শনিবার, ২৬ জানুয়ারী ২০১৯

“রঙে ভরা আমার ব্যাংকিং জীবন “ -জালাল উদদীন মাহমুদ ৭২তম পর্ব–

Home Page » বিনোদন » “রঙে ভরা আমার ব্যাংকিং জীবন “ -জালাল উদদীন মাহমুদ ৭২তম পর্ব–
শনিবার, ২৬ জানুয়ারী ২০১৯



 

জালাল উদদীন মাহমুদ

৭২তম পর্ব–
ডেমাজানি শাখা ,বগুড়া -৩১ ,ড্রামা-বিভ্রাট (১)

কৃষিঋণ আদায়ের ক্রাশ প্রোগ্রাম শেষ হওয়াতে ঢাকার স্যার ঢাকায় ফিরে গেছেন বেশ কিছু দিন আগেই। এখন আর প্রত্যহ গভীর রাতে বাড়ী ফিরতে হয়না। অন্যদিকে আমাকে তিনদফা বদলী করার পর ডেমাজানী শাখার ম্যানেজার করেছিলেন বগুড়ার তৎকালীন ডিজিএম ও জোনাল হেড জনাব মোঃ শামসুদ্দিন স্যার। একদিন হঠাৎ করে শুনলাম উনিও বদলী হয়েছেন ঢাকার হেড অফিসে। তার পরিবর্তে আসলেন ঐ রাজশাহী এলাকারই জনাব ফরহাদ উদ্দিন আহম্মেদ, সহকারী মহাব্যবস্থাপক। পাকিস্তান আমলে ক্লারিক্যাল পোস্টে যোগদান করে স্যার তখন সহকারী মহাব্যস্থাপক। ব্যাংকিং এর পাশাপাশি মাছধরা আর নাটক করা তার অন্যতম প্রধান শখ।
আমি একদিন বিকেলে জোনাল অফিসে যেয়ে দেখি উনি নাটকের জন্য অভিনেতা/অভিনেত্রী সিলেকশন করছেন। হাইস্কুলে পড়ার সময় ”রাস্তার ছেলে” নামে নাটকের নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছিলাম। অভিনয় ভালো হয়েছেল বলে সবাই তখন বলাবলি করেছিল। সে আত্মবিশ্বাস নিয়েই হঠাৎ সিদ্ধান্ত নিলাম আমি অভিনয়ের জন্য নাম লিখাবো। নাম লেখালাম। জোনাল হেড স্যার আমাকে হাসি মুখেই সিলেকশন করলেন। আমাকে ”স্যানিটারি ইন্সপেক্টর” এর ভূমিকা দেয়া হলো। স্যার ”মেথর” চরিত্রে অভিনয়ের সিদ্ধান্ত নিলেন। তখন অবশ্য কেউ বুঝলোনা এ সিদ্ধান্ত আমার ও স্যারের জন্য একদিন আত্মঘাতী হয়ে উঠবে।
যা হোক ,মামুনুর রশীদ লিখিত ”ওরা আসে বলেই” নাটকের রিহার্সেল পুরোদমে এগিয়ে চললো। আগেই বলেছি নাটকে আমি স্যানিটারি ইন্সপেক্টর আর জোনাল হেড স্যার হলেন মেথর। নাটকে আমি একজন মন্দ লোক। আর আমার সারাদিনের অন্যতম প্রধান একটি কাজ হলো মেথরদের গালি-গালাজ করা, মারধর করা,লাথি মারা,গলার গামছা ধরে হ্যাচকা টান দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয়া ইত্যাদি। আমি প্রত্যহ রিহার্সেলে এজিএম স্যারকে বলতাম- স্যার এ গুলো স্টেজে হবে। আর উনি আমাকে বোঝাতেন আপনি লজ্জা পেলে বা আমাকে দেখে সমীহ করে লাথি না দিলে বা গলার গামছা ধরে টান দিয়ে মাটিতে ফেলে না দিলে কিন্তু দৃশ্যগুলো ফুটে উঠবে না। প্রত্যহ আমি একই উত্তর দিতাম -ফাইনালি ষ্টেজে এসব করবো আমি। আমি তাকে লাথি দেয়া বা গলার গামছা ধরে টেনে মাটিতে ফেলে দেয়ার মতো ঘটনায় কেমন যেন কুন্ঠিত হয়ে পড়তাম। একদিন রিহার্সেলের সময় উনি বললেন- আপনি অত্যন্ত লাজুক । আপনাকে নাটক থেকে বাদ দিলে ভালো হতো। কিন্তু এখন তো নতুন কাউকে নেয়ার সুযোগও দেখছি না। আমিও মনে মনে ভাবলাম জোনাল হেডকে গালি-গালাজ করা, মারধর করা,লাথি মারা,গলার গামছা ধরে হ্যাচকা টান দেবার এ চরিত্র থেকে বাদ গেলে বেচেঁ যাই। বাদ যাবার চেষ্টাও করলাম। কিন্তু তা আর হলো না।
