রবিবার, ১৩ জানুয়ারী ২০১৯

“রঙে ভরা আমার ব্যাংকিং জীবন “-জালাল উদদীন মাহমুদ

Home Page » বিনোদন » “রঙে ভরা আমার ব্যাংকিং জীবন “-জালাল উদদীন মাহমুদ
রবিবার, ১৩ জানুয়ারী ২০১৯



 

জালাল উদদীন মাহমুদ

৬০ তম পর্ব–
ডেমাজানি শাখা ,বগুড়া -১৯।

মটর সাইকেলে অ্যাকসিডেন্টের ক্ষেত্রে আমার ভাগ্য বোধ হয় সুপ্রসন্নই ছিল। বগুড়া শহরের সরকারী মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের একদম সামনে,শেষবার অ্যাকসিডেন্ট করেছিলাম । হাসপাতালের গেটের সামনে দুটি স্পীড ব্রেকার থাকার কারণে আস্তেই মটর সাইকেল চালাচ্ছিলাম। সে সময় একজন পথচারী রাস্তা পারাপরের সময় দ্বিধা করছিল । তার অ্যাটিচুট দেখে আমার মনে হলো সে বোধ হয় সামনে না গিয়ে পিছিয়ে যাবে । আমি তার সামনে দিয়ে পার হতে চাইলাম কিন্তু সেও সামনের দিকে অগ্রসর হলো । তাকে বাঁচাতে যেয়েই রাস্তায় পড়ে গেলাম। ভাগ্যিস তবে তখন সেখানে তেমন যানবাহন ছিলনা। স্পীড ব্রেকারের কারণে গাড়ীর গতি এমনিতেই কম ছিল। তাই আমি আঘাত তেমন একটা পাই নাই। তবুও অতি উৎসাহী কিছু পথচারী ও হাসপাতালের সামনের ঔষধের দোকানের কর্মচারীরা আমাকে ঘাড়ে করে বুকে করে ইর্মাজেন্সী বিভাগের দিকে জোর কদমে রওনা দিল। মটর সাইকেলের স্টার্ট অফ করারও সুযোগ পেলাম না । ওটা রাস্তাতেই পড়ে থাকলো। আমি বললাম, মটর সাইকেল আবার কেউ নিয়ে যাবে না তো? হাসপাতালে নেবার কাজে সহায়তা করতে শুরু থেকেই পাশাপাশি হেঁটে আসছিলেন একজন মুরুব্বি গোছের লোক। তাকে বেশ পরোপকারী মনে হচ্ছিল। তিনি বললেন- আগে জানের চিন্তা বাবা , পরে মটর সাইকেলের চিন্তা। আমি কোঁচড়-মোচড় করতে থাকলাম। মুরুব্বি গোছের লোকটা বলল- আপনি এরকম করছেন কেন? ব্যাথা লাগছে? বললাম - না না, প্যান্ট-শার্ট ছিঁড়ে গেছে কিনা তা চেক করে দেখছি। মুরুব্বী গোছের লোকটা সদ্য দুর্ঘটনায় পতিত আমার কার্যকলাপে বোধ হয় অতিশয় বিরুক্ত হয়ে থাকবেন। সবাইকে বললেন – ইনাকে মাটিতে নামান। ঘাড়ে-বুকে করে যে লোকজন আমাকে বয়ে নিয়ে ইমার্জেন্সীর দিকে যাচ্ছিলেন তারা ধপাস করে আমাকে এত জোরে হাসপাতালের বারান্দায় নামিয়ে দিল যে আমি আঘাত পেলাম। যা মনে হয় আজকের অ্যাক্সিডেন্টেও তা পাইনি। সবাই চলে গেল। মুরুব্বী গোছের লোকটি রাগে গজগজ করতে করতে বললো –আজকাল লোকের যে উপকার করবেন সে সুযোগও নাই। জানের চেয়ে সম্পত্তির মায়াই দেখি বেশী।
ভাল করে চেক করে দেখলাম, মটর সাইকেল,আমার বা আমার শার্ট-প্যান্টের এবারও কোন ক্ষতি হয় নাই। আলহামদুলিল্লাহ বললাম।

