সোমবার, ২১ জানুয়ারী ২০১৯

“রঙে ভরা আমার ব্যাংকিং জীবন “ -জালাল উদদীন মাহমুদ

Home Page » বিনোদন » “রঙে ভরা আমার ব্যাংকিং জীবন “ -জালাল উদদীন মাহমুদ
সোমবার, ২১ জানুয়ারী ২০১৯



 

জালাল উদদীন মাহমুদ

৬৮ তম পর্ব–
ডেমাজানি শাখা ,বগুড়া -২৭ স্পেশাল টিপস-১

পরের দিন সকালে স্যার আমার বাসায় নাস্তা খেতে খেতে ঢেঁকিছাঁটা লাল চাউলের অনেক প্রশংসা করলেন।বললেন- আমাদের বাপ-দাদা তথা পূর্বপুরুষদের শত শত বছর ধরে ঢেঁকি ছাঁটা আউশ এবং আমন চালই ছিলো প্রধান খাদ্য। সে সময় অসুখ-বিসুখ ছিল অনেক কম। বেশির ভাগ মানুষ ছিল নীরোগ ও স্বাস্থ্যবান । সংক্রামক রোগ ছাড়া তেমন অসুখ ছিল না। এত ঔষধও লাগতো না। মানুষগুলো ছিল ধার্মিক,বিবেকবান, অল্পতেই সন্তুষ্ট , বিনয়ী ও অতিথি বৎসল। এ ছাড়াও তারা ছিল শ্রদ্ধাবোধ, ভালবাসা ,স্নেহ ও মায়া মমতার মত মানবিক গুণে গুণান্বিত। পঞ্চাশ দশকের পর থেকে এ দেশে নানা প্রকার উচ্চফলনশীল ইরি ধানের চাষ শুরু হয় এবং ধীরে ধীরে শরীরের জন্য অত্যন্ত পুষ্টিকর আউস এবং আমন ধানের ফলন কমতে শুরু করে।
আমি যাযাবরকে অনুসরণ করে বললাম –স্যার , বিজ্ঞান দিয়েছে পেটভরা ভাত কিন্তু কেড়ে নিয়েছে পুষ্টি।
স্যার বললেন -ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, কোষ্ঠকাঠিণ্য ,এ্যাসিডিটি, কিডনি এবং লিভার সংক্রান্ত রোগ এখন ঢাকার ঘরে ঘরে (এখন সারা দেশেই) দেখা যায়। তাছাড়া Obesity আমাদের পেয়ে বসেছে। Obesity এর ব্যখ্যা দিয়ে স্যার বললেন- ওবেসিটি এর বাংলা অতিস্থুলতা । ওবেসিটি এর ফলে শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমা হয়। মানুষের হায়াৎ কমে যায়। শরীরে আরো নানান সমস্যা সৃষ্টি হয়। ডায়াবিটিস , হাইপারটেনশন কিংবা হরমোনাল ডিসঅর্ডার, সবকিছুর জন্যই দায়ি এই ওবেসিটি। তখন মনে হয়েছিল স্যারের পুস্টি বিষয়ে জ্ঞানও খুব টনটনে।পরে অন্য একদিন শুনেছিলাম পরিবারের কারো বা খুব সম্ভব অন্য কারো প্রয়োজনে তাকে মাসে মাসে একজন পুস্টি বিজ্ঞানীর কাছে নাকি যেতে হয়।

