সোমবার, ৫ নভেম্বর ২০১৮

“রঙ্গে ভরা আমার ব্যাংকিং জীবন “-জালাল উদদীন মাহমুদ

Home Page » ফিচার » “রঙ্গে ভরা আমার ব্যাংকিং জীবন “-জালাল উদদীন মাহমুদ
সোমবার, ৫ নভেম্বর ২০১৮



 

জালাল উদদীন মাহমুদ

৩১ তম কিস্তি—
তালোড়া শাখায় ১১ মাস- ২৫ তম পর্ব।

প্রশ্নঃ মাড়োয়ারীরা হিন্দু ও জৈন ধর্মের অনুসারী । মুর্শিদাবাদের তৎকালীন শেঠরা ছিলেন জৈন ধর্মাবলম্বী। জৈন ধর্মমত সম্পর্কে কি জানা আছে?

উত্তরঃ জৈনধর্ম (Jain) প্রাচীন ভারতে প্রবর্তিত একটি ধর্মমত। ভারতের প্রধান ধর্মগুলির অন্যতম জৈনধর্ম ভারতের কোনো কোনো অংশে ধর্ম হিসেবে এখনও টিকে থাকলেও এদেশে এর অনুসারীদের দেখতে পাওয়া যায় না বললেই চলে। এখানে উল্লেখযোগ্য যে, সাত শতকের চীনা তীর্থযাত্রী হিউয়েন-সাং পুন্ড্রবর্ধন (উত্তরবঙ্গ) ও সমতট এ (দক্ষিণ-পূর্ববঙ্গ) বহুসংখ্যক দিগম্বর জৈন প্রচারকদের দেখতে পান। গবেষকরা কিন্তু বলে থাকেন খ্রিস্টপূর্ব চার-তিন শতকের মধ্যে সমগ্র বাংলা জৈন মতবাদ প্রচারকদের প্রভাবাধীন হয়ে পড়েছিল । তবে ঐতিহাসিক যুগের গোড়ার দিকে জৈনধর্ম বাংলায় প্রচলিত থাকলেও এটি কখনই অন্যান্য অঞ্চলের মতো এদেশে তেমন বিস্তার লাভ করে নি। বর্তমানে বিশ্বের নানা দেশে এই ধর্মমতাবলম্বীদের দেখা যায়। জৈনধর্মের মূল বক্তব্য হল সকল জীবের প্রতি শান্তি ও অহিংসার পথ গ্রহণ। আধুনিক বিশ্বে জৈন ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অনেক কম হলেও এই ধর্ম বেশ প্রভাবশালী। পশ্চিম ইউরোপ, আমেরিকা, দূরপ্রাচ্য, অস্ট্রেলিয়া ও বিশ্বের অন্যত্রও অভিবাসী জৈনদের দেখা মেলে.।

