রবিবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৮

“রঙ্গে ভরা আমার ব্যাংকিং জীবন “-জালাল উদদীন মাহমুদ

Home Page » বিনোদন » “রঙ্গে ভরা আমার ব্যাংকিং জীবন “-জালাল উদদীন মাহমুদ
রবিবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৮



 

 লৎফর রহমান সরকার

৪৫ তম কিস্তি—
ডেমাজানি শাখা ,বগুড়া ৫ম পর্ব।

লুৎফর রহমান সরকার এর বাড়ী থেকে আমাদের বাড়ী মাইল চারেক হবে হয়তো। তার আপন এক ভাতিজা আমার সাথে হাইস্কুলে পড়তো। দস্যু বনহুরের লেখিকা রোমেনা আফাজ তার চাচী। তার আপন এক ভাই সে সময় ডেমাজানি হাইস্কুলের শিক্ষক ছিলেন। তার সাথে আমার খুব সখ্যতা ছিল। লুৎফর রহমান সরকার –এর সাথে আমার এ জীবনে দুই বার দেখা হয়েছিল। রাজশাহীস্থ বাংলাদেশ ব্যাংকে উনি আমার ব্যাংকে চাকুরীর জন্য ইন্টারভিউ নিয়েছিলেন। ইন্টারভিউ শেষে আমি শুনে ছিলাম যে উনিই লুৎফর রহমান সরকার । কেমন করে জানিনা –ইন্টারভিউ বোর্ডে তার সাথে আমার যে কথোপকথন হয়েছিল তা এখনও বেশ মনে করতে পারছি। আমি অবশ্য ডায়েরীতে লিখেও রেখেছিলাম। ডায়েরী খুলে সে লেখা এখন আর দেখতে ইচ্ছে করছে না। তাছাড়া , আমার তো বেশ মনেও আছে-
প্রশ্নঃ- আপনি তো মাস্টার্স পরীক্ষার্থী ?
উত্তরঃ- জী,স্যার।
- পরীক্ষার আগে ব্যাংকে জয়েন করলে আপনার পড়াশোনার ক্ষতি হবেনা ?
- না হবেনা। নোট-পত্র তৈরী করাই আছে। মাত্র ৪ পেপার পরীক্ষা। আমার প্রস্তুতি শেষ।
- মাস্টার্সে আপনার কি কি বিষয় আছে ?
- ডেভলপমেন্ট ইকোনোমিক্স , , ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনোমিক্স ,ব্যাংকিং আর এগ্রিকালচারাল ইকোনোমিক্স।
- আপনি তো এগ্রিকালচারাল ইকোনোমিক্স পড়ছেন, তাহলে বলেন তো আমাদের দেশে কৃষির উন্নতি হচ্ছেনা কেন ?
- নানাবিধ কারন আছে ? যেমন-
কৃষি ব্যবস্থা এখনও প্রকৃতির খেয়াল খুশির ওপর নির্ভরশীল
ঝুঁকিপূর্ণ,
 আবাদযোগ্য ভূমির পরিমান দিনদিন কমে যাচ্ছে,
 মূলধনের অভাব,
 ব্যাপক দারিদ্র্তা।,
 উপযুক্ত আধুনিক প্রযুক্তির স্বল্পতা,
 অনুন্নত ও দুর্বল বাজার ব্যবস্থার জন্য কৃষিপণ্যের উপযুক্ত মূল্যপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা,
 কৃষিজ পণ্য দ্রুত পচনশীল
 ফসল-পরবর্তী ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা অত্যধিক,
 ফল এবং শাক-সবজিসহ বিভিন্ন কৃষিজ উৎপন্নের পুষ্টিমান সমন্ধে সাধারণ মানুষের জ্ঞানের অভাব।,
 কৃষি ঋণের অভাব।
- থামেন , থামেন । আমরা যে প্রচুর কৃষি ঋণ দিচ্ছি, এটা কি আপনি জানেন ?
- জানি স্যার , কিন্তু তাও পর্যাপ্ত নয়।
- ঠিক আছে , আপনার কথা মত কাল থেকেই আমরা কৃষি ঋণ ডাবল করে দিব , তাহলে তো কৃষির উন্নতিও ডাবল হবে , কি বলেন ?
- না , তাও হবেনা স্যার , কৃষি উন্নয়নের সাথে আরো অনেক বিষয় জড়িত আছে। তাছাড়া প্রদত্ত কৃষি ঋণ যথাযথ ভাবে ব্যবহার হচ্ছে কিনা , তাও দেখতে হবে।
