সোমবার, ২৪ জুন ২০১৯

শুভ জন্মদিন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ- ড. মোহাম্মদ আলমগীর কবীর

Home Page » আজকের সকল পত্রিকা » শুভ জন্মদিন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ- ড. মোহাম্মদ আলমগীর কবীর
সোমবার, ২৪ জুন ২০১৯



ফাইল ছবি
১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার টিকাটুলীর রোজ গার্ডেন প্যালেসে ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’ প্রতিষ্ঠিত হয়, যার সভাপতি ছিলেন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এবং সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক। ১৯৫২ সালে শেখ মুজিবুর রহমান সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। পরের বছর ঢাকার ‘মুকুল’ প্রেক্ষাগৃহে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের সম্মেলনে তাঁকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। পরে, ১৯৫৫ সালে ধর্মনিরপেক্ষতার চর্চা ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে রাখা হয়: ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’। ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত ১৩ বছর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন শেখ মুজিব। উল্লেখ্য, পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ ছিলো তৎকালীন পাকিস্তানে প্রথম বিরোধী দল।

প্রতিষ্ঠার পর থেকেই দলটি প্রাদেশিক স্বায়ত্ত্বশাসনের ওপর বিশেষ গুরুত্বসহ ৪২ দফা কর্মসূচি গ্রহণ করে। শুরুর দিকে দলটির প্রধান দাবিগুলোর মধ্যে ছিল রাষ্ট্রভাষা হিসাবে বাংলার স্বীকৃতি, এক ব্যক্তির এক ভোট, গণতন্ত্র, সংবিধান প্রণয়ন, সংসদীয় পদ্ধতির সরকার, আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন এবং তৎকালীন পাকিস্তানের দু’অঞ্চলের মধ্যে বৈষম্য দূরীকরণ। শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করতে যুক্তফ্রন্ট গঠন করতে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। ১৯৫৪ সালের মার্চের আট থেকে ১২ তারিখ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে ২৩৭টি আসনের মধ্যে যুক্তফ্রন্ট ২২৩টি আসন পায়। এরমধ্যে ১৪৩টি পেয়েছিল আওয়ামী মুসলিম লীগ।

১৯৬৬ সালে ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারি লাহোরে অনুষ্ঠিত বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর এক সম্মেলনে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ছয় দফা দাবি পেশ করেন। এই ছয় দফা কে বলা হয় বাঙালী জাতির মুক্তির সনদ। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংগ্রামের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান। এক দশকের বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা আইয়ুব খান সরকারের পতন ঘটে এই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে। এই সময়ে শেখ মুজিব এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগসহ আরো কিছু ছাত্র সংগঠন এক সাথে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে তাদের ঐতিহাসিক এগার দফা কর্মসূচী পেশ করেন যা মূলত বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনকে সহায়তা করে।

গণআন্দোলন ও আইয়ুবের পতনের পটভূমিতে ‘৭০ এর নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের ১৬৯ আসনের মধ্যে ১৬৭ আসন দখল করে আওয়ামী লীগ ৩১৩ আসন-বিশিষ্ট পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে এবং সরকার গঠনে ও শাসনতন্ত্র প্রণয়নের যোগ্যতা অর্জন করে। সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও আওয়ামী লীগকে সরকার গঠনে আমন্ত্রণ জানানোর পরিবর্তে সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খান সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে বাঙালির অধিকার নস্যাৎ করার পথ বেছে নেয় এবং যার ফলে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে শুরু হয় স্বাধীনতার আন্দোলন। পাকিস্তানি শাসকদের স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাব ও শোষণের ফলস্বরূপ ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভের পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। সরকার গঠনের পর যুদ্ধবিদ্ধস্থ বাংলাদেশ এবং দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে নানাবিধ সমস্যায় পড়তে হয়েছে। কিছু সংখ্যক পথভ্রষ্ট সামরিক অফিসার, দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রকারীদের সহায়তায় রাতের অন্ধকারে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করেন। সেদিন প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডের পর এবং শেখ হাসিনার দেশে ফেরার আগ পর্যন্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এতটাই অগোছালো ও কোন্দলপূর্ণ ছিল যে দলটি নানা উপদলে বিভক্ত ও নেতৃত্বশূন্য ছিল। তৃণমূল থেকে শুরু করে কেন্দ্র পর্যন্ত দলের নেতাকর্মী, সাধারণ মানুষ, রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ, সকলের মধ্যে একটা ধারণা ছিল আওয়ামী লীগের পরিণতি মুসলিম লীগের মতো হবে। তার উপর এই দলটির বিরুদ্ধে প্রচার-প্রচারনা এতোটাই তীব্র ছিল যে, এসব প্রতিহত করে রাজনীতির মাঠে নতুনভাবে দাঁড়ানো মোটেও সহজ ছিল না। এর ওপর শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মাত্র ১৩ দিনের মাথায় তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত ও একটি ঘোলাটে সামরিক শক্তি নতুনভাবে চাঙ্গা হয়ে ওঠার সময় শেখ হাসিনা দলের হাল ধরলেন নতুন করে। সবকিছু গোছাতে লাগলেন, অগোছালো আওয়ামী লীগকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার জন্যে।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করার পর আওয়ামী লীগকে চিরতরে ধ্বংস করার জন্য একই বছরের ৩ নভেম্বর জেলখানায় হত্যা করা হয় জাতীয় চার নেতাকে। অধিকন্ত পিতার মতো বরাবরই শেখ হাসিনাও ছিলেন ঘাতকের ষড়যন্ত্রের টার্গেট। একবার নয়, শেখ হাসিনাকে ১৯ বার হত্যার চেষ্টা চালানো হয়েছিল। তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত অগণিত জনপ্রিয় নেতা ও দলীয় কর্মীদের হত্যা করা হয়। নির্যাতন, অপহরণ, বিনা অপরাধে মামলা-হামলা করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় দলীয় জনপ্রিয় নেতা সাবেক অর্থমন্ত্রী ডঃ এ এম এস কিবরিয়া, শ্রমিক নেতা আহসানউল্লাহ মাস্টার, ২০০৪ সনে গ্রেনেড হামলা, আইভী রহমান সহ ১৯ জন নেতা কর্মী নিহত এবং অগনিত নেতা কর্মী আহত। এ সবই ছিল আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করা।

