বৃহস্পতিবার, ২৪ জানুয়ারী ২০১৯

“রঙে ভরা আমার ব্যাংকিং জীবন “-জালাল উদদীন মাহমুদ

Home Page » বিনোদন » “রঙে ভরা আমার ব্যাংকিং জীবন “-জালাল উদদীন মাহমুদ
বৃহস্পতিবার, ২৪ জানুয়ারী ২০১৯



 

 

 

 

জালাল উদদীন মাহমুদ

 

৭০ তম পর্ব–
ডেমাজানি শাখা ,বগুড়া -২৯

আবার ফিরে যাই ডেমজানী শাখার কৃষি ঋণ আদায় অধ্যায়ে । প্রধান কার্যালয় থেকে আগত উর্দ্ধতন কর্মকর্তার তৎপরতায় হাট বার সমূহে দুপুর রাত পর্যন্ত চলতো আদায় ক্যাম্পেইন। এখনও স্মৃতির মানসপটে উজ্জ্বল সে দৃশ্যগুলি। জাপানের তৈরী আমার হোন্ডা কোম্পানীর মটর সাইকেলের পিছনে বসে আছেন তিনি। আমি চালক। যে গ্রামে যাব সেখানে আগে থেকেই সাইকেল নিয়ে সাথে থাকতো অন্য একজন বা দুজন কর্মী। হেড অফিস থেকে আগত নজির স্যার মটর সাইকেলের পিছনে আরোহনে কিছুটা যেন অস্বস্তিতে ভুগতেন। দু’একটি উদাহরণ দেই।

 

প্রথম দিন আমি যখন ডাইনে টার্ণ নিব , উনি বললেন ডানের ইন্ডিকেটর লাইট জ্বালাও। আমার ইন্ডিকেটর লাইট খারাপ ছিল। তাছাড়া গ্রামে এগুলো লাগেও না। কিন্তু উনি নাছোড়বান্দা বললেন -আমি তো রাস্তা চিনিনা। আর তোমার ইন্ডিকেটরও খারাপ। তাই তুমি যখন বামে যাবে তখন আমাকে বলবে আমি বামে হাত দেখাবো আর ডাইনে গেলে ডানে হাত দেখাবো। আমি বললাম গ্রামের রাস্তায় এগুলি লাগেনা। উনি বললেন সাবধান থাকা ভাল। কি আর করা। গ্রামের আঁকাবাঁকা রাস্তায় অনবরত ডান বাম চলতে লাগলো।

একদিন যথারীতি আমি মোটর সাইকেল চালায়ে ঋণ আদায়ে যাচ্ছি। স্যার পিছনে বসে আছেন। হোন্ডা কোম্পানীর তখনকার দিনের ১০০ সিসি H100S মডেলের মোটর সাইকেল বেশ ভারী ছিল। ছোটখাট দুর্বল মানুষের পক্ষে কন্ট্রোল করা অনেক সময় কষ্টসাধ্য হতো। যেতে যেতে সামনে একটি গরুর গাড়ী দেখলাম। ওভারটেক করতে হবে। স্যার দ্বিধান্বিত কন্ঠে বললেন আমার নেমে পড়াই বোধ হয় ভাল , তুমি আগে গরুর গাড়ী পার হও, তারপর আমি উঠবো। আমি জানালাম -নামার কোন দরকার নাই। কাঁচা সরু রাস্তা তাই গরুর গাড়ী পার হতে একটু কসরৎ করতে হলো - এই আর কি। পার হয়েই দিলাম জোরে এক টান। সামনে ডাইনে মোড় নিতে হবে। স্যার আগেই বলে রেখেছেন –যেহেতু আমার ইন্ডিকেটর লাইট খারাপ , তাই যে দিকে যেতে হবে তা বললে তিনিই সেই দিকে হাত দেখাবেন। রাস্তা একদম ফাঁকা। তবুও আমি বললাম ডানে মোড় নিব। ডানে হাত দেখান স্যার। স্যার আর ডানে হাত দেখান না। পিছনে ঘাড় ফিরিয়ে তাকিয়ে দেখি, সর্বনাশ! স্যারতো নেই। হঠাৎ মনে হলো এক জায়গায় থপ করে একটা শব্দ হয়েছিল ,স্যার নিশ্চয় ওখানে পড়ে গেছেন। উপরওয়ালাকে ডাকলাম। একটু আধটু ব্যথা লাগলে লাগুক । আল্লাহ না করুক বড় রকমের কোন আহত যেন না যায়, মহা কেলেঙ্কারী হয়ে যাবে যে তাহলে।

দ্রুত মোটর সাইকেল ঘুরিয়ে পিছনের দিকে চলা শুরু করলাম। বেশ কিছু দুর যাবার পরে দেখি বেশ দুরে একজন বেঁটে প্রকৃতির লোক উপরে ডান হাত তুলে দৌঁড়াচ্ছে। সামনে এগিয়ে চলরাম । আরে এইতো স্যার। কিন্তু হাত তুলে এভাবে দৌড়াচ্ছে কেন? আর একটু কাছে যেতেই বিষয়টি পরিস্কার হলো। স্যার ডান হাত তুলে আমাকে নাম ধরে ডাকছেন আর দৌড়াচ্ছেন । আমি যে ফিরে আসছি স্যার তা দেখতে পেয়েছেন । আমার দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য হাত তুলে দৌড়াচ্ছেন। আকাশ জুড়ে মেঘ করেছে ,যে কোন সময় বৃষ্টি শুরু হতে পারে। রাস্তার এ স্থানে আশে পাশে কোনও বাড়ীঘরও নাই যে বৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্য একটু আশ্রয় নেয়া যাবে। স্যারের ভয়ের কারণটা বেশ বোঝা গেল। তাড়াতাড়ি উনাকে তুলে নিয়ে রওনা দিলাম। সেদিন আসলে হয়েছিল কি ঐ গরুর গাড়ীকে ওভারটেক করার সময় আমার বারণ স্বত্বেও স্যার কেমন করে যেন নীরবে নেমে গিয়েছিল। আমি টেরও পাই নাই। স্যারের কাজকর্ম আবার নিখুঁত ছিল। (ক্রমশঃ)

 

 

 

 

 

 

 

বাংলাদেশ সময়: ৮:৪৯:৪১   ৪৯১ বার পঠিত   #  #  #  #  #  #