বৃহস্পতিবার, ৫ এপ্রিল ২০১৮
মুক্তিযোদ্ধা বাবা কথা না শুনায় মেয়ে চাকরিচ্যুত
Home Page » অর্থ ও বানিজ্য » মুক্তিযোদ্ধা বাবা কথা না শুনায় মেয়ে চাকরিচ্যুত
বঙ্গ-নিউজ; তোমাদের বাবা (মুক্তিযোদ্ধা সেলিম সরকার) বাবুল চিশতী স্যারের কথা শুনেন না। তাই তোমাদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। বাবুল চিশতী সাহেবের সাথে মিমাংসা করে আস। এই কথাগুলো বলে মুক্তিযোদ্ধা সেলিম সরকারের দুই মেয়ে শারমিন সুলতানা ও শিরিন সুলতানাকে ফারমার্স ব্যাংক থেকে বের করে দেয় ফারমার্স ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিসার শ্যামল কুমার বিশ্বাস।
চাকরিচ্যুত শারমিন সুলতানা জানান, ২০১৬ সালের ১২ জানুয়ারি ফারমার্স ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে ট্রেইনি অফিসার পদে তার এবং একই বছরের জুন মাসে ট্রেইনি অফিসার পদে ধানমণ্ডি শাখায় বোন শিরিন সুলতানার চাকরি হয়। ২০১৭ সালের ৩১ মার্চে হেড অফিসের এইচ আর ডিপার্টমেন্ট থেকে তাদের দুইজনকে বলা হয় চাকরি থেকে পদত্যাগ করার জন্য। তার কারণ জানতে চাইলে এইচ আর ডিপার্টমেন্টের শ্যামল দত্ত বলেন, তোমাদের বাবা চিশতী স্যারের কথা শুনেন না তাই।
তিনি আরও বলেন, এখন আমাদের চাকরির বয়সও চলে গেছে। তাই অন্য কোথাও চাকরি পাচ্ছি না। পরিবারের উপর আমরা দুই বোন এখন বোঝা হয়ে গেছি।
মুক্তিযোদ্ধা সেলিম সরকার অভিযোগ করে বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধে কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী ময়মনসিংহ ত্রিশাল আসনের জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য এমএ হান্নানকে গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনার জন্য আন্দোলন করেন তিনি। এছাড়া পাকিস্তানের সাবেক গভর্নর মোনায়েম খানের মেয়ে নাসরিন মোনায়েম খান প্রতিষ্ঠিত স্কুল এবং কলেজের নামফলকে মোনায়েম খানকে শহীদ বলে আখ্যায়িত করার প্রতিবাদ জানান। যার ফলে প্রশাসন বাধ্য হয়ে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে দেয়।
তিনি জানান, এসব বিষয়ে প্রতিবাদ না করতে ফারমার্স ব্যাংকের সাবেক অডিট কমিটির চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চিশতী ওরফে বাবুল চিশতী তাকে নিজ বাসায় নিয়ে নিষেধ করেন। তার নিষেধ অমান্য করায় ফারমার্স ব্যাংকে কর্মরত তার দুই মেয়ে শারমিন সুলতানা এবং শিরিন সুলতানাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। তাদের চাকরি চলে যাওয়ায় এখন তারা মহাবিপাকে পড়েছেন। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বরাবর লিখিত অভিযোগ করেও কোন ফল পাচ্ছেন না বলে জানান তিনি।
সেলিম সরকার ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চর গোবদিয়া গ্রামের মৃত কামাল সরকারের ছেলে। ময়মনসিংহ মহানগর মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ডের সদস্য সচিব ও সাবেক সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার। চার কন্যা সন্তানের জনক তিনি। স্ত্রী ঝর্ণা সরকার চার কন্যা সন্তান নিয়ে ঢাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন। বড় দুই মেয়ে শারমিন সুলতানা ও শিরিন সুলতানা পড়াশোনা শেষ করলেও বাকি দুই মেয়ে পড়াশোনা করছে।
স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা হেকিম মন্ডল এবং শামসুল হক আজাদ জানান, অনেক কষ্ট করে মুক্তিযোদ্ধা সেলিম সরকার তার মেয়েদের পড়াশোনা করিয়ে চাকরি দিয়েছে। মেয়েদের উপার্জন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর দেয়া বীর নিবাসে খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করছেন তারা। তাই সরকার যদি বিষয়টি নজরে নিয়ে মেয়েদের চাকরিতে পুনর্বহাল করে তাহলে পরিবারটি রক্ষা পাবে।
জেলা মানবাধিকার কর্মী এমদাদুল হক মিল্লাত জানান, বিনা কারণে কাউকে চাকরিচ্যুত করা আইনের লঙ্গন। সরকারি অথবা বেসরকারি চাকরির ক্ষেত্রে সুর্নির্দিষ্ট নীতিমালা রয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের ক্ষেত্রে সেটি আরও বিবেচ্য বিষয়। কিন্তু নীতিমালা না মেনেই ওই দুইজনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত।
এ বিষয়ে ফারমার্স ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিসার শ্যামল কুমার সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে রাজি হননি। তবে অন্যের মাধ্যমে তিনি জানিয়েছেন, ফারমার্স ব্যাংকের কতৃপক্ষের নির্দেশে তাদের অফিসে আসতে নিষেধ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ব্যাংকটির সাবেক অডিট কমিটির চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চিশতী ওরফে বাবুল চিশতীর সাথে মুঠোফোনে বারবার কল দেয়া হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
বাংলাদেশ সময়: ২০:৪৯:০৮ ৬২৫ বার পঠিত #bangla news #bangladeshi News #bd news #bongo-news(বঙ্গ-নিউজ) #জাতীয় #শিরোনাম