বুধবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯
রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘিরে নিরাপত্তা জোরদারের পাশাপাশি গভীর পর্যবেক্ষণ করছে সরকার
Home Page » অর্থ ও বানিজ্য » রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘিরে নিরাপত্তা জোরদারের পাশাপাশি গভীর পর্যবেক্ষণ করছে সরকারবঙ্গ-নিউজঃ রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘিরে নিরাপত্তা জোরদারের পাশাপাশি এখানে কার্যরত বিভিন্ন সংস্থার কার্যক্রম গভীর পর্যবেক্ষণের আওতায় নিয়ে আসছে সরকার। এর অংশ হিসেবে সংশ্নিষ্ট বিভিন্ন প্রশাসনিক পদে পরিবর্তনসহ বেশ কিছু নতুন ও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।
সম্প্রতি রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে অনাগ্রহের পাশাপাশি ক্যাম্প এলাকায় তাদের সংঘবদ্ধ সমাবেশ, চাঁদাবাজি ও মাদক চোরাচালানসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে সংশ্নিষ্টতা এবং কয়েকটি বেসরকারি সংস্থার নিরাপত্তা বিঘ্নিত করে এমন তৎপরতার বিষয় নজরে আসার পর সরকার টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক নিয়ন্ত্রণ ও ইন্টারনেট সেবা বন্ধসহ জরুরি কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এ পদক্ষেপের অংশ হিসেবে শরণার্থী ক্যাম্প এলাকায় বিকেল ৫টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত ১৩ ঘণ্টা থ্রিজি ও ফোরজি সেবা বন্ধ করার জন্য মোবাইল ফোন অপারেটরদের নির্দেশনা দিয়েছে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ত্বরান্বিত করতে কূটনৈতিক কার্যক্রমও জোরালো করা হচ্ছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন জানিয়েছেন, রোহিঙ্গাদের যারা দেশে ফিরে যাওয়ার বিষয়ে নিরুৎসাহিত করবে কিংবা বাধা দেবে, তাদের চিহ্নিত করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে রোহিঙ্গাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ভাসানচরে পাঠানো হবে না।
যা নজরে এসেছে সরকারের :সম্প্রতি এমন কয়েকটি এনজিওকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তৎপরতা চালাতে দেখা যায়, যেগুলোর কার্যক্রম সেখানে বেশ আগেই এনজিও ব্যুরো নিষিদ্ধ করেছিল। এসব এনজিও রোহিঙ্গাদের মধ্যে উগ্র চিন্তার প্রচার, সরকারবিরোধী প্রচারণা, এমনকি স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়ার মতো অপতৎপরতা চালাচ্ছে বলে সরকারের পর্যবেক্ষণে উঠে আসে। কয়েকটি এনজিও রোহিঙ্গাদের বাংলা ভাষা শিক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি অবৈধভাবে এ দেশের জাতীয় পরিচয়পত্র পাইয়ে দেওয়ার মতো অপরাধমূলক তৎপরতার সঙ্গে জড়িত- এমন তথ্যও উঠে আসে। দেখা যায়, এসব এনজিও শরণার্থীদের খাদ্য ও স্বাস্থ্যসেবা-সংক্রান্ত জরুরি সেবা দেওয়ার জন্য নির্দেশিত ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হলেও তা আদৌ দিচ্ছে না।
সম্প্রতি নেতিবাচক কার্যক্রমের পরিপ্রেক্ষিতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৪১টি এনজিওর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়। এগুলোর বেআইনি কার্যক্রম সম্পর্কে প্রায় এক বছর আগেই স্থানীয় প্রশাসন এনজিও ব্যুরোর কাছে প্রতিবেদন পাঠিয়েছিল, যার ভিত্তিতে সেগুলোর কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশনাও দেওয়া হয়। কিন্তু রহস্যজনকভাবে এ তালিকাভুক্ত অধিকাংশ এনজিওই ক্যাম্পে তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখে। সর্বশেষ ২২ আগস্ট রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের তারিখ নির্ধারণের পর এসব এনজিও কর্মী তাদের নিরুৎসাহিত করতে প্রচারণা চালায়।
২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসেই বিতর্কিত এবং এনজিও ব্যুরোর শর্ত লঙ্ঘন করা সাতটি এনজিওর কার্যক্রম বন্ধের সুপারিশ করে স্থানীয় জেলা প্রশাসন। এসব এনজিওর মধ্যে ছিল- এডুকেশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সার্ভিস (ইডিএএস), সেভ দ্য চিলড্রেন, মোয়াস এমডিএস, কোডাক, এসআরপিবি এবং শেড। পরে এনজিও ব্যুরো থেকে মোট ৪১টি এনজিওর একটি তালিকা তৈরি করা হয়, যাদের বিরুদ্ধে ব্যুরোর যথাযথ অনুমোদন ছাড়াই রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কার্যক্রম পরিচালনার অভিযোগ ওঠে। তবে রহস্যজনকভাবে ৪১ এনজিওর সুনির্দিষ্ট নামসহ তালিকাটি কখনও আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়নি। অনানুষ্ঠানিকভাবে বেশ কিছু এনজিওর নাম কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হয়। এমনকি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন গত ৩০ আগস্ট ৪১টি এনজিওর কার্যক্রম বন্ধের সিদ্ধান্ত জানালেও এর তালিকা সাংবাদিকদের দিতে পারেনি কক্সবাজারের স্থানীয় প্রশাসন।
