রবিবার, ১০ মার্চ ২০১৯
বাফুফে কমিটির চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরনের ঔদ্ধত্য- প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ!!
Home Page » আজকের সকল পত্রিকা » বাফুফে কমিটির চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরনের ঔদ্ধত্য- প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ!!বঙ্গ-নিউজঃ ॥ ঢাকায় অনুষ্ঠিত এএফসি অনুর্ধ-১৬ নারী চ্যাম্পিয়নশিপ বাছাইয়ে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন, গত বছর থিম্পুতে অনুষ্ঠিত সাফ অনুর্ধ-১৫ ফুটবলে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন। একই বছর হংকংয়ে অনুষ্ঠিত জকি গার্লস আমন্ত্রণমূলক টুর্নামেন্টে অপরাজিত শিরোপা জয়। এর বাইরেও বিগত সময়ে দেশে-বিদেশে অনেক সাফল্য রয়েছে বাংলাদেশের মেয়েদের। সন্দেহ নেই নারী ফুটবলের এই অগ্রযাত্রা ঈর্ষণীয়। পুরুষ ফুটবল যেখানে তলানিতে। সেখানে এশিয়াজুড়ে আলোচিত দেশের নারী ফুটবল। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রতিনিয়ত খাবি খাওয়া পুরুষ ফুটবলে নিত্য ঘটনা। ব্যর্থতার মিছিল বড় হওয়ায় ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের পুরুষ ফুটবলের অবস্থান ১৯২, এটা লজ্জার। পুরুষ ফুটবলের এই বাজে অবস্থার মধ্যে বাংলাদেশের মেয়েদের সাফল্য প্রশংসার দাবি রাখে। যদিও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একটা দেশের ফুটবলের মান বিচার করা হয় পুরুষ ফুটবল দিয়ে। পুরুষ ফুটবল রসাতলে যাওয়ার দায় বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) বর্তমান কমিটির। সাবেক তারকা ফুটবলার কাজী সালাউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিটির প্রায় ১১ বছরের দায়িত্বে একটা ভালমানের জাতীয় দল গঠন করতে পারেনি। এটা চরম বললে কম হয়ে যাবে, ক্ষমার অযোগ্য ব্যর্থতা। বলতে গেলে মিডিয়ার মাধ্যমে টিকে আছে দেশের পুরুষ ফুটবল। সে হিসেবে ধাপে ধাপে অনেক এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের নারী ফুটবল। এক কথায় মেয়েদের সাফল্যই বাঁচিয়ে রেখেছে ফুটবলকে। ফুটবলপ্রেমী মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে এখন মারিয়া, মনিকা, আঁখিরা।
কিন্তু এই সাফল্য সামনে রেখে এ কি বললেন বাফুফে মহিলা ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরন? তার ঔদ্ধত্য কথাবার্তায় বিস্মিত সবাই। কিরন বলেছেন, মেয়েদের অর্জিত ট্রফি কেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে দেয়া হবে? তার যুক্তি, প্রধানমন্ত্রী তো দেশের সবার। দেশের সব খেলাধুলাকে সমান চোখে দেখা উচিত প্রধানমন্ত্রীর। কিন্তু তিনি ক্রিকেটের বাইরে কিছুই বুঝেন না। একটা কিছু হলেই প্লট, ফ্ল্যাট, গাড়ি দিয়ে দেয়া হচ্ছে ক্রিকেটারদের। কিন্তু নারী ফুটবলের সাফল্য, ব্যাক টু ব্যাক চ্যাম্পিয়ন হওয়া সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী সহযোগিতা দূরের কথা। একটা শুভেচ্ছা বার্তা পর্যন্ত দেন না। এটা দু’চোখা নীতির পর্যায়ে পড়ে। কাজেই প্রধানমন্ত্রীর হাতে ট্রফি তুলে দেয়া মানে একটা অর্জনকে নষ্ট করে দেয়া। মেয়েদের সাফল্যের জন্য পরিশ্রম করব আমরা। আর কেউ এসে ক্রীম খেয়ে যাবে সেটা তো মেনে নেয়া যায় না।
