বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০১৯

মহানগরীর স্কুলগুলোতে ভয়ঙ্কর কিশোর ‘গ্যাং,জড়িয়ে পড়েছে নানা অপরাধে !

Home Page » জাতীয় » মহানগরীর স্কুলগুলোতে ভয়ঙ্কর কিশোর ‘গ্যাং,জড়িয়ে পড়েছে নানা অপরাধে !
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০১৯



প্রতীকি ছবি

স্বপন চক্রবর্তী, বঙ্গ-নিউজ: মহানগরীর স্কুলগুলোতে ভয়ঙ্কর কিশোর ‘গ্যাং’ গড়ে উঠেছে। এসব ‘গ্যাং’য়ের সদস্যদের ব্যাগে-পকেটে থাকে ছুরিসহ অন্যান্য ধারালো অস্ত্র। কুমিল্লা নগরীর বিভিন্ন স্টেশনারি ও কামারদের দোকানে সহজলভ্য হওয়ায়, তা কিনে নেয় বিভিন্ন ‘গ্যাং’য়ের সদস্যরা। আর এসব ধারালো অস্ত্র দিয়ে সহজেই প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করে তারা।

মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) রাতে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে কুমিল্লা কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশ অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন গ্যাং গ্রুপের অন্তত ৩০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এছাড়া শহরের এসবি প্লাজার তিনটি দোকানে অভিযান চালিয়ে সেখান থেকে অন্তত সাত শ আধুনিক ছোরা ও চাপাতি উদ্ধার করা হয়।

আটককৃত ৩০ জন কুমিল্লা শহরের বিভিন্ন স্কুলের ছাত্র। তাদের বেশির ভাগই ৭ম ও ৮ম শ্রেণির ছাত্র।

অভিভাবকদের অবহিত করে তাদের কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে আটককৃতদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

জানা গেছে, গ্যাং কালচারের নামে দিন দিন ভয়ংকর হয়ে উঠছে কুমিল্লার কিশোরদের একটি অংশ। নগরীর খ্যাতনামা বিদ্যালয়গুলোতে বিভিন্ন নামে অন্তত অর্ধশত কিশোর ‘গ্যাং’ গড়ে উঠেছে। এসব ‘গ্যাং’য়ের সদস্যরা জড়িয়ে পড়েছে নানা অপরাধে।

এক গ্রুপের সঙ্গে অন্য গ্রুপের সদস্যদের কথা তর্কাতর্কি হলে খুনে গিয়ে পরিণতি শেষ হয়।

গত রোববার (২১ এপ্রিল) রাতে কুমিল্লা মডার্ণ হাই স্কুলের ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী মোন্তাহিন ইসলাম মিরনকে (১৪) ছুরিকাঘাত করে তার সহপাঠীরা। পরে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর মৃত্যু হয় মিরনের। শহরের ঠাকুরপাড়া রোডের মদিনা মসজিদ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

গত ১৬ এপ্রিল বুধবার কুমিল্লা কালেক্টরেট স্কুলের এক শিক্ষার্থীর ছুরিকাঘাতে আহত হয় কুমিল্লা জিলা স্কুলের শিক্ষার্থী মারুফ। পরে তাকে আশঙ্কাজনকভাবে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায় সহপাঠীরা। গত ২০১৮ সালের ১১ জুলাই অজিতগুহ কলেজের শিক্ষার্থী অন্তুকে (১৮) প্রেম সংক্রান্ত বিরোধের জেরে নগরীর ধর্মসাগরপাড়ে খুন করে তার সহপাঠীরা।

জানা গেছে, কুমিল্লা শহরের কান্দিরপাড় নজরুল এভিনিউ রোডের কর ভবন, মডার্ন হাই স্কুলের সামনে, আড়ংয়ের সামনে এবং লিপি ডিজিটালের সামনে এসব গ্যাং গ্রুপের আড্ডা। স্কুল শুরুর সময় থেকে দুপুর পর্যন্ত এবং বিকেল থেকে রাত ৮/৯ টা পর্যন্ত এই গ্যাং গ্রুপের সদস্যরা আড্ডা মারে। প্রতি গ্রুপে ২০ থেকে ৩০ জন সদস্য রয়েছে।

