বুধবার, ৩১ অক্টোবর ২০১৮

মাড়োয়ারি: রাজস্থানের মরুভূমি থেকে বাংলায় তথা পুরো ভারতবর্ষে

Home Page » এক্সক্লুসিভ » মাড়োয়ারি: রাজস্থানের মরুভূমি থেকে বাংলায় তথা পুরো ভারতবর্ষে
বুধবার, ৩১ অক্টোবর ২০১৮



 

ফাইল ছবি    

স্বপন চক্রবর্তী,বঙ্গ-নিউজ:  রাজস্থানের মরুভূমিতে বসবাসকারী একটি ছোট্ট গোষ্ঠী উনিশ শতকে বাংলা থেকে শুরু করে পুরো ভারতবর্ষে ছড়িয়ে পড়ে; গড়ে তোলে অসংখ্য গ্রাম, নগর। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হতে হতে এ গোষ্ঠী পুরো ভারতবর্ষের স্থলপথের বাণিজ্যের বেশির ভাগ নিয়ন্ত্রণ শুরু করে। ঝুঁকি নেয়ার ক্ষুধা ছিল তাদের, তারা মাড়োয়ারি। পশ্চিম বাংলায় এদের ডাকা হয় ‘মেরো’ নামে আর পূর্ব বাংলা বা বর্তমান বাংলাদেশে ‘মাউরা’। বাংলাদেশের মফস্বলে এখনো মাউরা শব্দটি একটি গালির মতো ব্যবহার করা হয়।    কোনো দেশের অর্থনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শক্তি তার উদ্যোক্তারা। তারা পুঁজি, শ্রম, জমিকে প্রযুক্তির সঙ্গে ব্যবহার করার ঝুঁকি নেন। ইউরোপে শিল্প বিপ্লবের পেছনে এ উদ্যোক্তাদের ভূমিকা অপরিহার্য উপাদান হিসেবে কাজ করেছিল। ভারতবর্ষে শিল্প বিপ্লব না হওয়ার কারণ খুঁজতে গিয়ে পণ্ডিতদের অনেকে ইউরোপের মতো উদ্যোক্তা না থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। তবে মাড়োয়ারি, জৈন ও বানিয়ারা এ উপমহাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের বিকাশের ঘাটতি পূরণে বিরাট ভূমিকা পালন করেছেন।   ভারতবর্ষের ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, বাংলাসহ প্রায় সর্বত্রই মাড়োয়ারিরা বর্ণবাদী আচরণের শিকার হয়েছেন। এ নিয়ে ভারতীয় লেখক ও বুদ্ধিজীবী গুরুচরণ দাস তার নিজের কিছু অভিজ্ঞতা উল্লেখ করেছেন। তিনি তার ছোটবেলা থেকে মাড়োয়ারিদের নিয়ে শোনা নানা মিথের কথা বলেছেন। তিনি লিখেছেন, ছোটবেলা থেকেই তিনি এটা জেনে বড় হয়েছেন যে, মাড়োয়ারি মানে গ্রাম বা শহরের কোণে ছোট এক শয়তান দোকানদার। এরা চড়া সুদে মানুষকে ঋণ দেয় এবং টাকা বা সুদ দিতে না পরলে মানুষকে হেনস্তা করে; বিধবাদের জমি ও গহনা কেড়ে নেয়। এ ছিল মাড়োয়ারিদের প্রতি সাধারণ মানুষের প্রচলিত ধারণা। পরবর্তী জীবনে গুরুচরণের এ দৃষ্টিভঙ্গি বদলে গিয়েছিল মুম্বাইয়ে একদল মাড়োয়ারি ব্যবসায়ীর সঙ্গে মিশে। তাদের বাণিজ্য ও ব্যবসা পরিচালনার দক্ষতা ও প্রতিভাকে অন্যরা একদিকে যেমন সম্মান করত, তেমনি আবার ভয়ও পেত।

 

মাড়োয়ারিরা তাদের প্রাথমিককালে সবচেয়ে বড় সাফল্য পেয়েছিলেন বাংলায়। বাংলার মানুষ ব্যবসা-বাণিজ্যের চেয়ে কৃষিকাজ, শিল্প-সাহিত্য নিয়েই বেশি ব্যস্ত ছিল। বাংলার এই শূন্যস্থানে মাড়োয়ারিরা প্রবেশ করেছিলেন। এবং সফলতা লাভ করেছিলেন। মাড়োয়ারিদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ প্রবল, তাই নিজেদের উত্স ছেড়ে বহুশত মাইল দূরে গিয়েও তারা সফল হতে পেরেছেন।

