বৃহস্পতিবার, ২০ জুন ২০১৩
দুর্যোগের বড় ঝুঁকিতে দেশ
Home Page » জাতীয় » দুর্যোগের বড় ঝুঁকিতে দেশবঙ্গ- নিউজ ডটকমঃ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে বাংলাদেশের নাম বিশ্বের বেশির ভাগ গবেষণা সংস্থার তালিকায় অনেক আগেই উঠেছে। প্রতিবছর বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে জলবায়ু বিপন্ন দেশের উদাহরণ হিসেবে বাংলাদেশের নাম শীর্ষেই থাকে। এবার এর সঙ্গে নতুন মাত্রা যোগ করল বিশ্বব্যাংকের জলবায়ুবিষয়ক প্রতিবেদন।গতকাল বুধবার সারা বিশ্বে একযোগে প্রকাশিত এ প্রতিবেদন বলছে, আগামী শতাব্দীর মধ্যে বিশ্বের তাপমাত্রা দুই থেকে চার ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়লে আবহাওয়ার যতগুলো নেতিবাচক রূপ রয়েছে, তার প্রায় সবগুলোর প্রভাব বাংলাদেশের ওপর পড়বে। বন্যা, খরা, ঝড়, জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলো সবচেয়ে বেশি আঘাত হানবে যেসব দেশে, তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।
গতকাল বিশ্বব্যাংক বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব নিয়ে ‘টার্ন ডাউন দ্য হিট: ক্লাইমেট এক্সট্রিম রিজিওনাল ইমপ্যাক্ট অ্যান্ড কেস ফর রেজিলিয়ান্স’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ হচ্ছে সবচেয়ে দুর্যোগপ্রবণ অঞ্চল বা হটস্পট।
জার্মানভিত্তিক গবেষণা সংস্থা পস্টড্যাম ইনস্টিটিউট ফর ক্লাইমেট ইমপ্যাক্ট রিসার্চের নেতৃত্বে এ গবেষণা প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। বিশ্বের স্বনামধন্য ৯০ জন জলবায়ু-বিশেষজ্ঞ প্রতিবেদনটি মূল্যায়নের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। প্রতিবেদনটির মূল সুর হচ্ছে, বিশ্বের কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ বর্তমানে যে হারে বাড়ছে, তা যদি অব্যাহত থাকে তাহলে ২০৯০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক তাপমাত্রা চার ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়বে। এর ফলে বিশ্বজুড়ে কী ধরনের ক্ষতি ও প্রভাব হতে পারে, তার পূর্বাভাস প্রতিবেদনটিতে দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনটি প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের এই বিরূপ প্রভাব মোকাবিলা করে এগিয়ে যেতে পারব। আমরা যদি শহরগুলোকে জলবায়ুসহিষ্ণু করে গড়ে তুলতে পারি। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার উপযোগী করে আমাদের কৃষিকে ঢেলে সাজাতে পারি, নবায়ণযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে পারি, তাহলে আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে বিশ্বের অগ্রগতি ঘটাতে পারব।’
বন্যা এলাকা বাড়বে ২৯ শতাংশ: প্রতিবেদনের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, প্রতি তিন থেকে পাঁচ বছর পর পর বাংলাদেশের দুই-তৃতীয়াংশ এলাকা বন্যায় ডুবে যাবে। এতে ফসলের ক্ষতি হওয়ার পাশাপাশি গরিব মানুষের ঘরবাড়ি বিনষ্ট হবে। তাপমাত্রা আড়াই ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়লে বন্যায় প্লাবিত এলাকার পরিমাণ ২৯ শতাংশ বাড়বে। বন্যার সময় আগের চেয়ে বেশি উচ্চতা নিয়ে পানি প্রবাহিত হবে। এতে প্রধান ফসল বোরো ও আমনের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তন এখন আর কোনো দূর অতীতের বিষয় নয়। এর প্রভাব ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। দেশের উপকূলীয় এলাকায় শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় আগের চেয়ে ঘন ঘন আঘাত হানবে। ২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডরের আঘাতে বাংলাদেশের ৩৪ লাখ ৫০ হাজার মানুষের ঘরবাড়ি ডুবে যায়। ওই ঝড়ে ক্ষতির পরিমাণ ছিল ১৬০ কোটি ডলার বা ১২ হাজার ৪৮০ কোটি টাকা (১ ডলার=৭৮ টাকা হিসাবে)। ২০৫০ সালের মধ্যে এ ধরনের ঘূর্ণিঝড় আরও বেশি শক্তিশালী হয়ে তিন মিটার উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস নিয়ে উপকূলে আঘাত হানবে। এতে ৯০ লাখ মানুষের বাড়িঘর ডুবে যেতে পারে।
বিশ্বব্যাংকের এই প্রতিবেদন প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সেন্টার ফর অ্যাডভান্স স্টাডিসের (বিসিএএস) নির্বাহী পরিচালক আতিক রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বৈশ্বিক তাপমাত্রা চার ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়লে যে ক্ষতির আশঙ্কা করা হয়েছে, তা মোকাবিলা করা বাংলাদেশের মতো স্বল্পোন্নত দেশের পক্ষে কঠিন হয়ে যাবে। ফলে বাংলাদেশের উচিত হবে এ ধরনের ভয়াবহ দুর্যোগময় পরিস্থিতি যাতে না তৈরি হয়, সে জন্য শিল্পোন্নত ও দ্রুত উন্নয়নশীল দেশগুলোকে তাদের কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ কমানোর জন্য চাপ দেওয়া।
উপকূলের ৪০ শতাংশ ফসলি জমি হারিয়ে যাবে: ২০৮০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উপকূলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ৬৫ সেন্টিমিটার বাড়লে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ৪০ শতাংশ ফসলি জমি হারিয়ে যাবে। ২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডরে ৮০ হাজার টন ধানের উৎপাদন কম হয়েছিল। এর আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ছিল ১৭০ কোটি ডলার বা ১৩ হাজার ২৬০ কোটি টাকা। উপকূলীয় এলাকায় ইতিমধ্যেই লবণাক্ততা বাড়ার কারণে দুই কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় ভূগর্ভস্থ পানি লবণাক্ত হয়ে উঠবে। এর ফলে ওই এলাকাগুলোতে বড় ধরনের বিপর্যয় দেখা দেবে।
বৃষ্টিপাত ও তাপমাত্রার পূর্বাভাস সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে তাপদাহের পরিমাণ বাড়বে। মৌসুমি বৃষ্টিপাত কমে আসবে। আবার অল্প সময়ে অনেক বৃষ্টি হবে। এতে দেশে ঘন ঘন খরা দেখা দেবে। ভূ-অভ্যন্তরের পানির স্তর আরও নিচে নেমে আসবে। দেশে প্রতি পাঁচ বছর পর পর বড় ধরনের খরা হয়ে থাকে, এই তথ্য উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী দিনগুলোতে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে খরার পরিমাণ বাড়বে। এতে বৃষ্টিনির্ভর ফসলের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ ধরনের খরা নিয়মিত হতে পারে। বন্যার কারণে ফসলের যে ক্ষতি হয়, খরায় তার চেয়েও বেশি ক্ষতি হবে।
প্রতিবেদনটি প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের দেশীয় পরিচালক জোহানেস জাট্ট বলেন, বাংলাদেশ দারিদ্র্য বিমোচনে যে অগ্রগতির দিকে এগোচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তা হুমকির মুখে পড়তে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ১০:০৭:৫৫ ৪৩২ বার পঠিত