মঙ্গলবার, ২৪ এপ্রিল ২০১৮
সিলেট-১ আসনে আ.লীগ-বিএনপি’র মনোনয়ন লড়াই
Home Page » এক্সক্লুসিভ » সিলেট-১ আসনে আ.লীগ-বিএনপি’র মনোনয়ন লড়াইঅাল-আমিন অাহমেদ সালমান,স্টাফ রিপোর্টার বঙ্গ-নিউজ:চলতি বছরের ডিসেম্বরের পর অবসর নেবেন- এমনটাই বলেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বছর দুয়েক ধরেই তিনি নিজের অবসর নিয়ে কথা বলেছেন বেশ কয়েকবার। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চাইলে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেননি তিনি। অবশ্য আবদুল মুহিত অবসরে গেলে সিলেট-১ (সদর) আসনে আওয়ামী লীগ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো প্রার্থী তার নিজের ছোট ভাই থেকে শুরু করে বেশ কয়েকজন রয়েছেন।
বিপরীতে সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী সাইফুর রহমানের মৃত্যুতে সিলেট-১ আসনে বিএনপিতে নেতৃত্বের যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে, তা সহজে দূর হবে না বলে পর্যবেক্ষকদের ধারণা। এ পরিস্থিতিতে একসময় সিলেট-১ আসনে প্রার্থী হিসেবে খালেদা জিয়া অথবা তারেক রহমানের স্ত্রী ‘সিলেটের মেয়ে’ ডা. জোবায়দা রহমানের নাম আলোচনায় উঠে আসে। তবে সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় খালেদা জিয়ার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। তেমনি জোবায়দাও দীর্ঘদিন লন্ডনে অবস্থান করায় সাংগঠনিক কার্যক্রম ও গণসংযোগের বাইরে রয়েছেন।
অর্থমন্ত্রীর সম্ভাব্য অবসরের আলোচনার মধ্যে ২০১৫ সালে দেশে ফেরেন তার ভাই ড. এ কে আবদুল মোমেন। প্রায় একই সময় যুক্তরাষ্ট্রে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী জানান, জাতিসংঘে বাংলাদেশের সাবেক এই স্থায়ী প্রতিনিধিকে দেশে ‘বড় দায়িত্ব’ দেওয়া হবে। এতে মর্যাদাপূর্ণ সিলেট-১ আসনে আবদুল মুহিতের বিকল্প হিসেবে ড. মোমেনের নাম আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় চলে আসে। বর্তমানে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ড. মোমেন গত বছরের মাঝামাঝি বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতির দায়িত্ব পান। সিলেটে বড় ভাইয়ের উন্নয়ন কার্যক্রম দেখাশোনার পাশাপাশি ড. মোমেন তৃণমূল পর্যায়েও যোগাযোগ রক্ষার চেষ্টা করছেন।
তবে আওয়ামী লীগের বিকল্প প্রার্থী হিসেবে এ আসনে সাবেক নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ ছহুল হোসাইনের নামও আলোচনায় রয়েছে। নগরীর কাজিটুলা এলাকার বাসিন্দা ছহুল হোসাইন সম্প্রতি সিলেটে ঘন ঘন আসা-যাওয়া করছেন। এ আসনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজও অনেক দিন ধরে নির্বাচনে আগ্রহী। গত বছরের ২২ মার্চ আওয়ামী লীগের বিভাগীয় প্রতিনিধি সভায় অর্থমন্ত্রী আবদুল মুহিত এবং দলের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের উপস্থিতিতে সিলেট-১ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দেন মিসবাহ। আবার জনপ্রিয়তার নিরিখে দলের কেন্দ্রীয় সদস্য ও সিলেট মহানগর সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের নামও আলোচনায় রয়েছে। অবশ্য কামরান সিলেটের মেয়র পদ পুনরুদ্ধারেই বেশি আগ্রহী।
‘যে দলের প্রার্থী বিজয়ী হন, সেই দলই সরকার গঠন করে’- কাকতালীয় এমন ঘটনায় সারাদেশের সংসদীয় আসনগুলোর মধ্যে সিলেট-১ এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ বিশেষভাবে আলোচিত। সিলেট-১ আসনে বিজয়ী প্রায় সব এমপিই সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে আসছেন। নবম ও দশম জাতীয় সংসদে এ আসনে বিজয়ী আবুল মাল আবদুল মুহিত সরকারের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে বিজয়ী এম সাইফুর রহমান অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু নবম সংসদে পরাজিত হওয়ার কিছুদিন পর মর্মান্তিক এক সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি মারা গেলে এ আসনে প্রার্থী সংকটে পড়ে বিএনপি। একপর্যায়ে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী সমশের মবিন চৌধুরীকে মাঠে নামালেও ২০১৫ সালের ২৯ অক্টোবর ‘শারীরিক অসুস্থতা’র কথা উল্লেখ করে তিনি দল থেকে পদত্যাগ করেন। এতে নতুন করে প্রার্থী সংকটে পড়ে বিএনপি।