সফল বণিকরা আশপাশের মানুষের হিংসার শিকার হতেন এবং বলা যায় এখনো হন। মাড়োয়ারিদের ভাগ্যেও এ হিংসা জুটেছিল। অর্থনৈতিক উন্নয়নবিষয়ক পরামর্শদাতা ও লেখক  টমাস এ. টিমবার্গ একটি ঘটনার উল্লেখ করেছেন, যা থেকে মাড়োয়ারিদের সফলতার একটি সূত্র জানা যায় এবং একই সঙ্গে তাদের প্রতি বাঙালিদের ঘৃণারও নিদর্শন স্পষ্ট হয়ে ওঠে। গত শতকের সত্তরের দশক, কলকাতায় তখন নকশাল আন্দোলনের তুমুল দাপট। ১৯৭০ সালে টিমবার্গ কিছুদিন কলকাতার একটি বোর্ডিং হাউজে ছিলেন। সেখানে তিনি একজন বাঙালি ও একজন মাড়োয়ারি ব্যবসায়ীকে দেখেছিলেন। সেই মাড়োয়ারি ছিলেন একজন ইন্স্যুরেন্স এজেন্ট; তিনি কর্মোদ্যমী, হাসিখুশি, যিনি সবাইকে সঙ্গে নিয়ে চলতে ভালোবাসেন। তার এসব বৈশিষ্ট্য প্রতিবেশী বাঙালির মোটেই পছন্দ ছিল না। একদিন সকালে বাঙালি ভদ্রলোক রেগেমেগে মাড়োয়ারি ব্যবসায়ীকে বললেন, ‘তোমার মতো মাড়োয়ারিকে একদিন নকশালরা নিশ্চিতভাবে দেখে নেবে!’ মাড়োয়ারি ভদ্রলোক তখন শান্তস্বরে জবাব দিলেন, ‘তেমনটা হওয়ার আগে আমরাই গিয়ে নকশালদের সঙ্গে যোগ দেব।’ মাড়োয়ারির এ জবাবে তাদের সম্প্রদায়ের নমনীয় বা মানিয়ে চলার বৈশিষ্ট্যটি প্রকাশ পায়। দুনিয়ার বেশির ভাগ ব্যবসায়ীর মধ্যেই এ বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। মাড়োয়ারিদের সাফল্যের পেছনে তাদের এ নমনীয় মনোভাব ও পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে চলার ক্ষমতা বিরাট ভূমিকা রেখেছে।  ছবি সংগৃহীত

 ব্যবসায়ী সম্প্রদায় এবং কঠোরভাবে রীতি, রেওয়াজ মেনে চললেও মাড়োয়ারিরা বন্ধুবত্সল। এরা তাদের গ্রাহক ও ঘনিষ্ঠদের খুশি রাখতে চান। তারা গলা চড়িয়ে কথা বলেন না। মাড়োয়ারিরা তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের প্রতি যত্নশীল, বিশেষত ভালো কর্মীকে তারা সবসময় সন্তুষ্ট রাখতে পছন্দ করেন।

ঝুঁকিগ্রহীতাকে বাণিজ্যের দুনিয়া পুরস্কৃত করে। আর মাড়োয়ারিদের ঝুঁকি নেয়ার ক্ষমতাও চমকে দেয়ার মতো।

মাড়োয়ারিদের মূল আবাস রাজস্থান। তাদের মধ্যে হিন্দু সমাজের বর্ণপ্রথার চর্চা কঠোর নয়। তারা মূলত ভৌগোলিক ও ব্যবসার সঙ্গে জড়িত একটি সম্প্রদায়ের পরিচয় নিয়েই নিজেদের আত্মপরিচয় তৈরি করেছেন। ভারতের বিখ্যাত শিল্প পরিবার বিড়লারা মাড়োয়ারি। কে. কে. বিড়লা লিখেছেন, ‘আমাদের জন্ম ব্যবসায়ী পরিবারে। ফিন্যান্স আমাদের রক্তে, ঠিক যেমন বীরত্ব থাকে মারাঠা, শিখ, রাজপুত, গোর্খা বা জাটদের রক্তে।’

মাড়োয়ারিদের মধ্যে শিক্ষার হার উচ্চ। ব্যবসার জন্য হিসাব ও পরিকল্পনার দরকার হয়। আর তাই শিক্ষার প্রয়োজন। মাড়োয়ারিরাও তাই সবসময় শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়েছেন।

