সোমবার, ১৮ মার্চ ২০১৯
ক্রাইস্টচার্চের বাইরের শহরের দুই পুলিশ কর্মকতা ক্রাইস্টচার্চের হত্যাকারীকে ধরে ফেলেন
Home Page » এক্সক্লুসিভ » ক্রাইস্টচার্চের বাইরের শহরের দুই পুলিশ কর্মকতা ক্রাইস্টচার্চের হত্যাকারীকে ধরে ফেলেনবঙ্গ-নিউজ: নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ শহরের দুটো মসজিদে সন্ত্রাসী হামলায় ৫০ জন মুসল্লির প্রাণহানিতে বিশ্ববিবেক স্তম্ভিত। প্রাথমিক খবরে অন্তত পাঁচজন বাংলাদেশির মৃত্যু নিশ্চিত হওয়া গেছে। আরও অন্তত ৮ জন বাংলাদেশি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন বলে খবরে প্রকাশ করা হয়েছে। তাছাড়া নিখোঁজ রয়েছেন কয়েকজন বাংলাদেশি।
এই নারকীয় হত্যাযজ্ঞে বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ মর্মাহত ও ব্যথিত। এর মধ্যে স্বস্তির খবর মাত্র পাঁচ মিনিটের জন্যে বাংলাদেশ জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা প্রাণে বেঁচে গেছেন। ১৬ মার্চ তৃতীয় টেস্ট ম্যাচটি শুরু হওয়ার কথা ছিল ক্রাইস্টচার্চের হাগলি ওভাল মাঠে। সেজন্যে ক্রিকেটাররা সেখানেই অবস্থান করছিলেন।
এমতাবস্থায় হামলার ঘটনায় সন্দেহভাজন ব্রেন্টন টারান্টের ধরা পড়ার গল্প নিয়ে কৌতূহলের শেষ নেই। এবার সেই গল্পই শোনালেন পুলিশ কর্মকর্তারা। তাঁদের বরাত দিয়ে ওই লোমহর্ষক ঘটনার বিশদ বিবরণ প্রকাশ করেছে নিউজিল্যান্ড হেরাল্ড।
অবশ্য আটককারী সাহসী দুই পুলিশ কর্মকর্তার নাম-পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। তবে তাঁদের কর্মস্থল যে ক্রাইস্টচার্চের বাইরের ছোট্ট একটি শহরের, সেটি পরিষ্কার করা হয়েছে।
রুরাল রেসপন্স ম্যানেজার সিনিয়র সার্জেন্ট পিট স্টিলস জানান, পুলিশের ওই দুই কর্মকর্তা প্রশিক্ষণ নিতে ক্রাইস্টচার্চে গিয়েছিলেন। প্রশিক্ষণস্থল ছিল ক্যাশমিয়ারের প্রিন্সেস মার্গারেট হসপিটাল। হাসপাতালের অব্যবহৃত একটি তলায় ওই প্রশিক্ষেণর আয়োজন করা হয়। কাকতালীয়ভাবে প্রশিক্ষণের বিষয়বস্তু ছিল সশস্ত্র অপরাধীদের মোকাবেলার কৌশল নিয়ে।
পিট স্টিলস বলেন, ‘আসলে ঘটনার সময় ওই দুই কর্মকতা প্রশিক্ষণে ছিলেন। সে সময় তাঁরা সশস্ত্র অপরাধীদের হামলা সম্পর্কে জানতে পারেন। তাৎক্ষণিকভাবে তাঁরা অভিযানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তাঁরা একটি কারে করে হামলাকারীর সম্ভাব্য অবস্থানে যেতে চাইছিলেন।’
