শুক্রবার, ১২ অক্টোবর ২০১৮

“রঙ্গে ভরা আমার ব্যাংকিং জীবন “-জালাল উদদীন মাহমুদ

Home Page » বিনোদন » “রঙ্গে ভরা আমার ব্যাংকিং জীবন “-জালাল উদদীন মাহমুদ
শুক্রবার, ১২ অক্টোবর ২০১৮



 

 জালাল উদদীন মাহমুদ

15তম কিস্তি—
তালোড়া শাখায় 11 মাস- নবম পর্ব।

আবার তালোড়া শাখার কথায় ফিরে যাই। সেকেন্ড অফিসার রফিক সাহেবের কথা বলতেই হবে এখন। তার সাথে পরে বগুড়া শহরের সপ্তপদী মার্কেট শাখাতেও চাকুরী করেছি। পূর্বেই বলেছি বড় মজাদার লোক এই রফিক সাহেব। লাইফ কৌতুক পরিবেশনায় তার জুড়ি মেলা ভার। এসব ক্ষেত্রে তিনি কাজে লাগাতেন তার অভিনয় ক্ষমতা। যা এক কথায় ছিল নিঁখুত। ”উপস্থিত বুদ্ধি” বলে একটি কথা আছে। এ উপস্থিত বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে রফিক সাহেব নিমিষেই একটা কৌতুক নকশার ছক আঁটতেন । আর উপস্থিত পাত্র-পাত্রীরা তার হাতের ক্রীড়ানকে পরিনত হতেন ।ঘটনার ঘনঘটায় অনেক সময় আমিও হেসে কুটিকুটি খেতাম। কিন্তু তিনি থাকতেন নির্বিকার। এটিও তার একটিগুণ। ভাব গাম্ভীর্য বজায রেখে তিনি কৌতুক রসের যোগান দিতেন । নিজে হাসতেন না। অন্যকে হাসাতেন। সবাই যখন হাসছে তখন তিনি আমাকে শুধু বলতেন “দ্যাখেন তো দেখি কান্ডটা , “দ্যাখেন তো দেখি ব্যাপারটা”। যেন কেউ মনে না করে হাসানোর কৃতিত্বটা তার । সবাই যেন মনে করেন যারা হাসছেন কৃত্বিত্বটা তাদেরই। এ যেন জয়সুরিয়া , চার-ছয় হাকাঁনোর পর মনে হত বোলার নয় ব্যাটসম্যান জয়সুরিয়াই লজ্জা পেয়েছেন। পাঠকবৃন্দ ,রফিক সাহেবের এসব বৈশিষ্ট্য একটু কষ্ট করে মনে না রাখলে পরের অনেক আলোচনাই অসঙ্গতিপূর্ণ মনে হবে। কেউ কেউ আবার ভেবে বসতে পারেন এ সব নিতান্তই বানিয়ে বলা।