রাজস্থানের প্রায় সব ব্যবসায়ীই মাড়োয়ারি নামে পরিচিত হয়ে ওঠেন। রাজস্থান নিয়ে অনবদ্য কাজ করা উনিশ শতকের শুরুর দিকের ইংরেজ ঐতিহাসিক জেমস টড রাজস্থানে ১২৮টি ব্যবসায়ী সম্প্রদায় খুঁজে পেয়েছিলেন। এর মধ্যে বেশির ভাগ সম্প্রদায়েরই রাজস্থানের বাইরে শাখা-প্রশাখা ছিল। এর মধ্যে আগারওয়াল, মহেশ্বরী, ওসওয়াল ছিল সবচেয়ে প্রভাবশালী। জেমস টড লিখেছেন, ‘ভারতে দশজন ব্যাংকার বা ব্যবসাসংক্রান্ত ব্যক্তির নয়জনই মরু দেশের বাসিন্দা (মাড়োয়ার) এবং এরা মূলত জৈন ধর্মাবলম্বী।’ উনিশ শতকের একেবারে শুরুর দিকে ভারতবর্ষের ব্যবসা-বাণিজ্যে মাড়োয়ারিদের আধিপত্য শুরু হয়। আগারওয়াল সম্প্রদায়ই তখন অন্য সবার চেয়ে এগিয়ে ছিল।

মাড়োয়ারি নামটি উত্তর ভারত থেকে আসা যেকোনো ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রেই ব্যবহার হতো, যদিও এদের অনেকেই মাড়োয়ারের বাসিন্দা নন। মাড়োয়ারিরা ভারতে ছড়িয়ে পড়ার কয়েক শতক আগে থেকেই উত্তর ভারতের বাজার অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করত। মোগলদের হাত ধরে এরা পূর্ব প্রান্তে অগ্রসর হয় এবং গঙ্গা-যমুনার তীরে ও বাংলায় তাদের ব্যবসাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে। এদের মধ্যে বাংলায় জগত্ শেঠ কিংবদন্তি হয়ে আছেন।

উনিশ শতকে মাড়োয়ারিরা উত্তর ও পূর্ব ভারতে তাদের বিস্তৃত অবস্থান গড়ে তোলে। তারা এসব অঞ্চলের অন্য ব্যবসায়ী গোষ্ঠীগুলোকে প্রতিযোগিতায় হারিয়ে দেয়। বাঙালি ব্যবসায়ীরাও পিছু হটেন। একই সঙ্গে এই মাড়োয়ারিদের হাত ধরে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে হিন্দি ভাষার জাগরণ ঘটে এবং একই সঙ্গে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনও চাঙ্গা হয়। তাদের অর্থনৈতিক প্রভাব দিয়ে সমাজের আরো অনেক ক্ষেত্রে তারা তাদের আধিপত্য তৈরি করে। বর্তমানে ভারতে মাড়োয়ারি ব্যবসায়ীদের সংখ্যা তিন লাখের বেশি নয়। গত ১৫০ বছরে হিন্দি সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষক ও লেখক হিসেবে মাড়োয়ারিরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।

ষোলো শতকে ভারতের বাজার অর্থনীতিতে বিভিন্ন পশ্চিমা শক্তির আবির্ভাব ঘটে। ওলন্দাজ, ফরাসি, পর্তুগিজ, ব্রিটিশরা ভারতের বাজারে তাদের পা রাখতে শুরু করে। এ বিদেশীরা কিছু স্থানীয় ব্যবসায়িক পার্টনার পেয়েছিল, যাদের মধ্যে অনেক মাড়োয়ারি ছিলেন। মাড়োয়ারি জগত্ শেঠরা বাজার অর্থনীতির একটি বিরাট অংশ নিয়ন্ত্রণ করতেন। মোগল সেনাবাহিনীকে অনুসরণ করে জগত্ শেঠ ও আগারওয়ালরা সপ্তদশ শতকে বাংলায় এসে হাজির হন। জগত্ শেঠসহ বাংলায় ব্যবসায় নামা অন্য মাড়োয়ারি পরিবারগুলো ছিল মূলত যোধপুরের ওসওয়াল সম্প্রদায়ের। এরা বাংলায় প্রাথমিকভাবে বসতি স্থাপন করেন বাংলার তখনকার রাজধানী মুর্শিদাবাদে এবং আশপাশের এলাকা জিয়াগঞ্জ ও আজিমগঞ্জে। এরা বাংলা ও আসামে পাট ব্যবসায় আধিপত্য তৈরি করেন। বর্ধমানের মাড়োয়ারিরা ছিল কিছুটা ওসওয়াল আর কিছুটা আগারওয়াল।