এদিকে কক্সবাজারের বিভিন্ন সূত্র জানাচ্ছে, ক্যাম্পে পাকিস্তান ও মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক এবং স্থানীয় কিছু এনজিওর রাজনৈতিক তৎপরতা ও উগ্র চিন্তার প্রচারের মতো ঘটনা ঘটছে। কিন্তু এদের কার্যক্রম বন্ধে প্রশাসনিক তৎপরতা চোখে পড়েনি।
সম্প্রতি রোহিঙ্গাদের দেওয়া বিভিন্ন বক্তব্য, সমাবেশ আয়োজন ইত্যাদি মূল্যায়ন করে তাদের অপরাধমূলক ভূমিকার কথা একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘিরে কিছু এনজিওর অশুভ তৎপরতা চালানোর বিষয়টিও স্পষ্ট হয়েছে। তাই এসব এনজিওর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে সরকারের কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া এসব এনজিও কীভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে, কারা তাদের সহযোগিতা করছে তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ক্যাম্প ব্যবস্থাপনায় নজরদারি বাড়ছে :এতদিন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মানবিক বিবেচনায় বিভিন্ন সংস্থার কর্মীসহ বহিরাগতদের বিচরণের বিষয়টি খানিকটা শিথিলভাবেই দেখা হয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে কিছু অনভিপ্রেত ঘটনা ও তৎপরতা সরকারের উদ্বেগ বাড়িয়ে তুললে ক্যাম্প ব্যবস্থাপনায় কঠোর নজরদারির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগের চেয়ে নিরাপত্তা বাড়ানো হচ্ছে, এনজিওদের কার্যক্রম আরও নিবিড় পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং ক্যাম্পের সার্বিক কর্মকাণ্ডের ওপর নজরদারিও বাড়ানো হচ্ছে। আঙুলের ছাপের মাধ্যমে গ্রাহকের পরিচয় নিশ্চিত না হয়ে সিমকার্ড বিক্রির সুযোগ না থাকলেও রোহিঙ্গারা কীভাবে সিমকার্ড পেল তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
রোহিঙ্গাদের মধ্যে সিমকার্ড বিক্রি না করার সরকারি নির্দেশনা এতদিন কার্যত পালিত হয়নি। বরং তাদের অবৈধভাবে মোবাইল টেলিযোগাযোগ সেবা দিতে একটি চক্র গড়ে ওঠে, যারা জালিয়াতির মাধ্যমে প্রায় অবাধেই রোহিঙ্গাদের কাছে সিমকার্ড বিক্রি করে। ফলে ক্যাম্পের ভেতরে হ্যান্ডসেট বিক্রি, মেরামতসহ অন্যান্য তথ্যপ্রযুক্তি সেবার একাধিক দোকানও জমজমাট হয়। স্থানীয় প্রশাসনের সামনে এসব দোকান চললেও কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি।
কূটনৈতিক প্রচেষ্টাও বাড়ছে :সাম্প্রতিক সময়ে রোহিঙ্গাদের সাক্ষাৎকারে দেওয়া বক্তব্যে স্পষ্ট হয়েছে, রাখাইনের পরিস্থিতি সম্পর্কে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের দেওয়া বক্তব্যের প্রতি রোহিঙ্গাদেরও আস্থা নেই। এ বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে রাখাইনের বর্তমান চিত্র তুলে ধরার জন্য মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা শুরু হয়েছে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিকভাবেও এ ব্যাপারে মিয়ানমারের ওপর চাপ বাড়াতে কূটনৈতিক তৎপরতা চালানো হচ্ছে। পাশাপাশি রোহিঙ্গা সংকটের দ্রুত সমাধানে বিশ্ব জনমত গড়ে তুলতেও বহুমুখী প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে।
‘ভাসানচরে জোর করে পাঠানো হবে না’ :গতকাল মঙ্গলবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিতর্কিত এনজিওগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের মঙ্গল চিন্তা করেই তাদের ভাসানচরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অনেক সংস্থার কর্মকর্তাই কক্সবাজারে গিয়ে ফাইভ স্টার হোটেলে থাকেন। ভাসানচরে ফাইভস্টার হোটেল না থাকায় আন্তর্জাতিক একাধিক সংস্থা রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে পাঠাতে আপত্তি করছে। তিনি বলেন, নীতিগত অবস্থান থেকে রোহিঙ্গারে জোর করে ভাসানচরে পাঠানো হবে না।
সুত্রঃ সমকাল
বাংলাদেশ সময়: ৯:৫৭:২০ ৭০৫ বার পঠিত #এনজিও #মাদক চোরাচালান #রোহিঙ্গা ক্যাম্প