আমি এখন ব্যাংক শাখার তৎকালীন ক্লোজিং নিয়ে আলোচনা করতে চাই। এত বছর পর আমার উপলব্ধিতে ব্যাংকের ক্লোজিং বা হিসাব সমাপনী এক অদ্ভুত ব্যাপার বলে মনে হয়। সারা বছর আপনি কি করেছেন তার হিসাব হবে মাত্র ২ দিন। জুন এবং ডিসেম্বর এ দু মাসের শেষদিন। এদিন বিশেষ করে আমানত, মুনাফা, ঋণ আদায় বাড়ানোর জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা হয়। অনেক অসাধু পন্থা অবলম্বন করার সুযোগ থাকায় তা করে চাপিয়ে দেয়া টার্গেট পূরণের চেষ্টা করা হতো সে সময় ।এ সব ব্যাংকার মাত্রই জানেন। কম্পিউটার সফটওয়্যার আসায় এখন অবশ্য মারপ্যাচ করে টার্গেট অর্জনের উপায় অনেক কমে গেছে। তখন তো আর কম্পিউটার ছিল না। অতীত পানে তাকিয়ে আজ অবশ্য একটি কথা আমার মনে দোলা দিচ্ছে। মাত্র দুই দিনের পারফরম্যান্স বিচার করে সারা বছরের মূল্যায়ন কেন হবে? আর ঐ দুই দিনেই বা কেন এত প্রতিবেদন দিতে হবে ? কম্পিউটার সফটওয়্যার যে পরিবর্তন এনেছে তার ভিত্তিতে ব্যালেন্স শিট এর সংজ্ঞা কেন পরিবর্তন হচ্ছে না। হিসাব বিজ্ঞানের ভাষায় ব্যালেন্স শিট হল আর্থিক প্রতিবেদনের একটি অংশ যা একটি নির্দিষ্ট মেয়াদে ব্যবসার সম্পদ ও দায়ের অবস্থা টাকার অঙ্কে তুলে ধরে। আমার ঐ মেয়াদ কথাটির প্রতি এখন আপত্তি আছে। সফটওয়্যারের এ যুগে এখন আর নির্দিষ্ট মেয়াদ বলে কিছু নাই। প্রতি মূহুর্তেই ব্যালেন্স শিট পাওয়া সম্ভব।
মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনাসহ ব্যাংকের অন্যান্য হিসাব সংরক্ষনের জটিল এবং ক্লান্তিকর কাজগুলো আজকাল কম্পিউটার সফটওয়্যারের সাহায্যে অনেক দ্রুততার সাথে করা হচ্ছে। এই সফটওয়্যারগুলো সচরাচর প্রত্যেকটি প্রধান কার্যক্রমের সাথে অন্তর্নিহিতভাবে সংযুক্ত থাকে; এতে করে একটি তথ্য প্রবেশ করালে তা সমস্ত হিসাবে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। এই সফটওয়্যারগুলো দিয়ে একজন কর্মী প্রায় ২০০ মানুষের কাজ একাই করে ফেলতে পারে। এই ধরণের একাউন্টিং সফটওয়্যার ব্যাংকের কাজ অনেক সহজ করে দিয়েছে । এতে করে সেবার গুণগত মান বৃদ্ধি এবং অর্থ সাশ্রয় হবার কথা। আমরা সে সব সুবিধা কতটুকু নিতে পারছি। থাক ও সব কথা । আমি হিসাববিজ্ঞানী নই আর এখন তো বসেছি অতীত কথা বলার জন্য।
আগেই বলেছি সে কালে শাখার সর্বোচ্চ ইলেকট্রনিক ডিভাইস বলতে ছিল ক্যালকুলেটর। তাও আবার শাখায় ১টি করে। আমাদের ম্যানেজারই ভাবতো জোনাল হেড যদি তার শাখায় ২টি ক্যালকুলেটর দিত তবে তার জীবন অন্যরকম হতে পারতো। জোনাল হেড দুটি ক্যালকুলেটরও দেয় নাই ম্যানেজারের জীবনও অন্যরকম হয় নাই।

মোট কথা সব কিছুই করতে হতো হাতে হাতে। ক্যালকুলেটরে সবাই অভ্যস্তও ছিলনা। বড় বড় যোগ নিমিষেই মুখে মুখে করে দিতে পারতো। একজন বয়োজৈষ্ঠ কর্মকর্তাকে আমি ক্যালকুলেটরে যোগ দিতে বললে উনি বলেছিলেন ফিগার গুলি একবার ক্যালকুলেটরে তুলবো তারপর সামেশন বের হবে। তার আগে আমি মুখে মুখেই করে নিতে পারবো। সত্যিই পারতো তা । আমিও মোটামুটি পারতাম। তবে ঐ যে হাতে থাকলো এত। মাঝে মধ্যে এই হাতে থাকা সংখ্যাটা ভুল হতো। তবে পরে শিখে ছিলাম হাতে যেটা থাকে তা উপরে লিখে রাখতে হয়। যোগ রিকনফার্ম করার সময় প্রায়ই শোনা যেত হাতে থাকে ৮ আপনি ৪ লিখেছেন কেন? ইংরেজী ও বাংলার চার ও আট নিয়ে এ গোলমালে কত রকম যে বিভ্রাট ঘটে তার ইয়াত্তা নাই। তবে সেদিন ইংরেজীর আট নিয়ে পত্রিকায় একটি মজার বিজ্ঞাপন দেখলাম।

