মঙ্গলবার, ২০ মার্চ ২০১৮
নীলাদ্রী লেকঃ সৌন্দর্য যেখানে স্বর্গ হতে নেমে এসেছে হাওরের এ ভূমে
Home Page » বিবিধ » নীলাদ্রী লেকঃ সৌন্দর্য যেখানে স্বর্গ হতে নেমে এসেছে হাওরের এ ভূমেজীবন কৃষ্ণ সরকারঃ
মৎস্য, পাথর, ধান সুনামগঞ্জের প্রাণ প্রবাদটি সত্য হলেও এটি অনেক পুরণো বাক্য।নীলাদ্রী লেক,বারেকের টিলা মানিগাঁও শিমুল বাগান যেনো সুনামগঞ্জ তথা হাওরবাসীকে দেশবাসীর কাছে নতুনভাবে পরিচিত করাচ্ছে আরেকবার।সংগত কারনেই নীলাদ্রী লেক সম্পর্কে দু-চারটি কথা বন্ধুদেরকে শেয়ার করার প্রয়োজন বোধ করছি।তাই আজ একটু আপনাদের সাথে বসা।
সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার উত্তর সীমান্তবর্তী উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের ট্যাকেরঘাট নামক স্থানে আজকের নীলাদ্রী লেকের অবস্থান।নীলাদ্রী লেক(Niladri Lake) খ্যাত পর্যটন স্থানটি একসময় পরিচিত ছিল চুনাপাথরের পরিত্যাক্ত খনি বা পাথর কোয়ারি হিসেবে।বিভিন্ন মিডিয়া ঘেঁটে যতদ্দুর জানতে পারি ১৯৪০ সালে সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলায় নির্মান করা হয় আসাম বাংলা সিমেন্ট ফ্যাক্টরি।ভারতের মেঘালয় পাহাড় থেকে চুনাপাথর সংগ্রহ করে এর চাহিদা মেঠানো হতো।১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর বিভিন্ন সমস্যা ও ব্যয় বৃদ্ধির কারণে ভারত থেকে পাথর সংগ্রহ বন্ধ হয়ে যায়।সে সময় সিমেন্ট ফ্যাক্টরীটি চালু রাখার জন্য চুনাপাথরের প্রয়োজনে তাহিরপুর উপজেলার উত্তর সীমান্তে ট্যাকেরঘাটে ৩২৭ একর ভূমির উপর জরিপ চালিয়ে ১৯৬০ সালে চুনাপাথরের সন্ধ্যান পায় বিসিআইসি কর্তৃপক্ষ।পরবর্তী সময়ে ১৯৬৬ সাল থেকে খনিজ প্রকল্পটি চালু করা হয় এবং মাইনিংয়ের মাধ্যমে দীর্ঘদিন পাথর উত্তোলন করা হয়।পরবর্তী সময়ে ১৯৯৬ সালে প্রকল্পটি লোকসানি প্রতিষ্ঠাণ হওয়ায় কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ।
তারপর থেকে দীর্ঘ দিন পরিত্যাক্ত থেকে যায় স্থানীয় ভাষায় “পাথর কোয়ারী” তথা আজকের নীলাদ্রী লেকটি।তৎকালীন সময়ে এটিকে শহীদ সিরাজ লেক হিসেবে অভিহিত করলেও অতি সম্প্রতি বিভিন্ন লেখক,কবি,পর্যটক লেকটিকে “নীলাদ্রী” হিসেবে উল্লেখ করায় এবং সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন এবং বাংলাদেশ ট্যুরিস্ট কর্তৃপক্ষ এটাকে নীলাদ্রী ডিসি পার্ক হিসেবে নামকরণ করায় পর্যটন স্থানটি পেয়েছে নতুন মাত্রা যদিও স্থানীয়দের মাঝে নামকরণ নিয়ে কিছুটা অসন্তোষ এখনো রয়েছে।সূদূর ঢাকা,চট্টগ্রাম সহ প্রায় সারাদেশ থেকে হাজার হাজার দর্শনার্থী আসছে নীল পানির ফোয়ারা খ্যাত এই লেকটিকে একনজর দেখার জন্য।উত্তরে ভারতের মেঘালয় রাজ্য,পূর্ব দিকে পিকনিক স্পট বারেকের টিলা,শিমুল বাগান,দক্ষিনে টাঙ্গুয়ার হাওর,লেকটিকে আপন করে রেখেছে ছায়ার মতন।মেঘালয়ের মেঘোবরণ, লেকটিকে দিয়েছে আরো শ্যমল ছায়ার স্নিগ্ধরুপ।লেকের মায়াবী নীল পানি সহজেই কাছে টেনে নেয় নীলপিয়াসিদের।উত্তরে দাঁড়িয়ে রয়েছে আকাশচুম্বী পাহাড় ও তার পাথর শিলারা।তারাও দেখছে লেকের সৌন্দর্য মুগ্ধ হয়ে।পশ্চিমে রয়েছে কালো পাথরের পাহাড়।দেখলে পাথর গতর আঁকরে ধরতে মন চায় যে কারো।যেকোন সৌন্দর্য পিপাসু অন্তত ২০-৩০ মিনিট এসব শিলাখন্ডে বসে অজানা আপন ভূবনে হারিয়ে যেতে বাধ্য।পূর্ব পশ্চিমের উভয় পাড়েই রয়েছে পর্যটকদের জন্য বসার সুব্যাবস্থা।