উনিশ শতক নাগাদ সেই প্রাথমিক কালের ওসওয়ালরা মুর্শিদাবাদি নামে পরিচিত হয়ে উঠল। আর অনেকেই ছিলেন জমিদার, তারা তাদের বাণিজ্যিক সম্পদকে জমিতে রূপান্তর করেছিলেন। মধ্য ভারতেও এমনটা ঘটছিল, এটা ব্রিটিশদের ভাবিয়ে তোলে। কারণ এতে ঐতিহ্যবাহী অভিজাত জমিদার পরিবারগুলো তাদের প্রভাব হারাচ্ছিল। আঠারো শতকের শেষ দিকে এবং উনিশ শতকে ব্রিটিশরা নতুন রাজস্বনীতি জারি করে। এতে পুরনো ভূস্বামী পরিবারগুলো তাদের জমি হারাতে থাকে। কারণ তারা নগদ অর্থে কর দিতে পারছিল না। ব্যবসায়ীদের হাতে তখন অনেক টাকা, তাই মাড়োয়ারিরা জমিতে বিনিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নেন। পরিস্থিতি এমন হয়ে ওঠে যে, গ্রামাঞ্চলে ব্যবসায়ীদের কৃষিজমি কেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। ঋণদাতাদের আধিপত্য খর্ব করতে ব্যবস্থা নেয়া হয়। ঋণে জর্জরিত জমিদার ও ভূস্বামীদের রক্ষা করতে ব্রিটিশরা বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করে।

জেএইচ লিটল দ্য হাউজ অব জগত্ শেঠ গ্রন্থের পুনর্মুদ্রণে ১৯৬৭ সালে এনকে সিনহা একটি ভূমিকা যোগ করেন (গ্রন্থটি প্রথম প্রকাশ হয়েছিল বেঙ্গল পাস্ট অ্যান্ড প্রেজেন্ট জার্নালে ১৯২০-২১ সালে)। এ ভূমিকায় সিনহা বাংলায় অবাঙালি ব্যবসায়ীদের আধিপত্যের জন্য দায়ী করেন বল্লাল সেনকে। বল্লাল সেন ১১৫০-৭৯ সময়ে বাংলা শাসন করেছিলেন। তিনি তার রাজ্যে সুবর্ণবণিকদের (স্বর্ণ ব্যবসায়ী) অনেক নিম্ন অবস্থানে ঠেলে দেন। কারণ তারা তাকে চাহিদামতো অর্থ দেয়নি।

জগত্ শেঠ হাউজের প্রতিষ্ঠাতা হীরানন্দ সাহু মাড়োয়ার থেকে পাটনায় এসেছিলেন ১৬৫২ খ্রিস্টাব্দে। এখানে এসে তিনি স্থানীয় শাসক, বিদেশী ব্যবসায়ীদের নগদ অর্থ ধার দেয়া শুরু করেন। তার জ্যেষ্ঠ পুত্র মানিক চাঁদ সপ্তদশ শতকে ঢাকায় চলে আসেন। ঢাকা তখন বাংলার রাজধানী ও গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক কেন্দ্র। ঢাকায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ একজন পণ্য সরবরাহকারী হয়ে ওঠেন। মুর্শিদকুলী খান যখন বাংলার রাজধানী মুর্শিদাবাদে স্থানান্তর করেন, তখন মানিক চাঁদ তার সঙ্গে সেখানে চলে যান। তার ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের শাখা হুগলি, কলকাতা, বারানসি এমনকি দিল্লিতেও ছিল। মুর্শিদকুলী খানের মালগুজার ব্যবস্থায় ইজারাদার, জোতদার, জমিদার ও তালুকদারদের কাছ থেকে জামিন গ্রহণের প্রথা চালু হয়। আঠারো শতকের শুরুর দিকে সরকারের কাছে মালগুজার মক্কেলদের পক্ষে জামিন হওয়ার কাজটি লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হয়। এ জামিনদারি ব্যবস্থায় মাড়োয়ারিরাই প্রধান সুবিধাভোগী হয়ে ওঠে। ব্রিটিশ শাসনের শুরুর দিকে জামিনি ব্যবসা সবচেয়ে জমজমাট হয়ে ওঠে। ভূস্বামী, ইজারাদার কৃষক ও অন্যান্য ইজারাদার তাদের পক্ষে সরকারের কাছে জামিন হওয়ার জন্য মাড়োয়ারিদের শরণাপন্ন হতো। আঠারো শতকের শেষ দুই দশকে মুর্শিদাবাদ ও কলকাতায় সবচেয়ে খ্যাতিমান মাড়োয়ারি পরিবার ছিল ‘হাজারি মাল’। এ পরিবার বাংলার প্রায় সব জেলায় রাজস্ব জামিন কারবারে নিয়োজিত ছিল। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের (১৭৯৩) পর হাজারি মাল বিস্তৃত জমিদারি লাভ করেন। অন্য এক নামকরা ব্যবসায়ী ছিলেন দুলালচাঁদ সিং (ওরফে দুলসিং)। তিনি ছিলেন পোরওয়াল মাড়োয়ারি এবং তিনি বাংলার জেলাগুলোয় বিশাল জমিদারিস্বত্ব ক্রয় করেন। তিনি ঢাকায় বাস করতেন এবং এখানে অনেক বিপণিকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। বাকেরগঞ্জ, পটুয়াখালী ও কুমিল্লায় তার অনেকগুলো বড় জমিদারির অংশীদার ছিলেন ঢাকার খাজারা। পরবর্তী সময়ে সিং পরিবার পাট ব্যবসায় যোগ দেয়।

