মঙ্গলবার, ২ জুলাই ২০১৩

এমএ মান্নানের, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ!

Home Page » জাতীয় » এমএ মান্নানের, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ!
মঙ্গলবার, ২ জুলাই ২০১৩



ma-mannan20130702095636.jpgবঙ্গ-নিউজ ডটকম: গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ১৮ দলীয় মেয়র প্রার্থী এমএ মান্নান কর খেলাপি। তিনি ২৪ লাখ ৫৬ হাজার ৮০১ টাকা কর ফাঁকি দিয়েছেন। এ কারণে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করেছে। কিন্তু এনবিআর কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশে তিনি এটি গোপন করে নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হযেছেন।নির্বাচনী আইন অনুযায়ী কর ও ঋণ খেলাপি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। কিন্তু তিনি কীভাবে মেয়র প্রার্থী হলেন এবং কর খেলাপির দায়ে তার প্রার্থিতা বাতিল হলো না কেন এসব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কোনো প্রার্থীর প্রার্থিতা চূড়ান্ত করার আগে নির্বাচন কমিশন রাজস্ব বোর্ডে চিঠি পাঠিয়ে তার অপরিশোধিত কর আছে কি না জানতে চায়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে এনবিআর মান্নানের কর ফাঁকির বিষয়টি গোপন করেছে। জানা যায়, এটি গোপন রাখার জন্য মোটা অংকের টাকাও লেনদেন হয়েছে।

এদিকে, মেয়র প্রার্থী এমএ মান্নান বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি যথাযথভাবে কর পরিশোধ করেছি। আমার কোনো কর অপরিশোধিত নেই। আমাকে সামাজিকভাবে হেয় করার জন্যই পরিকল্পিতভাবে কর খেলাপি বানানো হচ্ছে।’

মঙ্গলবার বেলা ১টায় উপ-কর কমিশনার সদর দপ্তর (প্রশাসন) কর অঞ্চল গাজীপুর সার্কেল-১ কোম্পানির কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, ১৮ দল সমর্থিত প্রার্থী এমএ মান্নানের আয়করের কোনো ফাইল গাজীপুরে নেই।

উপ-কর কমিশনার এস এম বদিরুজ্জামান বাংলানিউজকে জানান, ২০১১ সালের অক্টোবর মাসে এই অফিস উদ্বোধন হয়। মান্নান গাজীপুর ফ্যাশন ও ক্যাপিটাল প্রপার্টিজ ডেভেলপমেন্ট প্রা. লি. নামে দুটি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক বলে জানান তিনি। তবে ওই দুটি প্রতিষ্ঠান গাজীপুরে হলেও ফাইল দুটি কর অঞ্চল -৫ এর সার্কেল ৯৫ অথবা সার্কেল ৯৬ সংরক্ষণ করে।

এই ব্যাপারে সদর দপ্তর (প্রশাসন) কর অঞ্চল-৫, সার্কেল ৯৫ ও সার্কেল ৯৬-এ টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে এ বিষয়ে কেউ মুখ খুলতে রাজী হননি।
সূত্র জানায়, ২০০৭-২০০৮ অর্থবছরে অধ্যাপক মান্নানের আয়কর বকেয়া ছিল ২১ লাখ ৮৩ হাজার ৪৩৪ টাকা। বাকি কর প্রদানের ক্ষেত্রে মান্নান আপিল করেন, এরপর সংশোধিত কর নির্ধারিত হয় ২৪ লাখ ৩৯ হাজার ৬৮১ টাকা।

২০১১-২০১২ অর্থবছরে এমএ মান্নানের কর বকেয়া ছিল ১৭ হাজার ১২০ টাকা।

কর কমিশনার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, কোনো করদাতা নোটিশ পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে কর পরিশোধ করতে হবে। এই সময়ের মধ্যে কর পরিশোধ না করলে আরো এক মাস সময় দেওয়া যেতে পারে। পরবর্তী এক মাস অতিবাহিত হওয়ার পর কর পরিশোধ না করলে ওই করদাতাকে সর্বোচ্চ করের সমপরিমাণ জরিমানা করা হবে।

এরপরও কর পরিশোধ না হলে কর অফিসকে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে সার্টিফিকেট মামলা করতে হবে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে ওই বকেয়া কর আদায় করবেন। ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে কর আদায় না হলে কর দাতার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা ব্যাংক হিসাব জব্দ করবেন। মালামাল আলামত হিসেবে জব্দের পর ১৯৮৪ সালের আয়কর অধ্যাদেশ-এর ১৬৪ ও ১৬৫ ধারায় আদালতে মামলা দায়ের করবে এনবিআর। মামলা হলে ওই করদাতা কোনো নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।

সূত্র জানায়, কর পরিশোধ না করায় ২০১৩ সালের ১৩ জুন এনবিআর এম এ মান্নানের মার্কেন্টাইল ব্যাংক গুলশান শাখার সংশ্লিষ্ট একাউন্ট জব্দ করেন।

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে এমএ মান্নান মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন ২ জুন। ১৬ জুন মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। ১৭ জুন বাছাইয়ে তার মনোনয়নপত্র চূড়ান্ত করা হয়।

সূত্র জানায়, ১৩ জুন কর খেলাপীর কারণে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মামলা দায়েরের বাধ্যবাধকতা থাকলেও এনবিআর রহস্যজনক কারণে তা করেনি। তাই মামলা না হওয়ায় এখন প্রশ্ন উঠেছে।

এ বিষয়ে জিসিসি নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার মতিয়ার রহমানের সঙ্গে বার বার যোগাযোগ করা তিনি ফোন ধরেননি।

বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মিহির সারোয়ার মোর্শেদ বাংলানিউজকে এ বিষয়ে কোন বক্তব্য দিতে পারবেন না বলে জানান।

বাংলাদেশ সময়: ২৩:১৭:২৬   ৪১২ বার পঠিত