আসলে কিরনের দুঃসাহসের তারিফ করতে হয়। ফাঁসির দড়িতে জীবন বিসর্জন দেয়া রাজাকার, যুদ্ধাপরাধী মীর কাশেম আলির নিকটাত্মীয় তিনি। কিন্তু দেশ তো এখন প্রায় রাজাকার, যুদ্ধাপরাধী মুক্ত। কাজেই মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন কিরন কোন্ খুঁটির জোরে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কথা বললেন তা কারও বোধগম্য নয়।
কিরনের জানা উচিত স্বাধীনতা পরবর্তী ক্রীড়াবান্ধব প্রধানমন্ত্রী কেউ যদি থেকে থাকেন তিনি একমাত্র শেখ হাসিনা। শুধু খেলাধুলার অগ্রগতি নয়, যে কোন ক্রীড়াবিদ, সংগঠকের বিপদে আপদে তার পাশে দাঁড়াতে কোন কার্পণ্য করেন না প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মহান স্বাধীনতার স্থপতি শহীদ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্য শেখ হাসিনার জন্ম ক্রীড়া পরিবারে। বঙ্গবন্ধু ফুটবল খেলতেন। দেশের ঐতিহ্যবাহী আবাহনী ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর ভাই শহীদ শেখ কামাল। খেলাধুলায় বঙ্গবন্ধু পরিবারের সম্পৃক্ততা নিয়ে নতুন করে লেখার কিছু নেই। যারা খেলাধুলার ন্যূনতম খোঁজ-খবর রাখেন তাদের কাছেও বিষয়টা অজানা নয়। তবে অজানা সম্ভব বাফুফে নির্বাহী কমিটির সদস্য কিরনের কাছে। তা নাহলে বর্তমান সফল প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে এমন অবান্তর কথাবার্তা তিনি বলার সাহস পেতেন না।
কিরনের জানা উচিত, দেশে-বিদেশে যে কোন ইভেন্টের সাফল্যে সবচেয়ে বেশি খুশি হন শেখ হাসিনা। তার অভিনন্দন বার্তাটা সবার আগে মিডিয়ায়। অন্য খেলার কথা বাদ দিলেও গত বছরই তিন দফায় পাঁচ থেকে দশ লাখ টাকা করে দিয়েছেন তিনি নারী ফুটবলারদের (কোচিং স্টাফসহ) । পাশাপাশি উপহার সামগ্রীও। প্রধানমন্ত্রীর দেয়া অর্থে অজ পাড়াগাঁ থেকে উঠে আসা দরিদ্র নারী ফুটবলাররা বর্তমানে স্বাবলম্বী, সচ্ছল। নারী ফুটবলারদের সন্তানের মতো আদর করে বুকে জড়িয়ে ধরে আগামীতে আরও ভাল খেলার অনুপ্রেরণা দিয়েছেন শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর উষ্ণ অভিনন্দন, আর্থিক সহযোগিতায় আবেগাপ্লুত মেয়েরা। নির্জলা বাস্তব সত্যটা আড়াল করার কোন সুযোগ নেই কিরনের।
নিজের সাফাই গাইতে গিয়ে কিরন বলেছেন, এএফসিতে মাথা খাটিয়ে আমি হোম ভেন্যু নিয়ে আসি। বাফুফে ঠিকমতো টাকা দিতে পারে না। আমার নিজের পকেটের অর্থ দিয়ে টিকিয়ে রেখেছি মেয়েদের ফুটবল। এগুলো তো কেউ জানে না, দেখে না। বছরের পর বছর নিজের গাঁটের অর্থে মেয়েদের লালন করে আসছি। এটা কারও চোখে পড়ে না (প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে)।
সচেতন মহলের মতে, কিরনের এই ন্যক্কারজনক বক্তব্য ’ভূতের মুখে রামনাম’-এর শামিল। কারণ বাফুফের নির্র্বাচনে ভোটাররা তাকে দায়িত্ব পালনের জন্যই নির্বাচিত করেছেন। আর এই দায়িত্ব পালন নিয়ে নিজের সাফাই গাওয়ার মধ্যে কোন কৃতিত্ব নেই। এটা রুটিন ওয়ার্ক।
বাংলাদেশ সময়: ১২:১৫:২১ ১০৮৩ বার পঠিত #প্রধানমন্ত্রী #বাফুফে কমিটির চেয়ারম্যান #মাহফুজা আক্তার কিরন