শিক্ষক -ছাত্রকে জিজ্ঞেস করেছে -ইংরেজী আট সংখ্যাকে দুই ভাগে ভাগ করলে কত হবে ? ছাত্র পাল্টা প্রশ্ন করলেন , স্যার ভাগটি কোন দিকে হবে । লম্বালম্বি না আনুভূমিক ? লম্বা লম্বি হলে হবে 3 (Three) আর আনুভূমিক হলে হবে 0 (Zero)।

যতদুর মনে হয় বার্ষিক হিসাব সমাপনী উপলক্ষ্যে প্রধান কার্যালয়ের কেন্দ্রীয় হিসাব বিভাগ, সার্কেল, জোনাল অফিস, অফিস কপি এ চার সেট তো তৈরী করতে হতোই- এছাড়া আলাদা একটা সেট থেকে প্রধান কার্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগেও বিবরনী পাঠাতো হতো । একশো না হলেও তার কাছাকাছি বিবরণী হবে। সব বিবরণী অবশ্যই জুন/ডিসেম্বর মাসের শেষ দিনের তথ্য মোতাবেক পূরন করে পরের দিনে পাঠাতে হবে। জোনাল অফিস থেকে বিবরণীর সেটগুলি হিসাব সমাপনীর 15/20 দিন আগেই প্রতিটি শাখায় পাঠানো হয়। চালাক ম্যানেজাররা যেগুলো বিবরণী তার শাখার জন্য প্রযোজ্য নয় সে গুলিতে NILসিল আগেই মেরে রাখাতো। এছাড়াও প্রতিটি বিবরণীতে শাখার সিল ও দ্বিতীয় কর্মকর্তা ও ম্যানেজার স্বাক্ষর সহ সিল মারার কাজ আগেই শেষ করে রাখাতো। তাহলে ক্লোজিং রাতে চাপ কম হতো।

কিন্তু এ ম্যানেজার ছিল অন্য ধাঁচের। তিনি বিবরণীর প্যাকেট আলমিরাতে তালাবদ্ধ রাখতেন এবং বলতেন ক্লোজিং এর রাত ছাড়া কিছুতেই খুলবেন না, যদি হারিয়ে যায়। রমিজ সাহেব আমার কানে কানে বললেন স্যারের এ অহেতুক সন্দেহ ব্যারাম শাখার সবাইকে ভোগাবে , ক্লোজিং এর রাতে অহেতুক দেরী হবে । আমার প্ররোচনায় রফিক সাহেব বোঝাতে চেষ্টা করলেন কিন্তু এ বিষয়ে তিনি একদম অনড়।

