলীয় সংকীর্নতার বাহিরে এসে প্রতিষ্ঠানের কল্যাণে কাজ করতে হবে। মনে রাখতে হবে নির্বাহী ক্ষণস্থায়ী কিন্তু প্রতিষ্ঠান দীঘস্থায়ী। তার একটি কর্মপন্থা প্রতিষ্ঠানকে অনেক দূর নিয়ে যেতে পারে আবার অনেক পিছিয়েও দিতে পারে।

শিক্ষকতা একটি মহান পেশা। অন্য আট দশটা পেশার সাথে এর তুলনা চলে না। সমাজের অনেকেই আছেন যারা আর্থিক বিষয়টি বিচেনায় না নিয়ে জ্ঞান সংরক্ষণ, চর্চা ও বিতরণের উদ্দেশ্যে নিয়েই এ পেশায় আসেন। ক্ষেত্র বিশেষে ঐসব সাদামনের মানুষেরা নিজেদের অর্জিত সম্পদও এ কাজে ব্যবহার করেন কোনো বিনিময় ছাড়াই। এ রকম উদাহরণ সমাজ, রাষ্ট্র, দেশে-বিদেশে অগণিত। আবার দলবাজি, প্রতিষ্ঠানে সময় না দিয়ে ব্যক্তিগত উদ্যোগে কিছু অতিরিক্ত আয়ের উদ্দেশ্যে পাঠদানের সংখ্যাও দিনকে দিন বাড়ছে। এসবই সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্রমর্ধমান পরিবর্তনেরই ফলাফল। এটা আমাদের মানতে ধিধা নেই যে, সমাজ তার প্রয়োজনেই পরিবর্তনকে স্বাগত জানায়। তবে এই পরিবর্তন যত বেশি কল্যাণকর সেটাই গ্রহণযোগ্য। অকল্যাণের সাথে শিক্ষা, শিক্ষাঙ্গন ও শিক্ষকতার কোনো স্থান নেই। তবে এ পেশাকে যুগোপযোগী করতে হবে যেন মেধাবীরা আকৃষ্ট হন। রাষ্ট্রকে এমন পলিসি গ্রহণ করতে হবে যেন এ পেশায় কর্মরত মানুষজন সম্মানের সহিত বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা পায়। যদি রাষ্ট্র এ কাজে ব্যর্থতার পরিচয় দেয় তবে আমরা হয়ত সু-শিক্ষার স্থলে কু-শিক্ষা, শান্ত, পরিপাটি শিক্ষাঙ্গনের পরিবর্তে অস্থির শিক্ষাঙ্গন যেখানে খুনাখুনি, মারামারি, চাঁদাবাজী অস্ত্রের ঝনঝনানি, আদর্শ শিক্ষক তথা সাদামনের মানুষের পরিবর্তে আদর্শহীন, নীতি নৈতিকতা বিবর্জিত কালো মনের মানুষদের উপস্থিতি পরিলক্ষিত হবে যা থেকে আপনি, আমি কেউই রেহাই পাব না। ৫ অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবসে দেশে বিদেশে র্কমরত সকল শিক্ষকদের প্রতি সালাম, শ্রদ্ধা ও ভালবাসা রইল।

বাংলাদেশ সময়: ১৫:০২:০৮   ৭৮৭ বার পঠিত   #  #  #  #