জ্ঞান চর্চা করতে ধর্মে কোন নিষেধ নাই। বরং উৎসাহিত করা হয়েছে। আমরা অতীত জানার চেষ্টা করবো , সেখান থেকে যা ভাল তা গ্রহন করবো যা খারাপ তা বর্জন করবো। এসব মাথায় রেখে উপরের লেখাগুলি লেখার চেষ্টা করেছি। বাংলার অতীত ব্যবসার ইতিহাস মাড়োয়ারীদের ছাড়া লেখা সম্ভব নয়।এখনও অনেক মাড়োয়ারী পরিবার এ দেশে আছে। তাছাড়া মাড়োয়ারীরা আমাদের দেশে এখনও যথেষ্ট প্রাসঙ্গিক। শেয়ার বাজারে ধস নামলে ,কোরবানীর পশুর চামড়ার দাম কমে গেলে কেন জানি না তাদের নাম চলে আসে। আমরা যখন ভারতে বা কলকাতায় যাই তখন তাদের নাম শুনি। আচ্ছা সে যুগের কলকাতার কথাতো শুনলাম , এখনকার কলকাতার ব্যবসা বাণিজ্যের অবস্থা কি ? মাঝে মাঝেই কলকাতায় যায় আমার এমন এক বন্ধুকে কাছে পেয়ে সেদিন বিষয়টি জিজ্ঞেস করলাম । খোঁজ খবর নিয়ে জানাবেন বলেছিল সেদিন। আজ দেখি এক টুকরা কাগজ পাঠায়েছে । তাতে লেখা-
কলকাতা বাঙালিদের শহর ৷ কিন্তু এখন কলকাতাতেই বাঙালিকে খুঁজে পাওয়া দায়। প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৩-৪ জন বাঙালি এখানে। বেশিরভাগই রুটি-রুজির খোঁজে অন্য রাজ্যে। আর একদা ব্যবসা বিমুখ বাঙালির শহর কলকাতায় এখন মাড়ওয়াড়িদের আধিপত্য।
কলকাতায় জনবসতির একটা বড় অংশই এখন মাড়ওয়াড়ি সম্প্রদায়ের। স্বাধীনতার অনেক আগের থেকেই ব্যবসার কাজেই হোক বা অন্য কোনও কারণে, এই শহরের বিভিন্ন প্রান্তে বসতি গড়েছেন মুম্বাই, গুজরাট বা রাজস্থান থেকে আসা অসংখ্য মাড়ওয়াড়ি৷ দেশের বিভিন্ন রাজ্যের মতো কলকাতাতেও বরাবরই মাড়ওয়াড়িদের ব্যবসায়িক প্রভাব লক্ষ্য করা গিয়েছে ৷ কিন্তু কলকাতায় এর হার একটু বেশি।
কাগজটা যার মাধ্যমে পাঠায়েছে সে ঠিকমত ভাঁজ করতে পারে নাই। দুমড়িয়ে মুচড়িয়ে ভাঁজ করেছে। আর বন্ধুটির হাতের লেখা আমার মতই কিছুটা দুর্বোধ্য। তবু যেটুকু পাঠোদ্ধার করতে পারলাম তাই লিখলাম।
তবে আমাদের দেশে বর্তমানে মাড়োয়ারিদের সেই রমরমা অবস্থা আর নাই। ১৯২৯ সালের মহামন্দা এবং ১৯৪৭ সালের ভারত বিভাগের ফলে বিপুলসংখ্যক মাড়োয়ারি তৎকালীন পূর্ব বাংলা ছেড়ে চলে যায়; তবে বেশ কিছুসংখ্যক মাড়োয়ারি এখানে থেকে যায় এবং প্রধানত বস্ত্র ও পাট ব্যবসা চালিয়ে যেতে থাকে। পরবর্তীতে ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধ এবং ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ এর ফলে মাড়োয়ারি সম্প্রদায় বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যায়। জানা যায় বর্তমানে প্রায় ৭০০ মাড়োয়ারি বাংলাদেশে বসবাস করছে। তাই বাংলাদেশে এখনো মাড়োয়ারিদের অস্তিত্ব আছে। তবে বর্তমানে তাদের বসবাস মূলত দেশের উত্তরাঞ্চলে। জয়পুরহাটে রয়েছে সবচেয়ে বেশি মাড়োয়ারি পরিবার। এছাড়া নাটোর, কুষ্টিয়া, ভেড়ামারা, চুয়াডাঙ্গা, আলমডাঙ্গা, , ঈশ্বরদী,ও সৈয়দপুরে বেশকিছু মাড়োয়ারি পরিবার রয়েছে। রাজশাহী, ফরিদপুরে রয়েছে হাতেগোনা কয়েকটি পরিবার। বাংলাদেশের পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ দেশে বসবাসরত মাড়োয়ারিদের বিভিন্ন সংকটের কথা জানা যায়। সময়ে সময়ে মাড়োয়ারিদের অধিকাংশই এ দেশ ছেড়েছেন। যারা আছেন তাদের আর্থিক অবস্থাও আগের মতো আর সচ্ছল নাই। অবশ্য অনেকে এখনো এ দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যে ভালো অবস্থানে আছেন। তরে এসব মাড়োয়ারি পরিবারে নতুন ধরনের এক সংকট দেখা দিয়েছে মর্মে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। উনারা নিজেদের সম্প্রদায়ের বাইরে বিয়ে করতে পারেন না। বর্তমানে পরিবারগুলোয় মেয়েদের সংখ্যা নাকি তাদের ছেলেদের তুলনায় অনেক কম। ফলে অনেক মাড়োয়ারি বিয়ে করতে পারছেন না। এতে নানাবিধ সামাজিক-পারিবারিক সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। হঠাৎ নজরুলের একটি গানের প্রথম লাইনটি মনে পড়লো-
”চিরদিন কাহারও সমান নাহি যায় “

