রবিবার, ১৭ মার্চ ২০১৯

হাড়িভাঙ্গা আম-এর নাম করনের ইতিহাস -২ ,জালাল উদদীন মাহমুদ

Home Page » বিনোদন » হাড়িভাঙ্গা আম-এর নাম করনের ইতিহাস -২ ,জালাল উদদীন মাহমুদ
রবিবার, ১৭ মার্চ ২০১৯



জালাল উদদীন মাহমুদ

(আমে ভাগ্য বদল)

না , আজকে রংপুরে যাওয়া হচ্ছে না । তা হলে কি করা যায় ? এক কাজ করি , হাড়িভাঙ্গা আম কিভাবে রংপুরের ৩টি উপজেলার (রংপুর সদর, মিঠাপুকুর, বদরগঞ্জ )উপজেলার হাজার হাজার কৃষকের ভাগ্য কিভাবে বদলে দিয়েছে , তা জানার চেস্টা করি।সত্যিই কিন্ত রংপুর জেলার মিঠাপুকুর, রংপুর সদর, বদরগঞ্জের বিস্তীর্ণ এলাকার হাজার হাজার কৃষক আম চাষ করে বর্তমানে নিজেদের ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে ফেলতে সক্ষম হয়েছেন।

‘চাষার দুক্ষু’ নামক প্রবন্ধে রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন বাংলাদেশের কৃষকের অবস্থা বড়ই করুণ। তাদের রুগ্ন অবস্থা সবাইকে ব্যথিত করে। রোদ-বৃষ্টিতে সকলের মুখের খাবার আর গায়ের বস্ত্র যোগালেও তাদের পরনে শতচ্ছিন্ন ময়লা কাপড়, উদরে নেই অন্ন। রংপুর অঞ্চলের চাষীরা সে সময় কৌপিন পরিধান করত । হাড়িভাঙ্গা আম চাষের আগে রংপুরের ঐ ৩ উপজেলার অবস্থাও অত্যন্ত করুন ছিল।

ভোর না হতেই লাঙ্গল কাঁধে, মাঠ পানে কে যায়।

সে আমাদের গাঁয়ের কৃষক, বাস আমাদের গাঁয়।’

বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামের মত ওখানেও এমন কৃষকের বাস ছিল । ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই, প্রতিটি কৃষক লাঙ্গল কাঁধে নিয়ে মাঠ পানে ছুটে চলতো। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে, অক্লান্ত পরিশ্রম করে ফসল ফলাতো । ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলত তাদের এ পরিশ্রম। কৃষদের অতীতের সচ্ছলতা ছিলনা প্রাকৃতিক দুর্যোগ, সার,বীজ,মূলধনের অভাব, জনসংখ্যার অতিরিক্ত চাপ, ভূমির উর্বরতা হ্রাস ইত্যাদি ভৌগোলিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক কারণে সেখানকার কৃষক আগের মতো ফসল ফলাতে পারত না। তারা ছিল নানা অভাব অনটন ও রোগ শোকে জর্জরিত হয়ে প্রায় সর্বহারার মত।‘নুন আনতে পান্তা ফুরায়’ ছিল তাদের অবস্থা । তাদের মুখে হাসি ছিলনা । তাদের পেটে ভাত ছিলনা, পরনে ছিলনা কাপড়, ফসল ওঠার সঙ্গে সঙ্গে মহাজনদের দেনার দায়ে সেই ফসল বিক্রি করতো নামমাত্র মূল্যে । ফলে সকল সুখ-স্বপ্ন থেকে তারা ছির বঞ্চিত। দারিদ্রের কারনে সুচিকিৎসা পেত না । রোগ শোক ছিল তাদের আজীবন সাথী । রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে ধান চাষ করে দু’বেলা পেট ভরে ভাত খাওয়া ছিল তাদের জন্য দূরহ। দুঃখ-কষ্ট ঘর বেঁধেছিল তাদের ঘরের মধ্যে। মরণ কালে তারা উত্তরাধিকারীদের জন্যে রেখে যেত শুধু দারিদ্রের অভিশাপ।