বাংলার তিন বিখ্যাত নওয়াব মুর্শিদকুলী খান, সুজাউদ্দীন খান ও আলীবর্দী খান যেকোনো আর্থিক সংকট মোকাবেলায় মাড়োয়ারিদের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন। মারাঠা দুর্বৃত্তদের প্রধান লক্ষ্য ছিল এই মাড়োয়ারিরা। আলীবর্দী খানের শাসনামলে মারাঠারা বেশ কয়েকবার বাংলা আক্রমণ করেছিল এবং এ সময়ে তারা মাড়োয়ারিদের কাছ থেকে ৩ কোটিরও অধিক টাকা নিয়ে যায়। নওয়াব মীর কাসিম তার সৈন্যবাহিনী পুনর্গঠন করতে মাড়োয়ারিদের কাছ থেকে সাহায্য চেয়েছিলেন। কিন্তু জগত্ শেঠদের কাছ থেকে প্রত্যাশিত সাহায্য না পাওয়ায় মীর কাসিম ওই পরিবারের প্রধান দুই ব্যক্তিকে বন্দি করেন এবং বাংলার দুর্দশার জন্য তারাই দায়ী— এ অভিযোগে তাদের হত্যা করেন।

তবে মাড়োয়ারিরাই তখন একমাত্র ব্যবসায়ী ছিলেন না। ১৭৮৯ সালে ঢাকায় আর্মেনীয়দের ১৩টি, মুসলমানদের সাতটি, হিন্দুদের ১৩টি (জগত্ শেঠেরসহ) ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছিল। মানিক চাঁদ মারা যান ১৭১৪ খ্রিস্টাব্দে। তার স্থলাভিষিক্ত হন ফতেহ চাঁদ। ১৭২২ সালে তাকে জগত্ শেঠ উপাধি দেন খোদ মোগল সম্রাট। ১৭১৭ সালে ফতেহ চাঁদ মুর্শিদাবাদের টাঁকশালের দায়িত্ব পান। এরপর তিনি বাংলার নগদ অর্থের অর্থনীতিকে বিপুলভাবে নিয়ন্ত্রণ শুরু করেন। তিনি স্থানীয় শাসক ও বিদেশী বণিকদের ঋণ দিতেন। রাজস্ব বিভাগের দায়িত্বও ছিল তার হাতে। রাজস্ব জমা ও বণ্টন হতো তার হাতে। ১৭১৮-৩০ সময়ে বছরে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি প্রতি বছর জগত্ শেঠ ফার্ম থেকে গড়ে ৪ লাখ টাকা করে ঋণ নিয়েছিল। ১৭৫৭ পর্যন্ত জগত্ শেঠরা ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে বার্ষিক ৪ লাখ টাকা ও ফ্রেঞ্চ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে ১৫ লাখ টাকা ঋণ দিত।