সকল বাধা-বিপত্তি ও দেশী-বিদেশী চক্রান্ত উপেক্ষা করে দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালের জুন মাসে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসে। দীর্ঘ ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবে আবারও ২০০১ সালে আওয়ামী লীগকে ষড়যন্ত্র করে ২০০১-২০০৮ পর্যন্ত ক্ষমতার বাহিরে রাখা হয়। আবারও শুরু হয় দলীয় নেতাকর্মীদের উপর অমানসিক নির্যাতন, হামলা-মামলা, সংখ্যালঘুদের উপর হামলা ও ব্যাপক হত্যাকাণ্ড। সারাদেশে ছাত্রদল, জামাত-শিবিরের তাণ্ডব জাতি দেখেছে সচক্ষে। ২০০৭ সনের ১/১১ এ সেনাশাসিত সরকার আবারও আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব শূন্য করতে চেয়েছে, শেখ হাসিনাসহ অগণিত নেতাকর্মীকে জেলে আটক করেছে, হত্যা, নির্যাতন, হামলা মামলা দিয়েছে কিন্ত কোন কিছুই আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব শূন্য করতে পারেনি উপরন্ত সময়ের সাথে সাথে আওয়ামী লীগ আরও শক্তিশালী হয়েছে এবং মানুষের আশ্রয় ও শেষ ঠিকানায় পরিণত হয়েছে। শত বাধা-বিপত্তি, জুলুম, নির্যাতন উপেক্ষা করে ২০০৮ সনে সেনাবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখাগরিষ্ঠতা পায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। পরবর্তীতে ২০১৩ ও ২০১৮ সনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনেও জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দলটি নিরঙ্কুশ সংখাগরিষ্ঠতা নিয়ে এদেশের মানুষের সেবা করার সুযোগ পায় এবং শেখ হাসিনা ৪র্থ বারের মত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।

জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এদেশের মানুষকে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন এবং ধাপে ধাপে তার বাস্তবায়ন করছে। দেশের মানুষ ডিজিটাল বাংলাদেশ, তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়ন, শিক্ষার আধুনিকায়ন ও কর্মমুখী শিক্ষা, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী ও এর আওতা বৃদ্ধি, খেলাধুলায় ব্যাপক উন্নয়ন, দারিদ্র্য দূরীকরণ, নারীর ক্ষমতায়ন, মানুষের ক্রয়-ক্ষমতা, গড় আয়ু, মাথা পিছু জাতীয় আয় বৃদ্ধি, মেগা প্রকল্পসমুহঃ(১)পদ্মাসেতু(২)রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র(৩)রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র(৪)গভীর সমুদ্রবন্দর(৫)ঢাকায় দ্রুত গনপরিবহনের জন্য অবকাঠামো নির্মাণ(৬)এলএনজি ফ্লোটিং স্টোরেজ অ্যান্ড রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট(৭)মহেষ্কহালী-মাতারবাড়ী সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন(৮)পায়রা সমুদ্রবন্দর(৯)পদ্মাসেতু রেল সংযোগ এবং(১০)চট্রগ্রাম হতে কক্সবাজার পর্যন্ত ১২৯কিলোমিটার রেললাইন স্থাপন ইত্যাদির যেমন স্বপ্ন দেখেছিল ঠিক তেমনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মানুষের স্বপ্নের বাস্থবায়ন করেও দেখাচ্ছে।

ড. মোহাম্মদ আলমগীর কবীর

লেখক: অধ্যাপক ও সাবেক প্রভোস্ট, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

বাংলাদেশ সময়: ০:০৬:০২   ১১৮৫ বার পঠিত   #  #  #  #