রবিবার, ১৩ মে ২০১৮

কুকুরের প্রতি ভালবাসার টানে ব্রিটিশ দম্পতি রয়ে গেল ভারতেই!

Home Page » আজকের সকল পত্রিকা » কুকুরের প্রতি ভালবাসার টানে ব্রিটিশ দম্পতি রয়ে গেল ভারতেই!
রবিবার, ১৩ মে ২০১৮



ফাইলে ছবি

বঙ্গ-নিউজঃ বেড়াতে এসে কুকুরের প্রতি ভালোবাসার টানে ভারতেই রয়ে গেল এক ব্রিটিশ দম্পতি।

গত ১০ বছর ধরে ম্যারি এবং স্টিভ মাসক্রফ্ট দেশটির কেরালা রাজ্যের কোভালাম শহরে এই প্রাণীকে সঙ্গে নিয়ে কাটিয়ে দিয়েছেন বলে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

নির্ধারিত সময়ের আগেই চাকরি থেকে অবসরে যাওয়া এই দম্পতির ইচ্ছা ছিল, বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াবেন। এরই জেরে মাত্র ১০ দিনের জন্যে বেড়াতে এলেন কেরালায়, কিন্তু তারা আর দেশে ফেরেননি। সেখানকার একদল কুকুরের পেছনে তারা খরচ করেছেন তাদের নিজেদের জমানো তিন লাখ পাউন্ড।

বেড়াতে এসে তাদের চোখে পড়লো দুটো কুকুর। প্রাণীটির প্রতি তাদের মায়া এতোই তীব্র হয়ে উঠলো যে এই দম্পতি কুকুর দুটোকে দেখাশোনা করতে শুরু করলো।

বিবিসি বলছে, তারপর কেটে গেছে ১০ বছর। এখন তাদের আছে একশোটির মতো কুকুর। প্রাণীদের জন্যে তারা একটি ক্লিনিকও পরিচালনা করেন। বেওয়ারিশ কুকুর দেখভাল করার জন্যে তারা একটি সংস্থাও গড়ে তুলেছেন যাদের কাজ রাস্তা থেকে অসুস্থ কুকুর তুলে এনে তাদেরকে খাওয়ানো, টিকা দেওয়া ইত্যাদি।

ব্রিটেনের মিডেলসেক্সের বাসিন্দা গায়িকা ম্যারি বলেন, কোনদিন ভাবিনি আমার জীবনে এরকম কিছু হবে। কিন্তু আমরা তো শুধু বসে বসে, বই পড়ে এবং খেয়ে দেয়ে জীবন কাটিয়ে দিতে পারি না। আমি মনে করি কেউই এরকম করে জীবন সাজাতে চায় না।

স্টিভ অবসর নেওয়ার আগে ব্র্যাডফোর্ড শহরে একটি ব্যবসা চালাতেন। তিনি বলেন, আমাদের খুব বেশি আর্থিক সচ্ছলতা ছিল না। আবার খুব একটা অসুবিধাও ছিল না। তাই অল্প বয়সেই আমরা অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। ইউরোপে ঘুরে বেড়ানো ছাড়া আমাদের তেমন কোন পরিকল্পনা ছিল না।

কিন্তু এই দম্পতির প্রথম লক্ষ্য ছিল চাকরি বাকরি ছাড়াই জীবনটা কেমন চলে সেটা দেখার। স্টিভ বলেন, আমরা তো মাত্র দুইসপ্তাহের জন্যে এখানে বেড়াতে এসেছিলাম। কিন্তু এসে দুটো কুকুরের বাচ্চার প্রেমে পড়ে গেলাম।

তিনি বলেন, তারপর তো সবকিছু বদলে গেল। দুটো কুকুর থেকে ছয়টি কুকুর হলো। তারপর হলো ১২টি। এভাবে বাড়তেই লাগলো।

কিছুদিন পর এমন হলো যে এই দম্পতি কোভালাম শহরের বেওয়ারিশ কুকুর খুঁজে বের করতে শুরু করলেন। আরম্ভ করলেন ঘুরে ঘুরে তাদের খাওয়ানোর কাজ। একটা সময়ে কুকুরের সংখ্যা এতো বেড়ে গেল যে তাদের জন্যে খাবার দাবার নিয়ে যেতে বড় একটি রিকশা ভাড়া করতে হলো।

এজন্যে একজন রিকশাচালককেও অনেকটা স্থায়ীভাবেই ভাড়া করা হলো। তার নাম কুক্বু। এখন তিনি কুকুর ক্লিনিকের ম্যানেজার।

শহরের সবাই তখন জেনে গেল এই দম্পতির কথা। রাস্তা থেকে তারা তো কুকুর কুড়িয়ে আনতেনই, লোকজনও এই দম্পতির বাড়ির দরজার সামনে কুকুর রেখে যেতে শুরু করলেন।

স্টিভ জানান, একবার তারা একটি প্লাস্টিকের ব্যাগের ভেতরে ছয়টি কুকুরের বাচ্চা পেয়েছিলেন।

এভাবেই বদলে গেল এই দম্পতির জীবন। দিন রাত তাদের কাজ হয়ে গেল রাস্তা থেকে অসুস্থ কুকুর বাড়িতে নিয়ে আসা, খাওয়ানো এবং চিকিৎসা করা। খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে পড়তেন এই দম্পতি। তারপর তারা কুকুরগুলোকে গোসল করান, খাবার দেন, স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে দেখেন।

এই দম্পতি বলছেন, কুকুরের অসুখ বিসুখ কোভালামে কোন সমস্যা নয়। কিন্তু তারপরেও শুরুতেই তাদেরকে টিকা দেওয়া হয়।

তারা জানান, কেরালার এসব কুকুরের পেছনে তারা নিজেদের জমানো তিন লাখ পাউন্ড খরচ করে ফেলেছেন। অর্থ সংগ্রহের জন্যে তারা মাঝে মাঝে অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করেন। বহু পরিবার, বন্ধু এবং পর্যটকও তাদেরকে অর্থ দিয়ে সাহায্য করেছেন।

বাংলাদেশ সময়: ২০:১৮:১৪   ৭৬৮ বার পঠিত