বৃহস্পতিবার, ২৬ জুলাই ২০১৮

রাজনীতির মাঠেও ছক্কা হাঁকিয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন ইমরান খান

Home Page » এক্সক্লুসিভ » রাজনীতির মাঠেও ছক্কা হাঁকিয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন ইমরান খান
বৃহস্পতিবার, ২৬ জুলাই ২০১৮



ফাইল ছবি  বঙ্গ-নিউজ: খেলার মাঠ থেকে রাজনীতির মাঠে এসেও ছক্কা হাঁকালেন ইমরান খান। যৌবনে ক্রিকেটের বাইশ গজে কাঁপিয়েছেন। আর জীবনের পড়ন্ত বেলায় পুরো পাকিস্তান! একেবারে জাত ‘কাপ্তান’ যাকে বলে। শাবাশ, খান সাহেব! এক সময় দেশের হয়ে দল চালিয়েছেন।


প্রধানমন্ত্রী হয়ে এখন পুরো পাকিস্তানের নেতৃত্ব দিতে যাচ্ছেন। গুজব-কানকথাই শেষ পর্যন্ত সত্য হল। সেনাশক্তিতে হোক আর কপাল জোরেই হোক- জয়ের মালা উঠছে ইমরান খানের গলাতেই।

বেসরকারি নির্বাচনের ফল সে কথাই বলছে। শেষ খবরের ফলাফলে দেখা গেছে, ইমরান খানের পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) পেতে যাচ্ছে ১০৫ আসন। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা নওয়াজ শরিফের পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) পাচ্ছে ৭১ আসন। আর বিলাওয়াল ভুট্টোর পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) ৩৯ ও অন্যরা ৫৭ আসন। সরকার গঠন করতে হলে প্রয়োজন ১৩৭ আসনে জয়।

ফলে দেখা যাচ্ছে, কোনো দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাচ্ছে না। ঝুলন্ত পার্লামেন্ট গঠিত হচ্ছে দেশটিতে। সেক্ষেত্রে জোট সরকার আসবে পাকিস্তানে। সরকার গঠন করতে পিপিপিকে বাদ দিলে ইমরানকে অন্য দুই বা ততধিক দলকে কাছে টানতে হবে। কারণ প্রয়োজনীয় আসন পূরণে অন্য দলগুলোর প্রাপ্ত আসনের সংখ্যা খুবই সীমিত। পাকিস্তানের পার্লামেন্ট কত দিন ঝুলে থাকবে- এখন সেটা অনেকটাই অনিশ্চিত।

ইমরান তার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা দিয়ে যত দ্রুত অন্য দলগুলো বাগে আনতে পারবেন, তত দ্রুতই এর সমাধান হবে।

এমন খুশির দিনেও মন খুলে হাসতে পারেনি পাকিস্তান। রক্ত ঝরেছে, হামলা হয়েছে বেলুচিস্তানের কোয়েটায়।

‘সেনাবর্মেও’ শেষ রক্ষা হল না। ভোটের দিনেও রক্ত ঝরল। নিভে গেছে ৩১ তাজা প্রাণ। শোকের ছায়ায় ঢেকে গেল গণতন্ত্রের উৎসব। একদিন আগে নামানোর পরও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হল সেনাবাহিনী। নির্বাচনী প্রচারণার সময়ও বারবার রক্তাক্ত হয়েছে পাকিস্তান।

বুধবার (২৫ জুলাই) ভোট গ্রহণ শুরুর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সে হিসাব কাঁটায় কাঁটায় মিলে গেল। ‘ঐতিহাসিক নিরাপত্তাকে’ বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বেলুচিস্তান প্রদেশের রাজধানী কোয়েটার ভোট কেন্দ্রের ঠিক সামনেই আত্মঘাতী হামলা করে জঙ্গিরা। শুধু জঙ্গিরাই নয়, ভোট কেন্দ্র দখলে পেশিশক্তিতে মত্ত হয়ে উঠেছিল বড় দলগুলোর কর্মী-সমর্থকরাও। সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) ও ইমরান খানের তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) সমর্থকদের কয়েক দফা সংঘর্ষ হয়েছে। কোনো কোনো কেন্দ্রে পিটিআই ও আওয়ামী ন্যাশনাল পার্টির (এএনপি) মধ্যে সংঘাত হয়।

পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের মোট আসন ৩৪২টি। এর মধ্যে সরাসরি নির্বাচন ২৭২ আসনে। বাকি ৬০ আসন নারী ও ১০টি সংখ্যালঘুদের জন্য সংরক্ষিত। পাকিস্তানের ১১তম জাতীয় নির্বাচনে একযোগে ৮৫ হাজার ৫০৮টি ভোট কেন্দ্রে বুধবার সকাল ৬টায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়, শেষ হয় সন্ধ্যা ৬টায়। এরপর শুরু হয় ভোট গণনা।

