সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯

দুর্নীতি করে কোনো অপরাধীই ছাড় পাবে না বলেছেন প্রধানমন্ত্রী

Home Page » জাতীয় » দুর্নীতি করে কোনো অপরাধীই ছাড় পাবে না বলেছেন প্রধানমন্ত্রী
সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯



 ফাইল ছবি
বঙ্গ-নিউজঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশে চলমান দুর্নীতি বিরোধী অভিযানে অনেকেই অখুশি কিন্তু দুর্নীতি করে কোনো অপরাধীই ছাড় পাবে না। এমনকি দলীয় লোক হলেও না।

রোববার বিকেলে জাতিসংঘের ৭৪ তম অধিবেশনে যোগ দিয়ে নিউইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন এ সময় উপস্থিত ছিলেন। জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন স্বাগত বক্তব্য দেন এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রকল্প প্রস্তুতি থেকে শুরু করে প্রকল্পের কাজ পাওয়ার জন্য অর্থ বিতরণের সুযোগ নিয়ে কিছু লোক বিপুল সম্পদের মালিক বনে যাচ্ছেন। এই অর্থ চটের বস্তাতেও লুকিয়ে রাখা হচ্ছে এবং ওয়ান ইলেভেনের পট পরিবর্তনের পর আমরা এটা দেখেছি।

শেখ হাসিনা বলেন, হঠাৎ করে যে সম্পদ আসে তা দেখানো কিছু মানুষের স্বভাব। আমাদের সমাজের এই অংশটিকে আঘাত করতে হবে। জনগণের জন্যই তার রাজনীতি এবং জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েই ক্ষমতায় এসেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি সব সময় জনগণের মঙ্গলের কথাই চিন্তা করি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার কারণে আমার দল এবং সমাজের ওপর ক্ষতিকারক কোনো প্রভাব পড়ছে কিনা সে বিষয়েও আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। আমাকে সেটা মোকাবিলাও করতে হবে। যে কারণে আমি এই অভিযান চালাচ্ছি (দুর্নীতি বিরোধী)।

কিছু লোক এই অভিযান পরিচালনায় তার ওপর অখুশি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমি এটার পরোয়া করি না, কেননা আমার ক্ষমতা এবং সম্পদের প্রতি কোন মোহ নেই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান চলছে এবং চলবে। যদিও এজন্য কোন বিশেষ কমিটি গঠনের প্রয়োজন নেই বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, দুর্নীতির কোন তথ্য পেলেই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি, আমরা জাতীয় নিরাপত্তা সেল গঠন করেছি এবং তাদের সময় মত নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। এই অভিযান চলতে থাকবে এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের প্রত্যেকটি মানুষ উন্নত ও সুন্দর জীবনযাপন করবে। এই সুযোগে কিছু সংখ্যক মানুষ সমাজকে বিষাক্ত করবে, এটা আমার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। এ কারণে আমি এই নির্দেশ দিয়েছি। তিনি বলেন, দেশে খেলাধুলার উন্নয়নে ক্রীড়াসামগ্রীর আমদানি খুবই ভালো। কিন্তু এটা অকল্পনীয় যে, ক্রীড়াসামগ্রী আমদানির নামে জুয়ার জিনিসপত্র আনা হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, দেশে যে কোন ধরনের নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টির তৎপরতা প্রতিরোধে সন্ত্রাসী ও জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়েছে। তিনি বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে এবং এ অভিযান প্রায় সফলতার দ্বারপ্রান্তে। এখন আমরা দুর্নীতিবিরোধী অভিযান শুরু করেছি।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকার দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে বহু প্রকল্প তৈরি ও এসব প্রকল্পে বরাদ্দকৃত অর্থ যথাযথভাবে ব্যয় হবে এবং এসব কাজও সম্পন্ন হবে নির্বিঘ্নে। এতে কোনো অনিয়ম হলে দেশের উন্নয়ন ব্যাহত হবে। এর ফলে যেভাবে দেশের উন্নয়নের চিন্তা করছি, তা সম্পন্ন হবে না।

রোহিঙ্গা সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমার এ সমস্যার সৃষ্টি করেছে এবং তাদেরকে এর দায়ভার গ্রহণ করতে হবে। তারা যে কথাই বলুক না কেন, মিয়ানমারই এই সমস্যার সৃষ্টি করেছে এবং তাদেরকেই এর সমাধান দিতে হবে।

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশনে যোগদানকারী মিয়ানমারের নেতার বক্তব্য রোহিঙ্গাদের জন্য নিরাপদ অঞ্চল গড়ে তুলতে বাংলাদেশের দাবিকে ভিত্তিহীন বলে আখ্যায়িত করা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের নাগরিক অন্য দেশের শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছে, এটা হচ্ছে মিয়ানমারের জন্য লজ্জা, অসম্মান এবং একই সঙ্গে তাদের দুর্বলতা।

তিনি বলেন, এটা আমাদের কাছে খুব বড় প্রশ্ন, কেনো তারা তাদের নাগরিকদের বাংলাদেশ থেকে ফিরিয়ে নিচ্ছে না। বাংলাদেশ রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে এবং এ বিষয়ে তাদের উপর আন্তর্জাতিক চাপও সৃষ্টি হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলে, রোহিঙ্গাদের মাঝে মিয়ানমারের আস্থা সৃষ্টি করতে হবে, যেন তারা বাসভূমিতে ফিরে যায়। এটা মিয়ানমারের জন্য লজ্জা, নিজের দেশের ওপর তাদের কোন আস্থা নেই।

