রবিবার, ২৭ জানুয়ারী ২০১৯

“রঙে ভরা আমার ব্যাংকিং জীবন “-জালাল উদদীন মাহমুদ

Home Page » বিনোদন » “রঙে ভরা আমার ব্যাংকিং জীবন “-জালাল উদদীন মাহমুদ
রবিবার, ২৭ জানুয়ারী ২০১৯



 

জালাল উদদীন মাহমুদ

৭৩তম পর্ব–
ডেমাজানি শাখা ,বগুড়া -৩২ ,ড্রামা-বিভ্রাট (২)

স্যার মাড় দেয়া একদম নতুন আনকোরা গামছা ঘাড়ে রেখেছিলেন। আর আমি সেই গামছার দু প্রান্ত একত্র করে ধরে দিয়েছি জোরসে হ্যাচকা টান। পড়ে তো গেছেনই ঘাড়েও গামছার দাগ বসে লাল হয়ে গেছে দেখলাম। উপস্থিত সবাই তো হতবাক-বাকরুদ্ধ। কারো মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছে না। আমি কানের কাছে মুখ নিয়ে ডাকলাম স্যার! স্যার! কোনও জবাব নেই। এতক্ষনে মনে হয় উপস্থিত সবার সম্বিৎ ফিরল। একজন এসে মাথায় পরিত্যক্ত একটা হার্ডবোর্ডের টুকরা দিয়ে বাতাস করতে লাগলো। আর একজন পানি আনতে ছুটলো। ফাইনাল রিহার্সেলটা নাটকের জন্য নির্ধারিত অডিটোরিয়ামেই হচ্ছিল। সেখানকার একটা চেয়ারের গদি তুলে নিয়ে আমি স্যারের মাথার নীচে বালিশের মতো করে দিলাম। দেখলাম তখনও অচেতন।একজন চোখে মুখে পানির ছিটা দিলেন। একটু পরে স্যার চোখ মিটমিট করলেন। আমার ধড়ে প্রান ফিরে এলো। চোখ মেলেই উনি মৃদু স্বরে বলে উঠলেন-জালাল কোথায়? আমি মাথার কাছেই হাঁটু মুড়ে বসেছিলাম। বললাম- এইযে আমি স্যার। উনি চোখ বন্ধ করে কাতরাতে কাতরাতে বললেন- আমি তো আপনার কোনও ক্ষতি করি নাই। আপনি আমাকে এতবড় আঘাত দিলেন? আমি আমতা আমতা করে ভয় মিশ্রিত কন্ঠে বললাম - স্যার আমি বুঝতে পারি নাই, মাফ করে দেন স্যার।
আসলেই আমার খুব খারাপ লাগছিল তখন। সেটা কতটা উনার আঘাতের জন্য আর কতটা আমার ভবিষ্যৎ চিন্তাই, আজ আর তার হিসাব মিলাতে পারছি না। তবে স্পষ্ট মনে আছে স্যার যেন আমার উপর বিরুপ না হন সেজন্য আমি ধরাধরি শুরু করেছিলাম। স্যার উঠতেই পারছিলেন না। সবাই বলছিল আর একটু, আর একটু রেস্ট নেন স্যার। আর আমি ভাবছিলাম কাকে ধরলে স্যার আমার প্রতি বিরুপ হবেন না। স্যারে উঠে বসলে মনে একটু স্বস্তি পেলাম ।এখন এ পরিস্থিতিতে আমি কি করবো তা বুঝতে না পেরে দিশেহারা হয়ে প্রথমে ধরলাম মিতা বিড়ি ফ্যাক্টরীর মালিক আব্দুর রহমান সাহেবকে।স্যারের খুব ঘনিষ্ট ছিলেন তিনি। শান্ত গলায় আব্দুর রহমান সাহেব বললেন- নাটক-টাটক করতে গেলে টুকটাক এরকম ঘটনা ঘটতেই পারে। সুস্থ হলেই উনি সব ভুলে যাবেন। আপনি দুঃচিন্তা করবেন না। তবে সিবিএর একজন নেতা বললেন-স্যার তো খুব আঘাত পেয়েছেন, আপনার কি যে হয়- বলা যায় না। তার কথায় আমার মনে ভয় ঢুকে গেল।

যা হোক একসময় স্যার উঠে দাঁড়ালেন। মিতা বিড়ি ফ্যাক্টরীর মালিক স্যারকে বললেন- চলুন একটু ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে আসি। মেথর চরিত্রের জন্য পরা ধুতি –হাফহাতা গেন্জী বদলিয়ে স্যার ঘাড়ে হাত বুলাতে বুলাতে তার সাথে কাতরাতে কাতরাতে কোন রকমে ডাক্তারের উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন। তবে যাবার আগে আমার দিকে তাকিয়ে আবারো বললেন- জালাল ,আমি তো আপনার কোনও ক্ষতি করি নাই আর আপনি আমাকে এতবড় আঘাত দিলেন। দেখলাম তুমির বদলে স্যার এখন আমাকে আপনি বলা শুরু করেছেন।অন্যদের দিকে তাকিয়ে বললেন আপনারা রিহার্সেল চালিয়ে যান।
মনে বড় দুঃচিন্তা নিয়ে আমিও সেদিনের ফাইনাল ড্রেস রিহার্সেলে বাদবাকি অংশে অংশ নিলাম। স্যারের বদলে অন্য একজনকে দাড়িঁয়ে দেয়া হলো। স্যার আর সেদিন অডিটোরিয়ামে আসলেনই না।

পরদিন । যে নাটকের জন্য এতদিন এত মহড়া দিলাম ,তা আজকেই অনুষ্ঠিত হবে। কোথায় খুশী খুশী থাকবো তা নয় আজ আমার মনে ভয় আর উদ্বিগ্নতা। উদ্বিগ্নতা আমাকে রাতে তেমন ঘুমাতেই দেয়নি।স্যারের অবস্থা যে আজ কি রকম - কিছুই জানি না। বেশ আগে আগেই অডিটোরিয়ামের দিকে রওনা দিলাম। পরিবারের সদস্যরা নাটক দেখতে আসতে চাইলে তাদের বারণ করে দিলাম।(ক্রমশঃ)

বাংলাদেশ সময়: ৯:৫৪:৪১   ৫৬৭ বার পঠিত   #  #  #  #  #  #