জীবনের মজার মজার ঘটনাগুলো আমি অন্যের সাথে রসিয়ে রসিয়ে বলে বলে শেয়ার করতে ভালবাসতাম, এখনও বাসি। আজ আমার মনে হচ্ছে বারবার বলতে বলতে মজার মজার ঘটনাগুলো আমার মনে গেঁথে গিয়েছে , তাই হয়তো এখনও তা স্মরন করে লিখতে পারি। ব্যাংকের বযা হোক, আমার মটর সাইকেল অ্যাকসিডেন্টের ঘটনাগুলি এক অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তার সাথে আমি এক অবসরে শেয়ার করছিলাম। আমি ভেবেছিলাম তিনি হয়তো এ ঘটনাগুলি শুনে মজা পাবেন। কিন্তু ঘটনা শোনার সময় মজা পাবার বদলে তার চোখমুখে উৎকণ্ঠার ছাপই যেন বেশী ফুটে উঠলো। আমার বর্ণনা শেষ হলে উনি বললেন , আপনি দুইটি বিষয় মনে রাখলে এ ঘটনা গুলি ঘটতো না।
১) ভয় পাইয়ে দিতে পারে এমন যাত্রী কখনই মোটরসাইকেল চালানোর সময় পিছনে বসাবেন না। কারণ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সময় যেমন ওভারটেকিং এর সময় বা ইন্জিন বিকল হলে বা খারাপ রাস্তায় তারা ভীতিকর কাজ করে আপনাকে বিপদে ফেলতে পারে।
২) যদি আপনি দেখেন একজন মানুষ রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে রাস্তা পার হতে দ্বিধাগ্রস্থ অবস্থায় আছে তাহলে সঠিক ইন্ডিকেটর লাইট ব্যবহার করে মানুষটির পিছন দিয়ে রাস্তা পার হবেন। কারণ মানুষ পিছনের দিকে নয় বরং সামনের দিকে প্রথমে যেতে পছন্দ করে।
মটর সাইকেল অ্যাকসিডেন্টের ঘটনাগুলির বর্ননা শেষ হলো । যে মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের সামনে সর্বশেষ অ্যাকসিডেন্ট করেছিলাম সেই হাসপাতাল যার নামে সেই মোহাম্মদ আলী সম্পর্কে সংক্ষেপে দু”চার কথা বলতে চাই। মোহাম্মদ আলী ১৯০৯ সালে বগুড়ার এক জমিদার পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন এবং ১৯৬৩ সালে মাত্র ৫৩ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেন এবং লেখাপড়া শেষ করে রাজনীতিতে যোগ দেন। বাঙালি কূটনীতিক এবং রাজনীতিবিদ মোহাম্মদ আলী পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে ১৯৫৩ থেকে ১৯৫৫ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৪ সালে গঠিত তাঁর নতুন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী আইনমন্ত্রী, আবু হোসেন সরকার স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং জেনারেল আইয়ুব খান প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ছিলেন। ১৯৫৫ সালের আগস্ট এর ৮ তারিখে পাকিস্তানের গভর্ণর জেনারেল ইস্কান্দর মির্জা মোহাম্মদ আলি কে পদত্যাগে বাধ্য করেন। তবে ১৯৬২ সালে তিনি আবার পররাষ্ট্র মন্ত্রী হন।
এর আগে মোহাম্মদ আলী বার্মায় পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত (১৯৪৮), কানাডায় পাকিস্তানের হাইকমিশনার (১৯৪৯-৫২) এবং যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত (১৯৫২-৫৩) ছিলেন।
যারা বগুড়া বেড়াতে যাবেন তাদের শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত মোহাম্মদ আলী প্যালেস মিউজিয়াম ঘুরে দেখতে পারেন। বগুড়া শহরের সাতমাথা থেকে একটুখানি পূর্বে অবস্থিত এই জাদুঘরটি মূলতঃ বগুড়ার নবাববাড়ী। মোহাম্মদ আলী ছিলেন এই নবাব পরিবারেরই সদস্য । ১৯৯৮ সালের মে মাসে মোহাম্মাদ আলী প্যালেস মিউজিয়াম অ্যান্ড পার্ক বাণিজ্যিকভাবে যাত্রা শুরু করে। প্রতিদিন সকাল ১০ থেকে রাত ৮ পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে। এখানে বগুড়ার নবাববাড়ির অতীত দিনের নেপালি দারোয়ান, মালী, পালকি, বেহারা, কোচওয়ান, টমটম, বাঘ, সিংহ,কুমির, ময়ূর, রাজহাঁস, বিভিন্ন পাখির প্রতিমূর্তি সিমেন্ট দিয়ে তৈরি করে রাখা আছে।

স্যারের সাথে দাওয়াৎ খেতে যেয়ে আমি ও রফিক আরো একবার অন্যরকম একটা বিড়ম্বনায় পড়েছিলাম। খেয়েছিলাম মাত্র এক বেলা কিন্তু সে কাহিনী বলতে অন্ততঃ ৭ দিন লাগবে। (ক্রমশঃ)

বাংলাদেশ সময়: ২২:৫৫:৩৫   ৪৭৯ বার পঠিত   #  #  #  #  #  #