স্যার শেষ পর্যন্ত বললেন ড্রেস রিহার্সেলের দিনে তোমাকে কিন্তু সত্যি সত্যিই এ সব করতে হবে। সেদিন কিন্তু তালবাহানা চলবে না। তোমার উপর কিন্তু আমি ভরসা পাচ্ছি না।
ড্রেস রিহার্সেলের দিন এসে গেল। এক সময় মেথররুপী এজিএম স্যারকেে লাথি দেবার দৃশ্য আসলো। অনেক কসরৎ করে এজিএম স্যারের পশ্চাৎদেশে পা না ঠেকিয়ে লাথি দিতে সক্ষম হলাম। স্যারও ওকে বললেন।
এক সময় সেই দৃশ্য আসলো। যেখানে এজিএম সাহেব কে চড়-থাপ্পড় দিয়ে তার গলার গামছা ধরে হ্যাচকা টান দিয়ে মাটিতে ফেলে বুকে পা দিয়ে গালি গালাজ করতে হবে।
আমি বললাম স্যার আমি গামছায় হাত দিতেই আপনি মাটিতে পড়ে যাবেন। আর চড়-থাপ্পড়-বুকে পা তোলা এসবের দরকার নাই। স্যার বললেন –না তা হবেনা, দৃশ্যটা একদম বাস্তবের মতো করে করতে হবে , মনে রাখবে এদৃশ্য দেখেই দর্শকরা হাততালি দিবে। আজ ফাইনাল রিহার্সেল । অতএব নো কম্প্রোমাইজ।
আমি বার বার আমতা আমতা করছি দেখে তিনি এক সময় হুংকার ছেড়ে বললেন- এ একটা অপদার্থ। নাটকটাকে ডোবাবে। দাঁতে দাঁত পিষে বললেন আগে জানলে…..(রাগে আর কথাটি শেষ করতে পারলেন না)।
কিছুক্ষণের মধ্যেই অবশ্য স্যার রাগ সামলে নিলেন। আমাকে বারবার বোঝাতে লাগলেন। বোঝানো সত্ত্বেও আমি গলায় ঝুলানো গামছায় বাস্তবের মত করে টান দিতে বেশ কুন্ঠিত হয়ে পড়লাম। এর পর আবার বুকে পা তুলতে হবে। কিন্তু স্যার বারেবারই বলছে নাটকের প্রয়োজনে এটা করতে হবে। এক দু’মিনিট ধরে আমি চুপচাপ। স্যার হঠাৎ উপস্থিত পুরুষ মহিলা সবার সামনেই চিৎকার করে বলে উঠলেন-বার বার বলছি তাও কথা শোনে না । বেয়াদপ ছেলে, আগেই বুঝেছিলাম একে দিয়ে হবেনা, এক থাপ্পড় দিব তোমার গালে। নাটকটা মাটি করতে এসেছে। অপদার্থ কোথাকার। স্যারের সাথে গলা মিলিয়ে মহিলা অভিনেত্রীসহ আরো দু একজন আমাকে ধিক্কার জানাতে শুরু করলো। স্যার বাম হাত তুলে এমন ভাব করলো যেন এখনি আমাকে মারবে । ততক্ষণে আমারও গালিগালাজ শোনার সহ্যের সীমাও বোধ হয় অতিক্রান্ত হয়ে থাকবে । কোন কিছু আগ-পীছ না ভেবেই জোনাল হেড স্যারের গলায় ঝুলানো গামছার দুপ্রান্ত একত্রে করে ধরে জোরসে দিলাম এক হ্যাচকা টান। আগে প্রাকটিস না থাকায় টান  জোরেই হয়ে গেল।
আমি বুঝতেও পারি নাই কি জোরে টান আমি দিয়েছি। উনি অনেক লম্বা মানুষ। আমি সে তুলনায় খাটো। আমার খুব জোরের সাথে দেয়া হ্যাচকা টানে উনি বিশাল জোরে বিকট একটা চিৎকার দিয়ে একবারে চিৎপটাং হয়ে সশব্দে মেঝেতে পড়ে গেলেন। (ক্রমশঃ)

বাংলাদেশ সময়: ১০:৩০:২৫   ৫৭০ বার পঠিত   #  #  #  #  #  #