শুক্রবার, ১২ এপ্রিল ২০১৯

“রঙে ভরা আমার ব্যাংকিং জীবন “-জালাল উদদীন মাহমুদ

Home Page » বিনোদন » “রঙে ভরা আমার ব্যাংকিং জীবন “-জালাল উদদীন মাহমুদ
শুক্রবার, ১২ এপ্রিল ২০১৯



 জালাল উদদীন মাহমুদ

৮৫ তম পর্ব–
ডেমাজানি শাখা ,বগুড়া -৪৪ , (প্রথম খন্ডের শেষ পর্ব)

একটি নামকরা কারখানায় কাজ করতো একজন সুপারভাইজার। সে বিয়ে করার পর বিষয়টি কারখানার ম্যানেজারকে জানিয়ে বিয়ে পরবর্তী কিছু ব্যয় নির্বাহের জন্য আর্থিক সাহায্যের আবেদন করলো। ম্যানেজার যথারীতি তার আবেদন পত্র কারখানার মালিকের কাছে পাঠিয়ে দিল। কারখানার মালিক এই লিখে দরখাস্থ ফেরৎ দিল যে “ কারখানার বাহিরে সংঘটিত কোন দুর্ঘটনার জন্য কারখানার মালিক কোন আর্থিক সাহায্য বা ক্ষতিপূরণ দিবে না।”

 

ডেমাজানি শাখায় থাকতে আমি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হই। কিন্তু বিষয়টি ব্যাংকের বাহিরে সংঘটিত বলে আমি এখানে তা আর উল্লেখ করলাম না। তবে এ বিবাহের কারণে আমার বগুড়া শহরে পোস্টিং নেয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিল। তাছাড়া এখানেও তিন বছরের বেশী হয়ে গিয়েছিল। ছাড়তে হলো ছায়া সুনিবিড় শান্তির নীড় ডেমাজানী । বদলী হলাম বগুড়া শহরের সপ্তপদী মার্কেট শাখায়। এ শাখার কথা দ্বিতীয়খন্ডে বলবো। *********

চাকুরী জীবনের প্রথম পাঁচ বছরের স্মৃতি কথা লেখার আজ শেষ দিন। একটা উপসংহার টানতে চাচ্ছি কিন্তু কিছুতেই পারছিনা। বারবার সে সময়ের উচ্ছল স্মৃতিগুলোর ঝাপটা এসে চোখদুটোকে ভিজিয়ে ভিজিয়ে ঝাপসা করে দিচ্ছে। ঝাপসা ঝাপসা চোখ দুটি বন্ধ করে মনের আলোয় সে সময়ের ঘটনাগুলি আবার দেখা শুরু করলাম। ঘটনাগুলি দেখছি আর মনে মনে হাসছি। যতই হাসছি হৃদয়ের মধ্যে ততই মোচড় দিয়ে উঠছে। আহা কি কচিকচি কলাপাতা রংয়ের দিনগুলি । কত তরুণ ছিলাম তখন। কত প্রাণপ্রাচুর্য্যে ভরা ছিলাম তখন। আবার কত অনভিজ্ঞও ছিলাম তখন। আজ আমার সঞ্চয়ে অনেক অভিজ্ঞতা আছে কিন্তু হায় সে প্রাণ প্রাচুর্য্য এর সঞ্চয়ে যে ভাটির টান লেগেছে। কার সাধ্য তাকে রুখবে ।

বড় সাধ হচ্ছে ঐ সুলতানগজ্ঞ , ঐ তালোড়া , ঐ ক্যান্টনমেন্ট ঐ ডেমাজানি - এ জীবনে একবার করে হলেও ঘুরে আসি। যে সব সাথীরা এখনও জীবিত আছেন তাদের একবার চোখের দেখা দেখে আসি। মনে হচ্ছে এখনই এখনই বেরিয়ে পড়ি। কিন্তু হায় ! হাত পায়ে কে যেন এক অদৃশ্য শিকলের মালা পরিয়ে দিয়েছে। সে মালায় আজ আর নানা রঙের ফুল নেই , আছে পুঞ্জীভূত বয়স ,মরচে ধরা প্রাণ প্রাচুর্য্য চুম্বক সম সংসারের মায়াজাল , আর অবসরের অপাংক্তেয়তা।

সব কিছুই এখন বিবর্ণ - ধূসর । যেখানেই যাই মনে হয় আমি যেন অনাহুত . আমি যেন অনিমন্ত্রিত ; সর্বস্থানে অযাচিত,অনাদিষ্ট ,অনভিপ্রেত ; কোথাও কোথাও অবাঞ্ছিত , অনাকাঙ্ক্ষিত; কথনও কখনও অপ্রত্যাশিত ,অসম্পৃক্ত , অপ্রার্থিত সর্বোপরি অনাবশ্যকও বটে । ভাল আছি না মন্দ আছি সে বিষয়েও অজিজ্ঞাসিত আজ আমি। মাথার উপর আজ আর অফিসের নিয়ন্ত্রণ কর্তা নাই তাই আজ আমি অনিয়ন্ত্রিত , অসংযত ,অপরিমেয় , অবারিতও বটে।

মাঝে মাঝে পুরানো কারো কারো সাথে দেখা হয় । স্মৃতির ডালি নিয়ে বসে পড়ি তখন । চলে দিনভর আলাপচারিতা, আড্ডা আর ধুসর স্মৃতি রোমন্থন ।এভাবেই যেন হারিয়ে যাই ফেলে আসা স্বর্ণালী অতীতে। এ জীবনে মৃত্যু বিনা যার কোন উপসংহার নাই।
এ সব নিয়েই জীবন বহমান । বহমান জীবনে আমি ভেসে চলেছি সেই সীমাহীন সাগরের টানে। ক্ষুদ্র নদী আমি। হয়তো মোহনার কাছাকাছি এসে গেছি । অপেক্ষায় আছি সাগরে বিলীন হবার। এ সব ভেবে ভেবে ভীষণ অন্যমনস্ক এখন আমি । মনের এ বিক্ষিপ্ত অবস্থায় জালাল উদ্দিন রুমির বাণী মনে পড়ে গেল। “যা কিছু হারিয়েছো তার জন্য দুঃখ করো না। তুমি তা আবার ফিরে পাবে, আরেকভাবে, আরেক রূপে।” সত্যিই তা আবার ফিরে পাব ! কিন্তু কবে ?
(প্রথম খন্ড সমাপ্ত )

বাংলাদেশ সময়: ৯:২০:০০   ৮৩৮ বার পঠিত