স্টিলস জানান, ওই কর্মকর্তাদের সঙ্গে সরকারি গাড়ি ও আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। ব্রুয়াম স্ট্রিট ধরে তাঁদের গাড়ি এগোচ্ছিল। কারণ তাঁরা ধারণা করছিলেন, হামলাকারী যদি লিনউড মসজিদে (হামলার দ্বিতীয় নিশানা) অবস্থান করে, তবে এ পথেই তার সন্ধান মিলবে। খানিক বাদেই সন্দেহভাজন গাড়ির দেখা মেলে। হামলাকারী সম্পর্কে যে ধরনের তথ্য মিলেছিল, সে রকমই একজন ওই গাড়িতে ছিল। গাড়িটি পুলিশ কর্মকর্তাদের বিপরীত দিক থেকে আসছিল এবং বারবার লেন পরিবর্তন করছিল। অনেকটা সর্পিলকারে ওই গাড়ি দুলছিল। একপর্যায়ে পুলিশ কর্মকর্তারা নিশ্চিত হন এটিই হামলাকারীর গাড়ি। তখনই গাড়ি ঘুরিয়ে হামলাকারীকে অনুসরণ শুরু করা হয়।
পুলিশের রুরাল রেসপন্স ম্যানেজার পিট স্টিলস আরও জানান, অভিযান পরিচালনাকারী কর্মকর্তাদের ৪০ বছরেরও বেশি পুলিশিংয়ের অভিজ্ঞতা ছিল। খুব কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করার কৌশলও জানা ছিল তাঁদের। কিন্তু এই হামলাকারীকে কিভাবে ধরা যায়, তা নিয়ে তারা ধন্দে পড়ে যান। এ পরিস্থিতির কথা পুলিশ কন্ট্রোলরুমে জানিয়ে দেওয়া হয়। নিজেদের মধ্যে আলাপ করে কৌশল নির্ধারণের চেষ্টা করছিলেন অভিযানকারীরা।
এ ভাবনাও ছিল যে হামলাকারীর গাড়ির পেছনে ‘খুবই ঝুঁকিপূর্ণ’ অস্ত্রশস্ত্র ছিল। ওই গাড়িকে বিধ্বস্ত করা হলে রাস্তায় অবস্থানরত লোকজনও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ কারণে এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া যায়নি। একপর্যায়ে শান্তিপূর্ণ উপায়ে হামলাকারীকে ধরার কৌশল নেওয়া হয়। সামনের গাড়ির চালকের অংশে ধাক্কা দেয় পুলিশের গাড়ি। এতে ঘাতক তার গাড়ির বিপরীত অংশে পড়ে যায়। এরপর তাকে পাকড়াও করা হয়।
পুলিশ কমিশনার বুশ বলেন, টারান্টকে ধরা না গেলে আরও বহু মানুষের প্রাণ যেত। দুই পুলিশ কর্মকর্তার সাহসী ভূমিকার কারণে তা নিয়ন্ত্রণ করা গেছে।
এছাড়া নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জ্যাসিন্ডা আরডেন জানিয়েছেন, মি. টারান্টের আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স ছিল এবং তার সাথে ছিল মোট পাঁচটি বন্দুক। তিনি আরও বলেছেন, ‘আমাদের অস্ত্র আইনের পরিবর্তন আনা হবে।’
তাকে কোনও আবেদন ছাড়াই রিমান্ডের নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং ৫ই এপ্রিল তাকে আবারও আদালতে হাজির করা হবে।
বিচারক ন্যায় বিচারের নিশ্চয়তার স্বার্থে আটক ব্যক্তির মুখচ্ছবি গণমাধ্যমে ঝাপসা করে দেখাবার নির্দেশ দেন। আরও দুই ব্যক্তি পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। তবে তাদের কারো বিরুদ্ধেই পূর্ব অপরাধের কোনও রেকর্ড নেই।
বাংলাদেশ সময়: ১১:৪১:১৪ ৪৮৪ বার পঠিত #bangla news #bangladeshi News #bd news #bongo-news(বঙ্গ-নিউজ) #জাতীয় #শিরোনাম