শনিবার, ১২ জানুয়ারী ২০১৯

“রঙে ভরা আমার ব্যাংকিং জীবন “ -জালাল উদদীন মাহমুদ

Home Page » বিনোদন » “রঙে ভরা আমার ব্যাংকিং জীবন “ -জালাল উদদীন মাহমুদ
শনিবার, ১২ জানুয়ারী ২০১৯



 

জালাল উদদীন মাহমুদ

৫৯তম পর্ব–
ডেমাজানি শাখা ,বগুড়া -১৮।

ডেমাজানী শাখায় কৃষি ঋণ আদায়ে গিয়ে আমি আর একবার মটর সাইকেল দুর্ঘটনায় পড়েছিলাম।
স্যার তখন কিছুদিনের জন্য ঢাকায় গিয়েছেন। ঢাকায় যাবার আগে সব সময় তিনি এলাকায় ঋণ আদায়ের রুটিন করে দিয়ে যেতেন। সেই রুটিন মানতেই সেদিন প্রত্যন্ত এলাকায় ঋণ আদায়ে আমি ও রফিক বের হয়েছিলাম। সকালে বের হবার সময়েই দেখলাম আকাশ কালো কালো মেঘে ভরা। দুপুরে মুষলধারে বৃষ্টি হলো। বৃষ্টি থামলে আমরা অফিসের দিকে রওনা দিলাম। ভারী বৃস্টিতে রাস্তা কর্দমাক্ত । রাস্তার নীচু নীচু স্থানে পানিও জমে গেছে। এলাকায় আবার সেদিন হাটবার। হাটের দিন হওয়ায় বিকেলে ঐ রাস্তায় দলে দলে লোক যাতায়াত করছিল। রফিক বললো –আজ সে মটর সাইকেল চালাবে। কি যে কুমতিতে আমি সেদিন তাকে মটর সাইকেল চালাতে দিতে রাজী হয়েছিলাম আজ তা আর নির্ণয় করতে পারছি না। কাদা, কাদার ফাঁকে জমানো পানি ও লোকজনের ভীড় এড়িয়ে মটর সাইকেল চালাতে রফিকের ভীষণ কষ্ট হচ্ছিল । ডান বায়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে –হর্ণের পর হর্ণ দিয়ে , মাঝে-মধ্যে আবার মুখ দিয়ে লোকজনকে চিৎকার করে সরে যেতে বলতে বলতে সে অগ্রসর হচ্ছিল। বিপজ্জনক রাস্তা তার উপর রফিকের চালানোর ধরন দেখে আমি পিছনে বসে ভয় পাচ্ছিলাম। একবার বললাম- আমি চালাই। আমার চেয়ে লম্বা-চওড়া রফিক সে কথায় পাত্তাই দিলনা। একসময় আমার ভয় এত বেড়ে গেল যে, পিছনে বসেও আমি তাকে বার বার ইন্সট্রাকশন দেয়া শুরু করলাম। কাদা আর রাস্তার হাটুরেদের কারনে কাঁপা কাঁপা হাতে সে মটর সাইকেল চালাতে থাকলো। মাঝে মধ্যে এক পা , আবার কখনো কখনো দুই পা রাস্তায় নামিয়ে দিয়ে সে ব্যালান্স করে নিচ্ছিল। অন্যদিকে আমি ভিতরে ভিতরে ভয়ে অস্থির হয়ে উঠছিলাম। একটা বিশাল পুকুরের ধার দিয়ে যাওয়ার সময় আমার মনে হলো মটর সাইকেল পুকুরে পড়ে যাচ্ছে। রফিককে কিছু ইঙ্গিত না দিয়েই তাড়াতাড়ি আমি রাস্তায় পা নামিয়ে দিলাম। মটর সাইকেল সহ রফিক পুকুরের পাড়ের দিকে পড়ে গেল। সাথে আমিও । মটর সাইকেলটা পুকুর পাড়ের একটা গাছের সাথে ভাগ্যক্রমে আটকিয়ে গেল। দৃশ্যপট এ রকম -রফিক ঝুলন্ত মটর সাইকেলের হ্যান্ডেল দু হাত দিয়ে কোন রকমে ধরে ঝুলে আছে-আর আমি রফিকের দুই উরু ধরে ঝুলে আছি। ভাগ্য ভালো ,আমি কেমন করে যেন পায়ের তলায় পুকুরের ঢালু অংশের বেশ শক্ত মাটি পেলাম। মটরসাইকেলের হ্যান্ডেল ধরে ঝুলে থাকলেও রফিকের আংশিক ভারতো আমার উপর। আমি রফিকের দু উরু ধরে ব্যালান্স করে আছি , আমার পা অবশ্য মাটি পেয়েছে। মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা । বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। বেকুফ রফিক মাঝে মধ্যে তার পা দোলানো শুরু করলো। বৃস্টির পানি থেকে বাঁচতে মাথা ঝাঁকাতে লাগলো। আমার পায়ের তলার মাটিও আবার সদ্য শুরু হওয়া বৃষ্টিতে নতুন করে পিচ্ছিল হয়ে গেল। মনে হচ্ছিল নীচের পুকুরের গভীর পানিতে আমাদের পতন আসন্ন। কতক্ষণ এভাবে ছিলাম জানিনা- তবে আমার কাছে মনে হয়েছিল অনন্তকাল বুঝি পার হয়ে গেছে। ভাগ্যিস হাটবার ছিল। হাটুরেরা দ্রুত মটর সাইকেলসহ আমাদের উদ্ধার করলো।