১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে রাজনৈতিকভাবে জগত্ শেঠরা ইংরেজদের পক্ষে ছিল। তারা ক্লাইভের সঙ্গে হাত মেলায় এবং মীর জাফরকে হাত করে এবং আরো অনেক নবাবকে সিরাজউদ্দৌলার বিপক্ষে অবস্থান নিতে ঘুষ দেয়। এ ঘটনা বাংলার মানুষের মনে মাড়োয়ারিদের বিরুদ্ধে এক রকম বর্ণবাদী ধারণা সৃষ্টি করে। সুদীপ চক্রবর্তী লিখেছেন, ‘বাঙালিদের কাছে এটা (পলাশীর যুদ্ধ) ছিল বাংলার শেষ। কারণ ছিল মেরো, যারা লোভী এবং যাদের কাছে মর্যাদার চেয়ে পয়সাই অধিক গুরুত্বপূর্ণ। এই ট্যাবুর মৌখিক ও লিখিত ইতিহাস ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে ক্লাইভের বিজয়ের পর বাঙালিদের মধ্যে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে প্রবাহিত হয়েছে।’ কিন্তু ইংরেজরা বাংলার ক্ষমতা দখলের পর থেকে জগত্ শেঠদের অবস্থা খারাপ হতে শুরু করল। কারণ যেসব খাত থেকে তাদের অর্থ আসত, সেগুলোর অনেকটাই ব্রিটিশরা দখল করে নিয়েছিল। তাদের মর্যাদাও কমে গেল। কারণ বাংলার বাণিজ্যিক রাজধানী তখন কলকাতা। জগত্ শেঠদের ব্যবসার প্রবৃদ্ধি কমে গিয়েছিল। নতুন করে আর কোথায় তারা জায়গা তৈরি করতে পারছিলেন না। যদিও অন্য অনেকে সেটা করতে পেরেছিল। এর মধ্যে তাদের পরিবারের দ্বন্দ্ব-মামলা শুরু হয়। পরিণতিতে ফার্ম টুকরো হয়ে যায়। এ মামলা তাদের নিজেদেরও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ১৭৯১ সালে এমনকি মুর্শিদাবাদেও সবচেয়ে বড় ব্যবসায়িক ফার্ম হয়ে উঠল একজন বারানসি আগারওয়ালের, যার নাম ছিল মনোহর দাস দোয়ারকা দাস। উনিশ শতক নাগাদ ব্রিটিশরা জগত্ শেঠদের পেনশন নিতে বাধ্য করে। ১৯৪০ বা পঞ্চাশের দশকে জগত্ শেঠদের অবস্থা এতটাই খারাপ হয়ে যায় যে, নিজেদের প্রাসাদ সংস্কার করার মতো অর্থও আর তাদের হাতে ছিল না।

তবে শুধু পলাশী নয়, মাড়োয়ারিরা এর পরেও বাঙালিদের মনে, স্বার্থে আঘাত করেছেন। সুদীপ চক্রবর্তী মনে করেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় চাল মজুদ ও ফটকাবাজিতে ইংরেজদের সঙ্গে ছিলেন মাড়োয়ারি ব্যবসায়ীরা। সেই দুর্ভিক্ষে বাংলার ৩০ লাখ মানুষ মারা গিয়েছিল। তাই গান্ধীর ঘনিষ্ঠ, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে সহযোগিতা করা সত্ত্বেও বাঙালির আদালতে এই মাড়োয়ারিরা গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত।

বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা পণ্ডিত মদন মোহন মালভিয়া ছিলেন মাড়োয়ারি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে বারনসি, লক্ষ্নৌ কোনোটিই মাড়োয়ারিদের বড় কেন্দ্র হয়ে ওঠেনি। তবে দিল্লিতে তাদের একটি অবস্থান ছিল। কিন্তু ব্যবসায় তারা সে সময় দিল্লিতে সফল হতে পারেনি। অন্যদিকে ১৯৪৭ সালে ভারত ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর নতুন করে অনেক মাড়োয়ারি ব্যবসায়ী দিল্লিতে কাজ শুরু করে। ১৯৬০-এর দশকে কলকাতায় কমিউনিস্ট পার্টির (মার্ক্সবাদী) উত্থান ও মুম্বাইয়ে ট্রেড ইউনিয়ন সহিংসতা শুরু হওয়ায় এ দুই শহর থেকে মাড়োয়ারিরা অপেক্ষাকৃত শান্ত দিল্লিতে পাড়ি জমায়।

ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের প্রাথমিক কালের অন্যতম চাঁদা প্রদানকারী ছিলেন ঘনশ্যাম বিড়লা। ভারতে ব্রিটিশ ব্যবসায়ী হাউজগুলোর বর্ণবাদী আচরণ ঘনশ্যামকে ক্ষুব্ধ করে। তখন তিনি সশস্ত্র জাতীয়তাবাদী সংগঠনগুলোর প্রতি ঝুঁকে পড়েন। অন্যদিকে অনেক মাড়োয়ারি পরিবার ব্রিটিশদের প্রতি অনুগত ছিল। বিড়লাদের বলা যায় ভারতের রকফেলার। রকফেলারের নাম যেমন আমেরিকাজুড়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িয়ে আছে, তেমনি বিড়লাদের নামও ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থিত স্কুল-কলেজ, মন্দিরে মিশে আছে। বিড়লাদের মূল নিবাস ছিল রাজস্থানের পিলানি নামের একটি ছোট শহর। বিশ শতকে টাটার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল বিড়লা। ভারতের স্বাধীনতার পরেও পরিস্থিতি তা-ই ছিল। ১৯৬০-এর আগে টাটা ও বিড়লার সমকক্ষ কোনো প্রতিষ্ঠান ভারতে ছিল না। বিড়লাদের উত্থান ঘনশ্যাম দাস বিড়লার হাত ধরে। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে ও কংগ্রেসকে তিনি আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম চলাকালে বিড়লাদের বাড়ি কংগ্রেসের পার্টি অফিসের মতো ব্যবহার হয়েছে। তিনি মহাত্মা গান্ধীর অনুসারী ছিলেন। গান্ধী নিহত হওয়ার সময়ও দিল্লির বিড়লা হাউজের বাগানে অবস্থান করছিলেন। সেখানেই তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

সরদার প্যাটেলও ঘনশ্যাম দাস বিড়লার ঘনিষ্ঠ ছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে জওহরলাল নেহরু ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হলে এবং সমাজতান্ত্রিক চিন্তাধারা দিয়ে প্রভাবিত বলে তার সঙ্গে বিড়লাদের সম্পর্ক উষ্ণতা হারায়।

মাড়োয়ারিদের মধ্যে বিড়লারাই ভারতের সবচেয়ে বড় ব্যবসায়ী পরিবার। তারা ভারতের অন্যতম শীর্ষ ধনী। বিড়লারা তাদের সাফল্যের সূত্র হিসেবে কয়েকটি বিষয়ের উল্লেখ করেছেন— হিসাবরক্ষণে দক্ষতা, সতর্ক ও কেন্দ্রীয় আর্থিক নিয়ন্ত্রণ, পরিমিত ব্যয়। ঘনশ্যাম দাস বিড়লার জ্যেষ্ঠ পুত্র কৃষ্ণ কুমার বিড়লা লিখেছেন, ‘কোন ব্যবসায় সফল হতে হলে আপনাকে অবশ্যই হিসাবরক্ষণে দক্ষ হতে হবে। এমনকি পিতামহের আমল থেকেই আমাদের পরিবারের সব সদস্যই হিসাবরক্ষণে দক্ষ। আমার মনে হয়, কেউ যদি হিসাবরক্ষণে দক্ষ হন তাহলে তাকে কেউ ব্যবসায় ধোঁকা দিতে পারবে না।’ ঘনশ্যাম বিড়লা হিসাবরক্ষণে ‘পরতা ব্যবস্থা’ নামে মাড়োয়ারিদের একটি ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতিকে বিকশিত করেছিলেন, যা বিড়লা পরিবারের সদস্যরা ব্যবহার করেন। এ পদ্ধতিতে কোনো ইউনিটের দৈনন্দিন লাভ-ক্ষতির হিসাব সহজেই করা যায়। ঘনশ্যাম বিড়লার ছোট ছেলে বসন্ত কুমার তার ছেলে আদিত্যকে পরতা ব্যবস্থা শিখিয়েছিলেন। উনিশ শতকে মাড়োয়ারিদের মধ্যে এই পরতা ব্যবস্থার ব্যবহার কমে আসে। কিন্তু বিড়লারা এ পদ্ধতিকে বিকশিত করে ব্যবহার অব্যাহত রাখে। আশির দশকের শেষদিকে আদিত্য দুনিয়ার সেরা এক্সিকিউটিভদের নিয়ে একটি সম্মেলন করেছিলেন পরতা ব্যবস্থাকে যাচাই-বাছাই করতে। সম্মেলন শেষ হতে হতে আদিত্য বুঝতে পেরেছিলেন, এ পদ্ধতি তাদের অন্তত ১০০ কোটি রুপি সাশ্রয় করেছে।  তবে ২০০৩ সাল থেকে বিড়লারা এ পদ্ধতিকে বিদায় জানিয়েছে। এখন তারা ব্যবহার করে ‘ক্যাশ ভ্যালু অ্যাডেড’ পদ্ধতি।

একই সঙ্গে উত্তরাধিকারদের যোগ্য করে গড়ে তোলাটাও বিড়লাদের সাফল্যের অন্যতম সূত্র। বিড়লারা ব্যবসায় বিশ্বাসকে গুরুত্ব দেন। কারণ তারা মনে করেন, একটি ভুল হলেও তা পুরো পরিবারের সম্মান নষ্ট করবে।