আমি শাখায় যোগদানের ৩ সপ্তাহ পর বার্ষিক হিসাব সমাপনী তথা ক্লোজিং। রফিক সাহেব বললেন সারারাতেও ক্লোজিং এর কাজ শেষ হবে কিনা সন্দেহ । কারণ ম্যানেজার শেষ রাত ছাড়া বিবরণীর প্যাকেট খুলবেন না। বিবরনী প্রস্তুত করা ছাড়াও আরো কত কাজ। আমানত হিসাবে সুদ দিতে হবে। ঋণ হিসাব থেকে সুদ আদায় করতে হবে। সব ম্যানুয়ালী। প্রায় সব দ্বায়িত্বই রফিক সাহেবের। ডিসেম্বার মাস ,তালোড়ায় প্রচন্ড শীত। হিমালয়ের বরফের টাটকা ছোঁয়া পাওয়া বাতাস হাড়ে কাঁপন ধরায় । প্রত্যহ কাজ শেষ করতে অনেক রাত হয়। রফিক সাহেব ফুল সোয়েটার গায়েও হিড়হিড় করে কাঁপেন আর প্রতিটি হিসাবের সুদ নির্ণয় করেন। ভল্টে ক্যাশ তোলার পর চাবী মেরে গোলাপ সাহেব বাসায় চলে যান । তার নানা নাকি ভীষন অসুস্থ। রমিজ সাহেব রফিক সাহেবকে সাহায্য করেন। দৈনন্দিন কাজ গুলোর চাপ আমার উপর পড়ে যায়। কোন তারিখে কোন ধরনের হিসাবে সুদ দিতে হবে তা তো প্রধান কার্যালয় নির্ধারন করে দিয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই শেষ করতে হবে।কাজ চলতো অবিরাম। উনি ডিসেম্বর মাসে দাড়ি শেভ করার সময় বোধ হয় পাননা। শাখার গার্ডের নাম ছিল হাবিল । উনি একটু পর পর হাবিলকে ডেকে বলতেন পান নিয়ে এসো- চা নিয়ে এসো। জালাল সাহেব কি খাবে ,জিজ্ঞেস কর। হাবিল মুচকি হেসে বলত ,” কি আনব স্যার “উত্তরও তার জানাই ছিল । বলত কিছু খেলেই পারেন , আপনার উসিলায় আমরাও খেতে পারি। হাবিলকে নিয়েও অনেক স্মৃতি মনের দরজায় উঁকি দিচ্ছে । হাবিলকে নিয়ে স্মৃতি কথা না হয় অন্যদিন হবে। আজ ক্লোজিং নিয়েই থাকি। আমি নতুন হিসেবে হিসাব ক্লোজিং এর কাজ থেকে রেহাই পেলাম । উনি হিসাব করে সীট তৈরী করতেন। রমিজ সাহেব সে গুলি শুধু লেজারে পোষ্টিং দিতেন। ব্যাংকে যেন কাটাই -মড়াই চলছে। কাজের ফাঁকে ফাঁকে নিয়মিত বিরতিতে কৌতুক নকশা পরিবেশনাও চলছে। অবশেষে আসলো ৩০শে ডিসেম্বর ১৯৮৩। আমার প্রথম ক্লোজিং রাত। ক্লোজিং এ ব্যাংকেই খাওয়া দাওয়া হতো কখনো শুধু ব্যাংকাররাই কখনও ঘনিষ্ট কাষ্টমাররাও (সাধারণত ঋণ গ্রহীতারা) থাকতো।

