মঙ্গলবার, ১৫ জানুয়ারী ২০১৯

“রঙে ভরা আমার ব্যাংকিং জীবন “-জালাল উদদীন মাহমুদ

Home Page » বিনোদন » “রঙে ভরা আমার ব্যাংকিং জীবন “-জালাল উদদীন মাহমুদ
মঙ্গলবার, ১৫ জানুয়ারী ২০১৯



 

জালাল উদদীন মাহমুদ

৬২ তম পর্ব–
ডেমাজানি শাখা ,বগুড়া -২১ -অপূর্ব ভোজন -২ ।

এরপর খাবার মূল পর্ব শুরু হলো অর্থাৎ প্লেটে ভাত দেয়া হলো। ঢেকি ছাঁটা মোটা মোটা লাল লাল চাউলের গরম গরম ভাত। ভাত থেকে তখনও ধোঁয়া উড়ছে। গরম ভাতের উপর দেয়া হলো ডাল- সম্বাড়া দিয়ে রাঁধা মসুরের গরম ডাল। এ কে তো গরম কাল। তার উপর এত গরম গরম খাবার। হাত দেয়া মাত্র সবাই উঃ উঃ করে উঠলো। রফিক বোকার মতে বলে বসলো- স্যার, একদম গরম আগুনে রান্না করে এনেছে। স্যার রফিকের মুখের দিকে তাচ্ছিল্ল্যের ভঙ্গিতে তাকিয়ে তার মন্তব্যটির অসারতা প্রমাণ করার চেষ্টা করলো। একটু পর স্যার রফিককে ফিসফিস করে জিজ্ঞাসা করলো প্রথমেই মিষ্টি কেন এবং খাবার শুরুতেই সালাদ না দিয়ে প্রথমেই ডালই বা কেন? রফিক বললো স্যার এ এলাকার এটাই নিয়ম। রফিকের অবশ্য এসব এলাকায় যাতায়াত আছে। তাই তার মন্তব্য নিয়ে আমার তেমন কিছু বলার ছিল না। তুবও আমি যোগ করলাম স্যার ঐ যে কাঁচা মরিচ লবণ আর পিঁয়াজ দেখছেন- এটাই এখানকার সালাদ।

নিজেকে বিজ্ঞ প্রমাণের জন্য রফিক ভাষণের ভঙ্গিতে বলে উঠলো –স্যার বগুড়ার লাল মরিচের নাম শোনেন নাই ? বগুড়ার সেই লাল মরিচ এ এলাকাতেই হয়। অন্য এলাকার ৪/৫ টি মরিচ ,বগুড়ার এ এলাকার ১ টি মরিচের সমানও হবে না। বগুড়ার-লাল-মরিচ-দিয়ে-ডিমের-ভর্তার মত মজাদার জিনিষই আর হয়না। এ মরিচ একটু টেস্ট করে দেখেন স্যার। রফিক একটা বড় কাঁচা মরিচ স্যারের হাতে দিলেন।