বহু বছর পরে আজ যখন এ লেখা লিখছি তখন মনে হলো খাবার নিয়ে ততটা সচেতনতা এখনও আমাদের মধ্যে গড়ে ওঠেনি । যেহেতু সচেতনতা নাই , তাই জানার আগ্রহ নাই আর নিয়ম-কানুন পরিপালনের প্রশ্ন তো তাহলে অবান্তর। কিন্তু বাঁচতে হলে তো জানতে হবে।
বগুড়া সেনানিবাসের পাশে আমার ছোটভাইয়ের একটা ক্লিনিক আছে। সেখানকার পুষ্টি বিজ্ঞানের উপর কোর্স করা এক ডাক্তারের সাথে ঢেঁকি ছাঁটা চাল বিশেষতঃ খাবারের নিয়ম-কানুন নিয়ে আলোচনা হলো। তিনি জানালেন , চালের আবরণে নানা ধরণের মিনারেল লেগে থাকে। কিন্তু মেশিনে মিলিং করা হলে এ সব মিনারেল নিশ্চিন্ন হয়ে যায় এটা তখন কেবল এনার্জি বর্ধনকারী সাদামাটা একটা শ্বেতসারে (Carbohydrate) পরিনত হয় । মেশিনে মিলিং করা মিনারেল বর্জিত এ চালই এখন বাংলাদেশের প্রধান খাদ্য।

আমি তাকে আরো কিছু প্রশ্ন করেছিলাম , তিনিও উত্তর দিয়েছিলেন।
-খাবারের পুষ্টিমান অর্থাৎ কোন কোন খাবার বেশী পুষ্টিকর এটা মোটামুটি আমরা সবাই জানি।
কিন্তু খাবার খাওয়ার সময় বা পদ্ধতি সম্পর্কে আমরা বিশেষ করে চাকুরীজিবীরা তেমন কিছু জানি না। এ বিষয়ে কিছু জানতে চাই।
- দেখুন , একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ জানেই না কীভাবে খাবার খেতে হয়। যে কারণেই অনেকে বিভিন্ন পেটের পীড়ায় অসুস্থ হয়ে পড়ে। সেই সঙ্গে শরীরে দেখা দেয় পুষ্টির অভাব। তো আপনি কি জানতে চান ,বলুন ।
-অফিসে যাবার সময় আমরা তাড়াতাড়ি নাকে-মুখে চারটি খাবার গুঁজে দিয়ে অফিসে রওনা হই। এটা কি ঠিক?
-চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে পাকস্থলীর এক তৃতীয়াংশ যতক্ষণ না ভরছে ততক্ষণ পর্যন্ত তাড়াহুড়ো করে খাবার খাওয়া কোনক্রমেই উচিত নয়। ঘুম থেকে ওঠার ৩০ মিনিট পর সকালের নাশতা করুন। সকালের নাস্তায় প্রোটিন জাতীয় খাবার রাখা উচিত। সপ্তাহে একটি অথবা দুটি ডিমের বেশি খাওয়া উচিৎ নয়।
-অনেকেই অফিস ডে তে মধ্যাহ্নভোজকে তেমন গুরুত্ব দেন না। কাজ করতে করতে কাজের মাঝেই খান। আবার অনেকে সঠিক সময়ের পরে খাবার খান, অনেকে আবার বাইরের খাবার খান। এ ব্যাপারে আপনার বক্তব্য কি ?
-এতে কিন্তু শরীরের বারোটা বেজে যায়। পরে এর জন্য ভোগান্তিও পোহাতে হয় তাদের। অফিসের কাজ তো করতেই হবে, তবে এর জন্য সঠিক সময়ে খাওয়া বাদ দিলে কি চলবে?
- কি করতে হবে তাই বলুন ।
- দুপুরের খাবারের জন্য নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করুন। কাজের একটি বিরতি নিন। দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য মিনিমাম ২০ মিনিট সময় হাতে রাখুন ।
- আমাদের প্রায়ই রাতে খাবার খেতে দেরী হয়ে যায় । আবার খাবার খেয়েই শুতে যাই । এটি কি ঠিক ?
- কোনক্রমেই ঠিক না। শুতে যাওয়ার অন্ততঃ দু’ঘণ্টা আগে খাওয়া শেষ করতে হবে। আসলে সন্ধ্যা থেকেই খাওয়া কমিয়ে দেয়া উচিত। সাধারণত সন্ধ্যাবেলার দিকে আমরা কাজ শেষ করে বিশ্রাম করতে শুরু করি। টিভি দেখা ,বই পড়ার বা পারিবারিক গল্প করার জন্য তো আর বেশি ক্যালরি খরচ হয় না ফলে খুব বেশি খাওয়ারও কোন প্রকার প্রয়োজন নেই। আমার উপদেশ হলো সন্ধ্যা ছ’টা-সাড়ে ছ’টা নাগাদ ভাল করে খেয়ে নিয়ে রাতের দিকে হালকা খাবার খেতে হবে। তাহলে শুতে যাওয়ার আগেই সব খাবার ঠিকমতো হজম হয়ে যাবে। ফলে ঘুম ভাল হবে। রাতে ঠাণ্ডা খাবার খাওয়া ঠিক নয়। সন্ধ্যার পর থেকে বিপাক প্রক্রিয়া আস্থে আস্থে নিস্তেজ হতে শুরু করে। তাই এ সময় ঠাণ্ডা কোন খাবার খেলে তা ক্লান্তি দূর করার ক্ষেত্রে বা ঘুমের ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব ফেলে ।ঘুমানোর একেবারে আগে আগে খাবার খেলে এটিও দেহে খারাপ প্রভাব ফেলে।

