সোমবার, ৭ মে ২০১৮

দুধের দাম-আব্দুল বায়েস

Home Page » আজকের সকল পত্রিকা » দুধের দাম-আব্দুল বায়েস
সোমবার, ৭ মে ২০১৮



ফাইল ছবি

বঙ্গ-নিউজঃ  এক
ছেলেটি খুবই দরিদ্র। অভাব-অনটন কুড়ে কুড়ে খায়। অন্ন সংস্থানের উপায় নেই। একদিন ক্ষুধায় কাতর হয়ে এক মুঠো অন্নের জন্য অন্যের দরজায় কড়া নাড়ল। কচুঘেচু যদি জোটে সে-ই বা মন্দ কি। গরিবের জন্য পুষ্টি নয়, পেটপূর্তি বড় কথা। দরজায় কড়া নাড়তেই এক সুন্দরী, মমতাময়ী মহিলা দরজা খুলে দিলেন। তাকে দেখে সে কিছুটা ভরকে গেল, গলা শুকিয়ে আসল। নার্ভাস ছেলেটি মহিলার কাছে খাবার না চেয়ে পানি চাইল। মহিলা ভাবলেন, নিশ্চয়ই ছেলেটির খুব ক্ষুধা পেয়েছে হয়তো বলার সাহস পাচ্ছে না কিংবা লজ্জা বোধ করছে। তাকে বরং এক বড় গ্লাসে দুধ দেয়া যাক। ধীরে ধীরে দুধপান শেষে ছেলেটি নিলীয়মান দৃষ্টিতে শুধাল, ‘আমি আপনার কাছে কতটুকু দেনা’? মহিলার উত্তর, ‘ধরিত্রীমাতা বলেছেন, কাউকে দয়া করে কিছু দিলে বিনিময়ে কোনো কিছু নিতে নেই’। ‘তাহলে আপনাকে অন্তর থেকে ধন্যবাদ জানাই’ - ছেলেটি বলল।
বহু বছর পরের কথা।পরিবারের সাথে আব্দুল বায়েস
হাওয়ার্ড কেলি নামের একজন বিখ্যাত ডাক্তার প্রচুর সুনাম কুড়াচ্ছেন; চারিদিকে তার নামগান। সেই বিখ্যাত ডাক্তার একদিন একজন মুমুর্ষ রোগীকে বাঁচাবার জন্য কোনো এক শহর থেকে একটা কল পেলেন। শহরটি তার কাছে খুবই পরিচিত মনে হলো। রোগী দেখে তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, যে করেই হোক তাকে তিনি সারিয়ে তুলবেন। শেষমেশ ডাঃ হাওয়ার্ড কেলি যুদ্ধে জিতলেন, রোগীও জীবন পেল। চিকিৎসা শেষে তিনি তার সহকারীকে বললেন মেডিকেল বিলটি রোগীর হাতে দেয়ার আগে যেন তার হাতে দেয়া হয়। পরে বিলটি হাতে এলে তিনি বিলের কাগজের কোণায় কী যেন লিখলেন।
এদিকে মহিলা বেঁচে গিয়েও মরার মতো অবস্থা তার। এত বড় বিল তিনি কী করে পরিশোধ করবেন সেটা ভেবে চিন্তাক্লিষ্ট। সারাজীবনেও অত টাকা তিনি জোগাড় করতে পারবেন না। ভয়ে তিনি কাঁপছেন, চোখের কোণে জল জমে। এক সময় বিলটি তার হাতে পৌঁছালে কাঁপা হাতে এনভেলাপটি খুলে বিলের অংক দেখে মূর্ছা যাবার মতো অবস্থা হয়। কিন্তু বিলের কাগজের কোণায় ছোট্ট করে লিখা দেখে তিনি যেন প্রাণ ফিরে পেলেন। লিখা ছিল, ‘এক গ্লাস দুধের দামে সম্পূর্ণ বিল পরিশোধিত’। এমনিভাবে হাওয়ার্ড কেলি মায়ের না হোক অন্তত ‘মাসীর দুধের দাম পরিশোধ করেছে।
দুইপরিবারের সাথে আব্দুল বায়েস
আমাদের দেশে ইদানিং মায়ের প্রতি অবজ্ঞা, অপমান যেন বেড়ে চলেছে, মাসীর কথা নাইবা বলা হলো। বৃদ্ধাশ্রমে ফেলে রাখা মায়েদের করুণ কাহিনী শুনে দুচোখ ভরে জল নামে। ‘দশ মাস’ দশ দিন পেটে ধারণ করে ছ’মাস অব্যাহতভাবে স্তনের দুধ যোগান দিয়ে, প্রতি মুহূর্তে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সন্তান মানুষ করেছেন মা। একদিন সব থেকেও মা হন সর্বহারা। ছেলে মাকে বোঝা মনে করে পাঠিয়ে দেয় বৃদ্ধাশ্রমে। ভুলে যায় মার বুকের দুধের কথা, প্রসব ব্যাথা:
‘ছেলে আমার মস্ত মানুষ
মস্ত অফিসার,
সমস্ত ফ্ল্যাটে যায় না দেখা
এপার ওপার।
নানান রকম জিনিস আর
আসবাব দামীদামী
সবচেয়ে কম দামী ছিলাম
একমাত্র আমি।
——————-
ছেলের আমার প্রতি
অগাধ সম্ভ্রম
আমার ঠিকানা তাই বৃদ্ধাশ্রম।’
(নচিকেতা ঘোষ)
বৃদ্ধাশ্রমে থাকা মায়ের বিল নিশ্চয় ছেলে পরিশোধ করে। কী লেখা থাকতে পারে বিলের কাগজের কোণায়? অনুমান করি, ‘আমাকে পৃথিবীতে আনার এবং ছমাস অব্যাহতভাবে বুকের দুধ পান করাবার শাস্তিস্বরূপ বৃদ্ধাশ্রমের বিল পরিশোধিত।’              

অধ্যাপক  আব্দুল বায়েস, প্রাক্তন উপাচার্য, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

বাংলাদেশ সময়: ১৬:৩৮:০৩   ১৮১৫ বার পঠিত