মঙ্গলবার, ২৭ নভেম্বর ২০১৮

“রঙ্গে ভরা আমার ব্যাংকিং জীবন “-জালাল উদদীন মাহমুদ

Home Page » বিনোদন » “রঙ্গে ভরা আমার ব্যাংকিং জীবন “-জালাল উদদীন মাহমুদ
মঙ্গলবার, ২৭ নভেম্বর ২০১৮



 

জালাল উদদীন মাহমুদ

৩৬ তম কিস্তি—
সেনানিবাস শাখা ,বগুড়া-৪র্থ পর্ব।

পরবর্তীতে আমি গালিগালজ নিয়ে অবশ্য বিস্তর পড়াশোনা করার চেষ্টা করেছি। কোথায় যেন লেখা দেখেছিলাম -কোন ভাষা কত সমৃদ্ধ তা বোঝা যায় তার গালিসম্ভার দেখে। আজ মনে হচ্ছে বাংলা ভাষার গালিসম্ভার অনেক সমৃদ্ধ কিন্তু গালির বৈশিষ্ট্য , প্রকৃতি বিবর্তনের ইতিহাস বা সামাজিক প্রভাব , আমরা তেমন জানি না। জানতে চেষ্টা করলাম।
আসলে গালাগাল এমন একটি সার্বজনীন বিষয় যার প্রচলন প্রত্যেক ভাষাতেই রয়েছে। ভারতে আসার পর বৃটিশরা সবার আগে চোখা চোখা হিন্দি গালিগালাজগুলি শিখেছিল। বাঙালীদেরও সে সময় ইংরেজী গালিগালাজে অভ্যস্থ হতে শুরু হয়। এখান থেকে প্রমাণ হয় যে কলেরা - বসন্তের মত গালিগালাজ বিষয়টিও সংক্রামক। তাহলে ভাল ব্যবহার সংক্রামক হয়না কেন ? ঐ যে রোগই সংক্রামক স্বাস্থ্য নয়।
সারা পৃথিবীতে গালিগালাজের ৩ টি ধারা দেখা যায়। প্রধান ধারাটি হলো সম্বন্ধবাচক। এতে যাকে গালাগালি দেওয়া হচ্ছে তার সঙ্গে বৈবাহিকসূত্রে বিভিন্ন সম্পর্ক পাতানো হয়, পিতা, মাতা অথবা ভগিনী সূত্রে। আর একটি ধারা হচ্ছে মানুষের সাথে প্রাণীর তুলনা করা। অন্য ধারাটি ধর্মীয় অনুষঙ্গ নিয়ে। এক সময় হিন্দু ও মুসলমানেরা একে অন্যের জন্য নেড়ে, মালাউন ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করতো , যার প্রচলন এখন আর এ দেশে নাই বললেই চলে।
তাবৎ পৃথিবীর সব গালাগালিতেই ৪ টি বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। প্রথমতঃ গালাগালিতে গভীর লিঙ্গবৈষম্য বিদ্যমান। দ্বিতীয়তঃ গালাগালির সময় জন্মের উৎস সন্ধান করা হয় এবং তৃতীয়তঃ নারীঘটিত বিষয় সেখানে অগ্রাধিকার পায়। উদাহরণ দিয়ে এ ৩ টি বৈশিষ্ট্য বুঝিয়ে বলার লোভ আমাকে সংবরণ করতে হল।চতুর্থতঃ গালাগালির একটি দার্শনিক মূল্য আছে। এতে রাগ , ক্ষোভ ,কষ্ট ও লাঞ্ছনা প্রশমন হয়। একাধিক মার্কিন গবেষণায় প্রমাণ মিলেছে- মানসিক চাপ, অবসাদ, মাত্রাতিরিক্ত উত্তেজনা কমানোর ক্ষেত্রে গালিগালাজ খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। এই ধারণার সাথে ব্রিটিশ গবেষক এবং মনোবিজ্ঞানীরাও একমত। মার্কিন গবেষক এবং মনোবিজ্ঞানীদের মতে, মাত্রাতিরিক্ত মানসিক চাপ, অবসাদ, ক্ষোভ কাটাতে প্রয়োজনে একান্তে গালিগালাজ দেওয়া ভালো। তবে স্থান-কাল-পাত্র সম্পর্কে অবশ্যই খেয়াল রাখা দরকার ।
গালি না থাকলে সবচেয়ে বড় যে ক্ষতিটা হত তা হল, মানুষে মানুষে দৈহিক হাঙ্গামা বেড়ে যেত বহুগুণে। মানুষ ভাষা বা অভিব্যক্তির মধ্য দিয়ে রাগ মেটাতে না পেরে একে অন্যের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তো। হারামখোর, শুয়োরের বাচ্চা, কুত্তার বাচ্চা বলে যে কাজটি অনায়াসে হয়ে যায়, সেই কাজটি হতে হয়তো মারামারির সৃষ্টি হত। বিশৃঙ্খলা বেড়ে যেত কয়েকগুণে। তবে, অতিরিক্ত কোনও কিছুই ভালো নয়, অতিরিক্ত গালিগালাজ সমাজে ইমেজ নষ্ট করতে পারে ৷ অনেকে বলেন হাসিখুশি ব্যক্তিরা কখনও গালি দেয় না। অস্তিত্ব সংকটে ভোগা পরাজিত ব্যক্তিরাই কেবল হতাশ হয়ে গালিগালাজ করে।