- কোন কারনে যদি মাঝরাতে খাবার খেতেই হয় তখন কি করবো ?
-তখন এমন খাবার খান যেগুলো হজমে সমস্যা করে না। এ ক্ষেত্রে দুধ, দই, বাদাম, ইত্যাদি খেতে পারেন।

-আচ্ছা , আমরা অফিসে দুপুরে খাবার পরে মাঝে মাঝে একটু চা খাই এতে কোন অসুবিধা আছে ?
-ট্যানিন নামক একটি উপাদান চা এর ভেতর রয়েছে যা খাদ্যের পুষ্টি শোষণ বাধাগ্রস্থ করে। খাবার খাওয়ার পরপর চা অর্থাৎ ক্যাফেইন যুক্ত পানীয় লৌহ ও আমিষ এই দুই পুষ্টি উপাদান শোষণে ব্যাঘাত ঘটায়। এ কারণে শুধু দুপুর নয় খাবারের পরপরই চা পান করা কখনই উচিত নয়। তেমনি সকালে নাস্তার পর পরই চা পান করাও উচিত নয়। সকালে উঠেই বেড টি বা কফি খাওয়া যাদের অভ্যাস তাদের এটিকে পরিত্যাগ করতে হবে।
- আমরা প্রায়ই খাবার পরপরই ফল খাই । বিশেষ করে কমলার মৌসুমে এটা তো কমন । পেঁপেও খাই ,কলাও খাই। পুস্টি বিজ্ঞান এ ব্যাপারে কি বলে ?
-ফল খাওয়ার উপযুক্ত সময় খাওয়ার ঘণ্টা খানেক আগেই । তবে নিতান্তই যদি খাবার পরে ফল খেতেই হয় তবে মূল খাবার খাওয়ার অন্তত আধা ঘণ্টা পর তা খেতে হবে। কারণ রাতে বা দুপুরের খাবার খাওয়ার পরপরই যদি ফল খাওয়া হয় তাহলে শরীর ফলের পুষ্টি শুষে নিতে পারে না।
- আমাদের অনেকেরই খাওয়ার মাঝে পানি খাওয়ার অভ্যাস । অনেকেই বলেন এটি সঠিক নয় । তবুও খাই।
-খাবার মাঝে বা খাওয়া শেষ হওয়ার পরপরই পানি পান করা উচিৎ নয় । হজমে সমস্যা হয় । তাই খাওয়া শেষ হওয়ার অন্তত ৩০ মিনিট পর পানি পান করতে হবে। এতে শরীর খাবার থেকে সঠিকভাবে পুষ্টি শুষে নিতে পারবে । তাড়াহুড়া করে পানি পান করবেন না। জোর করে বেশি পানি পান করারও প্রয়োজন নেই। আপনার পিপাসাই জানিয়ে দেবে কখন কতটুকু পানি আপনার দরকার।
-কোথাও দাওয়াত খেতে গেলে বা পিকনিকে কোল্ড ড্রিঙ্কস দেয়া হয় । আমারাও তখন খাওয়ার মাঝে মাঝে কোল্ড ড্রিঙ্কস খাই । এটা কি উচিৎ ?
-খেতে খেতে কোল্ড ড্রিঙ্কস খাওয়া একেবারেই চলবে না। হজম প্রক্রিয়ায় সমস্যা হবে। ফলে খাবার ঠিক মতো হজম হবে না । দেখা দেবে বহু সমস্যা।