ট্রাম্পকে চিঠি প্রদান সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি জাতিসংঘ মহাসচিবের মধ্যাহ্ন ভোজে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড জে ট্রাম্পকে একটি চিঠি দিয়েছেন। এ চিঠির বিষয়বস্তু সম্পর্কে তিনি বলেন, সরকার যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকারী জাতির পিতার খুনীদের ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে কাজ করছে। মূলত এ বিষয়ে তাকে (ট্রাম্প) চিঠি দিয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানবাধিকারের প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্র সব সময় খুবই সোচ্চার। তাহলে কী করে এই দেশে (যুক্তরাষ্ট্র) জাতির পিতা, নারী ও শিশু হত্যাকারীরা থাকতে পারে।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একজন খুনী কানাডায় রয়েছে। বঙ্গবন্ধুর খুনীরা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থান করছে। আমরা সবাইকে এসব খুনীদের ফেরত পাঠাতে অনুরোধ করেছি। এই খুনীরা ওইসব দেশের জন্যও নিরাপদ নয়। তিনি বলেন, ওই দেশগুলো বঙ্গবন্ধুর খুনীদের প্রত্যার্পণ করলে তখন বাংলাদেশের আদালতের রায় কার্যকর করা সম্ভব হবে।

ঋণ খেলাপি ও শেয়ার বাজার ইস্যু নিয়েও কথা বলেন সরকার প্রধান। তিনি বলেন, সামরিক স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমান দেশে ঋণ খেলাপি চর্চা শুরু করেছিলেন। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পর জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, অর্থ কোনো সমস্যা নয় এবং তিনি ঋণ পরিশোধ না করার সংস্কৃতি চালু করেছিলেন। এই সংস্কৃতি থেকে দেশকে মুক্ত করার লক্ষ্যে বর্তমান সরকার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।

ব্যাংকে উচ্চ সুদের হারের বিষয়টি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্যাংকের অধিক সুদের কারণে অনেকের পক্ষে ঋণ পরিশোধ করা সম্ভব হয় না। ফলে তারা ঋণ খেলাপি হয়। অনেকে মনে করেন, ঋণ পরিশোধ করার প্রয়োজন নেই। অনেক কোম্পানি রয়েছে যারা ঋণ নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করেন। কিন্তু তারা ঋণ পরিশোধ করছেন না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি আপনারা দেখেছেন- গ্রামীণ ফোন কি করছে। তারা কর পরিশোধ করে না এবং যখন করের পরিমাণ বিপুল হয়ে দাঁড়ায়, তখন তারা বলে- আসুন আলোচনা করি। আপনি একবার বা দু’বার তা করতে পারেন। কিন্তু বারবার তা করতে পারেন না।

শেখ হাসিনা বলেন, আরেকটি সমস্যা রয়েছে। ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করার সময় অনেক ব্যবসায়ী ঋণ খেলাপি হয়েছে। কারণ, তারা সেই সময় গ্রেফতার হয়েছিলেন বা দেশ থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, আমরা তাদেরকে একটা সুযোগ দিয়েছিলাম যাতে তারা তাদের শিল্প কারখানা চালাতে পারেন এবং ব্যবসা বাণিজ্য বিঘ্নিত না হয় যেখানে হাজার হাজার শ্রমিক কাজ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা এবং যাতে ঋণ খেলাপি সৃষ্টি না হয় সে লক্ষে সরকার বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। আমরা এরই মধ্যে ব্যাংকের সুদের হার এক অঙ্কের ঘরে নামিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছি এবং রাষ্ট্রচালিত ব্যাংকগুলো এই নির্দেশ অনুসরণ করছে।

স্টক মার্কেট সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, এতে যারা সম্পৃক্ত রয়েছেন তাদেরকে অবশ্যই অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে বিনিয়োগ করতে হবে। তাদেরকে লক্ষ্য রাখতে হবে- কোন শেয়ারগুলো লাভজনক আর কোনগুলো নয়। এসব বিবেচনা করেই তাদেরকে শেয়ার ক্রয় করতে হবে। সরকার শেয়ার বাজারের ব্যবসায়ীদের জন্য অনেক সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে অনেকবার শেয়ার বাজারে ধস নেমেছে। তারপর বাজার আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে।

বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ মিশন খোলা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দায়িত্ব গ্রহণ করার পর সরকার বিভিন্ন দেশে মিশনের নিজস্ব ভবন নির্মাণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, সম্পদের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও, বঙ্গবন্ধু পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন এবং আমরা ওয়াশিংটনে চ্যান্সারি ভবন নির্মাণ করেছি। নিউইয়র্ক মিশনের জন্য আমরা একটি ভবন ক্রয় করেছি। নিউইয়র্কে আমাদের নিজস্ব ভবনে কনসুলেট অফিস স্থাপনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

এর আগে, লিখিত বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশনে তার অংশগ্রহণ, পাশাপাশি বিভিন্ন অনুষ্ঠান, জাতিসংঘ মহসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং থাই প্রধানমন্ত্রী প্রযুত ও-চা সহ বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে তার সাক্ষাতের উল্লেখযোগ্য দিকগুলো তুলে ধরেন

বাংলাদেশ সময়: ১৪:৪৬:৫৫   ৫৬০ বার পঠিত   #  #  #  #