বৃহস্পতিবার, ২০ জুন ২০১৩

ভিসি-শিক্ষক স্নায়ু যুদ্ধে স্থবির কুয়েট

Home Page » শিক্ষাঙ্গন » ভিসি-শিক্ষক স্নায়ু যুদ্ধে স্থবির কুয়েট
বৃহস্পতিবার, ২০ জুন ২০১৩



khulna-kuet-bg20130620041731.jpgবঙ্গ- নিউজ ডটকমঃ  ভিসি ও শিক্ষক সমিতির স্নায়ু যুদ্ধে স্থবির হয়ে পড়েছে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষা কার্যক্রম। উচ্ছৃঙ্খল ছাত্রদের হাতে দফায় দফায় শিক্ষকদের লাঞ্ছিত হওয়া ও ব্লগ-ফেসবুকে অসামাজিক মন্তব্যের প্রতিবাদে গত ৬ মে থেকে শিক্ষকরা ক্লাস বর্জন ও পরীক্ষা নেওয়া থেকে বিরত রয়েছেন।ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে কুয়েট প্রশাসন ব্যর্থ হয়েছে বলে অভিযোগ আন্দোলনরত শিক্ষকদের। তাই এসব ঘটনার প্রতিকার না পাওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

এদিকে এ ঘটনায় প্রশাসন কোনো সমাধান না করায় শিক্ষক সমিতির মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। বন্ধ রয়েছে ক্লাস ও পরীক্ষা। যার খেসারত দিতে হচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের।

জানা যায়, কুয়েট ভিসি প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর আওয়ামীপন্থি ও কুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ মাসুদ বিএনপিপন্থি হওয়ায় তাদের মধ্যে স্নায়ু যুদ্ধ বিরাজমান। তাই কোনো পক্ষই অপরকে ছাড় দিতে নারাজ। কিন্তু তাদের মধ্যকার এহেন অবস্থার মধ্যে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বেড়ে ডাচ্ছে সেশন জট।

বঙ্গ- নিউজ ডটকম বিশেষ অনুসন্ধানে জানা যায়, চলতি বছরের এপ্রিল-মে মাসে পুরাকৌশল বিভাগের একাধিক শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্লগে ও ফেসবুকে অসামাজিক মন্তব্য, যন্ত্রকৌশল বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের বিরুদ্ধে ক্যাম্পাসে অসৌজন্যমূলক স্লোগান এবং তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক্স বিভাগের এক শিক্ষকের সাইকেলে লাথি মারার প্রতিবাদে ৬ মে থেকে শিক্ষক সমিতির এক সভায় ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

একটি বিশেষ সূত্রে জানা যায়, এ ঘটনায় জড়িত বিভিন্ন বিভাগের ১৯ জন শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটি বহিষ্কার, বিভিন্ন মেয়াদে সাজা, আর্থিক দণ্ড ও সতর্ক করে দেয়। এদের মধ্যে ৫ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করা হয়। পরবর্তীতে ওই ৫ শিক্ষার্থী উচ্চ আদালতে রিট করে। আদালত তাদের বহিষ্কারাদেশ ৬ মাসের জন্য স্থগিত করেন।

উচ্চ আদালত থেকে বহিষ্কারাদেশের ওপর স্থগিতাদেশ নিয়ে এসে পরীক্ষায় অংশ নেন ওই শিক্ষার্থীরা। যা কয়েকজন শিক্ষক মেনে নিতে পারেননি। পরে ওই ছাত্রদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে হাইকোর্টে আইনজীবী নিয়োগ করার দাবিতে আন্দোলন করেন।

সাধারণ কয়েকজন ছাত্র বাংলানিউজকে জানান, এ ন্যাক্কারজনক ঘটনায় জড়িতদের বিচার চায় তারা। সেসঙ্গে তারা অভিযোগ করে জানান, এহেন অবস্থার কারণে যে তাদের ক্ষতি হচ্ছে এদিকে কোনো পক্ষেরই কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।

তবে একটি পক্ষ দাবি করছে, কুয়েট প্রশাসন শিক্ষক অবমাননার কোনো সুরাহা করছে না।

এদিকে বৃহস্পতিবারও কুয়েট শিক্ষক সমিতি প্রশাসনিক ভবনের সামনে নিয়মিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে ২ ঘণ্টা অবস্থান ধর্মঘট পালন করেছে। অপর দিকে সাধারণ শিক্ষার্থীদেরও ক্লাস চালুর দাবিতে ক্যাম্পাসে ১১টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত অবস্থান ধর্মঘট পালন করতে দেখা গেছে।

এ বিষয়ে কুয়েট ভিসি প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর বঙ্গ- নিউজ ডটকম  বলেন, “আন্দোলনরত শিক্ষকদের সঙ্গে আমার নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য সব প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।”

তিনি জানান, আদালতের রায়ের ওপর কারো কোনো হাত নেই।

এ সময় তিনি জানান, আন্দোলনকারী শিক্ষক সমিতির তিন নেতা জিয়া পরিষদের সদস্য।

কুয়েট শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. ফারুক হোসেন বঙ্গ- নিউজ ডটকম  বলেন, “এপ্রিল-মে মাসে পুরাকৌশল বিভাগের একাধিক শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্লগে ও ফেসবুকে অসামাজিক মন্তব্য, যন্ত্রকৌশল বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের বিরুদ্ধে ক্যাম্পাসে অসৌজন্যমূলক স্লোগান এবং তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক্স বিভাগের এক শিক্ষকের সাইকেলে লাথি দেওয়ার প্রতিবাদে আমরা এ আন্দোলন শুরু করেছি। তবে ৬ মে থেকে আন্দোলন শুরু হলেও মাঝে বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই সপ্তাহ গ্রীষ্মকালীন ছুটি ছিলো।”

তিনি আরও জানান, প্রথম পর্যায় কুয়েটের ঐতিহ্যগত সম্মানের কারণে বিষয়টি সংবাদমাধ্যমকে জানানো হয়নি। তবে ন্যায় বিচার না পাওয়া পর্যন্ত তারা এ আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

কুয়েটের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক প্রফেসর ড. শিবেন্দ্র শেখর শিকদার বঙ্গ- নিউজ ডটকম   জানান, একটি ভ্রান্ত জিনিসকে নিয়ে একদল শিক্ষক এ আন্দোলন করছেন। এর কোনো যুক্তি নেই।

তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় কোনো কমিউনিটি হতে পারে না।”

এসময় তিনি শিক্ষার্থীদের স্বার্থে আন্দোলনরত শিক্ষকদের ক্লাসে ফিরে আসার আহ্বান জানান।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির খুলনা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বাবু বঙ্গ- নিউজ ডটকম  বলেন, “প্রশাসনের উদাসীনতার কারণে আজ কুয়েটে অচলাবস্থা। রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে শিক্ষার্থীদের স্বার্থে এর অবসান হওয়া প্রয়োজন।

বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ-উজ-জামান বাংলানিউজকে বলেন, “শিক্ষার্থীরা যদি ভুল করে থাকে অবশ্যই সেটি দুঃখজনক। তবে শিক্ষকদের অভিভাবক হিসেবে দায়িত্বশীল আচরণ করা উচিত। কোনো ক্রমেই ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলন করা ঠিক নয়।

তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ও শিক্ষার্থীদের স্বার্থে এর অবসান হওয়া প্রয়োজন।”

বাংলাদেশ সময়: ১৮:০৪:১৯   ৪৬৮ বার পঠিত