টাঙ্গুয়ার হাওরের দক্ষিনা বাতাসে লেকের কলকল ধ্বনি যেনো বিনাবীনে সুর তুলে কথা বলে পর্যটকদের সাথে।হাওর এবং পাহাড় যেনো মাতৃগর্ভের ন্যায় যতনে রেখেছে এই লেকটিকে।তাই সত্যিই বলতে ইচ্ছে হচ্ছে”নীলাদ্রী লেকঃ সৌন্দর্য যেখানে স্বর্গ হতে নেমে এসেছে হাওরের এ ভূমে।”
কিভাবে আসবেনঃ
লেকটিতে দুটি পথেই পৌছানো যায়।প্রথমত,ঢাকা থেকে সরাসরি বিরতিহীন বাসে সুনামগঞ্জ নামবেন।ভাড়া ৫০০-৫৫০টাকা লাগতে পারে।সুনামগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড নেমে ৫মিনিট উত্তরে হেঁটে নতুন ব্রীজের পশ্চিম পাড়ে মোটর বাইক ২০০টাকায় অথবা সিএনজি ৫০০ টাকায় পাওয়া যায়।চলে যাবেন সরাসরি বারেকটিলার ঠিক পূর্ব পাশে অর্থাৎ যাদুকাটা নদীর পূর্বপাশে।তারপর ৫ টাকা দিয়ে নদী পার হয়ে বারেকটিলার অপরুপ দৃশ্য দেখতে দেখতে একটু পশ্চিম দিকে হাটবেন।অল্প কিছুক্ষণ পর টিলার পশ্চিম প্রান্তে একটি টেম্পো স্ট্যান্ড দেখতে পাবেন।এখান থেকে লেগুনা,টেম্পু যোগে ২০/৩০ টাকা দিয়ে পৌছে যাবেন স্বপ্নের বাংলার কাস্মীর খ্যাত লেকটিতে।স্থানীয় বাসিন্দাদের জিজ্ঞেস করলেও বলে দিবে রাস্থাটি। সেক্ষেত্রে নীলাদ্রী লেক বললে চিনতে না পারলে সিরাজ লেক বা পাথর কোয়ারি বললে যেকোন সাধারণ মানুষ অবশ্যই চিনবে।তাছাড়া চাইলে সরাসরি সুনামগঞ্জ থেকে মোটরবাইকে চড়েও সুবিধামত ভাড়াতে লেকটিতে যাওয়া যায়।দ্বিতীয়ত ঢাকা থেকে সরাসরি বিরতিহীন বাসে ৩৫০/৪০০ টাকা দিয়ে মধ্যনগর বাজারে আসা যায়।সেখান থেকে মোটর বাইকে ৩৫০/৪০০ টাকা দিয়ে সরাসরি নীলাদ্রী লেকটিতে যাওয়া যায়।তবে এক্ষেত্রে সিএনজির কোন সুবিধা নেই।তাছাড়া ঢাকা থেকে সরাসরি বাসে ৩০০/৩৫০ টাকা দিয়ে কলমাকান্দা এসে মোটর বাইকে ১৫০/২০০ টাকা দিয়ে মহিষখলা বাজার আসা যাবে।তারপর আবার মোটর বাইকে ২৫০/৩০০টাকা দিয়ে ট্যাকের ঘাট নীলাদ্রী লেকটিতে পৌঁছুতে পারবেন।আপনাদের সুবিধেমত রাস্থা দিয়েই আসতে পারেন।
যাহোক ট্যাকেরঘাট বাজারে খাবার-দাবারের জন্য হোটেলের ব্যবস্থা রয়েছে।তবে রাত্রিযাপন করতে চাইলে অবশ্যই আপনাকে সুনামগঞ্জ সদরে চলে যেতে হবে।সদরে ২০০ থেকে ১০০০ টকার ভেতরে চাহিদা অনুযায়ী হোটেল ভাড়া পাবেন এতে কোন সমস্যা হবেনা বা হওয়ারো কথা নয়।সর্বশেষ, সৌন্দর্য প্রেমী সকল বন্ধুদের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরুপ লীলাভূমি খ্যাত নীলপানির আঁকর নীলাদ্রী লেকটি একবার ঘুরে দেখার আমন্ত্রণ জানিয়ে লেখাটি এখানেই শেষ করছি।ভালো থাকবেন সকলে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯:৩৭:৩৩ ১২১১ বার পঠিত