এই গ্রুপগুলোর সদস্যরা শহরের বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করে। এদের বেশির ভাগই স্কুলের ছাত্র।

স্থানীয়রা জানান, এ সব গ্রুপ গুলোর সদস্যরা প্রায়ই হর্ন বাজিয়ে মোটরসাইকেল চালায়। নানা অজুহাতে এক গ্রুপ আরেক গ্রুপের সাথে বিবাদে জড়িয়ে পড়ে, মেয়েদের ইভ টিজিং করে। শবে বরাতের রাতে কুমিল্লা নগরীর কান্দিরপাড় এলাকায় সহপাঠীদের ছুরিকাঘাতে মোন্তাহিন ইসলাম মিরন নামে অষ্টম শ্রেণির এক স্কুলছাত্র নিহত হয়।

কুমিল্লা শহরের নজরুল এভিনিউ রোডে ও ঈদগাহ রোডে এই কিশোররা গড়ে তুলেছে কয়েকটি গ্যাং গ্রুপ। যাদের কোনটির নাম ‘র‌্যাক্স’, ‘এক্স সিএমএইচএস’, ‘এলআরএন’, ‘মডার্ণ স্কুল ওয়ান’, ‘মডার্ণ স্কুল টু’ ও ‘ঈগল’।

এই গ্রুপ গুলোর কাজ মূলত বখাটেপনা, হর্ন বাজিয়ে মোটরসাইকেল চালানো, মেয়েদের উত্যক্ত করা এবং নিজেদের মধ্যে সংঘাতে জড়িয়ে পরা। যার সর্বশেষ শিকার হয়েছে কুমিল্লা মডার্ণ হাই স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র মোন্তাহিন ইসলাম মিরণ।

মঙ্গলবার বিকেলে কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জনি রায় ও কুমিল্লা কোতয়ালী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ আবু ছালাম মিয়ার নেতৃত্বে কুমিল্লা শহরের নজরুল এভিনিউ, কান্দিরপাড়, মোগলটুলিসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালানো হয়।

এ সময় স্কুল ফাঁকি দিয়ে আড্ডারত অন্তত ৩০ জন বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীকে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়। সেই সাথে কুমিল্লা নিউমার্কেট সংলগ্নে অবস্থিত এসবি প্লাজায় দেবাশীষের তিনটি দোকান থেকে ‘সেভেন গিয়ার’, ‘সুইচ গিয়ার’, ‘মাছ মার্কা’, ‘পিস্তল মার্কা’ ইত্যাদি নামের অন্তত ৭ শ আধুনিক ছোড়া ও চাপাতি উদ্ধার করে। দোকানদাররা এসব ছোড়া আর কোনদিন বিক্রি করবে না বলে মুচলেকা দেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু ছালাম মিয়া বলেন, বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে আমরা ২৫ থেকে ৩০ জন শিক্ষার্থী আটক করেছিলাম। যারা স্কুলের বাইরে আড্ডা দিচ্ছিল। তাদের অভিভাবকরা এসব জানত না। আমরা অভিভাবকেদের তা অবহিত করেছি এবং মুচলেকা নিয়ে ছেড়েছি। এই অভিযান চলমান থাকবে। অভিভাবকদের আরও সতর্ক হতে হবে যাতে তাদের সন্তানরা কোথায় কি করছে তা তারা জানে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়।

এ প্রসঙ্গে কুমিল্লা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন জানান, কিশোর অপরাধ বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর। এ বিষয়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের নিয়ে সচেতনতামূলক সভা সেমিনার করে যাচ্ছে কুমিল্লা জেলা পুলিশ।

বাংলাদেশ সময়: ৯:০৩:১৫   ৬১৩ বার পঠিত   #  #  #  #  #  #