রবিবার, ২ ডিসেম্বর ২০১৮

বাংলায় কচুরিপানা-জালাল উদ্দীন মাহমুদ

Home Page » ফিচার » বাংলায় কচুরিপানা-জালাল উদ্দীন মাহমুদ
রবিবার, ২ ডিসেম্বর ২০১৮



 

 

জালাল উদদীন মাহমুদ

বঙ্গ-নিউজ: কচুরিপানার আদি নিবাস দক্ষিণ আমেরিকা। দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের সবচেয়ে বড় দেশ ব্রাজিল। এক ব্রাজিলীয় পর্যটক ১৮শ’ শতাব্দীর একেবারে শেষভাগে বাংলাদেশে কচুরিপানা নিয়ে আসেন। তার নিয়ে আসা কচুরী পানা এত দ্রুত বাড়তে থাকে যে ১৯২০ সালের মধ্যে বাংলার প্রায় প্রতিটি জলাশয় কচুরিপানায় ভরে যায়। নদ-নদীতে চলাচল দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে আর জলাভূমির ফসল আমন ধান এমন কি পাট চাষও অসম্ভব হয়ে পড়ে, ফলে গোটা বাংলার অর্থনীতিতে তখন স্থবিরতা দেখা দেয়।   কচুরী পানা ও তার ফুল
কচুরিপানার তিনটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট হলো-
• এটি খুবই দ্রুত বংশবিস্তার করতে পারে।
• এটি প্রচুর পরিমাণে বীজ তৈরি করে যা ৩০ বছর পরও অঙ্কুরোদগম ঘটাতে পারে।
• কচুরিপানা রাতারাতি বংশবৃদ্ধি করে এবং প্রায় দু’ সপ্তাহে দ্বিগুণ হয়ে যায়।
যা হোক সে সময় পরিস্থিতি ভীষন মারাত্বক আকার ধারন করলে সরকার কচুরিপানার বৃদ্ধিহ্রাসে বাংলার ৪ টি আইন সংশোধন করেন-
• জলাভূমি আইন,
• মিউনিসিপ্যালিটি আইন,
• স্থানীয় সরকার আইন এবং
• স্থানীয় গ্রাম সরকার আইন ।
সর্বশেষ ১৯৩৬ সালে কচুরিপানা আইন জারি করা হয়, যার মাধ্যমে বাড়ির আশেপাশে কচুরিপানা রাখা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয় এবং সরকার পরিচালিত কচুরিপানা পরিষ্কার অভিযানে অংশ নেয়াকে আবশ্যিক নাগরিক কর্তব্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়। কচুরিপানায় আক্রান্ত এলাকার ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেটদের ( ডি সি) তাদের নিজ নিজ এলাকায় স্বেচ্ছাসেবী নিয়ে কচুরিপানা নির্মুল করার জন্য কড়া নির্দেশ দেয়া হয়।    

কচুরী পানা ও তার ফুল

 

বংলার আপামর জনতা এই কাজে ব্যাপক উৎসাহের সাথে যোগ দেয়। ১৯৩৭ সালের নির্বাচনে সবগুলো দলের নির্বাচনী এজেন্ডায় বাংলাকে কচুরিপানার অভিশাপ-মুক্ত করার অঙ্গীকার ছিল। ১৯৩৭ সালের নির্বাচনে নির্বাচনে শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক বিজয় লাভ করে তার নির্বাচনী ওয়াদা পূরণে কাজ শুরু করেন এবং কচুরিপানার বিরুদ্ধে জোরদার অভিযান চালান। কচুরিপানার বিরুদ্ধে পরিচালিত এ অভিযানে তিনি সেসময় সফলতা লাভ করেন।
কচুরিপানার বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযানের সাফল্য লাভের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিল সার হিসেবে পঁচানো কচুরিপানার ব্যবহার। কচুরিপানার এই গুণের কারণে ভূমিহীন কৃষকরা কচুরিপানা জমিয়ে ভাসমান কৃষিজমি তৈরি করতে শুরু করে। অবশেষে ১৯৪৭ এর মধ্যে বাংলার জলাশয়গুলো কচুরিপানার কবল থেকে মুক্তি লাভে আপাততঃসক্ষম হয়। তবে এখনও বাংলার জলাশয়ে কচুরিপানা বহাল তবিয়তেই আছে।
কচুরিপানা এখন প্রধানত ৩ টি কাজে ব্যবহৃত হয়-
• সার হিসেবেই বেশী ব্যবহূত হয়
• বর্ষাকালে বন্যা আক্রান্ত এলাকায় গবাদি পশুর খাদ্য যোগায়।
• এছাড়া হাওর এলাকায় বাঁশ দিয়ে কচুরিপানা আটকে রেখে ঢেউয়ের আঘাত থেকে ভিটে-মাটি রক্ষায় ব্যবহূত হয়
হালকা বেগুনি চ্যাপ্টা পাপড়ির চিরপরিচিত পানার ফুলের ফোটা দেখলেই মনে হয় হেমন্ত এসে গেছে। বাঙালী মাত্রই এ ফুল চেনে। তবে গ্রাম-বাংলার –শহরের এঁদোÑ ডোবায় অবহেলায় –অনাদরে বেশি বেশি জন্মায় বলেই হয়তো আমরা আজকাল চিরপরিচিত এ ফুলটির সৌন্দর্য তেমনভাবে খেয়াল করি না।
ঢাকা নগরীতে এ ফুল খুঁজে পাওয়া এখন প্রায় দুঃসাধ্য।
গ্রামের বাড়ীতে যাবার পথে বা গ্রামে এখনও কচুরিপানার দেখা পাই। কচুরিপানা ফুলের দিকে তাকিয়ে স্মরণ করি আমার ছড়া লেখার যথার্থতা। তবে আমাদের বোরাৎ গাড়ী নামের যে বিলের পানারফুল দেখে আমি মুগ্ধ হয়ে এ ছড়াটি লিখেছিলাম সেখানে এখন মাছ চাষ হয়। কচুরী পানা নাই।
কচুরিপানার অর্কিড-সদৃশ ফুল এখনও সৌন্দর্যপ্রেমিকদের মন ভরিয়ে তোলে।কচুরিপানা পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের প্রাদেশিক ফুল।

বাংলাদেশ সময়: ২২:৫১:২২   ১৬৬৭ বার পঠিত   #  #  #  #  #  #