সোমবার, ১৭ জুন ২০১৩
“শেখর ধাওয়ান,ভারতীয় ব্যাটিংয়ের নতুন রাজা”
Home Page » খেলা » “শেখর ধাওয়ান,ভারতীয় ব্যাটিংয়ের নতুন রাজা”বঙ্গ- নিউজ ডটকমঃ ঢাকার ক্রিকেট পাগল দর্শকদের হয়তো এখনো মনে আছে ২০০৪ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত যুব বিশ্বকাপের কথা। হয়তো মনে আছে সে টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়টির কথাও। হেলমেটের চেয়ে রাউন্ড ক্যাপ পড়ে ব্যাটিং করতেই যে বেশি পছন্দ করতো। লম্বা গড়নের উনিশ বছরের সে খেলোয়াড়কে মনে রাখার সবচেয়ে বড় কারণ অবশ্য অন্যটি; ভয়-ডরবিহীন অনিন্দ্য সুন্দর ব্যাটিং। যে তরুণ ঢাকার বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে বিশ্বকে চমকে দিয়েছিলো মাত্র ১৩৮ বলে ১৫৫ রানের অসাধারণ এক ইনিংস খেলে। সেটিও আবার অপরাজিত এবং যুব ওয়ানডেতে অভিষেক ম্যাচেই! সেই অনবদ্য ইনিংসে ভর করে তার দল গড়ে ফেলেছিলো ৪২৫ রানের সুবিশাল পর্বত। যা এখন পর্যন্ত যুব ওয়ানডে ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান এবং মাত্র তিনটি চারশ’র একটি হয়ে আছে।অভিষেক ম্যাচের ইনিংসটি যে মোটেই হঠাত হয়ে যাওয়া কিছু ছিলোনা, অনন্য প্রতিভাধর তরুনটি তার প্রমাণ রাখলো এক ম্যাচ পরেই। খেলে ফেললো ১২০ রানের আরো একটি ইনিংস। বাংলাদেশ জাতীয় দলের বর্তমান পেসার নাজমুলের অসাধারণ এক ডেলিভারী সেই তরুণের লেগস্ট্যাম্প উড়িয়ে নেয়ার আগে অবশ্য তাকে খেলতে হয়েছিলো ২০১ বল। প্রথম ম্যাচের তুলনায় কিছুটা খারাপ! যার বদলা তরুনটি নেয়ার চেষ্টা করেছিলো পরের ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ৭০ বলে ৬৬ রানের ইনিংসে। কিন্তু তা হয়তো তার মন মতো হয়নি। ফলে এক ম্যাচ বাদে ঝড়টা গেলো শ্রীলংকার বোলারদের উপর দিয়ে! উনিশটি চার আর দুই ছয়ে এবারের ইনিংসটি হলো ১৪৬ রানের।
সেই যুব বিশ্বকাপের সাত ম্যাচে তিনটি সেঞ্চুরী আর একটি ফিফটি করেই তরুণটি বুঝিয়ে দিয়েছিলো সে লম্বা রেসের ঘোড়া। ক্রিকেট বিশ্বকে শাসন করার যথেষ্ট রসদ তার কাছে আছে। ঢাকার ক্রিকেট রোমান্টিকগণ তো বটেই সারা বিশ্বের তাবত ক্রিকেট পাগলরা তখন থেকেই স্বপ্ন দেখা শুরু করেছিলো তাকে নিয়ে। বিশেষত তার দেশের কোটি কোটি মানুষ। পাঠক, আপনি হয়তো বুঝেও ফেলেছেন সেই তরুণটি কে! শেখর ধাওয়ান; ভারতীয় ব্যাটিংয়ের নতুন রাজা।
২০০৪ সালের যুব বিশ্বকাপের পর থেকে বিশ্ব মিডিয়া থেকে কিছুটা দূরে থাকলেও শেখরের শিখড়ে উঠা কিন্তু মোটেও থেমে ছিল না। বরং একটু একটু পরিণত হয়ে উঠছিলেন তিনি। যার সর্বশেষ প্রকাশ ঘটছে ইংল্যান্ডে চলমান আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ২০১৩ তে। প্রথম ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ২৬ রানে হারিয়েছে ভারত। সেখানে শেখর ধাওয়ানের অবদান ১১৪ রানের অনবদ্য ইনিংস। শচীন-শেহওয়াগ এবং গম্ভীরবিহীন ভারতীয় ব্যাটিং কতোটুকু কী করতে পারবে, তা নিয়ে শোনা যাচ্ছিলো নানা গুঞ্জন। কিন্তু সে সব গুঞ্জন যে এতো তাড়াতাড়ি হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে তা অনেকেই ভাবেননি। না ভাবা সে বিষয়কেই সত্যে পরিণত করে ছেড়েছেন শেখর ধাওয়ান। তবুও যাদের একটু আধটু সন্দেহ ছিলো, শেখর তাও দূর করে দিয়েছেন পরের ম্যাচেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে আরো একটি সেঞ্চুরী করে।
গত ১৫ ই জুন বার্মিংহামে পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে পর্যন্ত শেখরের খেলা ওয়ানডের সংখ্যা আটটি। এর মধ্যে সেঞ্চুরী দুইটি আর হাফসেঞ্চুরী একটি। ব্যাটিং গড় ৪৭। একেবারে আহামরি শুরু না হলেও দূর্দান্ত এক ভবিষ্যত যে শুরু হয়ে গেলো, তা চোখ বুজেই বলে দেয়া যায়।
শেখর যে শুধুমাত্র ওয়ানডেতেই দূর্দান্ত তা কিন্তু নয়। একটি মাত্র টেষ্ট খেলেছেন তিনি। তাতেও দিয়ে রেখেছেন ব্যাটিং তুলির দারুণ সম্ভাবনার আচড়; অভিষেক টেস্টেই করে রেখেছেন এক গল্প করার মতো সেঞ্চুরী। ১৭৪ বলে ১৮৭! শেখর যে শিখড়ে উঠবেনই, তাতে কোনোই সন্দেহ নেই।
তো শেখরের এই শিখড়ে উঠার ঝড়ে এবার হয়তো উড়ে যাওয়ার পালা ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও শ্রীলংকার বোলারদের। কারণ ৩০ শে জুন থেকে শুরু হতে যাওয়া সেলকন ট্রাই নেশন সিরিজে তারাই যে শেখরের পরবর্তী প্রতিপক্ষ!
বাংলাদেশ সময়: ৮:০৬:০৯ ৭৬২ বার পঠিত