বুধবার, ৩ এপ্রিল ২০১৯

পুলিশ কর্মকর্তার নেতৃত্বে ডাকাতি

Home Page » আজকের সকল পত্রিকা » পুলিশ কর্মকর্তার নেতৃত্বে ডাকাতি
বুধবার, ৩ এপ্রিল ২০১৯



 ছবি সংগৃহীত

বঙ্গ-নিউজঃ পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের এক পরিদর্শকের বিরুদ্ধে ডাকাতি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ডাকাতির মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে ওই পুলিশ কর্মকর্তা এখন কারাগারে আছেন। পুলিশ আদালতকে জানিয়েছে, ডাকাতি মামলার এক নম্বর আসামি হলেন হুমায়ুন কবির (৩৭)। তিনি পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের একজন পরিদর্শক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

তবে পুলিশ কর্মকর্তা হুমায়ুন কবিরের আইনজীবী লিখিতভাবে আদালতের কাছে দাবি করেছেন, ডাকাতির ঘটনার সঙ্গে হুমায়ুন কবির জড়িত নন। তাকে ষড়যন্ত্র করে এ মামলায় জড়ানো হয়েছে।

গত ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে ডাকাতির কবলে পড়েন বাংলাদেশ ফিল্ম প্রোডাকশনের সহকারী ব্যবস্থাপক শাহজাহান সরকার। ডাকাত দলের সদস্যরা শাহজাহানকে মারধর করে তার মোটরসাইকেল কেড়ে নেয়। একই সঙ্গে এটিএম কার্ডের গোপন পিন নম্বর এবং বিকাশের গোপন পিন নম্বর জেনে নেয় ডাকাতেরা। এ ঘটনায় শাহজাহান সরকার বাদী হয়ে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেন।

মামলায় শাহজাহান সরকার অভিযোগ করেন, সেদিন রাত ১২টা ১০ মিনিটে নিজের মোটরসাইকেলে করে পুলিশ প্লাজা থেকে মহাখালীর উদ্দেশে রওনা হন। রাত ১২টা ১৫ মিনিটে লিংক রোডের শান্তা ওয়েস্টার্ন টাওয়ারের সামনে এলে এক লোক তাকে থামার জন্য নির্দেশ দেন। শাহজাহান তখন দাঁড়ান। তখন পাশে থাকা একটি সাদা রঙের প্রাইভেট কার থেকে তিনজন লোক নেমে আসেন। এর মধ্যে একজনের কোমরে ওয়্যারলেস সেট ছিল। একটা কার্ড দেখিয়ে বলেন, তিনি পুলিশের লোক। ক্রাইমের স্পেশাল অফিসার। তখন ওই লোক তার দুই সহযোগীকে নির্দেশ দেন শাহজাহানের দেহ তল্লাশি করার জন্য।

মামলায় আরও বলা হয়, শাহজাহানের কাছে থাকা জাতীয় পরিচয়পত্র, ব্যাংকের এটিএম কার্ড, নগদ সাড়ে আট হাজার টাকা, একটি মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। তখন শাহজাহানকে প্রাইভেট কারে তোলার চেষ্টা করা হয়। ভুক্তভোগী শাহজাহান বাধা দেন। তখন ডাকাত দলের সদস্যরা মারধর করে তাঁকে প্রাইভেট কারে তোলে। পরে শাহজাহানের কাছে এটিএম কার্ডের গোপন নম্বর চায়। না দিতে চাইলে লাঠি দিয়ে মারধর করে। একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে এটিএম কার্ডের পিন নম্বর বলে দেন শাহজাহান। পরে ডাকাতেরা মহাখালীর ডাচ্‌–বাংলার এটিএম বুথে যায়। ডাকাত দলের একজন সদস্য সেখানে ঢুকে আবার গাড়ির কাছে আসে। শাহজাহানকে বলে, কার্ড বুথে আটকে গেছে। তখন ডাকাত দলের সদস্যরা মারধর করে শাহজাহানের বিকাশ নম্বরের গোপন পিন নম্বর নিয়ে নেয়। তখন প্রাইভেট কারটি হাতিরঝিলে আসে। বিকাশ নম্বর থেকে আড়াই হাজার টাকা নিয়ে নেয়।
হাতিরঝিলে গাড়ি থেকে নামিয়ে ডাকাত দলের সদস্যরা শাহজাহানকে হুমকি দিয়ে বলে, ‘সোজামতো বাড়ি যাবি। কোথাও কোনো সাউন্ড করবি না। সাউন্ড করলে তোকে শেষ করে দেব।’

এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে হুমায়ুন কবির ও মহরম নামের দুজন আসামিকে গ্রেপ্তার করে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার আদালতে হাজির করে পুলিশ। ঘটনার রহস্য উদ্‌ঘাটনের জন্য সাত দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার পরিদর্শক মোহাম্মদ রাশেদুজ্জামান। আদালতকে প্রতিবেদন দিয়ে পুলিশ বলেছে, মামলার এক নম্বর আসামি হুমায়ুন কবির কাউন্টার টেররিজম ইউনিটে কর্মরত পুলিশ পরিদর্শক বলে জানা যায়। এক নম্বর আসামি হুমায়ুন কবিরের কাছ থেকে জব্দ করা মোবাইল বিকাশ নম্বরে ট্রানজেকশন (স্থানান্তর) করা। বিকাশের মোবাইল সেট, ড্রাইভিং লাইসেন্স হুমায়ুন কবিরের কাছ থেকে জব্দ করা হয়। আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে অপরাধের ঘটনার কথা স্বীকার করলেও বাদীর লুণ্ঠিত মালামাল ও সহযোগী অপরাপর আসামিদের কথা এড়িয়ে যায়।

ডাকাতির ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে কাউছার ও মনিরুজ্জামান নামের আরও দুজন আসামিকে গ্রেপ্তার করে গত ১ মার্চ ঢাকার আদালতে হাজির করে পুলিশ।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ রাশেদুজ্জামান জানান, আসামি মহরমের তথ্যে লুণ্ঠন করা মোটরসাইকেল কাউছারের হেফাজত থেকে উদ্ধার করা হয়। মনিরুজ্জামানের কাছে বাদীর মুঠোফোন জব্দ করা হয়।

তদন্ত কর্মকর্তা তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার পরিদর্শক মোহাম্মদ রাশেদুজ্জামান বলেন, ‘ডাকাতির মামলায় হুমায়ুন কবিরসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা এখন কারাগারে আছেন।’

বাংলাদেশ সময়: ৭:৩৯:৩৭   ৭৫১ বার পঠিত