ও তাই নাকি ?- স্যার উচ্ছ্বসিত হয়ে বললেন, চাঁদপুরী, ফরিদপুরী মরিচ খেয়েছি । ভারতের আসাম, নাগাল্যান্ড , মণিপুরে, এবং বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলে যে নাগা মরিচ জন্মে তাও খেয়েছি। বগুড়ার মরিচের অনেক সুনাম শুনেছি । বই-পুস্তুকে পড়েছিলাম ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কিছু মসলার লোভে বঙ্গদেশে বা ভারতে প্রথম এসেছিল, মরিচ ছিল তাদের প্রধান টার্গেট। সেটা বোধ হয় এ এলাকার মরিচই হবে। এসব তথ্য বলার পর হাসিহাসি মুখে দুই আঙুলে মরিচের বোঁটাটা ধরে দুই-তিনটা কামড় দিয়ে স্যার গোটা মরিচটা চিবোতে শুরু করলেন । কি আর বলবো। এটা ছিল বিচক্ষণ স্যারের তাৎক্ষণিক আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত । কিংবা স্যার হয়তো খাবার স্বাদ একটু পরিবর্তন করতে চাইছিলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই স্যারের চোখ-মুখ লালে লাল হয়ে উঠলো। চোখ দিয়ে পানি ঝরা শুরু হলো। নাকও বাদ থাকলো না। মুখে শুধু উঃ আঃ উঃ আঃ শব্দ। রফিক সাথে সাথে ছোট এক চামচ লবণ স্যারের সামনে ধরলো। স্যার লবণ খেতে চাচ্ছেন না দেখে রফিক বললো স্যার মুখটা একটু হা করেন তো দেখি। স্যার হা করা মাত্রই লবণসহ গোটা চামচটাই চোখের পলকে স্যারের মুখে ঢুকে দিল। বেদনায় স্যার আর্তনাদ করে উঠলেন। আমি অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিলাম। রফিকের কোন কাজের যদি ঢং থাকতো! পরিস্থিতি অবশ্য শান্ত হতে বেশি সময় লাগলো না। ভদ্রতার খাতিরেই বোধ হয় স্যার চুপ করে গেলেন , তবে শরবতের গ্লাসের নীচে পড়ে থাকা মিছরির দানাগুলো মুখে পুরলেন । নোনতা স্বাদের মত মিষ্ট স্বাদও মনে হয় ঝাল প্রশমিত করে। মুখে অবশ্য স্যার তখনও উঃ আঃ উঃ আঃ করেই চলেছেন। বগুড়ার এ এলাকার মরিচের ঝাল সম্পর্কে স্যারের ধারণা যে ছিল না , তা অবশ্য বোঝা গেল। তবে রফিকের কথাতে প্ররোচিত হয়েই স্যার আগে-পিছে কিছু না ভেবেই মরিচে কামড় বসিয়েছিল। রফিকও আবার আগে-পিছে কিছু না ভেবেই লবণ ভর্তি চামচ স্যারের মুখে ঢুকিয়ে দিয়েছিল। নিরপেক্ষ বিচারে দুটি ঘটনার জন্যই রফিক দায়ী।
রফিক হয়তো কিছু যুক্তি দাঁড় করিয়ে দায় মুক্ত হবার পথ খুঁজছিল। সে অবজ্ঞার ভঙ্গিতে আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিস ফিস করে বললো আমরা মরিচের ভর্তা খাই আর সামান্য মরিচ খেয়ে স্যার আজ অজ্ঞানের মত হয়ে গেল ? দেখ ,কেমন যেন মাতাল মাতাল মনে হচ্ছে।
-মাতাল ? আরে না - আমি মনে মনে বললাম । বেশি ঝাল খাওয়ার পর ‘মাতাল’ হওয়ায় মত শরীরে যে একটি অনুভূতি জাগে তা অবশ্য আমি জানতাম।

রফিক দায়মুক্ত হবার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখে বলে বসলো -স্যার , সিজনকালে আমাদের এখানে পাখিরাও দিনে ৪/৫ টা করে মরিচ খায়। মরিচ যেন আর খেতে না পারে সেজন্য কাক পাখিকেও তাড়িয়ে দিতে হয়। কথাটা সত্য তাই সবাই সম্মতিসূচক মাথা নাড়ালো , অবশ্য স্যার ও আমি ছাড়া । সামান্য পাখির তুলনায় নিজেকে কাপুরুষ মনে হওয়ায় স্যার মাথা নাড়ানো থেকে বিরত থাকল কিনা জানি না। তবে আমি এটা জানতাম যে , মরিচের ঝালের জন্য “ক্যাপসাইসিন” নামক মরিচের একটা অণু দায়ী। এ অণুর একটা বিচিত্র রূপ হলো সেটি সব প্রাণিদের বেলায় সমান প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে না। সে কারণেই “ক্যাপসাইসিন” অণু মানুষের জন্য ঝাল হলেও পাখির জন্য তা ঝাল নয়। তাই পাখিরা মহানন্দে মরিচ ভক্ষণ করে থাকে। পাকা মরিচ শুকাতে দিলে এ জন্যই গৃহস্থকে কাকের দিকে নজর রাখতে হয়। বিষয়টি আমার জানা থাকার কারণেই আমি রফিকের কথাতে সায় দিয়ে মাথা নাড়ানো থেকে সেদিন বিরত থেকেছিলাম।
এ পর্যায়ে সবার পাতে দেয়া হলো কাতলা মাছের ঝোল। বিশাল মাছের মাথাটা পড়লো স্যারের পাতে। (ক্রমশঃ)

বাংলাদেশ সময়: ২২:২১:১৫   ৪৬২ বার পঠিত   #  #  #  #  #  #