সোমবার, ৬ মে ২০১৯

আম্র-পালী আমের নামকরণের ইতিহাস -২৩ (শেষ পর্ব) :জালাল উদদীন মাহমুদ

Home Page » বিনোদন » আম্র-পালী আমের নামকরণের ইতিহাস -২৩ (শেষ পর্ব) :জালাল উদদীন মাহমুদ
সোমবার, ৬ মে ২০১৯



 জালাল উদদীন মাহমুদ



অবশেষে প্রতীক্ষার পালা শেষ হলো। তথাগতের সামনে এসে দাঁড়ালেন সে সেই তরুণ ভিক্ষু ।নগরবধূর প্রাসাদে তিনি চার মাস কাটিয়েছেন | কিন্তু আছেন আগের মতোই নিষ্কলুষ |তিনি এখন তথাগত(গৌতম বুদ্ধ) এর সামনে ।

বর্ষা শেষ হয়েছে । বর্ষা শেষে শ্রমণ (ভিক্ষুগণ) সবাই সমবেত হয়েছে , তাদের নতুন গন্তব্যের দিকে যাত্রা করতে হবে। কিন্তু তরুণ শ্রমণও এসেছে । কিন্তু তার পিছনে পিছনেঐ মহিলা কে ? | যাঁর গায়ের রং ছিল দুধে আলতাতে মিশানো । পাতলা ঠোঁট বেদানার মতো লাল, লাল আভাযুক্ত কপোল। হরিণ হরিণ নয়ন। সমুদ্রগভীর নাভিদেশ, মরালগ্রীবার ভঙ্গিমা দেখার জন্য হত্যে দিয়ে পড়ে থাকতেন রাজপুরুষরা | রূপযৌবনে পরিপূর্ণা সেই মহিলার পরনে হলুদ রংগের বস্ত্র | আরে ! এ যে আম্রপালী । চাঁপাফুলের মতো আঙুল জড়ো করে তিনি প্রণাম করলেন তথাগত বুদ্ধকে | জানালেন, তিনি তরুণ শ্রমণকে প্রলুব্ধ করতে কোনও চেষ্টা বাকি রাখেননি | কিন্তু এই প্রথম কোন পুরুষকে বশ করতে ব্যর্থ হয়েছেন বৈশালীর নগরবধূ আম্রপালী | উল্টো আম্রপালীকেই বশ করেছেন সর্বত্যাগী তরুণ শ্রমণ | আজ, সর্বস্ব ত্যাগ করে তথাগত বুদ্ধের চরণে আশ্রয় চান আম্রপালী | বাকি জীবন কাটাতে চান প্রব্যজ্যা নিয়ে | নগরবধূ আম্রপালীর সঙ্ঘে যোগদানের আগে তাঁর উদ্যানে অতিথি হয়ে তাঁর হাতে অন্নগ্রহণ করেছিলেন তথাগত বুদ্ধ | রক্ষণশীল সমালোচকদের মুখের উপর জবাব দিয়ে | নিজের সব সম্পত্তি, প্রাসাদ, উদ্যান বৌদ্ধ সঙ্ঘে দান করে দিয়েছিলেন আম্রপালী | মোহমুক্ত হয়ে বাকি জীবন উত্সর্গ করেছিলেন বৌদ্ধ সঙ্ঘারামে | তিনি তথাগতকে বলেন ভিক্ষুণীদেরও সঙ্ঘে নিতে | কিন্তু ভিক্ষুদের মনসংযোগ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় রাজি ছিলেন না বুদ্ধ | তাঁকে পাল্টা প্রশ্ন করেন আম্রপালী | বৌদ্ধ শ্রমণদের মনসংযোগ এতই ঠুনকো যে এক নারীর জন্য তা ভেঙে পড়বে ? এরপর আর রাজি না হয়ে পারেননি বুদ্ধ তথাগত | মাতা গৌতমী, স্ত্রী যশোধরাও তাঁকে একই অনুরোধ করেছিলেন | জীবনের অর্ধাংশ বৌদ্ধ সঙ্ঘেই অর্পণ করেছিলেন আম্রপালী |


১৯৭৮ সালে ভারতের আম গবেষকরা দশোহরি ও নিলাম-এই দুটি আমের মধ্যে সংকরায়ণের মাধ্যমে পৃথিবীর বিস্ময়কর আম্রপালি আমের জাত উদ্ভাবন করেন। আম্রপালি তার পিতৃ ও মাতৃ গুণের (দু’সেহরী ও নীলম) চেয়ে অনেক উন্নত ও ভিন্ন। ভারতীয় বিজ্ঞানীরা আমটির নামকরণ করে এখন থেকে প্রায় ২৫০০ বছর আগে জন্ম নেয়া “আম্রপালি”-কে অমরত্ব দান করেছেন। আমটি বাংলাদেশের আবহাওয়ার সাথেও মানিয়ে যায়। আমি এর আগে ল্যাংড়া , ফজলী ও হাঁড়ি ভাঙ্গা আমের নামকরণের কাহিনী লেখার চেষ্টা করেছি। আম্রপালী আমের নামকরণের ইতিহাস লিখার কাজও আজ শেষ করলাম।

প্রতীকি ছবি

আম্রপালীর জীবন কাহিনী জানতে অনেকের মধ্যে আগ্রহ দেখেছি। এ আগ্রহ কাউকে কাউকে বিস্মিত করেছে । আমার মনে হয় বিখ্যাত এ আমের নাম আজ থেকে ২৫০০ বছর আগে জন্মনেয়া যে এক নারীর (তাও আবার সমাজের চোখে নগর বধু তথা বহু ভোগ্যা) নামে হয়েছে তার জীবন কাহিনী জানতে আগ্রহী থাকাটাও স্বাভাবিক । ভুলে গেলে চলবে না ,এ নারীর সাথে দেখা হবার পর স্বয়ং গৌতম বুদ্ধও তাঁর নীতিমালা কিছুটা সংশোধন করেছিলেন।

বিভিন্ন জাতের আমের আহরণকাল

বাংলাদেশ সময়: ১০:২৪:০৫   ১০৩৮ বার পঠিত   #  #  #  #  #  #