রবিবার, ৭ অক্টোবর ২০১৮

“রঙ্গে ভরা আমার ব্যাংকিং জীবন”- জালাল উদদীন মাহমুদ

Home Page » ফিচার » “রঙ্গে ভরা আমার ব্যাংকিং জীবন”- জালাল উদদীন মাহমুদ
রবিবার, ৭ অক্টোবর ২০১৮



 

 জালাল উদদীন মাহমুদ

 নবম কিস্তি

 তালোড়া শাখায় 11 মাস- 3 য় পর্ব।

হঠাৎ করে তার এ দৌড়ের মর্ম আমি উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হলাম। ম্যানেজার –সেকেন্ড অফিসার বাহিরে ।আমি ভাবলাম আজকে কি সে ক্যাশ চুরি করে দৌড় দিল । না কি অন্যকিছু । নাকি তার মতিভ্রম ঘটল। এর দ্বায়িত্ব তো আমার উপর বর্তাবে । আমিও কাগজ কলম ভাউচার ফেলে তার পেছন পেছন দৌড় দিলাম। গোলাপ সাহেব পিছন ফিরে আমাকে দেখে বার বার চিৎকার করে বলতে লাগল “ আপনি ব্রাঞ্চে ফেরৎ যান। ক্যাশ ড্রয়ার খোলা আছে ”। আমি তখন মরিয়া । ভাবলাম এর শেষ না দেখে ছাড়বো না। তো দৌড়াদৌড়ি চলতে লাগলো। প্রাইমারী ও হাই স্কুলে দৌড় প্রতিযোগীতায় শেষের দিকে থাকতাম । স্যারেরা জোর করে নামিয়ে দিত। ইচ্ছার বিরুদ্ধ কাজ। কোনও দিন মন বসতোনা। প্রত্যেকবার গ্লানি নিয়েই আমার দৌড় প্রতিযোগীতা শেষ হতো। শেষের দিক থেকে হিসাব করলে হয়তো ফার্ষ্ট হতাম। হঠাৎ হঠাৎ সেকেন্ডও হতাম। কিন্তু হঠাৎ আজ আবিস্কার করলাম - দৌড়ে আমিও কম না। তাই, সমান তালেই চলতে লাগলো দৌড়াদৌড়ি। আমার একটা ফাঁকা মাঠে উপনীত হলাম। গোলাপ সাহেব গতিবেগ বাড়িয়ে দিল ,আমিও এক্সেলেটরে চাপ দিলাম। পরিচিত একপ্রকার আওয়াজ শুনে পীছন ফিরিয়ে যা দেখলাম তাতে আমার গতি বাড়তেই থাকল।শুনতে পেলাম গোলাপ সাহেব দুরের একজন লোককে থামেন! থা-মে-ন! বলে ডাকাডাকি করছে। লোকটি ডাক শুনে পেছন ফিরে তাকে দেখেই দৌঁড় দেয়া শুরু করলো। তাজ্জব বনে গেলাম। বিশাল মাঠে ৩ জন লোক অজ্ঞাত কারণে দৌড়াদৌড়ি প্রতিযোগীতায় নেমেছি। কারন জানতে অবশ্য বেশীক্ষণ অপেক্ষা করতে হলো না। গোলাপ সাহেব লোকটাকে ছুঁয়ে ফেললো। অব্যবহিত পরেই আমিও অকুস্থলে উপস্থিত হলাম। আমার তাড়াতাড়ি তাদের ধরে ফেলার কারণ অবশ্য ভিন্ন। এ অপূর্ব দৌড় প্রতিযোগীতা দেখে হোক আর নব আগন্তক দেখেই হোক প্রায় শুরু থেকেই কিছু কুকুর ঘেউ ঘেউ করতে করতে আমার পেছন পেছন আসছিল আর ছোটবেলায় আমার কুকুর ভীতি ছিল। ‍বুঝলাম তা পুরাপুরি এখনও কাটে নাই। তাছাড়া দৌড় প্রতিযোগীতা তখন থেমে গেছে। ঘটনা স্থলে পৌঁছতে আমার বিলম্ব ঘটলো না। দেখি গোলাপ সাহেব বার বার লোকটিকে বলছে পকেটে কত টাকা আছে তাড়াতাড়ি বের করেন। সাক্ষাৎ ডাকাত। গোলাপ সাহেব চাকুরীর পাশাপাশি পার্ট টাইম ডাকাতিও করে তাহলে। মানুষ চেনা দায়। চাপের মুখে লোকটা টাকা বের করলো। গ্রামের কৃষক গোছের লোক মনে হলো। টাকা লুঙ্গির গিট্টুতে বেঁধে রেখেছিল। গোলাপ সাহেব টাকা গুলো ১ বার, ২ বার, ৩ বার গুনে দেখলো যা তার স্বভাব বিরুদ্ধ। এরপরের কথোপকথন-
গোলাপ সাহেব- ব্যাংকে কত টাকার চেক দিয়েছিলেন?
লোকটি- 15 হাজার।
গোলাপ সাহেব- এখানে তো 20 হাজার ।
লোকটি- আমি ভাল করে গুনিনি।
গোলাপ সাহেব- আমি ভুল করে আপনাকে পাঁচ হাজার টাকা বেশী দিয়েছি। ফেরৎ দেন।
লোকটি গোলাপ সাহেবকেই গুনে ফেরৎ নিতে বললো। নিজ আর দেখলো না। আমার কাছে তাকে সহজ সরলই মনে হলো। কিন্তু আজো বুঝে উঠতে পারিনা গোলাপ সাহেব যখন তাকে থামতে বলছিল তখন সে দৌড় দিল কেন? আর গোলাপ সাহেবই বা টাকা কম না দিয়ে বার বার সবাইকে বেশী পেমেন্ট করতো কেন? উদার লোকেরা অন্যকে উজাড় করে দিয়ে নিজেকে নিশ্বঃ রাখতে চায়। তার অবচেতন মনে হয়তো এ রকম কোন সফটওয়্যার সৃষ্টিকর্তা ইনষ্টল করে দিয়েছিলেন।হতেও পারে।

 

গোলাপ সাহেবের অনুরোধে তার এসব কথা আমি ম্যানেজারকে কখনই বলি নাই। তবুও ম্যানেজার মাঝে মধ্যে জেনে যেত। তাদের রীতিমত ঝগড়া বেঁধে যেত। দু’জনই লোকাল হিরো। তবে উদাসীনতাই ম্যানেজার আবার তার চেয়েও কয়েক ধাপ উপরে ছিল। সে কথাই বলবো এখন। (ক্রমশঃ)

( লেখক অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেডের একজন অবসর প্রাপ্ত উপমহাব্যবস্থাপক)

বাংলাদেশ সময়: ৬:৩৬:১৫   ৬১৮ বার পঠিত   #  #  #  #  #  #