মাড়োয়ারী পর্ব শেষ । কিন্তু সেই কৌতুক গুলো তো দেয়াই হয়নি। নীচে দিলাম -
১.এক মাড়োয়ারি এক গুজরাটির কাছ থেকে একটি কুঁয়ো (কূপ/ইদিরা) কিনল। ‘ স্ট্যাম্পে লেখাপড়া’ হয়ে যাওয়ার পরের দিন গুজরাটি মাড়োয়ারি-কে বলল, ‘আমি আপনার কাছে কেবল কুঁয়োটাই বিক্রী করেছি। ওটার পানি ব্যবহার করতে হলে আলাদা ভাবে পানির দাম দিতে হবে। কারন পানি আমি বিক্রী করিনি।’ মারোয়াড়ীটি তখন মুচকি হাসি হেসে বললো বলল, কুঁয়োতে যত পানি আছে তা এক্ষুনি তুলে নিয়ে যান। না হলে কুঁয়োতে পানি রাখার জন্য আপনাকে রোজ ভাড়া দিতে হবে।’
২.এক মাড়োয়ারী কলকাতায় এসে এক বাঙালীকে জিজ্ঞেস করলো – আচ্ছা তোমরা যে সব সময় রবীন্দ্র নাথ রবীন্দ্র নাথ করো এই রবীন্দ্র নাথটা কে ? বাঙালী বাবু বললো কি আশ্চার্য ! তোমরা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে চেন না ? তিনি নোবেল পুরুষ্কার পেয়েছিলেন । কতটাকার পুরুষ্কার ?- মাড়োয়ারী জিজ্ঞেস করলেন। টাকার অংক শুনে মাড়োয়ারীটি তার পাশে বসা ছেলেকে বলে বসল-…আরে দেখ দেখ ! মাত্র একটা ,দুটো কলম আর কয়েক দিস্তা কাগজ ক্যাপিটাল করে ঠাকুর কত বড় ব্যবসা বানিয়েছিলেন। কে বলে বাঙালদের ব্যবসার বুদ্ধি নাই!
৩.এক মাড়োয়ারী বাবু মৃত্যু শয্যায়। তিন পুত্র ভিন্ন এ জগত সংসারে তার আর কেহ নাই। অনেকক্ষন ধরে তিনি নির্জীবের মতো চোখ বন্ধ করে আছেন। চোখ বন্ধ অবস্থাতেই তিনি একে একে তার তিন পুত্রকে ডাকলেন-
-মিন্টু কোথায় ?
-এইতো বাবা আপনার মাথা ধরে আছি।
-পিন্টু কোথায়?
-এইতো বাবা আপনার হাত ধরে আছি।
-সেন্টু কোথায়?
- এইতো বাবা আপনার পা ধরে আছি।
মাড়োয়ারী উত্তেজিত হয়ে বলে উঠলো-
সবাই যদি এখানে তবে দোকানে কে? যা শীঘ্রী দোকানে যা। (ক্রমশঃ)

বাংলাদেশ সময়: ২২:৩৯:৩৮   ৫১০ বার পঠিত   #  #  #  #  #  #