আমাদের দেশে গালি হিসাবে যে শব্দগুলো ব্যবহার করা হয় তার অধিকাংশই এসেছে প্রাণী বা নিম্নশ্রেণীর জীব থেকে, যেমন- গাধা,বান্দর ‘কুত্তা, ছাগল, পাঠা, শুয়োর, ছুঁচো, পেঁচা, মষ (মহিষ) এবং ক্যান্টনমেন্ট শাখার ম্যানেজারের পছন্দের বলদ ইত্যাদি; কিছু এসেছে নেতিবাচক শব্দ থেকে, যেমন-মূর্খ, বোকা, হাঁদা, ফালতু, রোগা,পচা, মরণ, চাষা ইত্যাদি; কিছু এসেছে রোগের নাম এবং শারীরিক ত্রুটি থেকে, যেমন- পাগল, মৃগী, কানা, খুড়া, কালা ,জিনে ধরা ইত্যাদি; কিছু এসেছে নিম্নশ্রেণীর পেশা থেকে, যেমন- ডাকাত,চোর, মুটে, কুলি, মুচি, মেথর ইত্যাদি; কিছু এসেছে সম্পর্ক থেকে, যেমন-,শ্যালা, শালী, সতীন, মাগী, ভাতার ইত্যাদি; বিদেশী শব্দ থেকেও গালি এসেছে, যেমন-শয়তান, কাফের , হারাম, মাদার-ফাকার, হেল, বাস্টার্ড, ফ্রড; কিছু গালি এসেছে ইতিহাস এবং পুরাণের পাতা থেকে, যেমন- হিটলার, মীরজাফর, রাজাকার, নমরুদ, ফেরাউন ইত্যাদি। মানুষের অঙ্গ নিয়ে সৃষ্ট গালিগালাজের উদাহরণ দেয়া থেকে বিরত থাকলাম।
তবে যাদের আরো গালি শেখার শখ আছে তারা এ সংক্রান্ত অভিধান দেখতে পারেন। দৈনন্দিন জীবনের ব্যবহৃত বা প্রচলিত গালি বা slang শব্দ নিয়েও যে অভিধান হতে পারে—এ ধারণা নতুন নয়। ষোড়শ শতকে ইংরেজি ভাষায় slang সংকলিত হয়েছে । এছাড়া ফরাসি, জার্মান প্রভৃতি ভাষায় রয়েছে এ বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ অভিধান। বাংলা ভাষায় এরুপ অভিধান ছিল না । কলকাতা থেকে slang নিয়ে যে অভিধানটি প্রকাশিত—তাতে এসেছে কেবল কলকাতা কেন্দ্রিক slang শব্দগুলো।

অবশেষে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কঠিন এ কাজটি সম্পন্ন করেছেন লেখক ও সম্পাদক আবদুল মান্নান স্বপন। তাঁর সম্পাদনা ও সংকলনে ২০১৪ সালে ঐতিহ্য থেকে প্রকাশিত হয়েছে গালি অভিধান। আগ্রহীরা প্রয়োগের জন্য নয় কেবল মাত্র অধ্যায়নের জন্য তা সংগ্রহ করতে পারেন। ইসলাম ধর্ম গালিগালাজ অনুমোদন করেনা।
সাহিত্যেও গালির ব্যবহার বিশেষভাবে লক্ষণীয়। বাংলাসাহিত্যে গালিগালাজের জন্য অভিযুক্ত করা হয় তসলিমা নাসরিন, হুমায়ূন আজাদসহ অনেককেই।(ক্রমশঃ)

বাংলাদেশ সময়: ১৭:৪৬:৪১   ৫৩৪ বার পঠিত   #  #  #  #  #  #