-খাবার সময় আমরা রাজ্যের প্যাচাল পাড়ি। এত কি কোন সমস্যা আছে ?
-যুক্তরাষ্ট্রের এক গবেষণায় দেখা গেছে, খাওয়ার সময় জটিল ও দুঃখের বিষয় নিয়ে আলোচনা করলে তা হজমের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলে। অন্যদিকে খাওয়ার পর হালকা হাঁটাহাঁটি করা উত্তম।
-কাজের চাপে প্রায়ই আমরা সঠিক সময়ে খাবার খেতে পারি না ।
-অসময়ে খাদ্য গ্রহণ করলে পাকস্থলীর হজম করতে অসুবিধা হয়৷ এর ফলে বদহজম বা এসিডিটি সহ নানা সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।
-আমাদের তো খাবার পরপরই আবার কাজ শুরু করতে হয় ।
-খাওয়ার পর পরই কিছু সময় বিশ্রাম নেয়া আবশ্যক। তাছাড়া মস্তিষ্কের ওপর চাপ পড়ে, এমন কাজ থেকেও বিরত থাকা উচিত। খাওয়ার পর শরীরের সব রক্ত হজম প্রক্রিয়ার কাজে ব্যবহার হয়। এ সময় মস্তিষ্কের ওপর চাপ পড়ে এমন কাজ করলে তা মানসিক উত্তেজনা বৃদ্ধি সহ স্মৃতিশক্তি দুর্বল করে তুলতে পারে। সেজন্য খাওয়ার আধা ঘণ্টা পর কাজে নামা উচিত।
- আমরা কাজের সময় চেয়ারে এক এক জন এক এক ভঙ্গিতে বসি। সঠিক নিয়ম কি ?
-বসার সময় সর্বদা সোজা হয়ে বসতে হবে। চেয়ারে যখনই বসবেন তখনই বাঁকা না হয়ে অবশ্যই সোজা হয়ে বসুন।
-খাবার নিয়ে আরও কোন উপদেশ থাকলে জানাবেন।
- একসঙ্গে কখনোই অতিরিক্ত খাবার খাওয়া ঠিক নয়। পেটের কিছু অংশ খালি রেখে খাওয়া শেষ করতে হবে । দৈনিক কমপক্ষে একটি করে ফল খেতে হবে। ভালোভাবে চিবিয়ে এবং ধীরে ধীরে গিলে খাদ্য খেতে হবে, তাড়াহুড়া করে খাওয়া ক্ষতিকারক ৷খাবার খাওয়ার সময় ততক্ষণ পর্যন্ত খাবার চিবুতে হবে, যতক্ষণ না তা মিহি পেস্টে পরিণত হচ্ছে। যখন এমনটা হয়ে যাবে তখনই গিলতে হবে, তার আগে নয়।
-সর্বশেষ কিছু বলুন।
-শরীর সুস্থ রাখার গুরুত্ব যে কতখানি, তা কেবল অসুস্থ হলেই টের পাওয়া যায়। শরীর সুস্থ না থাকলে মনও ভালো থাকে না। তাই শরীর ও মনের সুস্থতার জন্য সচেষ্ট হতে হবে আপনাকেই।
- আপনাকে ধন্যবাদ।
-ধন্যবাদ । ভাল থাকবেন। (ক্রমশঃ)

বাংলাদেশ সময়: ২৩:০৪:১৩   ৪২৫ বার পঠিত   #  #  #  #  #  #