এ অবস্থায় জিয়া পরিবারের সদস্যদের কেউ প্রার্থী হতে পারেন- এমন আলোচনা থাকলেও বিএনপিতে অনেক দিন ধরেই সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মাঠে তৎপর রয়েছেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য খন্দকার আবদুল মুক্তাদির। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে সিলেট-১ আসনে বিজয়ী হয়েছিলেন মুক্তাদিরের বাবা খন্দকার আবদুল মালিক। সেবারও বিএনপি সরকার গঠন করে। অনেক দিন ধরে ‘খন্দকার আবদুল মালিক ফাউন্ডেশনের’ ব্যানারে সিলেট-১ আসনের বিভিন্ন এলাকায় নানা সামাজিক কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন তিনি। গত ১০ এপ্রিল নগরীর রেজিস্টারি মাঠে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে একাধিক বক্তা মুক্তাদিরকে এই আসনে দলের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে উল্লেখ করেন। আবার দলের কেন্দ্রীয় সদস্য ও সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীও বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় রয়েছেন।
আওয়ামী লীগের টানা তিনবারের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ সমকালকে বলেন, মর্যাদাপূর্ণ সিলেট-১ আসনকে ‘ভিআইপি আসন’ বানিয়ে দেওয়ায় রাজনীতিবিদরা বঞ্চিত হচ্ছেন। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে বিভিন্ন দলে অনেক ভিআইপির নাম শোনা যাচ্ছে। অতীতে সিলেটের জনগণ বারবার দলীয় প্রতীকে ভোট দিয়েছেন। কিন্তু ভিআইপি প্রার্থীরা জয়ী হওয়ার পর সাধারণ জনগণ বা দলের কর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখেননি। আওয়ামী লীগ-বিএনপি উভয় দলেই এ পরিস্থিতি দেখা গেছে। এ আসনের বর্তমান এমপি অর্থমন্ত্রী মুহিতের অনেক বয়স হয়েছে উল্লেখ করে মিসবাহ উদ্দিন বলেন, তিনি বারবার মন্ত্রী হোন, দলের উপদেষ্টা হোন- তাতে আমার কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু জনপ্রতিনিধি হিসেবে এমন মানুষ প্রয়োজন, যিনি সবার সঙ্গে মিশতে পারবেন, সময় দিতে পারবেন। দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করার সুবাদে তিনি নিজে বিকল্প হিসেবে এ ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছেন বলে মন্তব্য মিসবাহ উদ্দিনের।
২০১৩ সালের সর্বশেষ সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনে পরাজিত হলেও ভোটের রাজনীতিতে আলোচিত নাম বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। চলতি বছরের মাঝামাঝি সম্ভাব্য সিসিক নির্বাচনে তিনি আবারও মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আবার ভোটের রাজনীতির হিসাব-নিকাশে তাকে সিলেট-১ আসনে দলীয় প্রার্থী করার সম্ভাবনাও রয়েছে। দলীয় হাইকমান্ড থেকে তাকে গণসংযোগ অব্যাহত রাখতে বলা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি সমকালকে বলেন, অনেকেই তাকে সিলেট-১ আসনে প্রার্থী হিসেবে দেখতে চাইছেন। তবে বর্তমানে তিনি সিসিক নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। নির্বাচন কমিশনের পরিকল্পনা অনুযায়ী জাতীয় নির্বাচনের আগেই এ নির্বাচন হওয়ার কথা। তবে কামরান বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হিসেবে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ পালনের জন্য সবসময় প্রস্তুত রয়েছেন।
এদিকে ওয়ান-ইলেভেনের সময় নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালনকারী মোহাম্মদ ছহুল হোসাইনের প্রার্থিতা প্রসঙ্গে তার এক আত্মীয় সমকালকে বলেন, তাকে ডেকে নিয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড থেকে বলা হয়েছে। এ জন্য ইদানীং তিনি প্রায়ই সিলেটে আসেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে।
তথ্যসূত্র : সমকাল
বাংলাদেশ সময়: ২১:৫৩:২৭ ৭৫৩ বার পঠিত