ফলাফলে দেখা গেছে, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ২২ আসনে, মুত্তাহিদা মজলিসে আমল ও গ্রান্ড ডেমোক্রেটিক পার্টি ৯টি করে আসনে জয় পাচ্ছে। বৃহস্পতিবার সকালে আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন।

দেশটির মোট নিবন্ধিত ভোটার ১০ কোটি ৫৯ লাখ ৯৫ হাজার ৪০৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৫ কোটি ৯২ লাখ ২২ হাজার ৯২৭, নারী ৪ কোটি ৬৭ লাখ ৩০ হাজার ৫৬৯ জন ও তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ১ হাজার ৯১৩ জন।

নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুসারে, জাতীয় পরিষদে ৩ হাজার ৪৫৯ জন প্রার্থী ছিলেন। প্রাদেশিক পরিষদেও ভোট হয়েছে। পাঞ্জাব প্রাদেশিক পরিষদে প্রার্থী ১ হাজার ৬২৩ জন। সিন্ধু থেকে ৮২৪ জন, খাইবার পাখতুনখাওয়ায় ৭২৫ জন ও বেলুচিস্তানে প্রার্থী হয়েছেন ২৮৭ জন।

ইমরান খানের মাথায় পাকিস্তানের কলঙ্কিত আশীর্বাদ ‘সেনাবাহিনীর হাত’ রয়েছে বলে অভিযোগ ছিল। কাটাছেঁড়া মেয়াদে হলেও কোনো বেসামরিক দল পাকিস্তানে দ্বিতীয়বারের মতো মেয়াদ পূর্ণ করেছে। এবারের নির্বাচনে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে ‘নীরব অভ্যুত্থান’ হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। ইসলামাবাদ-২ আসনে নিজের নির্বাচনী এলাকায় ভোট দিয়েছেন ইমরান খান।

পরে সংবাদকর্মীদের তিনি বলেন, ‘পিটিআইয়ের জন্য আমি আপনাদের কাছে ভোট চাই না। শুধু বলব, আপনারা আপনাদের ঘর থেকে বেরিয়ে আসুন, ভোট দিয়ে দেশের প্রতি দায়িত্ব পালন করুন।’

পিটিআই চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমাদের উচিত দেশের সেবা করা ও ভোটাধিকার প্রয়োগ করা। আমার আনুগত্য দেশের প্রতি, সম্পদের প্রতি নয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাইরের শক্তি পাকিস্তানকে দুর্বল করতে চায়।’

ভোট গ্রহণ শুরুর প্রথম প্রহরেই ভোট দেন নওয়াজ শরিফের মা শামীম আক্তার। লাহোরের ইসলামিয়া কলেজের এনএ-১২৪ কেন্দ্রে ভোট প্রয়োগ করেন তিনি। পিএমএল-এন দলের প্রধান শাহবাজ শরিফ লাহোরে মডেল টাউনের একটি কেন্দ্রে তার ভোট প্রয়োগ করেন। নির্বাচনী আইন মেনে শাহবাজ লাইনে দাঁড়ান। একের পর এক তার পালাও আসে।

পরে গণমাধ্যমকর্মীদের শাহবাজ বলেন, ‘ভোটারদের বেশির ভাগই পিএমএল-এনকে ভোট দিতে উদগ্রীব হয়ে আছে। ‘মিয়া সাহেব (নওয়াজ শরিফ) ও তার মেয়ের (মরিয়ম নওয়াজ) আত্মত্যাগের প্রতিদান দেবে তারা।’ শাহবাজ ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির চারটি ও পাঞ্জাবের দুটি প্রাদেশিক আসনে লড়ছেন।

পর্যবেক্ষকরা পাকিস্তানের নির্বাচন নিয়ে খুশি: নির্বাচনে দেশি-বিদেশি মিলিয়ে মোট ৫৩ হাজার পর্যবেক্ষক ছিলেন। নির্বাচনের পুরো প্রক্রিয়া নিয়ে তারা খুশি বলে জানিয়েছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মিশনের প্রধান মাইকেল গাহলের বলেন, ‘আমরা কয়েকটি কেন্দ্র ঘুরে দেখেছি। পাকিস্তানের জনগণ তাদের ভোটের অধিকার প্রয়োগ করতে পেরে খুব খুশি। পর্যবেক্ষকরা নির্বাচনে ব্যবহৃত ব্যালট পেপারও খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেন।’

বাংলাদেশ সময়: ৮:১৬:৩৭   ৬২৬ বার পঠিত   #  #  #  #  #  #