- কিভাবে দেখবেন ?
- তদারকীর মাধ্যমে।
- কৃষক তো ঋণ নেবার পর সে টাকা কৃষিখাতেই ব্যয় করবে, তাহলে আর তদারকীর দরকার কি ?
- স্যার , এ টাকা তো কৃষক অনুৎপাদনশীল খাতেও খরচ করতে পারে।
- অনুৎপাদনশীল খাতের উদাহরণ দিন।
- যেমন- ঋণের টাকায় ভোজের আয়োজন করা ।
- ধন্যবাদ , আপনি এখন আসতে পারেন।
ছালাম দিয়ে বের হয়ে আসলাম। বের হয়ে এসে ভাবলাম ,ভাগ্যিস কৃষি অর্থনীতি পড়েছিলাম , না হলে তো এ সব প্রশ্নের উত্তর দিতেই পারতাম না। তবে আজ ভাবছি কৃষি অর্থনীতি না পড়লে হয়তো এ সব প্রশ্ন আমাকে তিনি করতেনও না।
ব্যাংকার্স রিক্রুটমেন্ট কমিটির (বি আর সি) মাধ্যমে পরীক্ষা। বাংলাদেশ ব্যাংক আমাকে যে কোন ব্যাংকে দিতে পারতো। একদিন জানলাম আমাকে অগ্রণী ব্যাংকে দেয়া হয়েছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুরা আমাকে রাজশাহীতে পোস্টিং নেবার পরামর্শ দিল যেন একসাথে বি সি এস পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়া যায়। তাদের পরামর্শ আমারও পছন্দ হলো । পছন্দ হলে তো আর হবেনা। আমাকে যে রাজশাহীতে পোস্টিং দিবে তার গ্যারান্টি কে দিবে ?
বগুড়ার আমার এক বন্ধু বললো অগ্রণী ব্যাংকের এম ডি স্যারকে বিষয়টি বললে কাজ হতে পারে। তার পরামর্শ আমারও পছন্দ হলো । সে আমার সাথে ঢাকা যেতে রাজী হলো। এমডি লুৎফর রহমান সরকার-স্যারের অফিসের ও বাসার ঠিকানা সংগ্রহ করে আমরা দু”জন রওনা দিলাম ঢাকার উদ্দেশে্য। বোধ হয় সেদিন ছুটির দিন ছিল। দুরু দুরু বুকে তার বাসায় পৌঁছে আমরা আমাদের নাম , ঠিকানা ও উদ্দেশ্য জানালাম। শুনলাম স্যার রেস্ট নিচ্ছেন। তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই স্যার আমাদের দেখা দিলেন। সব শুনে বললেন, কাল অফিসে এসো। পরদিন অফিসে গেলাম। পিএ সাহেবকে আমার নাম বলতেই বললো হ্যাঁ , স্যার আপনার কথা বলে রেখেছেন। কোথায় পোস্টিং নিতে চান –সে মর্মে একটা দরখাস্থ দিতে হবে। কাগজ –কলম ও দরখাস্থ লেখার গাইড লাইন দিলেন। দরখাস্থ দেবার সময় কেন জানিনা আমার বন্ধুর বারণ সত্বেও দরখাস্থে রাজশাহীর স্থলে আকস্মিক ভাবে বগুড়ায় পোস্টিং চাইলাম। সে সময় উত্তর বঙ্গের ছেলেদের হোম সিকনেস মজ্জাগত ছিল। আমিও ব্যতিক্রম হতে পারলাম না। দরখাস্থ হাতে নিয়ে পি এ সাহেব বললেন আপনারা চলে যান। আমরা বললাম ,স্যারের সাথে দেখা হবেনা ? উনি জানালেন প্রয়োজন নাই। জয়েন করার পরে না হয় আর একদিন এসে দেখা করবেন। না , এ জীবনে আর দেখা করার সৌভাগ্য আমার হয় নাই। হায় ! কে তখন জানতো সেদিন দেখা করার সৌভাগ্য না হলেও উনার কথা একদিন লেখার সৌভাগ্য হবে আমার । এ জগৎ বহুত বিচিত্র। (ক্রমশঃ)

জালাল উদদীন মাহমুদ

বাংলাদেশ সময়: ২৩:০৬:১২   ৪৪৫ বার পঠিত   #  #  #  #  #  #