মঙ্গলবার, ১১ জুন ২০১৯

৫০০ টাকার ট্রেনের টিকিট বিক্রি হচ্ছে ১২০০ টাকায়

Home Page » অর্থ ও বানিজ্য » ৫০০ টাকার ট্রেনের টিকিট বিক্রি হচ্ছে ১২০০ টাকায়
মঙ্গলবার, ১১ জুন ২০১৯



ফাইল ছবি

বঙ্গ-নিউজঃ ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ রেল স্টেশনে ঢাকাগামী আন্তনগর ট্রেনের টিকিট সিন্ডিকেটের কাছে দ্বিগুণেরও বেশি দামে কিনতে হচ্ছে যাত্রীদের। পীরগঞ্জ থেকে ঢাকা পর্যন্ত ট্রেনের টিকিটের দাম ৫০০টাকা হলেও সিন্ডিকেট চক্রটি কৌশলে কাউন্টার থেকে টিকিট কিনে ১২০০টাকায় বিক্রি করছে প্রতিটি টিকিট। তবে রেল স্টেশন মাস্টার বলছেন, সিন্ডিকেট চক্র বন্ধে তাদের কোন করার নেই।

যাত্রীদের অভিযোগ, লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে ট্রেনের টিকিট কেনার আগেই টিকিট বিক্রি শেষ হয়ে যায়। সিন্ডিকেট চক্রটির সদস্যরা সবার প্রথমে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কিনে পরে সেই ৫০০টাকার টিকিট বাইরে বিক্রি করছে ১২০০টাকায়। ট্রেনে ভ্রমণ নিরাপদ হওয়ায় যাত্রীরা বাধ্য হয়ে দ্বিগুণ টাকা দিয়েই চক্রটির কাছে টিকিট কিনছেন।

রাণীশংকৈল উপজেলা থেকে আসা রিপন সাংবাদিকদের বলেন, ‘লাইনে দাঁড়িয়েও কাউন্টার থেকে টিকিট কিনতে পারি নি। পরে আরেকজনের মাধ্যমে ১২০০টাকা দিয়ে টিকিট কিনেছি। ট্রেনে যাত্রায় দুর্ঘটনার টেনশন থাকে না। ট্রেনে যাব বলে তাই বাধ্য হয়েই বেশি টাকা দিয়ে টিকিট কিনেছি।’ গাজীপুরে একটি গার্মেন্টসে চাকুরি করে পীরগঞ্জের নজরুল ইসলামেরও অভিযোগ,চড়া দামে টিকিট কিনতে বাধ্য হয়েছেন তিনি । বলেন, ঈদের ‘ছুটিতে বাড়ি আসছিলাম। ছুটি শেষ এখন আবার ফিরতে হবে কর্মস্থলে। ট্রেনের টিকিট তো কাউন্টার থেকে কিনতে পারলামই নাহ। মাইনকা চিপায় পড়ে ১২শ টাকা দিয়েই টিকিট নিছি। সরকার ইচ্ছে করলেই এইসব বন্ধ করতে পারে। আমাদের মতো মানুষের পক্ষে এতো দামে টিকিট কেনা কষ্ট সাধ্য হলেও কিনতে হয়েছে।’

‘হরিপুর,রাণীশংকৈল ও পীরগঞ্জ এই তিন এলাকার মানুষের যেহেতু রেল স্টেশন পীরগঞ্জ। তাই এখানে ঠাকুরগাঁও স্টেশনের থেকেও বেশি টিকিট দরকার। কিন্তু এখানে যাত্রীর তুলনায় খুবই কম টিকিট। আসন সংখ্যা বাড়ানো উচিৎ। আর সিন্ডিকেটের জন্য বর্তমানে কাউন্টারে তো টিকিট পাওয়াই যায় না।এইসব সিন্ডিকেটও বন্ধ করা উচিত প্রশাসনের।’ বলছিলেন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্য হাবিব। তার বাড়ি রাণীশংকৈল উপজেলায়।

পীরগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সহ-সাধারণ সম্পাদক দেলওয়ার হোসেন দুলাল সাংবাদিকদের বলেন,‘সিন্ডিকেটের জন্য আমাদের টিকিট দ্বিগুণ দামে কিনতে হচ্ছে। এই চক্রটিকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।’ দুলাল আরও বলেন,‘ পীরগঞ্জ রেল স্টেশনের কর্মকর্তার সাথে সিন্ডিকেট চক্রের যোগসাজশ আছে নিশ্চয়ই। তবে এইসবের সাথে রাজনৈতিক নেতাদের সম্পৃক্ততা না থাকলেও সিন্ডিকেট বন্ধে রাজনৈতিক মহলের চুপ থাকার বিষয়টি রহস্যজনক।’ দ্রুত সিন্ডিকেট বন্ধে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চান তিনি।

সূত্র বলছে, রেল স্টেশন মাস্টারের সাথে সমঝোতা করেই কালোবাজারি সিন্ডিকেট চক্রটি টিকিটের এই রমরমা বাণিজ্য দীর্ঘদিন ধরে চালিয়ে আসছে। সিন্ডিকেট চক্রের কালোবাজারির ভাগবাটোয়ারার টাকার একটি অংশ রেল স্টেশন মাস্টারের পকেটে ঢুকে।

তবে এই বিষয়টি অস্বীকার করেন স্টেশন মাস্টার।

রেলস্টেশন মাস্টারের তথ্য অনুযায়ী, পঞ্চগড় থেকে ঢাকাগামী একতা এক্সপ্রেসে পীরগঞ্জ রেল স্টেশনের জন্য শোভন চেয়ারের আসন সংখ্যা মাত্র ২২টি বরাদ্দ আছে। এসি বা কেবিনের কোন আসন বরাদ্দ নেই। ট্রেনটি পীরগঞ্জ ছেড়ে যায় প্রতিদিন রাত ১০টা ৫মিনিটে। অপরদিকে, দ্রুতযান এক্সপ্রেস ট্রেনে পীরগঞ্জ স্টেশনের যাত্রীদের জন্য মাত্র ৩০টি আসন বরাদ্দ রয়েছে। ট্রেনটি প্রতিদিন সকাল ৮টা ২৫ মিনিটে পীরগঞ্জ ছেড়ে যায়

স্টেশন মাস্টার গোলাম রব্বানী বাংলা’কে জানান, যাত্রীদের চাহিদার তুলনায় পীরগঞ্জে ট্রেনের আসন বরাদ্দ খুবই কম। কারণ পীরগঞ্জ স্টেশনে পাশ্ববর্তী রাণীশংকৈল ও হরিপুর উপজেলার যাত্রীও আসে। যাত্রীদের চাহিদা অনুযায়ী, প্রতিদিন একতা এক্সপ্রেসে পীরগঞ্জ রেল স্টেশনের আসন প্রয়োজন ১০০টি। তাহলে যাত্রীদের চাহিদা পূরণ হবে। সেখানে টিকিট বরাদ্দ মাত্র ২২টি। যাত্রীদের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান তিনি।

সিন্ডিকেটের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কে সিন্ডিকেটের লোক,সেটা তো আমি চিনে রাখি না। প্রতিদিন সকাল ১১টায় আন্তনগর ট্রেনের টিকিট ছাড়া হয়। এসময় যাঁরাই আগে এসে লাইনে দাঁড়ায় তারাই টিকিট পায় ‘
তবে পাশ্ববর্তী ঠাকুরগাঁও সদর রেল স্টেশনের টিকিট অনলাইনে চালুর পর বর্তমানে পীরগঞ্জ রেলস্টেশনে সিন্ডিকেটে টিকিট বিক্রি হয় না বলে তিনি দাবী করেন।

গোলাম রব্বানী বলেন, ‘পীরগঞ্জ রেল স্টেশনের টিকিট লাইনে দাঁড়িয়ে কেনার পর সেই টিকিট বাইরে কে বেশি দামে বিক্রি করছে সেটা তো আমার পক্ষে সনাক্ত করা সম্ভব নয়।’

সিন্ডিকেট বন্ধে তাদের পক্ষ থেকে কোন করার নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার কাছে যতক্ষণ টিকিট আছে আমি ততক্ষণ বিক্রি করি। টিকিট শেষ আমার কাউন্টারও বন্ধ।’

এদিকে রেলের টিকিট কালোবাজারির সাথে যাঁরা জড়িত থাকবে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন রেলমন্ত্রী অ্যাডভোকেট নূরুল ইসলাম সুজন। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে তিনি এই নির্দেশ দেন।

সুত্রঃ বাংলা

বাংলাদেশ সময়: ১১:৩২:২৮   ৭২০ বার পঠিত   #  #  #  #  #