পুরাতন দিনের ম্যানুয়াল ব্যাংকিং এর যুগে ব্যাংকারদের জুন ও ডিসেম্বর মাসে বিয়ে করাকেও বসেরা ভাল চোখে দেখত না। বলত, ক্লোজিং মাসে আবার কিসের বিয়ে ? ছুটি হবেনা। এসব কথা লেখার সময় আমার মনসুর ভাইয়ের কথা মনে পড়ে গেল । আমার বাড়ীর খুব কাছে অগ্রণী ব্যাংকের একটি শাখা আছে। নাম মাঝিড়া শাখা। মুনসুর ভাই 1988 সালের দিকে এ শাখার ম্যানেজার ছিলেন । আমি তখন কাছাকাছি ডেমাজানি শাখার ম্যানেজার। প্রায়ই দেখা হত।ক্লোজিং এর সব কাজ মুনসুর ভাই একাই করত। কাউকে হাত দিতেও দিত না। বলত ভুল করবে। এ সময় খুব ভোরবেলা শাখায় এসে নিজেই তালা খুলে ভিতরে ঢুকতো। তার বসার চেয়ারের গদি গর্তের মত হয়ে গিয়েছিল । কিন্তু মুনসুর ভাই এতে থোড়াই কেয়ার করে। জোনাল হেডকে সে নতুন চেয়ারের জন্য অনুরোধ করতে যাবে কোন দুঃখে ? চেয়ারের উপর একটা পুরাতন লেজার বসিয়ে দিয়ে দিব্যি কাজ কাজ চালিয়ে নিত। ভোর থেকে এক নাগাড়ে কাজ করতে করতে যখন কোমর ব্যথা হয়ে যেত তখন দেখতাম মুনসুর ভাই দুই পা চেয়ারে তুলে কাজ করছে। কয়েকটা পুরাতন রেজিষ্টারকে পিঁড়ির মত করে নিয়ে চেয়ারে দু পা তুলে বসত। সে এক অপূর্ব দৃশ্য। আমি হয়তো লেখায় সব ফুটিয়ে তুলতে পারছি না। ইস সে সময়কার যদি একটি ছবি তুলে রাখতাম তাহলে সবাইকে আজ দেখাতে পারতাম।
তো ক্লোজিং এর সময় সকল প্রকারের প্রতিটি হিসাবের সুদ নিজেই হিসাব করে ,নিজেই লেজারে পোস্টিং দিয়ে ব্যালান্স করে তবেই না অন্যকে কাজ করতে দিত। সূর্য্য উঠার সময় শাখায় আসতো আর রাত 9/10 টা পর্যন্ত কাজ করতো। ক্যালকুলেটর ব্যবহার করতে জানতেন না। ছুটির দিন বলে তার কাছে কিছু নাই। কাজ-কাম কম থাকলে একা একাই কৃষি ঋণ আদায়ে বের হয়ে পড়তেন। তো যে বিষয়টি বলার জন্য এত কথা বলা তা এখন শুরু করি।

ব্যাংকার মাত্রই জানেন জুন ও ডিসেম্বর মাসের কোন তারিখে কোন প্রকার হিসাবে সুদ প্রদান/কর্তন করতে হবে তা নির্দিষ্ট করা থাকে। এখন সে গুলি কেন্দ্রীয় ভাবে হেড অফিস কর্তৃক করা হয় , তখন শাখাকেই করতে হত। আমাদের মুনসুর ভাই বোধহয় খুব একটা সার্কুলার পড়তো না –কারো সাথে কোন কথা তেমন শেয়ারও করতো না। তার কাজ শেষ হওয়া মাত্রই তিনি হিসাবে তা পোস্টিং দিয়ে ফেলতেন। তারপর শুরু হত তার টেনশন। সকালে আমাদের বাড়ীতে এসে ডাকাডাকি । তারপরের ডায়ালগ গুলো নিম্নরুপ-
-জালাল , হিসাবে সুদ পোষ্টিং দিয়েছ ?
- না ,হেড অফিসের সার্কুলারেই তো আছে 21 তারিখে দিতে হবে , আজ তো কেবল 15 তারিখ।
-আমি তো সব হিসাবের সুদ দেয়া শেষ করেছি।
-কেন হেড অফিসের নির্দেশনার বাহিরে গেলেন ? অডিটর যদি ধরে ?
- কি ধরবে ? আমি কি চুরি করেছি?
বলে হন হন করে বের হয়ে যেত।
পরদিন আবার হাজির।
আচ্ছা অডিটর যদি ধরে ?
এখন আমি আবার উল্টা চাপ দেই।
অডিট কেন ধরবে , আপনি কি চুরি করেছেন ?
ঠিক বলেছ ।
বলে হন হন করে বের হয়ে যেত।
শুধু কি বাসায় ,রাস্তা-ঘাট যেখানেই দেখা হত –একই রুপ ডায়ালগের পুনরাবৃত্তি ঘটতো।
এক দিনের ঘটনা খুব মনে পড়ে । আমি বাসে উঠছি , হ্যান্ডেল ধরে পাদানিতে কেবল এক পা দিয়েছি এমন সময় পীছন থেকে কে যেন আমাকে জাপটে ধরল। তার কোলে সমর্পন করা ছাড়া আমার আর গত্যন্তর ছিলনা । হ্যান্ডেল ছেড়ে দিলাম। বাসটাও ছেড়ে দিল । দেখি মুনসুর ভাইয়ের কোলে আমি। ধপ করে আমাকে মাটিতে নামিয়ে দিল। চরম বিরক্ত হলাম। একই জায়গায় বাড়ী। সিনিয়র-বড়ভাইয়েরও বড়। কিছু বলার নাই। আবার একই কথা - একই ভয় ,অডিট যদি ধরে ? পরক্ষনেই অ।বার একই ভাবে নিজেকে প্রবোধ দেয়া -আমি কি চুরি করেছি?