কিন্তু রংপুর জেলার মিঠাপুকুর, রংপুর সদর, বদরগঞ্জের বিস্তীর্ণ এলাকার হাজার হাজার কৃষকদের সেসব দুর্দিন আর নেই। তারা হাড়িভাঙ্গা আম আম চাষ করে বর্তমানে নিজেদের ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে ফেলতে সক্ষম হয়েছেন। গত ৬ বছর ধরে এ আম চাষ করে রংপুরের হাজার হাজার পরিবার এখন পুরোপুরি স্বাবলম্বী। এইসব এলাকার মাটি লাল হওয়ায় ধান পাটসহ অন্যান্য ফসলের ফলন কম হওয়ায় কৃষকরা আবাদী জমিতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে হাড়িভাঙ্গা আমের চারা রোপণ করে আমের বাগান গড়ে তোলে।এ সব আমের বাগান করে তারা নিজের ভাগ্য বদলিয়েছে; সংসারে এনেছে সুখ-শান্তি। খড়-টিনের ঘরের বদলে বাড়িতে বাড়িতে এখন পাকা পাকা বিল্ডিং। তারা মোটর সাইকেল কিনেছেন , ব্যাংক-এ টাকা জমাচ্ছেন । মোট কথা পাল্টে ফেলেছেন তাদের জীবন ধারা। আগে একজন কৃষক পাঁচ-দশ বিঘা জমি চাষাবাদ করে অতি কষ্টে জীবন চালাতেন। এখন পাঁচ-দশ বিঘা জমিতে আমের চাষ করে লাখ লাখ টাকা আয় করছেন ঐ একই কৃষক। এলাকর ‘আম নির্ভর বর্তমান অর্থনীতি’ মানুষের জীবন যাত্রা পাল্টে দিয়েছে। আমার কথা বিশ্বাস না হলে জুন মাসের প্রথম সপ্তাহের পরপরই সেখানে যেতে পারেন।মনে হবে আপনি অন্য একটা জগতে চলে এসেছেন। সে সময় যাযা দেখতে পারবেন তার তালিকা একজন করে দিয়েছেন-

কেউ গাছ থেকে আম পাড়ছে,

কেউ সে আম কুড়িযে নিচ্ছে।

কেউ কাঁচা পাকা আধা পাকা ছোট-বড় – মাঝারি আলাদা করে বাছাই করছে,

ঘরের ভিতরে খড়ের বিছিয়ে আম পাকানো হচ্ছে.

পাইকারি ব্যবসায়ীদের ঘোরাঘুরি

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নজরদারী

মাঝে –মধ্যে লিফলেটে সতর্কতা জারী

সাংবদিক –ক্যামেরা ধারী

রুখতে চুরি চামারী করছে কেউ চৌকিদারী

অন্যদিকে কেউ করছে ওজন ,

কেউ ভরছে বস্তা ,

কেউ বাঁধছে পোটলা ,

কেউ মোবাইলে খবরাখবর নিচ্ছে ও দিচ্ছে,

বাশ দিয়ে তৈরি টুকরি, পাটের বস্তা তৈরির বিশেষ ব্যাগ, বাশের খাঁচা তেরী হচ্ছে,

ভ্যান রিক্সায় আমের আনা নেয়া চলছে

চলছে খড় ক্রয় বিক্রয়,

ছোট ছোট খুপরি করে ভাড়া দেয়া ঘরে আম ভর্তি,

ফড়িয়া , দালাল পাইকার, শ্রমিক দের হাক ডাক চলছে অবিরাম।

কুরিয়ার সার্ভিস এ উপচে পড়া ভীড় ট্রাক চালক, হেল্পার -মজুরদের হাকডাক, সাধারণ মানুষদেরও ব্যস্থতা, হৈচৈ, মোবাইলের রিং টোন দোকানীদের চিৎকার চেঁচামেচি এরি মধ্যে আপনি থাকবেন দল বেঁধে।

প্রতিটি দিনই এ সময় উৎসব। অনেকের জুটে যায় বাড়তি কাজ। যেমন দিনপ্রতি ৫০০ টাকা মজুরিতে কিছু শ্রমিক কাজ পায়। এদের কাজ হল গাছ থেকে আম পেড়ে ভ্যান বা রিকশায় সেই আম বাজারে পৌঁছে দেওয়া।মোট কথা কৃষক, শ্রমিক থেকে শুরু করে ছোট বড় মাঝারি ব্যবসায়ী, ফরিয়া দালাল, মুটে-মজুর, দোকানী, ভ্যান-রিক্সা চালক, ট্রাক চালক, খড় ব্যবসায়ী , ওজনদার ফ্যাক্স ফোনের ব্যাবসায়ী, কুরিয়ার সার্ভিস সবাই মহা ব্যস্থ। সবার কাছে তখন আমই জীবণ আমই মরণ –সবাই করতে চায় আমকেই বরণ। এ যেন এক যুদ্ধ ক্ষেত্র। বিশ্বাস না্ হয় দেখে আসতে পারেন।‘রংপুরের নতুন অর্থকরি ফসল’ আমের জগৎ ঘুরিয়ে দেখার জন্য এবার ঈদের পর পরই ঘুরে আসতে পারেন ঐ ৩ উপজেলায়।আপনার জন্য ‘স্বাগত’ লেখা কোনো তোরণ হয়তো পাবেন না ক্ষতি নাই , এখানে আপনাকে সম্ভাষণ জানাবে সারি সারি আমগাছ৷ বছরের এই সময়টা যেন এই এলাকায় অঘোষিত আম উৎসব৷ অনেক কথা হলো ,তবে রংপুরে তো যেতে হবে। কথা দিচ্ছি ,কাল আমি আপনাদের রংপুরে নিয়ে যাব।(চলবে)

বাংলাদেশ সময়: ২০:২৬:৪৪   ১০১০ বার পঠিত   #  #  #  #  #  #