ততক্ষণে বৃষ্টি থেমে গেছে। এবারও অবশ্য মটর সাইকেল সহ আমাদের কারো কোন ক্ষতি হয় নাই। কিন্তু কাদা পানিতে আমাদের শরীর একাকার । ছোট বেলা থেকেই রফিক আছাড় খাবার ওস্তাদ বিশেষতঃ কর্দমাক্ত ফুটবল মাঠে। কিন্তু আমি তো বৃষ্টির দিনে রাস্তা চলতাম পা টিপে টিপে। আছাড় খেয়ে খেয়ে রফিকের মত আমার কোমর অত শক্ত হয় নাই। সামনের এক টিউব ওয়েলের পাড়ে গিয়ে হাত পা পরিস্কার করার সময় দেখলাম কোমর ও দুহাত ব্যথা করছে। রফিক কিন্তু নির্বিকার ভাবে মটর সাইকেলে স্টার্ট দিয়ে রাস্তায় আমার অপেক্ষায় রেডী হয়ে বসে আছে। আমি উঠতেই বললো তুই দু চোখ বন্ধ করে থাক -তাহলে আর কিছুই হবেনা। আমি চোখ বন্ধ করে থাকলেই মনভুলা রফিকও যে চোখ বন্ধ করে রাখবেনা -সে বিশ্বাস অবশ্য আমার তখন ছিলনা। তাই চোখ বন্ধ করে ভয়ে থাকার পরিবর্তে চোখ খুলে ভয়ে ভয়ে থাকাই আমার কাছে অধিক নিরাপদ মনে হলো ।

আজ যখন এ কাহিনী লিখছি তখন একটা কৌতুক মনে পড়ে গেল। উত্তর বঙ্গের এক ড্রাইভার পিকনিকের জন্য বাস নিয়ে প্রথম বারের মত খাগড়াছড়ি গেছে। আঁকা-বাঁকা –উঁচু-নীচু রাস্তা। অনভ্যস্থ ড্রাইভার যে ভাবে বাস চালাচ্ছিল তাতে যাত্রীদের মনে ভয় ঢুকে গেল। পিছন থেকে এক যাত্রী চিৎকার করে বলে উঠলো –ওস্তাদ, দেখেশুনে গাড়ী চালান , ভয় লাগে। সহজ সরল ড্রাইভার সোজা উত্তর দিল- ভয় লাগে তো আমার মত চোখ বন্ধ করে রাখেন। আতকিংত এক যাত্রী সামনে থেকে ভয়ার্ত কণ্ঠে বলে উঠলো –আপনি কি চোখ বন্ধ করে গাড়ী চালাচ্ছেন ? ড্রাইভার নির্বিকার ভাবে উত্তর দিল –ভয় কি শুধু আপনাদেরই লাগে ,আমাকে লাগে না ?

কবর স্থানের পাশে বাড়ী হলে কি মারা যাবার পর আত্মীয় স্বজনদের কোনও সুবিধা হয় ? জানি , এ কঠিন প্রশ্নের উত্তর কেঊ সহজে দিতে পারবেনা। অ্যাক্সিডেন্ট কারো কাম্য নয় তবু বলি হাসপাতালের সামনে অ্যাক্সিডেন্ট করলে কি কোনও সুবিধা পাওয়া যায় ? এ সহজ প্রশ্নের উত্তর বোধ হয় কঠিন নয় ।

আমি শেষবার (এখন পর্যন্ত) অ্যাকসিডেন্ট করেছিলাম বগুড়া শহরের সরকারী মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের একদম সামনে। (ক্রমশঃ)

বাংলাদেশ সময়: ২১:৪৪:০০   ৪১৩ বার পঠিত   #  #  #  #  #  #