এ ঘটনার যে পুনরাবৃত্তি কতবার ঘটেছে , তার ঠিক নাই। মনে হয় তিনি গোটা ছয়েক ক্লোজিং করেছেন ঐ শাখায়। প্রত্যেক ক্লোজিং এ যদি 10 বার করে বলে থাকেন আমাকে, তবে 60 বার হয়। এ রকম কাজ- পাগলা ব্যাংকার সর্ব কালেই ছিল এখনও আছে । আমার শুধু প্রশ্ন ,ইনারা কি ব্যাংকে ঢোকার আগেই কাজ -পাগলা ছিল নাকি ব্যাংকে ঢুকে কাজ- পাগলা হয়েছে ? আমি এখন নিজেকেও এ প্রশ্ন করে দেখলাম –উত্তর মিলল না। কারন ব্যাংকে ঢোকার আগে কাজ- পাগলা হবার সুযোগই ছিল না আমার।

যা হোক তালোড়ায় সে ক্লোজিং এর দিনে ম্যানেজার ডিপোজিট ও লোন কালেকশনের জন্য শেষ বারের মত সারা দিন ঘোরাঘুরি করে বোধ হয় রাত 9 টার দিকে ব্যাংকে ঢুকলেন। ততক্ষণে বিরিয়ানীর প্যাকেট এসে গেছে। রফিক সাহেব বললেন ক্লোজিং স্টেটমেন্টের প্যাকেটটা খুলুন কাজ শুরু করে দিই। কিন্তু উনি আগে বিরিয়ানীর প্যাকেট খুলতে চাইলেন। যা হোক খাবার দাবার পর সারারাত কাজ চললো। হাজার প্রকার বিবরণী । আমি ও ম্যানেজার প্রায় নীরব দর্শক থাকলাম। ম্যানেজার অবশ্য বিবরনী সমুহতে রফিক সাহেবের পাশপাশি স্বাক্ষর করলেন। রফিক সাহেব কর্তৃক মুল বিবরনী পূরন করার পর রমিজ সাহেব ভিতরে কার্বন ঢুকিয়ে ঢুকিয়ে কপি করলেন। ভোর রাতে যখন বিবরনীগুলি সাজানোর সময় এল তখন রফিক সাহেবের নেতৃত্বে পাঁচ জন পাঁচ সেট রেডী করার জন্য দাঁড়িয়ে গেল । হাবিল সুই সুতা দিয়ে সেগুলো সেলাই করে খামে পুরে ফেলল। ততক্ষনে চার দিকে ফর্সা হয়ে গেছে। ভোরের আলো ফুটেছে। পাখিদের নীড় ছেড়ে বাহিরে আসার সময় হল আর এতক্ষণে ব্যাংকারদের বাহির ছেড়ে নীড়ে ফেরার সময় হল। সকালে ম্যানেজার সাহেব বিবরণী জমা দিতে ও জোনাল হেডের সাথে দেখা করতে বগুড়া শহরে গেল আর আমি ব্যাংক হলিডে থাকায় বাসায় চলে এলাম।
ক্লোজিং নিয়ে অনেক কথা হল এবার রফিক সাহেবের রঙ্গ- রসিকতার পর্ব শুরু করা যাক। (ক্রমশঃ)

বাংলাদেশ সময়: ২৩:০৫:৩৮   ৬০৪ বার পঠিত   #  #  #  #  #  #