সোমবার, ১৪ জানুয়ারী ২০১৯

“রঙে ভরা আমার ব্যাংকিং জীবন “-জালাল উদদীন মাহমুদ

Home Page » বিনোদন » “রঙে ভরা আমার ব্যাংকিং জীবন “-জালাল উদদীন মাহমুদ
সোমবার, ১৪ জানুয়ারী ২০১৯



 

জালাল উদদীন মাহমুদ

৬১ তম পর্ব– ডেমাজানি শাখা ,বগুড়া -২০ -অপূর্ব ভোজন -১ । স্যারের সাথে দাওয়াৎ খেতে যেয়ে আমি ও রফিক আরো একবার অন্যরকম একটা বিড়ম্বনায় পড়েছিলাম। সেটা বেড়ের বাড়ী গ্রামে। বেড়ের বাড়ী গ্রামটি আমাদের ব্যাংক -শাখার কমান্ডিং এরিয়া নয়। কমান্ডিং এরিয়া সংলগ্ন অন্য ইউনিয়ন এমনকি অন্য উপজেলায় । পূর্বনির্ধারিত কমান্ডিং এরিয়ার বাহিরে কোন ব্যাংক কৃষিঋণ দিতে পারে না। বেড়ের বাড়ী গ্রামটি সে সময় যোগাযোগ বিছিন্ন দ্বীপের মত ছিল। বেড়ের বাড়ী গ্রাম সংলগ্ন এর্ং আমাদের কমান্ডিং এরিয়ার মধ্যে অবস্থিত শোল ধুবড়ী গ্রামে কৃষিঋণ আদায়ে গেলে বেড়ের বাড়ীর এক অবস্থাসম্পন্ন গৃহস্থের সাথে আমাদের একদিন দেখা হয়। তিনি আমাদের ব্যাংকের খুব ভাল একজন কাস্টমার । স্যারের সাথে তার পরিচয় করিয়ে দিলাম। উনি তার বাড়ীতে একবেলা খাবার জন্য দাওয়াত দিয়ে বার বার পীড়াপীড়ি করতে লাগলেন। স্যারও কবুল করলেন। ঠিক হলো পরের সপ্তাহের বুধবার পুনরায় শোল ধুবড়ী গ্রামে সকালে আমরা ঋণ আদায়ে আসবো –কাজ শেষে দুপুরে তার বাসায় দাওয়াত খাবো। এ দাওয়াত যে আমাদের জন্য কতটা বিড়ম্বনার সৃষ্টি করবে তা তখন অনুমানযোগ্য ছিল না। উঁচু –নীচু বালির ঢিবির পাহাড় সম বাধা পার হয়ে অনেক কষ্টে আমরা ঐ দিন যোগাযোগ বিহীন বেড়েরবাড়ী গ্রামের নির্দিষ্ট বাড়ীতে পৌঁছালাম। আমাদের দেখেই বাড়ীর ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা “ইস্টি এসেছে , ইস্টি এসেছে“ বলে চেঁচামেচি শুরু করলো। আশেপাশের বাড়ীর উদোম গায়ের পুরুষ সদস্যদের ভীড় ধীরে ধীরে বাড়তে লাগলো। হঠাৎ স্যান্ডো গেন্জি গায়ে যুবক গোছের একজন এসে কামলা গোছের একজনকে হুকুম করতে লাগলো ইস্টি আসচে উযু করবার পানি দে। পরে বুঝলাম বাড়ীর বড় ছেলে বাড়ীর চাকরকে হুকুম করছে। নামাজের ওয়াক্ত না হলেও এখানে এখন ওযু করা মানে হাত মুখ ধোয়া। কিছুক্ষণের মধ্যে ৩টি জলচৌকি,পীতলের বদনা ও পানি ভর্তি অ্যালুমিনিয়ামের বালতি হাজির। মনে হয় কুঁয়ার পানি। খুব ঠান্ডা। চোখে বার বার পানির ঝাপটা দিয়ে প্রাণ ভরে হাত মুখ ধুলাম। স্যার অবশ্য পুরা অযুই করে নিলেন। মূল বাড়ীর বাহিরে অবস্থিত বৈঠকখানার একটি চৌকিতে সপের উপর নকশী কাঁথা বিছায়ে আমাদের বসতে দেয়া হলো। দু জন কিশোর নকশাওয়ালা হাতপাখা দিয়ে অনবরতঃ বাতাস করতে লাগলো । আমাদের নিষেধ তারা আমলেই নিল না। এমন সময় সাদা পান্জাবী গায়ে টুপি মাথায় দাওয়াত প্রদানকারী গৃহস্থ মুরুব্বী এসে হাজির। হাত মোসাফা করে ছালাম বিনিময় হলো। গরীবের বাড়ীতে হাতির পাঁড়া –এ বলে তিনি আমাদের অভ্যর্থনা জানালেন। কেন এখনও শরবত দেয়া হয়নি – তা নিয়ে তিনি তার মেঝ ছেলের উপর রাগ ঝাড়লেন। বলতে না বলতেই লেবু-মিছরির শরবত হাজির। হাতে তৈরী ছোট নকশী লাল কাপড় দিয়ে গ্লাস গুলো ঢাকা ছিল। স্যার বিসমিল্লাহ বলে ডান হাতে গ্লাশ নিয়ে শরবত পান করা শুরু করলেন । আমরাও স্যারকে অনুসরণ করলাম। আমার কাছে পানির চেয়ে সে সরবতে মিছরিই বেশী মেশানো বলে মনে হচ্ছিল। মিছরির কিছু কিছু দানা গ্লাশের নীচে হীরের টুকরার মত চকচক করছে। শরবত শেষ করে পিতলের রেকাবিতে রাখা মাত্রই বাড়ীর আরেক ছেলে পিতলের জগ থেকে সবার গ্লাশে আবার শরবত ঢেলে দিয়ে পুনরায় খেতে অনুরোধ করলো। অনিচ্ছা সত্বেও সবাই আরেক গ্লাশ খেলাম। এবার এলো তাদের নিজের গাছের ডাবের পানি । পীড়াপিড়িতে তাও দু গ্লাস করে খেতে হলো। খাবারের আগেই এতগুলি শরবত ও ডাবের পানি খেয়ে আমাদের মানে আমাদের পেটের অবস্থা ——কি আর বলবো ? অধিক শোকে পাথর। এবার আমাদের সামনে দস্তরখানা বিছানো হলো এবং তার উপর একে একে নকশা করা চীনা মাটির বাটিতে খাবার এনে জড়ো করা হলো। নকশী চীনামাটির বৃত্তাকার থালায় প্রথম একটা করে লাড্ডু , সন্দেশ , রসগোল্লা দেয়া হলো। থালার একপাশে আলাদা ভাবে সেমাইও ছিল । সবগুলো না খেয়ে উপায় ছিল না। আমরা যতই না না করি ততই চতুর্দিক থেকে অনুরোধ , উপদেশ এমনকি আদেশের সুরেও সমবেত পরিবেশনকারী , সাহায্য কারী , বাড়ীর মুরুব্বী ,সমাগত দর্শক এমন কি যে দুই কিশোর পাখা দিয়ে বাতাস করছিল তারাও বলা শুরু করে খান খান , পারবেন ,পারবেন। সাহস করে খান কিছুই হবেনা। এমনকি রফিকও বলে উঠলো খাবার পরে হালকা লবণ মেখে কয়েক কুচি আদা চিবিয়ে খেলে সব ঠিক হয়ে যাবে। বাড়ীর মুরুব্বী জানালেন অতিরিক্ত খাবার কোন সমস্যা নয় । কালোজিরা,জাউন ও খাঁটি মধু খেলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। ওদিকে লাড্ডু শেষ করতেই আরেকটা দেয়। এ ভাবে সবগুলো আইটেমই রিপিট করা হচ্ছিল । পরে কিভাবে যে তারা নিবৃত্ত হয়েছিল তা আজ আর মনে নাই। সম্ভবতঃ স্যার রফিককে মৃদু একটা ধমক দিয়েছিলেন । আর রফিক স্যারের ধমকের প্রেক্ষিতে তার ধমকটা মাইকের মত জোরে করে পরিবেশনকারীকে দিয়েছিল। তাতেই মিষ্টি পর্ব থেকে অবশেষে পরিত্রাণ মেলে। যা হোক , এতক্ষণে আমি বুঝতে পারলাম ,আমাদের শত অনুরোধেও বাড়ীর মুরুব্বী বা অন্য কেউ আমাদের সাথে খেতে বসতে কেন রাজী হলো না। এরপর খাবার মূল পর্ব শুরু হলো….অর্থাৎ প্লেটে ভাত দেয়া হলো। ঢেকি ছাঁটা মোটা মোটা লাল লাল চাউলের গরম গরম ভাত। (ক্রমশঃ)         

বাংলাদেশ সময়: ২১:১৯:১৩   ৫০৭ বার পঠিত