মঙ্গলবার, ৯ জুলাই ২০১৩
“পোশাক কারখানা দেখবে ৭০ বিদেশি ক্রেতা”
Home Page » জাতীয় » “পোশাক কারখানা দেখবে ৭০ বিদেশি ক্রেতা”বঙ্গ- নিউজ ডটকমঃ বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলো পরিদর্শন করবে খুচরা বিক্রেতা ও নামিদামি ব্র্যান্ডসহ ৭০ বিদেশি ক্রেতার একটি কনসোর্টিয়াম।
বাংলাদেশের যেসব কারখানা থেকে তারা পোশাক সংগ্রহ করে সেসব কারখানা আগামী ৯ মাসের মধ্যে পরিদর্শন করবে তারা।
সোমবার এ বিষয়ে তাদের পরিকল্পনা ঘোষণা করার কথা রয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়ে নিউইয়র্ক টাইমস।
সাভারের রানা প্লাজা ধসে ১১শ’র বেশি মানুষ নিহত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে গত মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশে গার্মেন্ট কারখানায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পশ্চিমা কয়েকটি বড় পোশাক বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান একটি সমঝোতা স্মারক বা চুক্তিতে সই করে।
সাভারের রানা প্লাজা ধসে পড়ার পর আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে এই চুক্তির উদ্যোগ নেওয়া হয়। বর্তমানে এই চুক্তিতে সই করা কোম্পানির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭০ এ। চুক্তিতে সই করা উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কোম্পানি হচ্ছে- এইচঅ্যান্ডএম, ক্যারিফোর, মার্কস অ্যান্ড স্পেনসার এবং ক্যালভিন ক্লেইন ও টমি হিলফিংগারের মূল কোম্পানি পিভিএইচ।
এই চুক্তি অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে যেসব কোম্পানি পোশাক সংগ্রহ করবে তারা কারখানায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য অর্থ দেবে। পাশাপাশি কারখানাগুলো নিয়মিত পরিদর্শনও করবে।
কারখানাগুলো পরিদর্শনকালে তারা কারখানার নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ আনুসঙ্গিক বিষয়গুলো খতিয়ে দেখবে। এ ক্ষেত্রে গুরুতর কোনো সমস্যা পেলে তাৎক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্ট কারখানার বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেবে তারা।
চুক্তি অনুযায়ী, যেসব কারখানায় প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনা হবে না সেগুলোতে পোশাক তৈরির কার্যাদেশ দেবে না ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো। পাশাপাশি চুক্তির লঙ্ঘন হলে সংশ্লিষ্ট কারখানা মালিকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থাও গ্রহণ করবেন তারা।
বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের বিদেশি ক্রেতাদের এই কনসোর্টিয়ামের বেশির ভাগ সদস্যই ইউরোপের।
যুক্তরাষ্ট্রের অল্প কয়েকটি কোম্পানি ইউরোপীয়দের নেতৃত্বাধীন এ কনসোর্টিয়ামে যোগ দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে পিভিএইচ, অ্যাবেরক্রোমবি অ্যান্ড ফিচ ও সিন জন। এছাড়া লব্ল নামের কানাডার একটি খুচরা পোশাক বিক্রেতা কোম্পানিও এই কনসোর্টিয়ামে যোগ দিয়েছে।
বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক সংগ্রহ করে- যুক্তরাষ্ট্রের এমন খুচরা বিক্রেতার বেশির ভাগই এই কনসোর্টিয়ামে যোগ দেয়নি। কারণ এই কনসোর্টিয়াম যে চুক্তিতে সম্মত হয়েছে সেখানে বলা আছে, পোশাক কারখানার নিরাপত্তাসহ যাবতীয় সুবিধাদি নিশ্চিতে তাদের বিদেশি ক্রেতারাও দায়বদ্ধ থাকবে এবং এক্ষেত্রে এসব বিদেশি ক্রেতাদেরও বিচারের আওতায় আনা যাবে।
ওয়ালমার্ট, গ্যাপ ও টার্গেটসহ যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানিগুলো এই কনসোর্টিয়ামে যোগদানের পরিবর্তে মার্কিন সিনেটর জর্জ জে মিশেল ও অলিম্পিয়া জে. স্নোয়ির সহায়তায় ভিন্ন আরেকটি পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে। তারা বলছে, চলতি জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে তাদের পরিকল্পনার বিস্তারিত প্রকাশ করবে।
যুক্তরাজ্যের খুচরা পোশাক বিক্রেতা কোম্পানি এন ব্রাউন গ্রুপের নৈতিক বাণিজ্য বিষয়ক ব্যবস্থাপক অ্যান্ডি ইয়র্ক নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য কোম্পানিগুলো এই কনসোর্টিয়ামে যোগ দিলে আমরা খুশি হতাম।”
বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের প্রায় ৬০ শতাংশ রফতানি হয় ইউরোপে। আর যুক্তরাষ্ট্রের রফতানি হয় প্রায় ২৫ শতাংশ।
এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার গুটিকয়েক খুচরা পোশাক বিক্রেতা কোম্পানিও এই কনসোর্টিয়ামে যোগ দিয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি কোম্পানি হচ্ছে এস্পরিট।
এই কনসোর্টিয়ামের পরিকল্পনা হচ্ছে- কারখানা পরিদর্শনকালে যখনই তারা এমন কোনো সমস্যা পাবে যা শ্রমিকদের মৃত্যু বা বড় ধরনের আঘাত ঘটাতে পারে, তাৎক্ষণিকভাবে তারা ওই কারখানা মালিককে কারখানা বন্ধ করে দিয়ে প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে বলবে।
পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট বাংলাদেশি কর্মকর্তাদেরও বিপজ্জনক সমস্যাটি সম্পর্কে অবহিত করবে তারা।
কনসোর্টিয়ামে যোগ দেওয়া কোম্পানিগুলো একমত হয়েছে যে, নিরাপত্তা নিয়ে যে কোনো সমস্যা নিরসনে অর্থের যোগান হবে যৌথ বিনিয়োগের মাধ্যমে।
অ্যান্ডি ইয়র্ক বলেন, “বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলোর কর্মপরিবেশে দীর্ঘমেয়াদী পরিবর্তন আনতে এটাই একমাত্র পথ।”
বাংলাদেশ সময়: ১২:৪৪:২৮ ৫১৫ বার পঠিত