শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯

খেলনা সামগ্রীর নামে ক্লাবে আনা হয় ক্যাসিনো সরঞ্জাম

Home Page » আজকের সকল পত্রিকা » খেলনা সামগ্রীর নামে ক্লাবে আনা হয় ক্যাসিনো সরঞ্জাম
শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯



ফাইল ছবি
বঙ্গ-নিউজঃ অভিযানে ক্যাসিনো খেলার বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করে পুলিশ।

আমদানি তালিকায় ক্যাসিনো সামগ্রী বৈধ না থাকায় গত দশ বছর ধরে মিথ্যা ষণায় আমদানি করা হয় ক্যাসিনো সরঞ্জাম। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের অনুসন্ধানে এ পর্যন্ত প্রায় ১৯ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ক্যাসিনোর সরঞ্জাম দেশে আনার চিত্র উঠে এসেছে। খেলনা সামগ্রীর সঙ্গে এসব পণ্য খালাস করা হয়েছে কাস্টমস হাউস দিয়ে।

এনবিআর সূত্র জানায়, ২০০৯ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ১৯টি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আসা চালানের তথ্য বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে। অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- এ এম ইসলাম অ্যান্ড সন্স, ন্যানাথ ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, পুস্পিতা এন্টারপ্রাইজ, বি পেপার মিলস লিমিটেড ও এ থ্রি ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল।

গুল্ক গোয়েন্দারা গত বৃহস্পতিবার পুস্পিতা এন্টারপ্রাইজের মালিক সুরঞ্জন শেঠ তাপসকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বিস্তারিত তথ্য পেয়েছেন। শুল্ক গোয়েন্দার কার্যালয়ে বিকাল পৌনে ৪টা থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন। এর আগে পুস্পিতা এন্টারপ্রাইজের পক্ষে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট বেত্রাবতি ট্রেডের মালিক আশরাফুল ইসলামকে গত সোমবার চার ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। একই কারণে এ থ্রি ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মালিক আহসানুল আজমকে গত বুধবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। একই সঙ্গে ক্যাসিনোতে জুয়ায় টাকা লগ্নিকারী ব্যক্তিদের আয়কর ফাইল খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কয়েক দিনে আরও কয়েকজন আমদানিকারককে জিজ্ঞাসাবাদ করবে শুল্ক গোয়েন্দারা। কীভাবে এসব মেশিন আমদানি করেছে তা খতিয়ে দেখে আইনি ব্যবস্থা নেবে শুল্ক গোয়েন্দা।

শুল্ক গোয়েন্দারা গণমাধ্যমকে জানান, খেলনা, জুতা, কম্পিউটার, মোবাইল ফোনের যন্ত্রাংশ এবং ফার্নিচারের আড়ালে আমদানি হয়েছে ক্যাসিনো সরঞ্জাম। এর মধ্যে রয়েছে রোলেট গেম টেবিল, পোকার গেম, ক্যাসিনো ওয়ার গেম টেবিল, ক্যাসিনো চিপস ও রেসিং কার্ড সরঞ্জাম। একটি সূত্র জানায়, ক্যাসিনো ও জুয়ায় ব্যবহূত প্রতিটি মেশিন ও সরঞ্জামের দাম এক লাখ টাকা থেকে তিন কোটি টাকা পর্যন্ত। আমদানিকারকরা মিথ্যা ঘোষণায় এসব সরঞ্জাম এনে কোটি কোটি টাকার শুল্ক-করও ফাঁকি দিয়েছে। শুল্ক গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, ক্যাসিনোর মেশিনসহ জুয়া খেলার বেশিরভাগ সামগ্রী চীন থেকে আমদানি হয়েছে। একই সাথে করা হয়েছে অর্থ পাচার।

গোয়েন্দা সূত্রগুলো জানায়, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মূলত : যুবলীগ ঢাকা দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট, সহ-সভাপতি এনামুল হক আরমান, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মোমিনুল হক সাঈদ, সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভুঁইয়া, কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় নেতা শফিকুল আলম ফিরোজ (কালা ফিরোজ),সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী প্রমুখরা জুয়া ও ক্যাসিনো সরঞ্জামগুলো দেশে আনান। এদের মধ্যে সম্রাট মতিঝিলের ৬ টি ক্লাবসহ রাজধানীর ১১ টির মতো ক্যাসিনোর মূল নিয়ন্ত্রক ছিলেন। এই ক্যাসিনোর নিয়ন্ত্রক ও পরিচালনাকারীরা তদ্বির করে ও বড় অংকের অর্থের বিনিময়ে বিনা বাধায় অবৈধ ক্যাসিনো ও জুয়ার সামগ্রী ছাড় করান।

আমাদানিকারকদের মধ্যে ২০১৬ সালের ৭ ডিসেম্বর এ এম ইসলাম অ্যান্ড সন্স জুতার সরঞ্জাম ও মোবাইল যন্ত্রপাতির ঘোষণা দিয়ে ঢাকা কাস্টম হাউস দিয়ে একটি বড় চালান ছাড় করায়। কিন্তু গোয়েন্দাদের অনুসন্ধানে প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে, ক্যাসিনো চিপস ও রেসিং কার্ড আনা হয়েছে। একইভাবে ঢাকা কাস্টমস হাউস দিয়ে ২০১৮ সালের মে মাসে ন্যানাথ ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল কম্পিউটারের মাদার বোর্ডের নামে, এ থ্রি ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ২০১৭ সালের আগস্টে জন্মদিনের সরঞ্জামের নামে, ২০১৭ সালের জুলাই মাসে বি পেপার মিলস লিমিটেড ফার্নিচারের নামে রোলেট গেম টেবিল, পোকার গেম, ক্যাসিনো ওয়ার গেম টেবিল ইত্যাদি সরঞ্জাম আমদানি করে বলে প্রাথমিক তথ্য-প্রমাণ পেয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা। পুস্পিতা এন্টারপ্রাইজ ক্যাসিনো সরঞ্জাম ঘোষণা দিয়েই আমদানি করেছে। এসব আমদানিকারক বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পণ্যগুলো আমদানি করে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করেছে বলে মনে করেন গোয়েন্দারা।

আরও পড়ুন: রাজনৈতিক দলে অবক্ষয়

এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া গণমাধ্যমকে বলেন, এরই মধ্যে ক্যাসিনো পণ্য আমদানি স্থগিতের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পণগুলো খেলার সামগ্রী ও বিভিন্ন নামে বিভিন্ন দ্রব্যের সঙ্গে এসেছে। ১৯৭৩ সালের পর থেকে এসব পণ্য দেশে নিষিদ্ধ। শুধু বিদেশিদের জন্য সীমিত আকারে মদ চালু ছিল। দেশে ক্যাসিনোর কোনো অনুমতি নেই। এনবিআর চেয়ারম্যান জানান, আগামী সপ্তাহের মধ্যেই বাণিজ্য সচিবকে ক্যাসিনোয় ব্যবহূত পণ্যকে আইপিওতে নিষিদ্ধ পণ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে চিঠি দেওয়া হবে। এ বিষয়ে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. সহিদুল ইসলাম বলেন, গত ১০ বছরের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে বেশকিছু আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম খুঁজে পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ৭:১৪:৩১   ৪৭৫ বার পঠিত   #  #  #  #