মাড়োয়ারিদের হিসাব-নিকাশ দেখে তাদের কৃপণ বলা হয়। কিন্তু তাদের জীবনযাপন পর্যবেক্ষণ করলে ভিন্ন চিত্র দেখা যায়। তারা বিয়েতে প্রচুর অর্থ খরচ করেন। তারা মূলত অর্থ ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিচক্ষণ। তার টাকাকে খুব ভালো চেনেন। এ গুণ না থাকলে অবশ্য ব্যবসায় সফল হওয়া সম্ভব নয়।

বাংলাপিডিয়া অনুসারে গত শতকের বিভিন্ন কালপর্বে প্রচুর মাড়োয়ারি পূর্ব বাংলা বা পরবর্তীতে বাংলাদেশ ছেড়ে যায়। ‘১৯২৯ সালের মহামন্দা ও ১৯৪৭ সালের ভারত বিভাগের ফলে বিপুলসংখ্যক মাড়োয়ারি পূর্ব বাংলা ছেড়ে চলে যায়; তবে বেশ কিছুসংখ্যক মাড়োয়ারি এখানে থেকে যায় এবং প্রধানত বস্ত্র ও পাট ব্যবসা চালিয়ে যায়। ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধ ও ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ— এর ফলে মাড়োয়ারি সম্প্রদায় বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যায়। বর্তমানে মাত্র ৭০০ মাড়োয়ারি বাংলাদেশে বসবাস করছে। তাদের মধ্যে নারায়ণগঞ্জের তুলারাম পরিবার ও ঢাকার দুগার পরিবার সর্বাধিক পরিচিত।’

বাংলাদেশে এখনো মাড়োয়ারিদের অস্তিত্ব আছে। বর্তমানে তাদের বসবাস মূলত দেশের উত্তরাঞ্চলে। জয়পুরহাটে রয়েছে সবচেয়ে বেশি মাড়োয়ারি পরিবার। এছাড়া কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, আলমডাঙ্গা, ভেড়ামারা, ঈশ্বরদী, সৈয়দপুর ও নাটোরে বেশকিছু মাড়োয়ারি পরিবার রয়েছে। রাজশাহী, ফরিদপুরে রয়েছে হাতেগোনা কয়েকটি পরিবার। বাংলাদেশের গণমাধ্যমে প্রকাশিত  প্রতিবেদনে এ দেশে বসবাসরত মাড়োয়ারিদের বিভিন্ন সংকটের কথা জানা যায়। বিভিন্ন সময় মাড়োয়ারিদের অনেকে এ দেশ ছেড়েছেন। তাদের আর্থিক অবস্থাও আগের মতো সচ্ছল নেই। অবশ্য অনেকে এখনো এ দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যে ভালো অবস্থানে আছেন। এসব মাড়োয়ারি পরিবারে নতুন ধরনের এক সংকট দেখা দিয়েছে। এরা নিজেদের সম্প্রদায়ের বাইরে বিয়ে করতে পারেন না। বর্তমানে পরিবারগুলোয় মেয়েদের সংখ্যা তাদের ছেলেদের তুলনায় অনেক কম। ফলে অনেক মাড়োয়ারি বিয়ে করতে পারছেন না। এতে নানা ধরনের সামাজিক-পারিবারিক সংকট সৃষ্টি হচ্ছে।

চুয়াডাঙ্গা শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী সিনেমা হল ‘রূপছায়া’ ১৯৫১ সালে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মাড়োয়ারি ব্যবসায়ী দুয়ারকা দাস আগারওয়াল। হলটি বর্তমানে পান্না সিনেমা নামে পরিচিত। নির্মাণের পর থেকে ১৯৬৫-এর পাক-ভারত যুদ্ধের শুরুর আগ পর্যন্ত সীমান্ত জেলার চুয়াডাঙ্গার এ হলে কলকাতার বাংলা ও মুম্বাইয়ের হিন্দি ছবি ও পাকিস্তানের উর্দু ছবি প্রদর্শিত হতো। এলাকায় হলটি তুমুল জনপ্রিয় ছিল। ১১ বছর আগে হলটির প্রতিষ্ঠাতা দুয়ারকা দাস আগারওয়াল শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার বংশধর দিলীপ কুমার আগারওয়াল বর্তমানে হলটির মালিক। দিলীপ কুমার আগারওয়াল একই সঙ্গে দেশের অন্যতম হীরার অলঙ্কার ব্র্যান্ড ‘ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড’-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

বাংলাদেশ সময়: ১৩:১৮:২৫   ১৩০৬ বার পঠিত   #  #  #  #  #  #